কবি অতুল্য ঘোষ - জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলের, ১৩ ও ১৪ নং লক্ষ্মীনারায়ণ
মুখার্জী রোডে, তাঁর পৈত্রিক বাড়ীতে। পিতা কার্তিকচন্দ্র ঘোষ এবং মাতা হেমহরিণী দেবী।
ঘোষ পরিবারের আদি নিবাস অবিভক্ত বাংলার হুগলী জেলার, হরিপাল ব্লকের অন্তর্গত জেজুর গ্রামে। তাঁরা
সেখানকার জমিদার হবার সাথে সাথে কলকাতার বন্দরে স্টিভেডোর-ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন। সম্ভবত তাঁরা
কলকাতার জাহাজ থেকে মালা ওঠা-নামা করার স্টিভেডোর ব্যবসার আদি ব্যবসাদারদের অন্যতম ছিলেন।
তাই তাঁরা ছিলেন বিপুল অর্থের অধিকারী। তাঁদের জেজুর গ্রামের জমিদারীর সাথে কলকাতায়
পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলে একাধিক অট্টালিকা ছিল। এছাড়াও হাওড়াতেও তাঁদের প্রভূত সম্পত্তি ছিল। হাওড়ার
সালিখার বাজার তাঁরাই প্রতিষ্ঠা করেন। সালিখায়, অতুল্য ঘোষের পিতামহ গোপালচন্দ্র ঘোষের নামে
একটি রাস্তা আজও রয়েছে। হাওড়ার লিলুয়া থেকে বৈঁচি পর্যন্ত রেললাইনের দু’ধারের সমস্ত জমিই তাঁদের
জমিদারীর অন্তর্গত ছিল।
মাত্র ১১ বছর বয়সে পিতা কার্তিকচন্দ্রের মৃত্যুর পর অতুল্য ঘোষ, তাঁর মাতামহ অক্ষয়চন্দ্র সরকারের গৃহে
গিয়ে থাকতে শুরু করেন। অক্ষয়চন্দ্র ছিলেন সে যুগের খ্যাতনামা সাহিত্যিক। সকলে তাঁকে সাহিত্যাচার্য
নামে জানতেন। তিনি ছিলেন বহুশাস্ত্রবীদ, পণ্ডিত, সুলেখক, তীক্ষ্ণধী, ব্যবহারজীবী এবং তত্কালীন বঙ্গ
সমাজের, “সাধারণী” এবং “নবজীবন” নামক দুটি সাহিত্যপত্রের সম্পাদক। তাঁর বন্ধুবর্গের মধ্যে ছিলেন
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁর স্বদেশপ্রীতিও ছিল প্রবাদপ্রতিম। ১৮৯১
সাল থেকে ১৯১৭ সাল, এই ২৬ বছর তিনি কোনো বিদেশী দ্রব্য ব্যবহার করেন নি! তাঁর স্বাদেশিকতা এতই
প্রবল ছিল যে এই ব্রত গ্রহণের প্রথম সাত বছর বাড়ীতে কোনো এলোপ্যাথি অষুধও প্রবেশ করতে পারে নি!
মাতুলালয়ে এসে অতুল্য ঘোষ তখনকার দিনের বহু সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাহিত্যিক জ্যোতিষ্কদের
চাক্ষুস দেখার সুযোগ পান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন লালা-বাল-পাল এর লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক
ও বিপিনচন্দ্র পাল। দেখেছেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি, নলিনীরঞ্জন পণ্ডিত, অমূল্য
বিদ্যাভূষণ, দীনেশচন্দ্র সেন, নগেন্দ্রনাথ বসু, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় প্রমুখকে খুব কাছ থেকে।
তাঁকে প্রথা অনুযায়ী কোনো বাংলা বা ইংরেজী স্কুলে ভর্তি করা হয় নি। তখনকার দিনের কয়েকজন
নামকরা শিক্ষকের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে তাঁকে পড়াশুনা শেখানো হয়। তিনি শেক্সপিয়ার পড়েন এবং
ভারত ও ইউরোপের রাজনৈতিক ইতিহাস পাঠ করেন।সব বিষয়েই তাঁর অনুরাগ সবসময়ে জাগরুক ছিল।
তাঁর লেখার মধ্যে প্রায়ই “স্পেংলার”, “হোয়াইটহেড”, “ডিউই”, “হাক্সলে”, “সান্তানা”, “বার্গস” এবং অন্যান্যদের
উদ্ধৃতি দেখা যায়। তাঁর “পত্রালী” নামক ছোট্ট পুস্তিকাতে অস্তিত্ববাদ এবং কামু সম্বন্ধে বিদগ্ধ আলোচনা
করেছেন। পড়তেন আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন আধুনিক পত্রপত্রিকার সাথে বাঙালী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী,
সমাজবিজ্ঞানী এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের লেখা।
দাদা অমূল্যচরণ দেখলেন যে ভাইয়ের বিষয়, সম্পত্তি ও সংসারের প্রতি কোনও আকর্ষণ নেই। তাই ১৯২৩
সালে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাঁর বিবাহ দেওয়া হয় ১৩ বছরের বিভাবতী দেবীর সঙ্গে। বিভাবতী দেবী
রামায়ণের লক্ষণ-পত্নী উর্মিলার মতো নিঃশব্দে অন্তরালেই থেকেছেন। তাঁর দৃঢ় নিষ্ঠা ও সুশৃঙ্খল
জীবনযাপনের জন্যই অতুল্য ঘোষ তাঁর পরিচিতি লাভ করতে পেরেছিলেন বলে বিদগ্ধজনেরা মনে করেন।
১৫-১৬ বছর বয়স থেকেই অতুল্য ঘোষ, কলকাতায় তাঁর বাড়ীর কাছে ২৬ পাথুরিয়াঘাটা স্টীটে উত্তর
কলকাতা জেলা কংগ্রেসের অফিসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। য়ে কোনো দায়িত্ব দিলে তা তিনি
সানন্দে পালন করতেন। ১৯২৫ সালে ২১ বছরে পা দিয়েই তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যপদ গ্রহণ করেন।
তিনি প্রথমে কলকাতা এবং পরে হুগলী জেলা কংগ্রেস কমিটির সদস্য হন। এরকম সময়েই তাঁকে লেলিনের
লেখার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ভারতের প্রথম যুগের কমিউনিস্টদের অন্যতম ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, যিনি
ছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত বা স্বামী বিবেকানন্দের ভাই। অতুল্য ঘোষ তাঁর জীবনী “কষ্ট কল্পিত”-তে লিখেছেন যে
এই সময়েই তাঁর মাথায় আসে তাঁর পরবর্তী জীবনে লেখা বই “নৈরাজ্যবাদীর দৃষ্টিতে গান্ধীবাদ” এর প্লট।
শেষ পর্যন্ত তিনি গান্ধীবাদেই দিক্ষিত হয়ে যান হুগলীর কংগ্রেসী নেতা বিজয় মোদকের সান্নিধ্যে এসে।
১৯৩০ সালে তাঁকে মেদিনীপুরের পুলিস ধরে একটি খুনের মামলায়। কিন্তু কোনো সাক্ষী-প্রমাণ না পেয়ে
তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরকম সময়েই তাঁকে আত্মগোপন করে থাকতে হয় দুবছরের জন্য একটি
মত্সজীবি পরিবারের আশ্রয়ে। ১৯৪২ এর গান্ধীজির “ভারত ছাড়ো” আন্দোলনের সময় তিনি কারাবরণ
করেন। এই বার মেদিনীপুর জেলের ভেতরেই এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জের সময়ে, পি.
কিড নামের ইংরেজ অফিসার তার বেটন অতুল্য ঘোষের চোখে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর একটি চোখ
অন্ধ হয়ে যায়। সেবারই জেলে খারাপ খাওয়া দাওয়ার জন্য স্পাইনাল টিউবারকিউলসিস রোগও ধরা পড়ে।
কিন্তু জেলের ইংরেজ ডাক্তার তাঁকে ভুল ঔষধ দেবার জন্য অবস্থার অবনতি হয়। সেই ডাক্তার ক্ষমা
চাইতে, তিনি তাঁকে ক্ষমা করে দেন। এর পরে একবার জেলে মেরে তাঁর পা ভেঙে দেওয়া হয় যার জন্য
তাঁকে আজীবন খুঁড়িয়ে চলতে হয়েছে এবং নির্দয়ভাবে প্রহারের ফলে ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত হাড়ও ভেঙে
দেওয়া হয় যার ফলে তাঁকে আজীবন লোহার খাঁচা জাতীয় জিনিষ পড়ে ঘুরে বেড়াতে হেছে। জেল থেকে
ছাড়া পাবার পর তাঁর চিকিত্সার ভার নেন স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রখ্যাত
চিকিত্সক ডঃ বিধানচন্দ্র রায়।
১৯৪৫ সালে তিনি সাপ্তাহিক “জনসেবক” পত্রিকার সম্পাদক হন এবং ১৯৪৯ সাল থেকে সেই সাপ্তাহিক
পত্রিকাটি দৈনিক পত্রিকা হয়ে প্রকাশিত হতে থাকে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময়ে অতুল্য ঘোষ, ধীরেন্দ্রনাথ মুখার্জী, যাদবেন্দ্রনাথ পাঁজা, ডঃ নলিনাক্ষ
সান্যাল, সুকুমার দত্ত প্রমুখেরা মিলে “নিউ বেঙ্গল এসোসিয়েশন” এর প্রতিষ্ঠা করেন। এই এসোসিয়েশন,
ব়্যাডক্লিফ সাহেবের কাছে (যার উপর দায়িত্ব ছিল ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ করার) দাবি
জানান যে কলকাতা বন্দরের নাব্যতার জন্যই মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলা দুটি যেন পশ্চিবঙ্গের এলাকাভুক্ত
করা হয়। এমন রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, এর পরবর্তী সময়ে, একমাত্র বিধানচন্দ্র রায় ছাড়া আর কোনো
রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে আমরা পাই নি, এই বাংলায়।
তিনি সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির ট্রেজারারের দায়িত্বেও কিছুকাল ছিলেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধান
মন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর তিনি লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর প্রধানমন্ত্রীত্বের সমর্থন করেন। এরপর
যখন ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ভাগ হয়ে যায় অতুল্য ঘোষ ছিলেন নিজালিঙ্গাপ্পার সিণ্ডিকেটের
সঙ্গে। ১৯৪৮ সালে অতুল্য ঘোষ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, দু বছরের
জন্য। ১৯৫২ সালে বর্ধমান এবং ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে আসানসোল থেকে তিনি লোকসভায় নির্বাচিত হন।
১৯৬৭ সালে অবশ্য বাঁকুড়া থেকে তিনি হেরে যান। তারপর থেকেই সারা ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র
পালটে যেতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান এবং প্রয়াত ডঃ
বিধানচন্দ্র রায়ের নামে বিধান শিশু উদ্যানের কাজে আত্মনিবেশ করেন। এর সাথে জুড়ে ছিল সাহিত্য চর্চা।
অতুল্য ঘোষকে নিয়ে কুত্সা -
অতুল্য ঘোষকে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য বহু নিন্দা-কুত্সার অবতারণা করে বিরোধী দলগুলি।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি তত্কালীন কমিউনিস্ট পার্টির তরফ থেকে একটি রটনা করা হয়েছিল যে
কলকাতার ডালহাউসি স্কোয়ারে অবস্থিত (অধুনা বিনয় বাদল দীনেশ বাগ) স্টিফেন হাউস নামের বাড়ীটি
নাকি মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেন এবং প্রদেশ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট অতুল্য ঘোষ, এই দুইজনে মিলে কিনে
নিয়েছেন! সেই সময়ের রাজ্যের দুরবস্থার সঙ্গে এরকমের জবরদস্ত রটনা মানুষকে বাধ্য করেছিল তা
বিশ্বাস করতে। দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রাক্তন চীফ রিপোর্টার মিহির মুখার্জী তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন
যে তাঁর বহু বন্ধুবান্ধবও তা বিশ্বাস করেছিলেন! সাধারন মানুষ তো কোন ছাড়। পরে অবশ্য তাঁদের ভুল
ভেঙে গিয়েছিল এই দেখে যে প্রফুল্ল সেন শেষ বয়সে কি দরিদ্র অবস্থার মধ্যে দিন কাটাতেন। প্রফুল্ল ঘোষ,
অতুল্য ঘোষ, অজয় মুখার্জীর মত নেতাদেরও ব্যক্তিগত জীবনে প্রায় কোনো স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিই ছিল
না।
এক বার আর.এস.পি.-র নেতা যতীন চক্রবর্তী বিরোধী রাজনীতি করতে গিয়ে অযথা কুত্সা করেছিলেন
অতুল্য ঘোষের। অতুল্য ঘোষের বাঁকুড়া জেলায় একটি ছোট্ট বাড়ী ছিল। বাড়ীর সামনে একটি পুকুর ছিল।
দূরে পাহাড় দেখা যেত। যতীন চক্রবর্তী এর বর্ণনা দিয়েছিলেন এ ভাবে ---“আপনাদের বঙ্গেশ্বর শ্রী অতুল্য
ঘোষ বাঁকুড়ায় সুইমিং পুল করেছেন, বিরাট রাজপ্রাসাদ করেছেন। সেখানে উনি এক চোখ দিয়ে অর্ধ-উলঙ্গ
যুবতীদের স্নান উপভোগ করেন ; বলুন - সেই বঙ্গেশ্বর ও তাঁর দলের পাণ্ডাদের দিয়ে কি সরকার চলে ?”
পরবর্তী কালে স্বচক্ষে বাঁকুড়ার দেওলাগড়ের সেই বাড়ী দেখে এসে যতীন চক্রবর্তী তাঁর ওই উক্তির জন্য
প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
আরেক বার ১৯৬৭ সালের নির্বাচনের সময়। অতুল্য ঘোষকে দেশদ্রোহী প্রমাণ করার জন্য দিল্লীতে তাঁর
কুত্সা রটিয়ে একটি লিফলেটের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেখানে ছাপাতে গেলে যদি জানাজানি হয়ে
যায়, সে জন্য তা পাঠিয়ে দেওয়া হল পাটনায়। লিফলেটের সারমর্ম ছিল - অতুল্য ঘোষ হল পাকিস্তানের
চর। কোটি কোটি টাকা ঘুস খেয়ে তিনি দেশকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত করেছেন। তাঁর
লেখা বলে একটি জাল চিঠি এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা দফতর থেকে আসা কতগুলি জাল প্রত্যুত্তর টিকা
সহযোগে ছাপানো হল। কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হল --- গভীর রাত্রে অতুল্য ঘোষের নির্বাচন কেন্দ্রে ঘুরে
ঘুরে এগুলি ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে কেউ ধরতে না পারে। বামপন্থীরা তাদের উদ্দেশে সফল হয়েছিলেন।
সেবার অতুল্য ঘোষ হেরে যান নির্বাচনে।
১৯৬৭-র নির্বাচনের সময়ে সারা বাংলায় বিরোধীরা তাঁর নামে ছড়া কেটে কুত্সা রটনা করেছিল। সেরকম
কয়েকটি ছড়ার মধ্যে ছিল -
বাজার থেকে বেগুন কিনে
. মন হল প্রফুল্ল
ঘরে নিয়ে এসে দেখি
. এ যে কানা অতুল্য।
====
মাছের শত্রু কচুরীপানা
দেশের শত্রু অতুল্য কানা।
====
কারও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে খোঁটা দিয়ে ছড়া কেটে প্রচার করাটা নিশ্চয়ই খুব উঁচুদরের সংস্কৃতির
পরিচায়ক ছিল না। বিশেষ করে সেই প্রতিবন্ধকতা যখন দেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধের পুরস্কার!
অনেকেই তাঁর সময় কালের অশান্তি ও অনুন্নয়ণের জন্য বিরোধী বামদলগুলিকে দায়ী করেছেন। কিন্তু
বিরোরী দলের কাজই তো বিরোধিতা করা। শাসক দলেরই উচিত সম্পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে সেই প্রতিবন্ধকতা
অতিক্রম করে দেশকে শুষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সুশাসনের মাধ্যমে। অতুল্য ঘোষের মত মানুষের
স্বাধীনতা সংগ্রামের কাছে আমরা চিরঋণী এবং আজ আমরা, এক স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ হিসেবে তাঁর
আবদান কোনোদিন ভুলতে পারবো না ঠিকই কিন্তু ব্যক্তি জীবনে যতই সৎ থাকুন না কেন, স্বাধীনতার পরে
রাজ্যের শাসক দলের সর্বেসর্বা অতুল্য ঘোষ সেই অস্থির দিনগুলির দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে অশ্বীকার করতে
পারেন না।
অতুল্য ঘোষের সাহিত্য কীর্তি -
তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “কষ্ট কল্পিত” (আত্মজীবনী), “পত্রালী”, “নৈরাজ্যবাদীর দৃষ্টিতে গান্ধীবাদ”,
“সাম্প্রদায়িক সমস্যা”, “নোয়াখালিতে গান্ধীজী” প্রভৃতি।
অতুল্য ঘোষের কবিতা প্রসঙ্গে -
১৩৭২ বঙ্গাব্দে (১৯৬৫ খৃ), প্রমথনাথ বিশী ও ডঃ তারাপদ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত “কাব্যবিতান” কাব্য
সংকলনে (প্রকাশক - অমর সাহিত্য প্রকাশন, পি ১৯ বেণী ব্যানার্জী এভিনিউ, কলকাতা ৩১) আমরা অতুল্য
ঘোষ নামের এক কবির দুটি মাত্র কবিতা পাই। রাজনীতিজ্ঞ অতুল্য ঘোষকে আমরা কবি হিসেবে কখনও
দেখেছি বা শুনেছি বলে মনে পড়ে না। এমন কি আমাদের বহু বন্ধু কবি বা কবিতা প্রেমীরাও তেমন করে
অতুল্য ঘোষের কবিতার দিকটি সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিলেন না। আমরা এও চেষ্টা করেছি জানতে যে অন্য কোনো
কবি একই নামের, ওই সময়ে ছিলেন কি না।
অনেক অনুসন্ধানের পরে আমাদের সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে দেন কবি পিনাকেশ সরকার। তিনি
আমাদের বলেন যে প্রমথনাথ বিশীর “কাব্যবিতান” যখন প্রকাশিত হয় তখন তিনি প্রমথনাথ বাবুরই ছাত্র
ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ওই বইতে অতুল্য ঘোষের কবিতা দেখতে পেয়ে তিনিও সে সময়ে
অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন যে প্রমথনাথ বিশী ছিলেন রাজ্যের বিধান পরিষদের (অধুনা লুপ্ত)
কংগ্রেসের এম.এল.সি. (মেমবার অফ লেজিসলেটিভ কাউনসিল)। অতুল্য ঘোষের সাথে তাঁর বন্ধুত্বও ছিল।
সেই সূত্রেই অতুল্য ঘোষের কবিতা সেবার প্রকাশিত হয়।
অতুল্য ঘোষের কবিতা আধুনিক এবং সুখপাঠ্য। তাঁর কবিতা দুটি "ভাল" কবিতা বলে অনেকেই স্বীকার
করবেন। আমরা জানিনা তাঁর লেখা আরও কবিতা রয়েছে কি না। মিলনসাগরে কবিতার সম্ভার তৈরী করা
একটা উপলক্ষ্য মাত্র! আসল উদ্দেশ্য বাঙালীর ইতিহাস খুঁজে, সাজিয়ে দেখা কবি ও কবিতার নিরিখে। তাই
অতুল্য ঘোষের কবিতা তুলে বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহুর্তের স্পর্শ আমরা অবশ্যই পেতে
পারি।
আমাদের ওয়েবসাইটে বহু বামপন্থী কবির কবিতা রয়েছে যাঁরা সেই সময়ে অতুল্য ঘোষের ঠিক বিপরীত
মেরুতে অবস্থান করতেন। তাঁদের অনেক কবিতা ও গান এই অতুল্য ঘোষ ও তাঁর দলের সরকারের
বিরুদ্ধেই রচিত হয়েছিল। ভালো মন্দ যাই হোক, আমরা চেষ্টা করছি ইতিহাসের সবদিকই এখানে তুলে
ধরতে, কবি ও কবিতার মধ্য দিয়ে।
আমরা কৃতজ্ঞ কবি পিনাকেশ সরকারের কাছে যিনি আমাদের কবি অতুল্য ঘোষের কবি পরিচিতি সম্বন্ধে
দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন। আমরা মিলনসাগরে কবি অতুল্য ঘোষের কবিতা তুলে আগামী
প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে আমাদের এই প্রচেষ্টাকে সার্থক মনে করবো।
কবি অতুল্য ঘোষের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
উত্সঃ ডঃ বিনয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, অনন্য অতুল্য, ২০০৯
. অতুল্য ঘোষ, কষ্টকল্পিত
. উইকিপেডিয়া
. মিহির মুখার্জী, প্রক্তন চীফ রিপোর্টার, http://www.thestatesman.net
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতা প্রকাশ - ১৬.০৪.২০১২
...