কবি অঞ্জন আচার্যর কবিতা
আমাকে ধরো
কবি অঞ্জন আচার্য

তোমাকে ধরা আজো হলো না আমার

প্রথম প্রথম যখন তুমি বলতে- আমাকে ধরো,
বেশ লাগতো আমার। তোমার হাতের ওপর হাত রাখি আমি।

তুমি বলতে, আরে না, -এ তো আমার হাত;
তুমি আমাকে ধরো।

আরো মজা লাগতো। অলৌকিক আনন্দে আঁটখানা হয়ে-
তোমার কাঁধের ওপর রাখতাম আমার হাত,

তুমি বলতে- আরে ধুর, এ তো আমার কাঁধ;
তুমি আমাকে ধরো।

মনে মনে আরো আপ্লুত হয়ে উঠতাম
নিজের দুই হাতের তলে তুলে ধরতাম তোমার মুখ।

তুমি কপট রেগে বলতে, আরে বোকা, এ তো আমার মুখ;
তুমি আমাকে ধরো।

এবার অবাক হতে শুরু করি আমি। জাপটে ধরি তোমাকে।
একে একে স্পর্শ করি তোমার শরীর,
একে একে তুমি বলতে থাকো- না, না, না, তুমি আমাকে ধরো।

অনন্তকাল ধরে তোমাকে স্পর্শ করে যাচ্ছি আমি, ধরতে পারি না।

.                   ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
কাটাকুটি খেলা
কবি অঞ্জন আচার্য

আমার নিজস্ব একটা তীক্ষ্ণধার ব্লেড ছিল
যার ওপর আঙুল চালালে ফালাফালা হতো; তবে রক্ত ঝরতো না।

এমন ম্যাজিক দেখে হাততালি দিত জমাট কোলাহল
কেউ কেউ শিহরণে কাঁপতো শীতে।

প্রথম প্রথম তুমিও ট্যারা চোখে বিস্মিত হয়েছিলে
তারপর...

একটা সময় আঙুল থেকে হাত, হাত থেকে পা, পা থেকে সর্বাঙ্গ
কেটে কেটে যখন তুলে দিলাম তোমার হাতে-

তুমি ফোড়ন কেটে বললে- দূর ছাই! এতো দেখি একদমই ভোঁতা ব্লেড,
সম্পর্ক ছাড়া যার কিছুই ক্ষমতা নেই কাটার।

.                   ****************  
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
খাকি উর্দি পরা মানুষ
কবি অঞ্জন আচার্য

খাকি খামের সাথে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে খাকি উর্দি পরা মানুষগুলো

সাইকেলের টুংটাং অকারণ শব্দ নেই, কাঁধে নেই ঝোলা কাপড়ের ব্যাগ
ব্যাগের ভেতর নেই, কত শত গোপন শব্দের হাসি-কান্নার অজানা কথামালা
প্রেরক নেই, প্রাপকও নেই। ঠিকানা লেখা খামগুলোয় নেই কোনো আঠা;
ডাকটিকিটগুলো অযথা বাতাসে উড়ে উড়ে বেড়ায়।

কেউ বলে, এ শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে খাকি উর্দি পরা মানুষগুলো

পেটমোটা যানের চিৎকারে এখানে কানে লাগে তালা
কাপড়ের ঝোলাগুলো ঠাঁই পায় ডাস্টবিনে; কাক ও কুকুরে টেনে ছিঁড়ে খায়,
কথা চালাচালি হয় যন্ত্রের ভেতর ক্রমাগত, প্রতি ঘণ্টায়, মিনিটে-মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে অর্থহীন
এখানে সবাই সবার প্রেরক, সবাই সবার প্রাপক। ঠিকানা কেবল শূন্য এক ডট ডট ডট...
বার্তাগুলো কালো ধোঁয়ায়-ধুলায় গড়াগড়ি খায়।

কেউ কেউ বলে, কারা বুঝি ছক কেটে খাকি উর্দি পরা মানুষগুলোকে হত্যা করেছে।

.                            ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
সত্যি প্রেমের মিথ্যে গল্প
কবি অঞ্জন আচার্য

অন্ধ মেয়েটির সাথে মূক ও বধির ছেলেটির প্রেমের কথাটি হয়ত অনেকেরই অজানা
ঠিক কীভাবে গড়ে উঠলো তাদের এ সম্পর্কÑ সে তথ্য আমার কাছেও জানা নেই;
আমি কেবল নীরব সাক্ষী হয়ে দূর থেকে দেখে যাই ওদের।

ভালোবাসার ঘরে বাস করা প্রতিটি মানুষই বড়ো সুখী, যদি তা হয় বোঝাপড়ার...।

ওদের ভাব বিনিময়টিও বড়ো বিচিত্রÑ একে অপরের হাতের তালুতে লিখে দেয় কথা।
একদিন ছেলেটির হাতে মেয়েটি লিখলো 'সমুদ্র', আর ছেলেটি লিখে দিলো মেয়েটির হাতে 'পাহাড়'।
পাহাড় ও সমুদ্র আলাদা দুটি সত্তা হলেও তারা হাত রাখলো দু'জনার হাতে।

অতঃপর সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটি খুঁজে পেলো সারি সারি স্তব্ধতা;
পাহাড়ে উঠে ছেলেটি শুনতে পেলো উত্তাল ঢেউয়ের সাঁই সাঁই শব্দ।

.                            ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
সহজ-সরল অংক
কবি অঞ্জন আচার্য

আমাদের পূর্বপুরুষেরা এখনও তেলমাখা বাঁশের উপরে ওঠার
প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। রকমারি কসরত করেও
সেই যে এক ইঞ্চি উপরে উঠে আবার দুই ইঞ্চি নেমে যায় নিচে
.                        ওই সমীকরণ আজও অব্যাহত আছে।

ধন্যি তাদের অধ্যবসায়- কেমন করে মাথায় বসাই!

