কবি অঞ্জলি দাশের কবিতা
*
ঋতুসংহার
কবি অঞ্জলি দাশ

অর্ধেক রসেবশে ডুবে আছে, আর বাকি অর্ধেক পাখা
গ্রীষ্মতাড়িত---পাশে পাশে ঘনিয়ে আসছে উচ্ছ্বাস,
সমারোহ ছেড়ে চলে আসি ঝুল বারান্দার কোণে---পেছনে ছায়া,
স্পর্শ ছাড়াই বুঝি---শরীর কাপাস না মেঘ ?
ফুঁ দিয়ে বলি---এখন সরে থাকো, হাওয়া লাগলেই
উড়ে যাবো ; দক্ষিণের দরজা দিয়ে ঢুকেছো বলেই বসন্ত তো নও।

চিনতে পারিনি বলে আঠারো রকম ফুলের কুঁড়ি
ছড়িয়ে রেখেছি দরজায়---কে ফুটে উঠেছে দেখে ঋতু নির্ধারণ,
তারপর ছড়িয়ে দেবো চুল---চাঁদের দরজা অবদি তৈরি হবে
কালো মসৃণ পথ, খরায় কৃষ্ণ মেঘ---আমাদের ফুলচাষ ;
আর পাখা ? পাখাটি কোথায় রাখি,
প্রজন্মের ব্যবধান দুধদাঁতেই ছিঁড়ে দেবে নাচের পোষাক।

.       
           *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চুনি কোটালের ডায়রি
কবি অঞ্জলি দাশ

তৃতীয়বার পলক তুলতেই, অন্ধকার খেলার কৌশল ভুলে গেলেন
প্রণম্য আলোকদাতা।

ফর্সা হয়ে উঠেছে দেয়াল, মাথা থেকে খুলে পড়েছে শার-শাপান্তের
মেখলা। চোখ বুজে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম সিন্দুকের চাবি।

পড়ে নিও কতবার না না লেখা আছে ঠোঁটে, আর জিভ কেন
কৃষ্ণবর্ণ---ওটুকু জানাতে পারিনি শেষ পর্যন্ত।

শুধু কপালের চামড়া সরিয়ে দেখাতে চাই, আর একটি সবুজ
রঙের শ্লেটে সোনার জলের ছবি। কত যত্নে মা লিখেছে
বড় হও, মা লিখেছে গাছের ছায়ার মতো সত্যি হও।

জানাতে চাই, কতবার মাথা নুইয়ে তবে মহাশূন্যের সমস্ত ভর
সহ্য করেছি একা . . .। আজ ঘুম।

আমার মাথার চারপাশে চাঁদ তারার মালা। হাততালি দেবে না ?

.      
               *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
অগ্নিসাক্ষী
কবি অঞ্জলি দাশ

সারারাত গান হলো, সঙ্গ হলো
শাত্রের শুচিতা মেনে পরদিন প্রাতঃস্নান---
ভেসে গেল শোলার মুকুট।

তোমাকে তো দেবতা মানি না,
পথ জানে, নেশাবস্তু জানে---ভালোবেসে দুঃখ পাও,
কাচের সামনে এসে ভেঙে পড়।
আর পাতালে বসতি যার, সেই আত্মজন
কবন্ধের মালা পড়ে সুখে হাসে।
ডান হাতে অর্ধ-পতাকা মুদ্রা তুলে বলে,
শান্ত থাকো, আবার জন্মাই যদি দেবদাসী হব।
যে আঙুলে স্পর্শ করো,
বসন্ত ঋতুতে তারার আগুনে ডুবে ছিল,
ফুলহীন পত্রবিন্যাসে শুধু সাড়া পাই।

কিছুতেই ভুলতে পারিনা দু’চোখের তারা
সারাক্ষণ রূপ চায় বেল শূন্য থেকে উড়ে আসা চাঁদগুঁড়ো
অকাল বর্ষণে মিশে বিমূর্ত মোটিফ,
কান্নার মতো ছুঁয়ে যায়, আর ছড়িয়ে ফেলি দুর্দিনের অন্নসুখ।

একটিবার চোখ তুলে দেখ
প্রদীপ জ্বালার আগে কী ভাবে জ্বলে উঠছে আঙুল,
তারপর যতবার খুশি ফুঁ দিয়ে নিবিও আলো।

.               *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
মন্ত্রমুগ্ধ সিঁড়ি
কবি অঞ্জলি দাশ

স্বপ্ন আজ কোনদিকে গড়ালে
আমাদের ছাদের বাগান আয়ু পাবে
না বুঝেই মন্ত্রমুগ্ধ সিঁড়ি দিয়ে নামছি পাতালে।

যতটুকু মায়া কিংবা অভ্যাসের গ্লানি
তার সবটিকি ঢাকা রইলো দুই মানুষের মাঝখানে, শূন্যতায়।

এই ঘর আর তার কাঠের আসবাব
হাসতে শুরু করেছিলো একদিন
বুনো গন্ধ জড়ানো রোদ্দুর গ্রাস করছিলো
আমাদের আরবান সুস্থতা।

আরণ্যক ভ্রান্তিতে ও বন্যতায়
ক্রমশই শিথিল হচ্ছিল দুপুরের উড়োঘুম . . .
এই জেগে থাকাটুকু মায়াময় লেগেছিল বলে
নেশা ছুঁইনি, হাত ধুইনি জলে।

জলকেই আজও তীব্রতম নেশার সান্ত্বনা বলে জানি
জলে ডুবে থাকা পূর্ণ কিংবা ভাঙা চাঁদই
আজও সবচেয়ে শোভন মিথ্যাচার।

.        *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ধার করা নদী
কবি অঞ্জলি দাশ

পাশাপাশি হেঁটেছি অনেকদিন,
আঁচলেই বাঁধা ছিল নদী।
তবু তেষ্টা মাখামাখি হাত বাড়াতে দেখেই
পলক নামিয়ে নিয়ে সরে গেছি।

এ আমার ধার করা নদী তুমি জানতে না ?
কখনো কি দেখতে পেয়েছ
এর বুকে একটিও কাগজের নৌকো ভাসিয়েছি ?
একটিও ছেঁড়া চিঠি কোনদিন অক্ষর ধুয়েছে এর জলে ?
স্রোত আটকে কোনদিন বলতে শুনেছ
অকালবোধন শেষ, আমিও ভাসানে যাবো ?

.     
     *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিচ্ছেদ
কবি অঞ্জলি দাশ

ওখানে কেউ আছে, বন্ধ চোখের ওপারে।
কেননা এখানে এই ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের ছেঁড়া পৃষ্ঠা
কারো দীর্ঘশ্বাস লেগে কেঁপে উঠছে বারবার,
বারবার জ্বলে উঠছে
কাগজের বুকে মাথা গুঁজে থাকা কলমের মুখ।

মুখের উপরে ঝরাপাতার মতো কিছু বিষণ্ণতা পড়ে ছিলো ঠিকই,
তাকে তুলে ফেলতে গিয়ে
আঙুলে জড়িয়ে গেল কিছু ভুলও।

তারপর বৃষ্টি এলো,
সেই-ই বলে দিলো---তুমি চলে গেছ।

.        *************************  

.                                                                                   
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর