বামাবোধিনী পত্রিকার অনামা নারী কবিদের কবিতা |
পালিত কপোতিনীর প্রতি ঢাকাস্থ কোন রমণী (বঙ্গবন্ধু হইতে উদ্ধৃত।) বল ওগো কপোতিনী, কেন এত বিষাদিনী, হেরিতেছি বলগো তোমায়। প্রকাশিয়া বল না আমায়॥ এত দুঃখী কোন দুখে, আহা সদা অধোমুখে, নেত্রনীর কর সম্বরণ। সুধাও আমায় বিবরণ॥ সুবর্ণ শিকল পদে, সদা আছ উচ্চপদে, সুবর্ণ পিঞ্জরে অবস্থান। ইথেও কি ভোলে না গো প্রাণ? তোমার সন্তোষ তরে, অপূর্ব্ব কোটরাপুরে, রহিয়াছে খাবার সকল। তবু তুমি কেন গো চঞ্চল? বল করি বিচরণ করি আহারাহরণ, তাতেই বা কত সুখোদয়। বল মোরে হইবে সদয়॥ শুন ওগো কপোতপ্রিয়ে, বলিতে বিদরে হিয়ে, আমিও গো পিঞ্জরবাসিনী। কিবা সুখে বঞ্চে স্বেচ্ছাধীনী॥ আছ তুমি যে সুখেতে, স্বর্ণময় পিঞ্জরেতে, আমাদের নাহি এত সুখ। তুমি কেন হও গো বিমুখ? না দেয় গঞ্জনা কেহ, দাসীত্ব ভার না বহ, অন্নজলে নাহিক অভাব। তবে কেন ভাব নানা ভাব? ছিলে যবে স্বচ্ছাধীনী, ভ্রমি বনে একাকিনী, কত সুখ লভিছিলে তায়! কি দুঃখে বা আছো গো হেথায় বেড়াইতে নানা বন, শাখা করি আরোহণ, কত কষ্টে যাপিছ যামিনী! এত সুখে আছ বিষাদিনী। বুঝুলাম এতক্ষণে, তব ভাব দরশনে, তোমরাই বুঝিয়াছ সার। নাহি বহ অধীনতা ভার! শুন ওগো বিহগিনী, মোরা অতি অভাগিনী, অন্তঃপুর পিঞ্জর নিবাসী। আছি সদা অধীনের দাসী। চিরদিন একমত, হিতাহিত জ্ঞানহত, জ্ঞান ধর্ম্মে দিয়ে বিসর্জ্জন। একবাবে করিছি যাপন। তুমি নও চিরদাসী, কিছুদিন তরে আসি, হেরিতেছ দুঃখের বয়ান। হবে পুনঃ দুঃখ অবসান। হায়রে মোদের দুঃখ, বলিলে বিদরে বুক, এর চেয়ে পাখী যদি হই। তবু বুঝি মনসুখে রই। ধন্য ওগো কপোতিনী, মানবিনী হতমানী, হয়ে আছে দেখে তব সুখ। তাই ঢাকে ঘোমটাতে মুখ। কি বলিব বিধাতারে, বলিতে প্রাণ বিদরে, মোরা বুঝি তব কন্যা নই, তাই সদা এত দুঃখ সই। না হইয়ে ধর্ম্মাধীনী, আছি সদা পরাধীনী, সদা থাকি ক্রীত দাসী প্রায়। এই কি তব অভিপ্রায়? পাই কত মর্ম্মব্যথা, তথাপি না বলি কথা, সদা মুখ ঢাকি ঘোমটায়। এই কিহে তব অভিপ্রায়? হয়ে দেশাচার দাসী, অজ্ঞান সলিলে ভাসি, কাটিলাম এ দুর্লভ কায়। এই কি তব অভিপ্রায়? . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |