কবি অপরাজিতা গোপ্পীর কবিতা
*
অদূরে
কবি অপরাজিতা গোপ্পী

শিউলি ঝরে পড়ে
.        সবুজ দূর্বাঘাসে,
সুচি শুভ্র মুক্তোর মত
.        শিশিরে মুখ গুঁজে।

এপারে বিশ্বাসের দৈন্যতা
.        বুদ্ধির চাতুর্যে
বার বার নিয়েছে হরণ করে
.        মানুষের ভালবাসা।
তবু মরু প্রান্ত ঘিরে
.        ডাহুকেরা ডেকে যায়,
.        জোনাকিরা জ্বলে,
.        আমার মনে, নক্ষত্রের বুকে
.        তোমার অব্যক্ত যন্ত্রণার
.        আকাশ ঘিরে
.                জোনাকিরা জ্বলে।
.        শিউলি ঝরে পড়ে
.        প্রেমের প্রত্যাশায়।

অদূরে শিউলি পরে পরে
.        শিশিরের বুকে বালোবাসার প্রত্যাশায়
অদূরে শিউলি ঝরে পড়ে
সুচি শুভ্র শিশির বিন্দু
মুক্তার মত ছেয়ে থাকে
সবুজ দূর্বাঘাস।

.       
   *****************

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
ক্ষমতার পিরামিড
কবি অপরাজিতা গোপ্পী
(
রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, ফরওয়ার্ড ব্লক। এই কবিতাটি, নন্দীগ্রামে ১৪ই মার্চ ২০০৭ এর
গণহত্তার পর,
'দৈনিক স্টেটসম্যান' পত্রিকাতে ১৯ এপ্রিল ২০০৭ এ প্রকাশিত হয়েছিল | )

ফাগুণের আকাশভরা এত আনন্দ
পলাশের রঙে অরণ্য উঠেছে রাঙা হয়ে
কোকিলের কুহুতান রোমাঞ্চিত প্রকৃতি |
কিন্তু হঠাত্ এত শোনিতধারা
কোথা থেকে বয়ে আনে জিঘাংসার ভয়ঙ্কর বার্তা?
সবুজ ধানের ক্ষেত হয়ে ওঠে রক্তনদী |
এ নদী কোনদিকে হবে প্রবাহিত?
রুদ্ধ হবে স্রোত, নাকি সমুদ্রে হবে হারা?
ফাগুনের আগুন হয়ে ঝরে পড়ছে
বুলেটবিদ্ধ মানুষের আর্তনাদ---
মৃত্যুর মিছিলে অরণ্যের অন্ধকারে
শকুনের ডানা ঝাপটার শব্ দ |
এ কোন গ্রহ? কোন গ্রহের অধিবাসী আমরা?
নরমেধ যজ্ঞের আগুনে ধরিত্রী আজ ধর্ষিতা |
গড়ে উঠেছে পিরামিড সাম্যবাদ-পুঁজিবাদের সমন্বয়ে,
কৃষকের মৃতদেহের উপর গড়ে ওঠা
পিরামিড বেয়ে কারা যেন চূড়ায় উঠছে |
চূড়ায় বসে দূরবীন নিয়ে রাজা
নব আবিষ্কারে আহ্লাদিত
পারিষদ-বেষ্টিত কস্তুরীর গন্ধে বিমোহিত |


গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে রকেট ছুটছে
দূরবীনে দৃশ্যের পর দৃশ্য ভেসে উঠছে |
অদূরে ওরা কারা? কতগুলি উলঙ্গ নারীদেহ
বুলেটে বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে মুখ থুবড়ে
পড়ে আছে রক্তমাখা সবুজ ধান ক্ষেতে,
স্বপ্নের দিশারী অর্ধউলঙ্গ শিশুরা
রক্তের নিরানি দিয়ে ফসলের উত্সবে উঠেছে মেতে |
নারী-শিশুর রক্তে সোনালী ধানক্ষেত হয়ে ওঠে
ফাগুনের আগুনঝরা বিদ্রোহের বহ্নিশিখা,
পিরামিড ঘিরে পড়ে থাকে সারি সারি লাশ!
সমাজতন্ত্রের কবরের উপর
জ্বলে ওঠে পুঁজিবাদের পিলসুজ!


রাজা তুমি কি শুনতে পাচ্ছ
স্বৈরাচারী শাসকের পাশবিক উল্লাস?
শুনতে পাচ্ছ, অত্যাচারিত পদদলিত
মানুষের কান্নার হাহাকার?
সমতলের অরণ্য অন্ধকারে ধর্ষিতা নারীর
আগুনে ঝলসানো মৃতদেহ দেখতে পাচ্ছ?
দেখতে পাচ্ছ মাতৃত্বের নিরাভরণ বিমুক্তি?
জীবিতাবস্থায় যাদের ছবি
কেউ তোলে না তারা আজ টিভি-র পর্দায়
সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় জ্বলজ্বল করছে |
রাজা, পিরামিডের চূড়া কি আকাশ ছুঁয়েছে?
সূর্যের আলো কি রক্তনদীর বুকে রামধনুর
মতো দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠেছে?
রক্ত ঝরছে, অন্ধকারে ঢেকে গেছে ধরিত্রী,
ধর্ষিতা নারীর মৃতদেহ বেওয়ারিশ লাশ
হয়ে পড়ে আছে মাঠের গহ্বরে |
আর রাজা পিরামিডের চূড়ায় বসে স্বপ্ন দেখছে---
রাশি রাশি লাশ মানে রাশি রাশি অর্থ, রাশি রাশি বুলেট
এবং প্রচুর উল্লাস |

.           **************
**********     


.                                                                                      
সূচিতে . . .    
.                             
অন্যান্য কবিদের সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার সূচির পাতায় . . .    
.                                           
সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কবিতার মূল সুচির পাতায় . . .   


মিলনসাগর
*
লাটাইয়ের সুতোয় ভোকাট্টা
কবি অপরাজিতা গোপ্পী

ঘরের আগল আমরা ভাঙবো
হিমালয়ের বাধার প্রাচীর ভিঙিয়ে
সাগরের উত্তাল ঢেউ টপকিয়ে
সূর্য উদ্ভাসিত পৃথিবীর মুক্ত আকাশের নীচে
এবার আমরা হবো পদাতিক।
আমরা আর লাটাইয়ের সুতোয়
হাোয়ায় ভেসে ভেসে গোত্তা খেয়ে
ঘুড়ির ভোকাট্টা হতে চাই না।
আমরা এবার বুঝে নিতে চাই
নিজ অধিকার।
শুধু নারী হয়ে আমরা আর
বন্দী হয়ে থাকতে চাই না তোমাদের সমাজে,
ঘুড়ে দাঁড়াতে চাই, জ্বলে উঠতে চাই
চাই আগুন হতে---প্রকৃত নারীর মতো
বাঁচতে চাই নারীর মর্যাদায় ;
সতীত্ব পরীক্ষায় নারী কেন যাবে চিতার আগুনে ?

একজন মেয়ে মানুষ হয়ে---
ধনিকের বণিকের লাটাইয়ের সুতোয়
আর ভোকাট্টা হতে চাই না।

.          *****************

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কণ্টকিত পথেই পথের দিশা
কবি অপরাজিতা গোপ্পী

দুর্যোগঘন অন্ধকারে
পথ কেটে কেটে হাঁটছি
কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না,
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো কিনা
সংশয়ের দোলায় দুলছি,
তবু হাঁটছি
দূরে সমুদ্র গর্জন
বালুয়াড়ির বুকের উপর দিয়ে
সন্তর্পণে এগিয়ে চলেছি,
ঝড়ের দাপটে মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ছি
দিরভ্রান্তের আশঙ্কায়
দীর্ঘপথ অতিক্রান্তে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত
মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকে
পথের দিষায় থমকে যাচ্ছি
চারিদিকে কাঁটাখোচা বালুচর অন্ধকারে দিশাহারা
এবার কোনদিকে হাঁটবো ?
দক্ষিণে-বামে-না সম্মুখে
দিগভ্রান্ত পদাতিকের মত
সন্দেহের দোলায় দুলছি।
মনে আশঙ্কা---
দুর্যোগঘন অন্ধকারে নিশ্চিত পথ হারিয়েছি
তবু সঠিক পথ খুঁজে নিতে
.        আবার পথে নেমেছি
কণ্টকিত পথেই খুঁজে নিতে চাই
.        লক্ষ্য পথের দিশা।

.          *****************

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*