. আমি তোর মুখ ফুলানো, . ভগবানের ধার ধারিনে ভাই, . আমার ঠাকুর হাসিখুশি . খেলায়ধুলোয় পাগল দেখতে পাই | যেমন হাসি উঠল ফুটে, চৌদ্দভুবন এল ছুটে ; সৃষ্টি হল, সাড়া প’ল, সবাই ধরলে তাই | . তাই তাই তাই চলল ভেসে, . ঠাকুর খুন হেসে হেসে, . হাসির তরঙ্গকত, বলিহারি যাই | প্রেমে সৃষ্টি গরগর, কাঁপে ভাবে থরথর, তাল ধরলে ঠাকুর আমার, নাচিল সবাই | . (আবার) যাই ফুরুল বাইরের খেলা, . ভেঙ্গে গেল মহা মেলা, ওই হাসিতে ডুবে গেল সাড়া শব্দ নাই | . এ মজা ভাই দেখে দেখে, . আমিও ভাই থেকে থেকে সবাইর সঙ্গে মিলে মিশে, হাসি নাচি গাই | . যখন আসবে সময় যাবে বেলা, . ফুরাবে এই ভবের খেলা, ডুবে যাব হাসির মাঝে, ধিন্ ধিন্ ধিন্ তাই তাই . যারা মুখ ফুলিয়ে থাকে ভবে, . তাদের বহুত দেরি হবে, সবায়ের সঙ্গে নাচা গাওয়া ভিন্ন পন্থা না ||
আয় আয় সবে ভাই যাই দ্বারে দ্বারে কবি অশ্বিনীকুমার দত্ত
. আয় আয় সবে ভাই যাই দ্বারে দ্বারে, . ভারতের ভাগ্য দেখি ফেরে কিনা ফেরে | সোনার এ রাজ্য ছিল, ক্রমে ক্রমে সকল গেল, . এমন যে ভারতবর্ষ গেল ছারেখারে | . অন্নপূর্ণ রাজ্য হারে, হা অন্ন হা অন্ন করে, . লক্ষ্মীর ঘরে এমন কষ্ট, কে সহিতে পারে, ছিল ধনধান্যে ভরা, হল এমন কপাল পোড়া, . অন্নাভাবে হা হতোহস্মি প্রতি ঘরে ঘরে | . এই দেশেতে তুলা হয়, এই তুলা বিলাতে যায়, . এই তুলাতে কাপড় তথায় বোনে মাঞ্চেস্টারে || মাঞ্চেস্টার হতে এসে, ঘরের টাকা ঘরে নেয় শুষে, . এদিকে দেশের তাঁতি অনাহারে মরে || . এই কি দেশের ভালোবাসা, . তাঁতি ভাইদের এই দশা, তাদের এই দুঃখ তোরা, দেখিস কেমন করে ; . আয় রে চেষ্টা করি সবে, . দেশি কাপড় বিক্রি হবে, . সাজা রে দেশি তাঁতি সবে, ধন রত্ন হারে | ইংরাজ শিল্পী দেখ গিয়ে, বাঙালির টাকা নিয়ে, তেতালা চৌতালায় কেমন, সুখে বিরাজ করে | (আর) বাঙালি শিল্পী যারা, অনাহারে মরে তারা, দেখে তাদের এ দুর্দশা, প্রাণ যে কেমন করে ||
আমি প্রাণ বিলাব, প্রাণ বিলাব কবি অশ্বিনীকুমার দত্ত
. আমি প্রাণ বিলাব, প্রাণ বিলাব, . প্রাণ বিলাব জগন্ময় | উঁচু-নীচু মানব না তো সবাই যেন লুঠে লয় || তিল তিল নেবে সবে, আমার জীবন ধন্য হবে, . আমার তো আর নাহি রবে, . সবাইর মাঝে হব লয় || . যদি কেহ শত্রু ভেবে, . এ প্রাণের ভাগ নাহি লবে, . নিশ্চয় জানিবে তবে, . সে ছেলে তার বাপের নয় || . যত আছিস পশু পাখি, . কেউ কোথাও না থাকিস বাকি, . আমায় কৃপা করবি নাকি, . এ ব্রত যাতে সফল হয় || যে যুগের যে সাধু হও, কাছে এসো, কাছে রও, আপন গুণে ভাগ লও, যদিও দেবার যোগ্য নয় || . তোমরা প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে, . আছ জগত্ বুকে নিয়ে, . আমার করো তেমনই হিয়ে, . জগত্ ব্যেপে সুখময় ||
বড়ো ভালবাসি বর্ষা এমন ঋতু একটিও নয় কবি অশ্বিনীকুমার দত্ত
বড়ো ভালবাসি বর্ষা এমন ঋতু একটিও নয় | . টুপ্ টুপ্ টুপ্ শুনতে শুনতে, . বার থেকে মন আসে সরে, . বার থেকে বাইরে পড়ে, . চারদিকের সব ধুলা মাটি, . আস্তে আস্তে বিদায় লয় || . (তখন) আপনার মাঝে আপনি বসে, . বাঁধনগুলি যায় গো খসে, যারা আপন দেখে রকম, কাছে যেতে পায় ভয় || . আস্তে ভর রেখে বুকে, . (মন) উঠতে থাকে ঊর্ধ্বমুখে, দেখে কান্ড, এ ব্রহ্মান্ড, হতভম্ব হয়ে রয় || . উঠতে উঠতে কোথায় গেলো, . গ্রহ তারা চেয়ে রল, কে বলিবে কী হইলো, সে তো বলবার কথা নয় ||
আয় রে আয় ভারতবাসী, আয় সবে মিলে কবি অশ্বিনীকুমার দত্ত
আয় রে আয় ভারতবাসী, আয় সবে মিলে, প্রণমি ভারত-মাতার চরণ-কমলে | আয় রে মুসলমান ভাই আজি জাতিভেদ নাই, এ কাজেতে ভাই ভাই আমরা সকলে | ভারতের কাজে আজি, আয় রে সকলে সাজি, ঘরে ঘরে বিবাদ যত, সব যাই ভুলে | আগে তোরা পর ছিলি, একন তোরা আপন হলি হইরে তবে গলাগলি, ভাই ভাই বলে | ভারতের যেমন মোরা, ওরে ভাই তেমনই তোরা, ভেদাভেদ যত কিছু, কোথা গেছে চলে | আয় রে ভাই সবে মিলি, মাখি ভারতের ধূলি, এমন আর পবিত্র-ধূলি, নাহি ভূমন্ডলে | এ ধূলি মস্তকে লয়ে, ভাবেতে প্রমত্ত হয়ে, হিন্দু যবন কাজ করিব জাতি-ভেদ ভুলে | . এই ধূলিতে আকবর তোদের, . এই ধূলিতে শ্রীরাম মোদের, আরো শৌর্য বীর্য কত, মিশায়েছে কালে | ওরে ভাই, এ ধূলির গুণে, খাটি সবে প্রাণপণে, ভারতের দুর্দশা মোরা, নাশিব সমূলে ||