কবি অঞ্জন আচার্যর, নিজের লেখা নিয়ে আলাপচারিতা . . .

যখন থেকে লেখালিখি শুরু
সেই শৈবব থেকে নানা গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া আমার। দাদু-ঠাকুরমা, জেঠা-জেঠিমা, কাকা-কাকিমা, বাবা-
মা, ভাই-বোন মিলে ছিল আমাদের যৌথ পরিবার। আমার ছোট কাকা ছিলেন বেশ ভালো একজন গল্প-
বলিয়ে মানুষ। মুখে মুখেই নানা রসের গল্প অনায়াসেই বলে যেতে পারতেন তিনি। যদিও তার এক লাইনও
তিনি কোথাও কোনো দিন লিখেননি। কাকার অধিকাংশ গল্পই ছিল ভূত-প্রেতের। পরিবেশটাকে বেশ রকম
তৈরি করে নিতে জানতেন তিনি। তাই তাঁর গল্প বলার সময়ও ছিল রাতের বেলা। আমরা সব ভাই-বোন
মিলে গোল হয়ে বসতাম কাকার সামনে। একসময় গল্প শুরু হতো। এমনভাবে তিনি আমাদের গল্প বলতেন
যেন বিষয়টা সত্যি সত্যিই ঘটেছিল তাঁর জীবনে। আমরা জড়সড় হয়ে একে অপরের হাত ধরতাম গোপনে।
বুক ধড়ফড় শুরু করতো, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে পড়তো, চোখ যেন ভয়ে ঠিকরে বের হতে চাইতো সেসময়।
গল্প শোনার পর আমরা আর বাড়ির বাইরে যেতে কেউ সাহস পেতাম না। এমনকি ঘর থেকে বের হয়ে
প্রশ্রাব করতে গেলেও মা-ঠাকুরমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম। আমাদের বাড়ির টয়লেটটি ছিল ঘর থেকে
একটু দূরে। আশে পাশে ঝোপঝাড়। রাম নাম জপতে জপতে আমরা টয়লেটে বসতাম। বাইরে দাঁড় করিয়ে
রাখতাম মাকে। মশার কামড় খেয়ে খেয়ে মা আমাকে পাহারা দিতো। এমনটা চলতো প্রায় তিন-চার দিন
ধরে। একসময় কাকার বলা গল্পটা ভুলে যেতাম, হয়ে ওঠতাম কিছুটা সাহসী। আবার অন্য কোনো দিন
কাকা নতুন কোনো গল্প বলতেন, আবার সেই ভয়ে ভয়ে কাটানো হতো তিন-চার দিন। এত ভয় পাওয়ার
পরও কিন্তু আমরা সুযোগ পেলেই কাকার কাছ থেকে গল্প শুনতে চাইতাম। গল্প শোনার তীব্র কৌতূহল ছিল
বলেই হয়তো ভয় পাওয়ার ভয়কে দূরে রেখে গল্প শুনতে চাইতাম।

এমন অভিজ্ঞতা আমাদের কারো না কারো কম-বেশি আছে। মানুষমাত্রই গল্পপ্রেমী। সেই আদিকাল থেকেই
মানুষ গল্প বলে আসছে মুখে মুখে। এভাবেই গল্প ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামগঞ্জ থেকে শহর-বন্দরে; বন্দর পেড়িয়ে
দূরদেশে। কাগজ যুগের আগে মানুষের গল্প থাকতো মুখে মুখেই। ব্যক্তি মানুষের বিচিত্র চিন্তা ধরা দিতো
গল্প হয়ে। কখনো সেটি পেতো অলৌকিক আখ্যা, কখনো বা কিংবদন্তির মূল্য। কেউ গল্প বলতে, কেউ
শুনতে, কেউ বা গল্প  পড়তে ভালোবাসে- এটাই মানুষের বৈশিষ্ট্য।  আর এ গল্পের ধারক ও বাহক এই
মানুষই। মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা গল্প বুনতে পারে। জীবজন্তু, গাছপালা, নদীনালা, পাহাড়-সমুদ্র ইত্যাদি
সকল বিষয় নিয়েই গল্প আছে। আর সেই সব গল্পের স্রষ্টা একমাত্র মানুষ, উপাত্ত কেবল তার পরিবেশ-
প্রতিবেশ। এ জন্যই একজন দক্ষিণ আফ্রিকান গল্প-বলিয়ের সাথে চীনা গল্প-বলিয়ের  অনুসঙ্গের মিল খুঁজে  
পাওয়া মুশকিল।

