কবি অনল চট্টোপাধ্যায় -  বাংলা গানের স্বর্ণযুগের একজন বিশিষ্ট গীতিকার সুরকার। তাঁর আদি
বাড়ি অধুনা বাংলাদেশের সিদ্ধকাটি গ্রামে। যদিও হাওড়ার সালকিয়ায় তাঁদের পরিবারটি বেশ প্রাচীন।
তিনি জন্মেছিলেন কালীপূজোর দিন ১৯২৭ এর ২৪শে অক্টোবর।

তিনি হতে চেয়েছিলেন লেখক। সাহিত্যের প্রতি সেই বাল্যকাল থেকেই এক অমোঘ টান ছিল তাঁর। সতেরো
বছর বয়সেই তিনি এক প্রকাশনার প্রহেলিকা সিরিজের ২৩তম গ্রন্থ কিশোর রোমাঞ্চ উপন্যাস লিখে বেশ
নাম করে ফেলেন । বাড়িতে সাহিত্য সংস্কৃতির পরিবেশই তাঁকে সাহায্য করেছিল।  সঙ্গে ছিল সঙ্গীত
শিক্ষাও। তাঁর পিতামহী অত্যন্ত গুণী শিল্পী ছিলেন। ওনার কাছেই কবির সঙ্গীতে হাতেখড়ি।

তাঁরা চার ভাই পাঁচ বোন। বাড়িতে সাংস্কতিক অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশগ্রহণ করতেন। মেজো ভাই ছোট
থেকেই ভাল নাচতে পারতেন। তাঁর স্মৃতিচারণের লিখেছেন যে তাঁরা সবাই মিলে “আমাদের দল” নামে
একটা সাংস্কতিক গোষ্ঠীও তৈরি করেছিলেন।

লেখালিখির কারণেই তাঁর আলাপ হয়ে গিয়েছিল হেমেন্দ্রকৃমার রায় ও প্রভাতকিরণ বসুর সঙ্গে। ওনাদের
কাছ থেকে পেয়েছিলেন প্রেরণা। কলেজে পড়তে পড়তেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ওনাদেরই  উত্সাহে
লেখালেখি করতেন।

ঠিক এই সময়েই সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর আলাপ হয়েছিল। তিনিই তাঁকে নিয়ে
গিয়েছিলেন প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘে ১৯৪৬ সালে। প্রগতিমূলক সাহিত্য সংস্কৃতি তখন সাংস্কতিক
জগতকে প্রভাবিত করছে দারুণভাবে।

ক্রমশ সর্ব ভারতীয় সাংস্কতিক সংস্থা ভারতীয় গণনাট্য সঙেঘর সভ্যপদও জুটে গেল। আর সেই সঙ্গে ঘটল
তাঁর জীবনের সব চেয়ে বড় একটি ঘটনা। গণনাট্য সঙ্ঘেই পরিচয় হল সলিল চৌধুরীর সঙ্গে। তাতেই কবির
জীবনের দিকবদল ঘটল। প্রচুর লেখালেখির মধ্যেও ক্রমশ গান তাঁকে আকর্শন করতে লাগলো। ছোটবেলা
থেকেই গানে তালিম নেওয়া ছিল। নাড়া বেঁধে শিখেছিলেন গুরু পঞ্চানন রায়ের কাছে। পরে পেলেন সলিল
চৌধুরী, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখের সঙ্গীত আদর্শে নিজেকে তৈরি করার সুযোগ। শিক্ষা
পেয়েছিলেন তারাপদ চক্রবতী, গণেশ বসু, নিত্যপ্রিয় ঘোষ দস্তিদার প্রমুখদের কাছে।

আস্তে আস্তে কবিতা রূপ নিল তাঁর গানে। সাহিত্য সাধনা পৌঁছে দিল তাঁকে সঙ্গীতচর্চায় । সলিল চৌধুরীর
শিক্ষকতায় তিনি হয়ে উঠলেন গীতিকার ও সুরকার এবং পরে ওনার সহকারী হয়ে কাজ করার সুযোগও
পেলেন। সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত.সহকারী হয়ে পাশের বাড়ি, আজ সন্ধ্যায়, মহিলামহল, ভোর হয়ে এল,
তাশের কেল্লা, বাড়ি থেকে পালিয়ে, গঙ্গা, প্রভতি ছবিতে কাজ করলেন।

১৯৫৪ এ তাঁর কথা ও সুরে প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় এইচ এম ভি থেকে। গণনাট্য সঙ্ঘের। মুখ্য শিল্পী
ছিলেন সুচিত্রা মিত্র । আর গীতিকার ও সুরকার হিসেবে প্রথম স্বীকতি জুটল প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
কণ্ঠের গানে।

যোগ দিলেন আকাশবাণীতে গীতিকার সুরকার হিসেবে। সেই সময় খুব সহযোগিতা পেয়েছিলেন সুপ্রীতি
ঘোষ, পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, অতুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখদের কাছে, তা কবি তাঁর স্মৃতিচারণে লিখেছেন।
১৯৭১ - ৭২ নাগাদ আকাশবাণীতে যখন শুরু হল যুববাণী তখন সেই অনুষ্ঠানে প্রযোজকের কাজও
করেছিলেন। কবি দূরদর্শন এর সূচনা থেকেও অনেক ভাবে যুক্ত ছিলেন।

১৯৫৫ এ অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন মণাল সেনের রাতভোর
ছবিতে। তাঁর জীবনের প্রেরণাদাতা হিসেবে স্মরণে এনেছেন তাঁর বিশিষ্ট বন্ধু বিমান ঘোষের নাম।

তাঁর লেখা ও সুর দেওয়া বহু গান আজও অমর হয়ে লোকের মনে বিরাজ করছে।

আমরা
মিলনসাগরে  কবি পবিত্র মিত্রর কবিতা ও গান তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দিতে পারলে
আমাদের এই প্রচেষ্টা সার্থক মনে করবো।

কবি অনল চট্টোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন
কবি অনল চট্টোপাধ্যায়ের গান শুনতে নিচরে লিংকে ক্লিক্ করুন ---
http://www.raaga.com/channels/bengali/music/Anal_Chatterjee.html    
http://www.hummaa.com/music/artist/anal-chatterjee/11523/albums/    
http://www.dhingana.com/anal-chatterjee-songs-search#      


উত্স - কবির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ সম্ভব হয়ে ওঠে নি। কিন্তু একবার হঠাৎই ইনটারনেট সার্ফিং
.        করতে করতে নিচের ওয়েবসাইটটি থেকে কবির বাংলায় টাইপ করা, ১৯ বৈশাখ ১৪১৩,
.        শনিবার, ১৩ মে ২০০৬, তারিখে লেখা, একটি স্মৃতিচারণ আমরা হাতে পেয়ে যাই। এই পাতার
.        পরিচিতিটি তাঁর সেই স্মৃতিচারণ অবলম্বনেই লেখা। এই লেখাটি সবার সামনে আনার
.        অপরাধের বোঝা মাথায় নিতেও আমি রাজি আছি। আশাকরি কবি এবং পাঠকবর্গ আমাকে ক্ষমা
.        করবেন। মিলন সেনগুপ্ত।  
http://www.umiacs.umd.edu

আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in     


এই পাতা প্রকাশ - ২৭.০৪.২০১৩
...