আসুন আমরা অন্ধকার পালন করি আলোর পৃথিবী থেকে দূরে, নিরেট আঁধারে নিভিয়ে দিই মোম, হ্যালোজেন প্রদীপের শিখা হ্যাজাক লন্ঠন দিয়া, অনিবার্য প্রণম্য আগুন শ্মশানস্তম্ভের মতো জ্বলে ওঠে যে কাঠ চিতা অথবা চুল্লির গনগনে আঁচে শুয়ে যে প্রাণ তার থেকে মেপে নিই দূষণের পরিমাণ তথ্য-বিষাদ, হাওয়ার মধ্যে ছিল কত অবসাদ নিরন্ন প্রহর আয়ু, ধাতব গলন, অথবা উষ্ণায়ন বিষ ধোয়া দিয়ে ঢাকা ঘাসের আস্তরণ জলবায়ুতে লেগে হাজার হাজার বিষ পোকা |
আসুন আমরা উষ্ণতার বিপরীতে হিম জমাট অশ্রু দিয়ে মুছে দিই সূর্যের আঁচ, আসন্ন অস্তরাগে সূর্যাস্ত মহিমা অথবা পরমানু তাপে পুড়ে যায় যে চাঁদ, গ্রিনহাউসের কাচে তুলে রাখি জ্যোত্স্নার বিভা, হিমবাহ গলে জল, যদি তুষার যুগের পরবাস, যদি বিষুব ছুঁয়ে আলো আসে গ্লোবাল বাতাসে ক্লোরোফিলকণা থেকে খুঁটে নিয়ে ভোরের সকালে, সাইবেরিয়ার হাঁস নেমে আসে পরিযায়ী সাঁত্রাগাছির ঝিলে একমিনিটের অন্ধকার নীরবতার শীতকালে পেয়ে যাবে চঞ্চুময় ভাষা উষ্ণতার |
তুমি ভাবো আমি তোমার বিবাহিতা স্ত্রী আমাকে ব্যবহার করা যায়, যে ভাবে খুশি অঢেল রোদের তাপ থেকে সরিয়ে নিয়ে ছায়া অথবা লালসার নিভু-নিভু আঁচে সেঁকে নেওয়া মাংসের স্বাদু যৌনতায় আমাকে ব্যবহার করা যায়
যেহেতু আমি তোমার স্ত্রী, বিবাহিতা অতএব স্ববিরোধ অপ্রতিরোধ্য এবং ঝগড়া বিবাদের মাঝে আহত গর্জন, থাবা গুটিয়ে রাখে নির্জন শাসনে, ঝলসে ওঠে খর জিভ অবাধ্য আঙুল শ্বদন্তে লেগে থাকে অতৃপ্ত ঢেকুর
তুমি ভাবো আমি তোমার একান্ত নির্ভরতা ছুঁয়ে আমি বেঁচে আছি কৃতজ্ঞ হারেমে প্রতি রাতে ছুটে আসে বিষ তির, তীক্ষ্ণ হারপুন আদিমব্যাধের হাসি হালাল উল্লাস খোজা হাবসির দল জ্বলন্ত মশালে ঘিরে রাখে দাহ্য উত্সব, দগ্ধ শিকার বধ্যভূমির মাচান
ঝরোখায় বসে আমি তুমুল আহ্লাদে বয়নের সুতো দিয়ে বুনে তুলি নানা রঙ হর্ষ-বিষাদের ফুল, ক্ষত সেলাই-এর ভাঁজে লুকিয়ে রাখি চামড়া গোটানো চাবুক নিপুণ শিল্প কাজ প্রবাদবচন কথামুখ ‘সংসার সুখের স্থান পুরুষ প্রধান’
তুমি ভাবো এ সবই তোমার বিবাহ অধিকার বহির্ভূত প্রেম অবৈধ যৌন বিকার জ্বরে আমাকে বিলুপ্ত করে একান্ত তোমার বিষাক্ত করোটি থেকে বিষলালা ঝরে মাংসতন্তুস্নায়ু শিরাধমনীর প্রাত্যহিকে সমবেত আর্তনাদে জেগে ওঠে ভোর |
তুমি যে অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ( সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের এই কবিতাটি 'একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি'-র পত্রিকার ১ জুলাই ২০০৭ এর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল | )
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় বাকি কথা লিখি পদ্যে অসময় ধ্বংস হত্যা ক্রোধের রক্তে লাল ঘামমাটিময় এখন দঃসময়
জেগে থাকে চোখ কোটরে কঙ্কাল আলজিব চাটে কার্তুজসিসাবিষ শস্যের মাঠ শ্মশানের প্রান্তর এক হয়ে আছে মৃত্যুর কাছে হিম
ত্রাসের কাছে স্তব্ ধ বোবাভয় বারুদ বুলেট জিহাদের হুংকারে উড়ে আসে চোখে পোড়া মানুষের ছাই রক্ত জমাট কালশিরা পাঁজরে
আকাশে মিনার গম্বুজ ছুঁয়ে চাঁদ খুনখোশরোজ গ্রাম থেকে শহরে কবে মুছে দেবে রক্তের নোনাদাগ চেয়ে আছো তুমি ক্লান্ত আকাশ ভরে