নিজের প্রসঙ্গে আসা যাক। গল্প লেখা শুরু করি সেই ছেলেবেলা থেকেই। তবে সেগুলো ছিল নিতান্ত কাহিনি
রচনা। কল্পনাপ্রবণ ছিলাম বলেই ভাই-বোনদের মধ্যে আমিই গল্প ও ছন্দ দিয়ে বাক্য লেখার শুরু করি
অনেকটা কাকার মতো করে গল্প-বলিয়ে হওয়ার লোভে। তবে বক্তা হিসেবে কোনো কালেই তেমন একটা
ভালো ছিলাম না বলেই, লিখনির সাহায্য নিই। এভাবেই কাহিনি লিখতে লিখতে একটা সময় আবিষ্কার
করলাম, গল্পমাত্রই কাহিনি নয়; গল্প মানে অন্য কিছু। যাপিতজীবনে প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে গল্প। তার
সবকটিরই যে বাস্তব ভিত্তি আছে তা কিন্তু নয়; তবে বাস্তবতা বিবর্জিতও নয় কোনোটি। আবিষ্কার করি,
অন্ত্যমিলে ছন্দবদ্ধ পঙ্‌ক্তি মাত্রই কবিতা নয়। কবিতা যেন অন্য কিছু। অনেক কিছু বলার পরে কিছুই না
বলা। অথবা কিছু না বলে অনেক কিছু বলা।


পাঠ্যবইয়ের বাইরে পাঠ-সমুদ্রে যাত্রা
আমার পঠন-পাঠন শুরু হয় বলতে গেলে অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের হাত ধরে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, বুদ্ধদেব গুহ- এদের লেখায় বুদ হয়ে থাকতাম সবসময়। এক
রহস্যময় ঘোরে দিন কাটতো আমার। সুনীলের ‘নীললোহিত’ হতে চাইতাম কখনো, কখনো সমরেশের
‘উত্তরাধিকার’ পড়ে জলপাইগুড়ির চা-বাগানে ঘুরতাম। একসময় কালবেলা’র অনিমেষ হতে চেয়েছিলাম
মাধবীলতাকে পাওয়ার লোভে। মাধবীলতা কিন্তু এখনও আমার স্বপ্নের নায়িকা- যারা আমৃত্যু আকাঙ্ক্ষিত
অথচ অধরাই থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু,
শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার থেকে শুরু করে হাল আমলের শ্রীজাত- যা পেয়েছি, তাই পড়েছি।
সেসময় পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের প্রভাব ভীষণ রকম পড়েছিল আমার প্রথম দিককার লেখায়। বহুদিন সময়
লাগে আমার সেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে। পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে পাঠ করি
স্বদেশীয় সাহিত্য। পাল্টে যায় আমার কল্পনার ভূবণ, ভাষা ও শৈলী।


লেখালেখির প্রস্ত্ততি পর্ব
লেখালেখির জন্য আমার কোনো রকম প্রস্ত্ততি তো ছিলই না বরং গল্প লিখি এটা ভাবলেই মাঝে মধ্যে বড়
অবাক লাগে। ছোটবেলায় গল্প-বলিয়ে হতে চেয়েছিলাম। সেই চেষ্টা যে করিনি তা কিন্তু নয়। বন্ধু-বান্ধব বা
মা-ঠাকুরমা’র কাছে কম গল্প ফাঁদিনি আমি। অনেক সময় তারা সেটা বিশ্বাসও করে বসতো। এমনকি স্কুল
কামাই করার জন্য গল্প ফাঁদেছি বহুবার। মা যদিও ধরে ফেলতো, কিন্তু বৃদ্ধা ঠাকুরমা’র মন গলতো ঠিকই।
পরদিন স্কুলে গিয়ে মাস্টার মশাইদের বলতাম নতুন গল্প। ধরা পড়লে জুটতো বেতের বাড়ি, না-পড়লে
মিলতো ক্ষমা।

খুব ছোটকাল থেকেই আমি আঁকাআঁকি করতে জানতাম। বলা যায়, অনেকটা জন্মগত পাওয়া। তবে
মাতৃকূল বা পিতৃকূলের কোনো নিকট-আত্মীয় চিত্রশিল্পী ছিলেন কিনা আমার জানা নেই। মায়ের স্বপ্ন ছিল
আমি বড় হয়ে যেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হই। এর জন্য কম কাঠখড়ও পোড়ানো হয়নি তাঁকে। তবে অস্থির
চিত্তের এই আমি সেই পথে বেশি দূর হাঁটিনি। তারপর কৈশোর পেরিয়ে হতে চাইলাম বড় ক্রিকেটার।  
শচীন টেন্ডুলকার হতে না পারলে যেন জীবনই বৃথা- এই ব্রত বুকে নিয়ে দিনকে রাত, রাতকে দিন করে লেগে
গেলাম ক্রিকেট খেলায়। খেলেছিও অনেক। শর্টকাট ক্রিকেটার হওয়ার জন্য চেষ্টা-চরিত্রও কম করিনি। কিন্তু
লাইফে সাকসেসফুল হওয়ার কোনো শর্টকাট ওয়ে নেই। আর সেটি বুঝতে আরও একটু সময় লাগলো
আমার।


লেখালেখির কৌশল বা বিষয় বৈচিত্র্য
নির্দিষ্ট কোনো কৌশল অবলম্বন করে আমি লেখালিখি না। কখনো আমি বক্তা, কখনো আমি শ্রোতা, কখনো
আমি কোনোটাই না। সেই জন্যই আমার প্রতিটি লেখাই আলাদা। এর একটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক
আছে। ভালো দিকটি হলো, প্রতিটি লেখা পড়েই পাঠক আলাদা আলাদা স্বাদ নিতে পারবেন। যেন তার মনে
হবে এমনভাবে তিনি এর আগে পড়েননি। আর মন্দ দিকটি হলো, এতে করে আমার স্বাতন্ত্র্য থাকছে না।
ধরা যাক, রবীন্দ্রনাথের কোনো একটি কবিতা, গান কিংবা গল্পের টুকরো অংশ যদি ফুটপাথের রাস্তায় পড়ে
থাকে, আর পড়ুয়া মানুষ যদি সেটি কুড়িয়ে পাঠ করেন- লেখাটির নাম না বলতে পারুক, আমি নিশ্চিত,
তিনি ধরতে পারবেন লেখাটি রবীন্দ্রনাথেরই। অর্থাৎ এখানেই লেখকের সার্থকতা। এই স্বাতন্ত্র্য অবস্থান
তৈরি করতে সবাই পারেন না। অনেক শক্তিশালী লেখকও আমৃত্যু চেষ্টা করেও পারেননি। সেই দৌড়ে
আমি যে নেই তা কিন্তু নয়।


নিজের লেখালেখি বিষয়ে আত্মোপলব্ধি বা বিবেচনা
কবিতা লিখছি অনেকদিন। সেই সাথে গল্প লিখি, প্রবন্ধ লিখছি, গবেষণা
কাজও করছি নানা বিষয়ে। পেশায় সাংবাদিক হওয়ার কারণে কাজ
করতে হয় দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সংবাদ নিয়ে। তবে কোনো কিছুকেই
আমি অন্য কোনো কিছুর সাথে গুলিয়ে ফেলি না। যা আমি কবিতায়
বলতে গিয়ে বলতে পারি না, তার জন্য আশ্রয় নিই গল্পের। যেটা বলার
জন্য প্রবন্ধের দাবি করে আমি তাই করি। একেকটা জগৎ আমার কাছে
একেক রকম। আমার কবিতার ভাষার সাথে আমার গল্পের ভাষার
কোনো মিল নেই- সম্পূর্ণ ভিন্নতর।
গল্পকে আমি গল্প হিসেবেই দেখাতে চাই। কবিতা দিয়ে
গল্প বলতে চাই না।

সাহিত্যের একজন নিবিষ্ট কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। ভালো-মন্দ মিলিয়েই চলছে সেই যাত্রা। এখনও
মনের মতো লিখে উঠতে পারিনি কিছু। একেক সময় এমন হয়, যা লিখবো বলে বসেছিলাম, তা আর লেখা
হয়ে ওঠে না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বদলে যায় লেখার মোড়। তবে যে জীবন আমি যাপন করিনি, তা
আমার লেখালেখির ভূমি হয়ে ওঠে না। আমি জোর করে কোনো পটভূমি তৈরি করি না। যেমন ধরা যাক,
কারাগারের কথা। সেখানে আমি কোনোদিন যাইনি। অথবা দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকা কোনো আসামির
সাথেও ভালোভাবে মেশার কোনো সুযোগ হয়নি আমার। কারাগারের জীবনযাপন, খাদ্যাভাস, পোশাক,
কাজকর্ম ইত্যাদি বিষয় আমাকে চলচ্চিত্র দেখে কিংবা বই পড়ে জানতে হয়েছে। প্রত্যক্ষ কোনো অভিজ্ঞতা
নেই। এই বলে সব কিছুরই যে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তার কোনো ভিত্তি নেই। বিষ যে তিতা, তা না
খেয়েও জানা যায়। তবে যা কিছুর সাথে মানুষের নিবিড় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তার জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা
নেওয়া খুবই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণেই জেলখানার জীবন নিয়ে গল্প বা কবিতা লেখা আমার
এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। শিল্পে আরোপিত বস্তুর কোনো ঠাঁই নেই। যেদিন আমি সত্যিকার অর্থে জেলখানার
বিষয়-আশয় জানতে পারবো,  সেদিনই এ নিয়ে লিখবো।  ভাববাচ্যে কোনো কিছু  লেখার পক্ষপাতী আমি
নই। প্রকৃতপক্ষে মানবিক সম্পর্ক, সমাজ-বাস্তবতা, প্রেম-লোভ-ঘৃণা-কাম ইত্যাদি জৈবিক প্রেষণা
আমার গল্পের উপকরণ। তাছাড়া আমার অনেক গল্প-কবিতাই ম্যাজিক রিয়েলিজমে লেখা। অনেক গল্প-
কবিতা আমি বলেছি ফ্যান্টাসি আকারে। তাই বলে মাটি ও মানুষ থেকে সেগুলো বিচ্ছিন্ন নয়; বরং অনেক
বেশি জীবন-ঘনিষ্ঠ।


যাদেরকে লেখালেখির আদর্শ মনে করি
আদর্শ কবি বা গল্পকার হিসেবে সুনির্দিষ্ট কারো নাম বলা আমার জন্য
মুশকিল। বিশ্বসাহিত্যের বহু লেখকের গল্প আমি পড়েছি। সবারই কিছু
না কিছু আমার ভেতর কাজ করেছে। সবার কাছেই কিছু না কিছু আমি
গ্রহণ করেছি। তাছাড়া একজন লেখকের সবগুলো গল্পই যে অসাধারণ
হবে এমনটা ভাবা অন্যায়।
তবে
রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গল্প-কবিতা আমাকে আজো মোহিত করে। বুদ্ধদেব বসুর
‘আমরা তিন জন’ গল্পটি আমার বেশ ভালো লেগেছিল।
জীবনানন্দ দাশের কয়েকটি গল্প পড়ে
আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কী চমৎকার বিশ্লেষণ! শরৎচন্দ্র,
বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর,
বনফুল, সতীনাথ, মানিক, মহাশ্বেতা- এমন বহু নাম মনে পড়ছে যাদের গল্প পড়ে রোমাঞ্চিত
হয়েছিলাম। জগদীশ গুপ্ত, সমরেশ বসু, হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, আখতারুজ্জামান
ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, সৈয়দ ওয়ালীউলস্নাহ, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিনা হোসেন থেকে শুরু
করে হাল আমলের শহীদুল জহির, ইমতিয়ার শামীম, শাহাদুজ্জামানের বেশ কয়েকটি গল্প
আমাকে প্রাণিত করেছে। এছাড়া সুবোধ ঘোষ, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী,
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়,
কমলকুমার মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, বিমল কর, আবুল বাশার, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, প্রফুল্ল
রায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, অমর মিত্র, অভিজিৎ সেনগুপ্ত,
নবারুণ ভট্টাচার্য,
দিব্যেন্দু পালিত, স্বপ্নময় চক্রবর্তী থেকে তিলোত্তমা মজুমদার- পশ্চিমবঙ্গের এমন অনেকের নাম
মনে পড়ছে যাদের কোনো না কোনো গল্প আমার ভালো লেগেছে। আসলে নাম বলে শেষ করা
যাবে না। তবে কবিদের লেখা গল্প পড়তে আমার বেশ ভালো লাগে। তাদের গদ্যের মধ্যে
একধরনের খেলা থাকে, রহস্যময়তা থাকে।
আল মাহমুদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, পুর্ণেন্দু পত্রী’র
লেখা সেজন্যই একটু অন্য রকম।

একটা সময় মস্কোর প্রগতি প্রকাশনের সুবাদে প্রচুর রাশিয়ান সাহিত্য পড়েছি। লেভ তলস্তয়,
ম্যাক্সিম গোর্কি, আন্তন চেখভ, নিকোলাই গোগল, আলেক্সান্দর পুশকিন, ইভান তুর্গেনেভ, ভ্লাদিমির
কারলেস্কো, মিখাইল শলোখভ, সের্গেই আমেত্মানভ, ইউরি নাগিবিন, ইউরি কাজাকভ, ভালেরি ওসিপভ,
কনস্তানতিন পাউসেত্মাভস্কি এমন অনেক লেখক আমাকে দারুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। হেমিংওয়ে,
মান্টো, মার্কেজ, নাদিম গার্ডিমার, টনি মরিসন, নাগিব মাহফুজ থেকে শুরু করে হারুকি মুরাকামি,
আবেলারদো কাস্তি লো, মিলান কুন্ডেরা, ওক্টাভিও পাজ, ওরহাম পামুক- এমন লেখকদের অনুবাদ গল্প পড়ে
দারুন আপ্লুত হয়েছি। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের অনুবাদের কারণে ভালো লেখাও মনে কোনো দাগ
কাটতে পারেনি।


যাদের জন্য আমার লেখালিখি
পাঠকের কথা ভেবে আমি কোনো লেখা লিখি না। কেননা সকল পাঠকের চিন্তা-চেতনা, পঠন-পাঠন,
রুচিবোধ এক নয়। তাই আমি জানি না, আমার পাঠক কোন রুচির। আমার একটি কবিতা বা গল্প যে সকল
পাঠকের কাছে ভালো লাগবে সেটা ভাবা বোকামি। একটি কবিতা একজনের কাছে অসাধারণ লাগতে পারে,
অন্যজনের কাছে তা আস্তাকুড়ে ফেলার মতো হতে পারে। সত্যিকার অর্থে, আমার নিজস্ব কিছু বলার আছে
যা অন্যের সাথে শেয়ার করার। আর সেটি বলার মাধ্যম হিসেবে গল্প বা কবিতাকে বেছে নিই মাঝে মাঝে।


বর্তমান সময়ে যা নিয়ে লিখছি
এ সময়ে লেখালিখির চেয়ে পড়ছি বেশি। কবিতা বা গল্প লেখার করণ-
কৌশল নিয়েও দেশি-বিদেশি লেখা পড়ছি। মাথার ভেতর অনেক লেখা
জমা আছে। ওইগুলো ঘুণপোকার মতো কাটছে। ওগুলো লিখে উঠতে
হবে। তবে আগে পিছে বলে আমার কাছে কিছু নেই। আমার কাছে
আমার সকল লেখাই সন্তানের মতো। উচ্ছন্নে যাওয়া সন্তানের প্রতি যেমন
মা-বাবার অস্থিরতা থাকে তেমনই লেখার থিম হারিয়ে যেতে বসলে
আমার ভেতর তেমনটা করে। তখন লিখতে বসি। একান্ত লিখে উঠতে
না পারলে মাথার ভেতর নিয়ে ঘুরে ফিরি- মন্দ লাগে না।


ভবিষ্যতে যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে
ব্যক্তিজীবনে আমি খুব একটা হিসেবী মানুষ নই। জীবনটা আমার কাছে
কোনো অংক নয়; বরং অনেকটা ভূগোলের মতো। যেকোনো সময় তার
আচরণ পাল্টে যেতে পারে। এই ভালো-এই মন্দ। ভবিষ্যতে কী
নিয়ে কাজ করবো তা ভবিষ্যতেই বলতে পারবো। আপাতত পরের
স্টেশনে যাওয়া মতো টিকিট কাটা আছে আমার। সেই পথটুকুই যেতে
চাই। তারপর না হয় পরের স্টেশনের টিকিট কাটবো।


কবিতা লিখি কেন
কবিতা লিখি কেন? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি প্রায়শই আমাকে হতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ
ধরনের প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকি। উত্তর যে নেই তা কিন্তু নয়। আছে। উত্তরটি বরং রবীন্দ্রনাথের
ওপর চাপিয়ে দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করি। রবীন্দ্রনাথের তাঁর পঞ্চভূত গ্রন্থের পরিচয় প্রবন্ধের
এক জায়গায় বলেছিলেন- “জীবন এক দিকে পথ আঁকিয়া চলিতেছে, তুমি যদি ঠিক তার পাশে
কলম হস্তে তাহার অনুরূপ আর একটা রেখা কাটিয়া যাও, তবে ক্রমে এমন অবস্থা আসিবার
সম্ভাবনা, যখন বোঝা শক্ত হইয়া দাঁড়ায়- তোমার কলম তোমার জীবনের সমপাতে লাইন
কাটিয়া যায়, না তোমার জীবন তোমার কলমের লাইন ধরিয়া চলে। দুটি রেখার মধ্যে কে
আসল কে নকল ক্রমে স্থির করা কঠিন হয়। জীবনের গতি স্বভাবতই রহস্যময়, তাহার মধ্যে
অনেক আত্মখণ্ডন, অনেক স্বতোবিরোধ, অনেক পূর্বাপরের অসামঞ্জস্য থাকে। কিন্তু লেখনী স্বভাবতই একটা
সুনির্দিষ্ট পথ অবলম্বন করিতে চাহে। সে সমস্ত বিরোধের মীমাংসা করিয়া, সমস্ত অসামঞ্জস্য সমান করিয়া,
কেবল একটা মোটামুটি রেখা টানিতে পারে। সে একটা ঘটনা দেখিলে তাহার যুক্তিসংগত সিদ্ধান্তে উপস্থিত
না হইয়া থাকিতে পারে না। কাজেই তাহার রেখাটা সহজেই তাহার নিজের গড়া সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর
হইতে থাকে, এবং জীবনকেও তাহার সহিত মিলাইয়া আপনার অনুবর্তী করিতে চাহে।”
অর্থাৎ নিজের জীবনের রেখার পাশে কলমের রেখা দেওয়ার জন্যই হয়ত লিখি, বিশেষ করে কবিতা।
সত্যিকার অর্থে আমার কিছু বলার আছে, যা সবার সাথে ভাগাভাগি করার। ভাবনাগুলো তাই লিপিবদ্ধ করি
। বলা যায় ভাবনার বুদ্বুদগুলো মস্তিষ্ক থেকে প্রসব করি মাত্র। তার চেয়েও বড় কথা, কবিতা আমি লিখি
না, কে যে আমাকে দিয়ে কবিতা লেখায়।


কবিতা লেখার জন্য একজন কবির যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার
পৃথিবীর কোনো কিছুই সাধনা ছাড়া হয় বলে আমার মনে হয় না। কবিতাও তার বাইরের কিছু নয়।
প্রতিনিয়ত সাধনার ফলেই নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে গড়ছি আজো। প্রতিভা-ফতিভা বলে কিছু থাকলে, তা
থাকতে পারে। আমার প্রতিভা নেই, আমি তার ওপর নির্ভর করেও বসে নেই। আজ থেকে দশ-বারো বছর
আগে লেখা আর আজকের লেখার মধ্যে এই যে আমি বিস্তর ফারাক দেখতে পাই- তা তো সাধনারই ফল।
যদি সেসময়ের লেখাকে এখনও কালজয়ী ভেবে বসে থাকতাম, তাহলে কুয়োর ব্যঙ হয়ে বেঁচে থাকতে হতো
। তবে সত্যি কথা বলতে কি, একেকজনের প্রস্তুতিপর্ব একেক রকম। প্রচুর পড়তে হয়, দেখতে হয়, শুনতে
হয়- আর তাই শব্দ আকারে বলতে হয়। পড়ার বিকল্প আসলে পড়াই, অন্য কিছু নয়।


সমসাময়িক যাদের কবিতা ভালো লাগে
ভালো লাগা না-লাগা তো আপেক্ষিক ব্যাপার। আমি যেহেতু সমকালে
বাস করি, অতীত কিংবা ভবিষ্যতে নয়; সেহেতু সমসাময়িকদের লেখা
আমার পড়তেই হয়। অনেকেই ভালো লাগে। তবে সবার সব কবিতাই
আমার ভালো লাগে, এমনটা নয়। এমনকি রবীন্দ্রনাথ কিংবা
জীবনানন্দেরও না। এ মুহূর্তে কয়েকজনের কথা মনে আসছে। সমকালের
মধ্যে আপন মাহমুদের কবিতা আমার বিশেষ ভালো লেগেছে। তাঁর   
‘সকালের দাঁড়িকমা’  বইটি পড়তে অনেকেই উৎসাহিত করি আমি।
এছাড়া কুমার চক্রবর্তী, ওবায়েদ আকাশ, মজনু শাহ, বদরে মুনীর, অতনু
তিয়াস, মাসুদ পথিক, ফিরোজ এহতেশাম, মুজিব ইরম, জুয়েল মুস্তাফিজ
এমন অনেকের অনেক কবিতা আমার ভালো লেগেছে। তাছাড়া শূন্য
দশকের পরের দশকের অনেকে ভালো লিখছে।

সত্যিকার অর্থে ভালো লাগার কোনো পূর্বশর্ত নেই। আমি যে সমাজে বাস
করি তাদের কবিতার ভেতর সেই সমাজ বাস্তবতার রূপ পাই। কবিতার
কল্পরূপই আসল। অকাল প্রয়াত আপন মাহমুদের ভেতর
তা আমি
বিশেষভাবে পেয়েছি। কবিতার চিত্রকল্পই, কবিতার প্রাণ, দেহ তো বাক্য দিয়ে গড়া।


নব্বই ও শূন্য- এই দুই দশক সম্পর্কে মূল্যায়ন
আমার জন্মটা আশির প্রান্তে। শৈশব কেটেছে আশিতে। কৈশোর থেকে তারুণ্যে বেড়ে ওঠা
নব্বইয়ে। আর লেখালেখির শুরু শূন্য থেকে। রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে,
অর্থনৈতিকভাবে পুরো নব্বই দশকটাই গেছে বড়ো ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে। স্বৈরাচার পতন
আন্দোলনে রাজপথ থেকে মফস্বল শহর তখন উত্তাল অবস্থা। ময়মনসিংহে আমরা মিছিল
করেছি- স্বৈরাচার নিপাত যাক। পুলিশ আমাদের তাক করে গুলি ছোড়ে। একটুর জন্য প্রাণে
বেঁচে যাই আমি। আমার ঠিক পাশের একটি বন্ধ ভিডিও ক্যাসেটের দোকানে গিয়ে গুলিটি
লাগে। এরপর ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী
জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন। এসময় অধিকাংশ কবিতাই লেখা হয়েছে
স্লোগানধর্মী- “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার
তার শ্রেষ্ঠ সময়”। হেলাল হাফিজই কেবল এমনটা লিখেছেন তা কিন্তু নয়; রুদ্র মুহাম্মদ
শহিদুল্লাহ, দাউদ হায়দার, মাকিদ হায়দার, আবু হাসান শাহরিয়ার, মোহন রায়হান তারাও
এমন স্লোগান নির্ভর কবিতা লিখেছেন। শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহাও বাদ
যাননি।

শূন্য দশকের ক্ষেত্রে এমন উত্তাল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তারা বরং অন্য পরিস্থির
মুখোমুখি হয়েছে। তারা ক্ষয়িঞ্চু রাজনীতি দেখেছে, রাজনীতির নামে স্বেচ্ছাচারিতা দেখেছে,
রাষ্ট্রের রক্ষক হয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ভক্ষক হতেও দেখেছে। দখলদারিত্ব, দুর্নীতি ও সর্বোপরি
মানবিক স্খলন দেখেছে। তাই শূন্যের কবিদের মধ্যে এক ধরনের বেদনাহত নীরব চিৎকার
শোনা গেছে প্রতিনিয়ত।


পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাক
ভাষাগত পার্থক্য তো দু’দেশের মধ্যে আছেই, তবে ভাবগত পার্থক্যটাও কম নয়। তা নিতান্ত
স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গের একজন কবি হয়ত লিখতে চাইলে লিখতেই পারেন- ‘ট্রামের জানালার
পাশে চলন্ত রাস্তা’। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো কবি তা লিখবে কী করে?  এদেশে তো ট্রাম
লাইন নেই, যার পথ ধরে গড়িয়ে যাবে ট্রামগাড়ি (জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশে থাকলে, আর
যাই হোক, অন্তত ট্রামের ধাক্কায় মরতে হতো না)। মেট্রো রেলও তো নেই। তাছাড়া স্থান-কাল-
পাত্রের পরিবর্তনের সাথে সাথে কবিতার অবয়ব পরিবর্তন হবেই- এটাই স্বাভাবিক। তবে
পশ্চিমবঙ্গের কবিতায় কাঠিন্য ভাবটা কম, যা আমাদের এখানে প্রায়শই দেখা যায়। তাছাড়া
ওদের কারো কারো কবিতায় কোনো না কোনোভাবে গল্প থাকে, আমাদের এখানে থাকে গল্প-
সংলাপ, অথবা বিমূর্ত গল্প।