ভাবতে ভালোই লাগে, তবে উপরে ওঠার এ সনাতনি পুরানো পদ্ধতি
ট্রাই করতে মন সায় দেয় না। এখন তো ডিজিটাল যুগ, ওসব করা বড়ো বেমানান।
কেনরে বাবা, এত কিছু থাকতে তেলমাখা বাঁশে উঠতে যাব খামাখা?
আর বাঁশের পাশের ওই যে চৌবাচ্চাটা, ওর ফুটো থেকে তো এখনও
.                                        গড়িয়ে পড়ছে জল।
কলকল, কলকল, কলকল, কলকল, কলকল, কলকল...
অথচ একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবে- জল-পড়া কলগুলো বন্ধ রাখা আছে সব।

এসব পাটিগণিত অনেক কঠিন-কঠিন লাগে; না-হয় বরং বীজগণিতে আসি-
ধরা যাক, এক্সের মান সুখ আর ওয়াইয়ের মান দুঃখ,
এবার শুরু যাক, জটিলে মোড়া সহজ-সরল অংক।

.                     ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
রোদ-বৃষ্টি খেলা
কবি অঞ্জন আচার্য

আমার বাড়ি মেঘলা সারামাস
বৃষ্টিগুলো তুমুল ঝড়ে নামে,
তোমার ছাদে রোদের উড়াউড়ি
বৃষ্টি জমে নীল আকাশের খামে।

খামের ভেতর জমানো অভিমান
রোদ-বৃষ্টি খেলায় খান খান।

.         ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
বৃষ্টি-স্নান
কবি অঞ্জন আচার্য

একটা সময় এমন ছিল বৃষ্টি জলে ভিজতি,
কারণ ছেড়ে অকারণে আমার সাথে মিশতি।

বৃষ্টি জলে ধুয়ে দিতাম ধুলোর বাড়ি তোর,
বাতাস এসে উড়িয়ে দিত সমস্ত ঘরদোর।

খেলতে বসে আনমনেতে বৃষ্টি মেখে কাঁদতি,
ধুলোয় জমা বৃষ্টিতে তুই আমার কথা ভাবতি।

এখন ভাবনা ঘর-সংসার, স্বামী-সন্তান তোর,
বৃষ্টি পড়ে গোপন ঘরে ; সিঁদ কেঁটেছে চোর।

.                ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
ভাঁজ করা দুঃখের প্লাটফর্ম
কবি অঞ্জন আচার্য

ভাঁজ করা দুঃখ জমা আছে পকেটে
পকেটের গায়ে রঙিন ফুলের ছবি,
সুতায় নকশার কারুকাজ কেটে
লেখা আছেÑ 'তুই কি আমার হবি?'

হওয়ার কথা ছিল কারÑ কবেকার দিনে
হাওয়ায় মিলে গেছে সব, ভরা আশ্বিনে

কাশফুল গলে চলে যায় কালো ধোঁয়া ওঠা ট্রেন
কাদাজল মাখা স্টেশনে হুইসেল দেয় প্লাটফর্ম।

.                ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
কিছুতেই কিছু
কবি অঞ্জন আচার্য

কি বিশ্বাস ছিল, অগাধ বিশ্বাস
আর যাই হোক, কিছুই হবে না,
অথচ এখন? জং-ধরা বিশ্বাসের পাড়
জলে ধুয়ে গেছে; মিশে গেছে নদীর ঘরে,
পলি জমে গেছে বিশ্বাসের চরে।

এখন কিছু হলেও কিছুতেই কিছু যায় আসে না...

.             ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*
একান্ত কেউ
কবি অঞ্জন আচার্য

একটা আকাশ অনেক তারা, খানিক গণা
একটা মাটি অনেক ভাগে দ্বিখণ্ডিত।
একটা সূর্য সন্ধ্যাবধি আলোক জ্বালে,
একটা চাঁদে জ্যোস্না কাঁদে বাঁশ বাগানে।
একটা আঁধার বাতাস মাখা অন্ধকারে,
একটা ভোরে হারিয়ে গেছে খুব গোপনে।

একটা হৃদয় হাজার রকম কাঙালপনা,
এক নদীতে জোয়ার-ভাটা, হাজারটা ঢেউ।
একটা জীবন ছোট্ট খুবই; অনেক কথা,
এক জীবনে অনেক মানুষ- একান্ত কেউ।

.             ****************  
.                                                                                           
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
*