কবি আনন্দময়ী -র পিতা ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ সাধক কবি লালা রামগতি সেন এবং মাতা কাত্যায়নী দেবী।
কবির জন্মস্থান বিলদায়নীয়া (রাজনগর)।
১৯৩০ সালে প্রকাশিত “বঙ্গের মহিলা কবি” গ্রন্থের সম্পাদক যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত বিলদায়নীয়া (রাজনগর)-এর
জেলা উল্লেখ করেন নি। কালের কণ্ঠ ব্লগে লেখা রয়েছে যে ঢাকার বিক্রমপুরের রাজনগরে জন্মগ্রহণ করেন
কবি আনন্দময়ী দেবী।
ঢাকা, ফরিদপুর, বরিসাল, তিপ্পেরা (ত্রিপুরা) জেলা এবং বিক্রমপুরের বেশিরভাগ জমি নিয়ে তাঁর
জমিদারীতে রাজনগর পরগণা তৈরি করেছিলেন মুঘল আমলের ঢাকার দেওয়ান মহারাজা রাজবল্লভ।
রাজবল্লভ ছিলেন মীরজাফরের দোসর। তিনি অন্যায়ভাবে ধন আহরণ করাতে তত্কালীন বাংলার নবাব
সিরাজ উদ দৌল্লার রোষে পড়ে যান। প্রভূত ধন নিয়ে, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ইংরেজদের স্বরণে
পাঠিয়েছিলেন তাঁর পুত্র কৃষ্ণদাসকে। এই ঘটনাও শিরাজ ও ইংরেজদের মধ্যেকার খারাপ সম্পর্কের একটি
কারণ হিসেবে দেখা হয় যা পরবর্তিতে পলাশির যুদ্ধের আকার নেয় এবং আগামি ২০০ বছরের জন্য
ভারতবর্ষে বিটিশ শাসনের ভীত খনন করে। ১৭৬৩ সালে নবাব মীর কাশিম মহারাজা রাজবল্লভকে জলে
চুবিয়ে হত্যার আদেশ দেন, যা কার্যকর করা হয়।
আনন্দময়ীর পিতা রামগতি নিজে কন্যার শিক্ষার ভার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পাণ্ডিত্যের সুখ্যাতি এমন
পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে কথিত আছে - একবার রাজনগর গ্রামবাসী পণ্ডিত কৃষ্ণদেব বিদ্যাবাগীশের পুত্র
হরিদেব বিদ্যালঙ্কার আনন্দময়ীকে শিবপূজার পদ্ধতি লিখে দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ভুল দেখতে পেয়ে
আনন্দময়ী, বিদ্যাবাগীশ মহাশয়কে তাঁর পুত্রের অধ্যয়ন সম্বন্ধে অমনোযোগী বলে ভর্ত্সনা করেছিলেন।
মহারাজা রাজবল্লভ যখন অগ্নিষ্টোম যজ্ঞ করেন, তখন তিনি যজ্ঞের প্রমাণ ও যজ্ঞকুণ্ডের প্রতিকৃতি চেয়ে
রামগতি সেন কে চিঠি লেখেন। রামগতি সেই সময়ে পূজা-অর্চনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নিজে না করে তাঁর কন্যা
আনন্দময়ীকে এই অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ কাজ করে দিতে বলেন। আনন্দময়ী, রাজার প্রয়োজনমত, পুঁথি-পুস্তক
থেকে যজ্ঞের বিধিনিয়ম নিজের হাতে লিখে রাজাকে পাঠান। পরে রাজসভায় সে বিষয়ে আলোচনা হলে
সকলে তা বিশ্বাস করেন কারণ ততদিনে আনন্দময়ীর পাণ্ডিত্যের খ্যাতি সর্বজনবিদিত।
১৭৬১ সালে তাঁর বিবাহ হয় পয়গ্রাম নিবাসী প্রভাকরবংশীয় রূপরাম কবিভূষণের পুত্র অযোধ্যারাম সেনের
সঙ্গে। এখানেও যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত মহাশয় পয়গ্রামের জেলা উল্লেখ করেন নি। আমরা জানি যে বর্তমানে
পয়গ্রাম, পোস্ট- ফুলতলা, জেলা খুলনা, বাংলাদেশ।
স্বামীর প্রতি তাঁর প্রচণ্ড টান ছিল। স্বামীর মৃত্যুর সময়ে আনন্দময়ী বাপের বাড়ী ছিলেন। মৃত্যু সংবাদ
পেয়েই তিনি সহমরণের সঙ্কল্প করেন এবং সেই মত আয়োজন করতে বলেন। এমন কি পুত্র কন্যা ভাই
বোনদের প্রতি সব টান অস্বীকার করে, সংসারের মায়া ত্যাগ করে, স্বামীর পাদুকা বুকে ধরে, তিনি জ্বলন্ত
চিতায় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু বরণ করেন।
১৭৭২ সালে আনন্দময়ী তাঁর কাকা জয়নারায়ণ কে “হরিলীলা” গ্রন্থ রচনায় বিশেষ সাহায্য করেছিলেন।
অবিভক্ত বাংলায় কিছুকাল আগেও হিন্দু সমাজে বিবাহ, অন্নপ্রাশন প্রভৃতি মাঙ্গলিক অনুষ্টানে উলুধ্বনি
সহকারে বহু গীত গাওয়া হোতো। যদিও বর্তমান যুগে এই প্রথা অনেক কমে গিয়েছে। এই গীতগুলির
অধিকাংশই আনন্দময়ীর রচিত।
আমরা মিলনসাগরে তাঁর কবিতা তুলতে পেরে আনন্দিত |
কবি আনন্দময়ীর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন।
উত্স : যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বঙ্গের মহিলা কবি, ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ (১৯৩০ খৃষ্টাব্দ)
. কালের কণ্ঠ ব্লগ
. Banglapedia
. http://www.somewhereinblog.net/blog/sanchaypagla/3593
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতা প্রকাশ - ২১.৯.২০১১
...