ব্লগে সাহিত্য চর্চা সম্পর্কে মূল্যায়ন
ব্লগের একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে, তা অস্বীকার করার নয়। এটা বিশ্বব্যাপী প্রসারিত। কাগুজে
পত্রিকার মতো সীমাবদ্ধ নয়। লেখাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারে ব্লগ। তবে ব্লগ লেখা কিন্তু
সাহিত্য চর্চা নয়। সাহিত্যের ভেতর যে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও পরিস্থিতি দরকার তা
অন্তর্জালিক জগতে আমি কম খুঁজে পাই।


লিটলম্যাগ ও ব্লগের তুলনামূলক গুরুত্ব
না, আমার তা মোটেই মনে হয় না। লিটলম্যাগের চেয়ে ব্লগ আমার কাছে অধিক গুরুত্ব বহন
করে না। লিটলম্যাগের আগে ‘লিটল’ শব্দটি ব্যবহৃত হতে পারে, তবে সত্যিকার লিটলম্যাগ
‘লিটলবয়’ রূপও পেতে পারে কখনো-সখনো। তখন তার প্রলয়ঙ্করী শক্তি দেখে বিস্মিত হতে
হয় বৈকি। কিন্তু ব্লগে তেমনটা বিস্মিত কেউ সহজে হতে চায় না। অন্তত বাংলাদেশে না।
এদেশের এমন অনেক বড় লেখক আছেন যারা এখনও কাগজ-কলম দিয়ে হাতে লিখেন,
কম্পিউটারে নয়। এমনকি তাঁরা কম্পিউটার ব্যবহারও করতে জানেন না। এটা দোষের কিছু
নয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বা খাপ খাওয়াতে একটু সময় লাগে। এক্ষেত্রে ভালো লাগারও
একটা বিষয় আছে।


দৈনিক পত্রিকায় সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে পর্যবেক্ষণ
আমাদের দেশে যেসব দৈনিক সাহিত্যপাতা বের করছে, সেইসব পত্রিকার মালিকেরা সাহিত্য
পড়েন না বা পড়ার আগ্রহ বোধ করেন না। সম্পাদকদের মধ্যে দুই তিনজন ছাড়া বাকিরা
সাহিত্য পাতাটিকে অবহেলার চোখে দেখেন। তারা পাতা বের করার অর্থে বের করেন মাত্র।
তাছাড়া অনেক সাহিত্য সম্পাদকের ভালো পঠন-পাঠনেরও অভাব আছে। আর পত্রিকার
পাতায় শব্দের সীমাবদ্ধতা তো আছেই। হাত-পা বেঁধে সাঁতার যেমন কাটা যায় না, তেমনি
শব্দের সীমারেখা টেনে, আর যাই হোক সাহিত্যকর্ম হয় না। শব্দ গুনে গুনে যিনি সাহিত্য
রচনা করেন, তিনি লেখক হতে পারেন- সাহিত্যিক নয়। তিনি যদি বৃথা সাহিত্যচর্চা রেখে
অঙ্কের মাস্টার হন, তাহলে অন্তত নিজের তো বটেই, সাহিত্যের মান বাঁচে।


কবির সঙ্গে যোগাযোগ -
ইমেল –  
anjon_acharya@yahoo.com         
ঠিকানা - ৪৬/১ পশ্চিম তেজতুরি বাজার (নিচতলা), তেজগাঁও, ঢাকা- ১২১৫, বাংলাদেশ।
মোবাইল - +৮৮১৯১৯৪৭৪৫৪৪ ,  +৮৮১৭১৭৩৪২৪৭৩


উত্স : কবির সঙ্গে ইমেলে পত্রালাপ।  


কবি অঞ্জন আচার্যর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।  



আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা :-   
মিলনসাগর       
srimilansengupta@yahoo.co.in      





এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২৯.১১.২০১৪
...
কবির পরিচিতির পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .
কবির পরিচিতির পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .