কবি অপূর্ব বর্মন-এর কবিতা
*
আগুন
কবি অপূর্ব বর্মন

আগুন কারো তাঁবেদারী করে না
জল ছাড়া কাউকে ভয়ও করে না
বুঝিনা মানব জীবনে সে বন্ধু না শত্রু ?

কখনো সে ধংসের লেলিহান শিখা, আবার
কখনও পুলকিত – মাটি, বীজ, বৃক্ষ, ফসল
ও পাতের জুঁইফুল সাদা ভাতের গন্ধ |

একাধারে পোড়ায় বুক, পোড়ায় মুখ
পোড়ায় আস্ত দেহ, গ্রাস করে সংসার সুখ
ধর্ষিতা কিশোরীর অযান্ত্রিক শরীর
ঘরপোড়া গরুর ভয়ার্থ চোখের চাহনী |

তবু স্বাদ আনে আধপোড়া রুটির নরম দেহ
আর ঝলসানো মাংসের তন্দুরী রোষ্ট
এতে আমরা সবাই খুশি ---
গেষ্ট এবং হোষ্ট |

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
যুযুধান প্রান্তর
কবি অপূর্ব বর্মন

তোমার সহচার্য পাবো বলে
এই আকাশে নিরন্ন ওড়া আমার
খেয়াল ছিল না উপসী নাড়িতে খিদে
তবু সব কিছু উপেক্ষা করে
আগামী পৃথিবীকে---
রামধনু রঙের স্বপ্নে ঢেকে
জীবনের ইজেলে প্রাণবন্ত ছবি আঁকা----


বেঁচে থাকার ইচ্ছা জগে মনে
ফুল ফোটে মৌমাছিও আসে
তবু কোথায় যেন একটা---

বন্ধুর হাত যে এখন নরম যুযুধান প্রান্তর
এই পৃথিবীটা যে এক হিংসার বাতায়ন ----

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
অবিকল
কবি অপূর্ব বর্মন

এটাকে আবার কবিতা ভেবে বোসনা জেনো
এটা একটা আর্কাইভ্ মাত্র |

“এই কবিতাটা ভালো হয়নি”
বললে খুব অবাক হয়ে যাবো
আর তোমার ভেতরটাও পরিস্কার দেখতে পাব
স্নিগ্ধতা আর বিশ্বাদ---
পাশাপাশি হাঁটে হাটে-বাজারে
গুলিয়ে ফেললেই মুশকিল -----

একটা লাশ কে যদি জীবিত ভাবো
উষ্ণ রক্ত, শ্বাসের অভাব মেটাতে পারবে কি ?
শব থেকে সব কিছু পাওয়া দুর্লভ-----

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সৃষ্টির অন্তিমে
কবি অপূর্ব বর্মন

মানুষের প্রিয় রং নিশ্চই সবুজ
তাই সে সর্বদাই চায়
মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকতে
সবুজের মধ্যে সজীবতা আছে, তারুণ্যও
আমারও ভালো লাগে------ তবু,
আজকাল আকাশের ওই সোনালী আলোর
প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে একটু একটু করে
প্রজাপতি কি সহজেই সেখানে চলে যায়
আমারও ইচ্ছা করে ওদের মতো
ইচ্ছে ডানা মেলে উড়ে যাই
হারিয়ে যাই সেই সোনালী বিচ্ছুরণে
অন্তিম সৃষ্টির সত্যতায় |

.          ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
রীতি
কবি অপূর্ব বর্মন

একটার পর একটা বসন্ত পার হয়ে যতো
আত্মবৃত্তআস্তে আস্তে ছোট হ’য়ে আসে
আত্মীয়-স্বজন বন্ধু পরিজন
খুব একটা সাড়া দেয়না  কেউ---

আনন্দ হোক বা মর্মান্তিক বার্তা
ভাগ করে নেয় না পুরানো স্বজন
তবু চলতে থাকে অবিচলতা ঘনঘোরে
নৈশ্বব্দের শব্দ শুনতে শুতে বিরহে
মৃত্যু যন্ত্রণা স’য়েও বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা ----

একদিন খুব সহজে উদ্বেগ অশান্তির পল
পিছনে ফেলে মান অপমানের আত্ম সমর্পণ |
তখন প্রেম-ভালবাসা উপচে পড়ে ফুলের মতন
একমাত্র ফুলই করে মধুর প্রেম বিতরণ ------

.               ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সেতু-বন্ধন
কবি অপূর্ব বর্মন

জগৎ সভায় মাথা উঁচু ক’রে একা
সকল ভারতবাসীর বিবেক উন্মোচন ক’রে
চলতে শিখিয়েছিলে একমাত্র তুমিই
তুমিই ছোট্ট বিলে, সেই সময় না এলে
পড়ে থাকতো ভারতবর্ষ গতানুগতিক |

অতীত ভারত---- ভবিষ্যৎ ভারত, এই দুই-এর
মাঝখানে এসে দাঁড়ালে তুমি সেতু হ’য়ে
সব ধ্যান-ধারণা পাল্টে দিয়ে শিক্ষা দিলে
মুচি-মেথর মূর্খ দরীদ্র বিদ্যান সবাই এক ও অদ্বিতীয়ম |

কন্যাকুমারী থেকে এভারেষ্ট শৃঙ্গ এক ক’রে দিয়ে
স্মৃতির কোলাজে চোখবুজে খুঁজে চলি তোমাকে
কারণ তোমার সেই ভারতবর্ষ আবার বিপন্ন
তোমার নিয়মেই মানুষ হ’য়ে উঠুক চির উজ্জ্বল মানবিক মহিমায় |

.               ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
বন্ধ দরজা
কবি অপূর্ব বর্মন

প্রেম কথাটার মধ্যে কোন অস্তিত্বই নেই
বাস্তবতাও নেই, একটা অনুভূতি মাত্র ---
তাই শুধু প্রেম নয়, প্রয়োজন
এক  প্রেমিক পুরুষ  এবং  প্রকৃতি----

দিনান্তের সূর্য দরজায় কড়া নাড়ে
রজনীগন্ধার সুবাস ছড়ায় ঘ্রাণে
পা টেনে নিয়ে যায় প্রেমের উঠোনে ----

সারাদিনের ক্লান্ত পরিশ্রমী শরীর
আর চায়না চলতে অবিরত
এগিয়ে যায় একটু প্রেমের সন্ধানে----

সেওতো অপেক্ষারত সব কাজ শেষ করে
নিষ্পলক আঁখি তার চঞ্চল উদগ্রীব
বন্ধ দরজা যেন খোলার অপেক্ষায়
রোদগন্ধ বিদায়,  চন্দ্র সুবাস আগতপ্রায় ----

.           ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
প্রত্যাবর্তন
কবি অপুর্ব বর্মন

এতো দিন ছিলাম আমি দ্রাক্ষারসে সমৃদ্ধ

ভালোবাসার চোরা চালানকারীরা নানান বিন্যাসে
সুকৌশলে তৃপ্তির মরুভূমিতে নিয়েছে শুষে
শূন্যতায় পড়ে আছি অন্ধকার এর বধ্য পল্লিতে
এখন আমি লেবেলহীন এক খালি বোতল |

হঠাৎ দেখি মধ্য দুপুরের মতো জ্যোত্স্নালোক !
নাকি তীক্ষ্ণ চাঁদের মতো ধারালো একমুঠো রোদ ?
এই দ্যোতনায় যখন বিহ্বল দিশেহারা
ঠিক তখনই পেলাম মুক্তি |

মন থেকে হতাশার কাজল মুছে নিয়ে
বিশ্বাসের বাগান সাজাবার নন্দিত সময় এসেছে
এখন আর সেই লেবেলহীন হতাশা নেই মনে
আমি এখন নববধূরূপে শো-কেসের তীব্র অহংকার |

.                   ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
সে
কবি অপূর্ব বর্মন

তুমিই একাধারে জগৎধাত্রী
সৃষ্টির সেই রূপ বারে বারে প্রকাশিত
প্রভাবিত ; কখনও স্নেহময়ী মাতা ,
কখনো ভগিনী,  কখনও কন্যা
আবার পুরুষের বুকে প্রেমময়ী সঙ্গিনী,
আবার বধূ হয়েও রূপ রেখাকে আচ্ছন্ন ক’রে
স্নেহ,  মমতা,  মাতৃত্ব, সন্তান  সংসার
সব ফেলে অসুর বিনাশিনী |

কবিতার কলমে এসেছো উটে,
কখনো দেখেছি রঙ তুলির ক্যানভাসে
কখনো আবার গল্পের নায়িকা , কখনো উপন্যাসে |

একান্ত ভাবে  জীবন রসে ভরিয়ে রেখছেকে ?
তুমিই সেই অনন্যা নারী -----
.                            তাই শুধু বলি সে |

.               ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
প্রেম
কবি অপূর্ব বর্মন

দ্রব্যের দুর্মূল্যতার জ্বালা বুঝতে
অর্থনীতি নিয়ে এম. এ করার
প্রয়োজন পড়ে না |

আমলা মন্ত্রী থেকে শাহবাগের নায়ক
আম জনতা থেকে ফাঁসুড়ে তারামসি
দিন মজুর ভাগচাষী থেকে কাজের মাসী
সবাই জানে -----

হৃদয়ের অন্য এক নাম
জন্মান্তরবাদী প্রেম !

.       ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর