এক- যে ছিলো গাছ, সন্ধে হ’লেই দু-হাত তুলে জুড়তো ভূতের নাচ | আবার হঠাৎ কখন বনের মাথায় ঝিলিক মেরে মেঘ উঠতো যখন ভালুক হ’য়ে ঘাড় ফুলিয়ে করতো সে গরগর বৃষ্টি হ’লেই আসতো আবার কম্প দিয়ে জ্বর | এক পশলার শেষে আবার যখন চাঁদ উঠতো হেসে কোথায় বা সেই ভালুক গেলো, কোথায় বা সেই গাছ, মুকুট হ’য়ে ঝাঁক বেঁধেছে লক্ষ হীরার মাছ |
ভোরবেলাকার আবছায়াতে কান্ড হ’তো কী-যে ভেবে পাইনে নিজে, সকাল হ’লো যেই একটিও মাছ নেই, কেবল দেখি প’ড়ে আছে ঝিকির-মিকির আলোর রুপালি এক ঝালর |
একটি রাতের একটু দেয়া নেয়া . এই তো হল শেষ, আজ সকালে পাহাড়-দেশের মেয়ে, . ছাড়ব তোমার দেশ | মনের মাঝে ঘরছাড়া কেউ আছে . চিনি নে কেউ তাকে, যাবার বেলা বিদায় ব’লে যাব . ডিহাং নদীর বাঁকে |
দুয়ার ঠেলে একটুখানি হেসে . আবার ফিরে গেলে, হঠাৎ তুমি এ কী নূতন বেশে . বাহির হয়ে এলে ? বুকে তোমার আগুন-রঙের শাড়ি . আগুন যে ধরালো, উঠল জ্ব’লে পাহাড়তলীর বনে . বর্শা-ফলার আলো |
কোথায় ছিল সবুজ বনের তলে . ঐ আগুনের শিখা----- জিহ্বা মেলে হাজার বছর ধ’রে . তৃষার মরীচিকা ? ঐ আগুনে পড়ছি তোমার মুখে . তারি অনল-গীতা, জ্বলছে তোমার সর্বদেহে বুকে . সর্বনাশের চিতা ||
রুগ্ ণ দেহ ভগ্ন মন, বসন্তের স্তব্ধ দ্বিপ্রহর, শুধু মাঝে মাঝে শুনি রুক্ষকন্ঠ কাকের চীৎকার, কুক্কুটের তীক্ষ্ণ ডাক দূর হতে আসে একবার, শুষ্কপত্রে বার দুই শোনা যায় করুণ মর্মর |
বাহিরে তাকায়ে দেখি শিয়রের মুক্ত জানালায়, তীব্র রৌদ্রে কাঁপে চোখে বিকারের উগ্র মরীচিকা, চম্পকের শীর্ণ ডালে নৃত্য করে লেলিহান শিখা, শেষ রক্তবিন্দু ঝরে রিক্তপত্র পলাশ-শাখায় |
এখানে গলির মোড়ে চকিতে দেখেছি এক নদী---- দুই দিকে জলের ঝিলিক মাঝখানে চোরাবালি হাসে | দুই তীরে ধসে-পড়া সারি সারি পথিকের ঢিবি সূর্যাস্তের সেনা |
জানি আজ পৃথিবীতে দিকে দিকে যুগসন্ধ্যা নামে ধোঁয়া ও কালির ছাপে দুর্ভাগা আকাশ, তবু এই পড়ন্ত বেলায় এখানে গলির মোড়ে একদল তরল তরুণী চকিতে দেখাল সেই নদী ||
হু হু করে ট্রেন ছোটে----চৈত্রের দুপুর কামরায় ভিড় পাখা নেই----- অসহ্য গুমোট রুমালে কপাল মুছে একটেরে ঠায় সে আছি |
চোখ ফেরে এখানে ওখানে হঠাৎ কী যেন হয়ে যায় যেদিকে তাকাই সকলি অদ্ভুত ঠেকে, চুপ করে ভাবি আমি যে হইনি ওই অন্ধ দরবেশ কিংবা ওই নুলো কিংবা ওই খোঁড়া ভিখারিটা এ বড়ো আশ্চর্য কথা, আমি যে হয়েছি আমি, আর কিছু নয় এ বড়ো বিস্ময় |