কবি বাণীকুমারের গান ও কবিতা
*
জাগৃহি
দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কবি বাণীকুমার
সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত “বঙ্গশ্রী” পত্রিকার আশ্বিন ১৩৫১, ( অক্টোবর ১৯৪৪ ) সংখ্যা
থেকে পাওয়া |

হে দেবী – তোমারে অর্চ্চনা করি কত শত উপাচারে,
সাজাই মন্ত্র, সাজাই তন্ত্র নানামতে ভারে ভারে,--
.        পূজা-আরতির করি সমারোহ,
.        বলি-উপায়নে সাধি অবরোহ,
শঙ্খ-ঘন্টা-ঢক্কা-নিনাদে ভক্তির অভিনয়ে---
মৃন্ময়ী মাতা চিন্ময়ী-রূপে রাজো কি মর্ত্ত্যালয়ে ?

শক্তির আরাধনা ক’রে তবু হয়েছি শক্তিহারা,
বীর্য্যহীনের লাঞ্ছনা শিরে—বাসভূমি হোলো কারা |
.        পরাধীনতার কশাঘাত সহি’
.        ক্ষুদ্র পরাণ কোনমতে বহি,
অবমাননার ধূলি গায়ে মাখি’ চলেছি ত্রস্ত পথে—
দলিত পিষ্ট ন্যুজ আহত প্রবলের জয়রথে |

সে যে কোন এক বিস্মৃত দিনে জাগিলে জ্যোতির্ম্ময়ী,
মিলিত শক্তি-সাধনে দেবেরে করেছ দৈত্যজয়ী |
.        অপরূপ রণচণ্ডী মূরতি
.        ধরিলে গো—তমোরূপিণী নিয়তি,
শত প্রহরণে সিংহবাহনে রাজিলে সংহারিকা,--
দহে অরিকুলে তব ত্রিনেত্রে জলৎবহ্নিশিখা |

মহামানবের অকাল-বোধনে হয়েছ আবির্ভূতা,
আর্ত্তী-হরণে শক্তি-প্রেরণা দিয়েছ শৈলসুতা |
.        হারায়েছি মোরা সে-নিষ্ঠা-বল,
.        অবিশ্বাসে সে হৃদয় বিকল,
তোমার নিধান ভুলিয়া, জননী, দর্পের অভিমানে
সাধি ভীরুতার গ্লানি এ-জীবনে মিথ্যার সন্ধানে |

ভেঙেছি আমরা মৈত্রী ---তোমার নির্দ্দেশ নাহি মানি,
স্বার্থের হীন সংঘাত জাগে হিংসা-গরল আনি,’
.        প্রতিশোধ তুমি করো মা শোধন,
.        শিখাও আবার শক্তি-বোধন,
তোমার রাজ্যে করুণা তোমার জাগুক্ মূরতি ধরি,
ঘুচাও ভ্রান্তি, শান্তির সুধাধারা বর্ষণ করি’ |

তব আশ্বাস-বাণী মন্দ্রিত যুগ-যুগান্ত-পারে—
দানব-উত্পীড়নে তুমি, দেবী, রাজিবে যে বারে বারে |
.        অক্ষম মোরা শক্তি পূজনে
.        তাই কি বিমুখ হও আগমনে,
নব চেতনায় জাগাও আবার নিদ্রিত সন্তানে,
মুক্তির ভেরী উঠুক ধ্বনিয়া তব জাগরণ-তানে |

অগ্নিলোচনা জাগো রুদ্রাণী দুর্গা সুভগ আনো,
শত্রু-দহন করো মহামায়া---দাস্য-শোচনা হানো |
.        শিব ও অশিব দুই হাতে লরি
.        নৃত্য করো মা কপালিনি অয়ি,
ধরো নৃসিংহ-মূর্ত্তি-নাশিতে পর-লোলুপের দলে,
স্বর্গ-মুক্তি-বরদা ভাঙো মা বন্ধন-শৃঙ্খলে |

ত্রিগুণ-সাম্য-প্রকৃতি সগুণা রাখো এই ধরণীরে,
সচেতন-চিন্ময়রূপে রহো কৃত্স্ন জগৎ ঘিরে |
.        নির্গুণ চৈতন্য-সৃজনে
.        শক্তির লীলা-রূপ-ব্যঞ্জনে
ব্রহ্মবিদুষী বাক্-স্বরূপিণী তুমি মা সরস্বতী |
স্থিতি-কাল-চারী শক্তি-শ্রী লক্ষ্মী বিষ্ণু-সতী |

রুদ্র-বনিতা দুর্গা তুমি গো সংহারে লীলাময়ী,
তুমি মা অনির্ব্বচনীয়া পরব্রহ্ম-মহিষী অয়ি !
.        কুমারে অজেয় করো বরদানে,
.        গণদেবে রাখো সিদ্ধি-বিধানে,--
তোমার আরতি---রাষ্ট্র-সমাজ-ভবন-পালন-নীতি,
তব আরাধনা শিখায়, জননী, দিনযাপনের রীতি |

তব মহিমার কল্যাণী-রূপ উদিত মরমে যবে—
তোমারি অংশ-সম্ভূতা নারী সত্তা চিনিবে তবে |
.        বিশ্বজননী, তব বৈভবে
.        স্বরূপ জানিয়া –নব গৌরবে
রমণী যে হবে প্রকৃত জননী আদর্শ গরীয়সী,
বীরপুত্রের লালনে আবার প্রাচী হবে মহীয়সী |

কৌমারী-রূপ-ধারিণী পরমা তুমি গো সুনির্ম্মলা !
তোমার ধারণা-ধ্যানে লভি যেন কন্যা সুমঙ্গলা !
.        বিলাস-ব্যসন দূর করো মা গো,
.        প্রাচ্যের মনোমন্দিরে জাগো,
ছিন্ন করো মা মোহ-আবরণ জাগাও অরুণ-জ্যোতিঃ !
দেশ-মাতৃকার ভালো ও মন্দে রাখো মা অমিত মতি |

হে চারু-পূর্ণ-সোম-শিখরিণী – এসো মা ক্ষেমঙ্করি !
তোমার চরণ-মঞ্জীর-তালে উঠুক ধরণী ভরি’ |
.         প্রাচী-দিগন্তে জাগুক্ আবার
.         জীবন-তপন মহামহিমার,
বরাভয়ে তব পাই যেন দেবী, তরুণ প্রবল প্রাণে !
প্রসন্ন-মুখে চাহো অম্বিকা তোমার স্তবন-গানে |

হে মহাশক্তি---রাজো তুমি দেবী—মোদের ভুবন-মাঝে,
যুগ-পুঞ্জিত আঁধার নাশো মা জ্যোতিঃ-সুবিমল সাজে |
.          তোমার জয়ের মন্ত্রের গুণে
.          অক্ষয় শর দাও ভরি’ তুণে,
যেন অঙ্গদ-মণিকুণ্ডল যতেক ভূষণ খুলি’—
তোমার স্নেহের আদেশ মানিয়া জাগি সুযুপ্তি ভুলি’ !

মর্ম্মে মর্ম্মে উঠুক্ বাজিয়া তোমার মাভৈঃ বাণী,
তব দীক্ষার ভাষণ, হে দেবী, লইব জীবনে জানি’ |
.          ক্লিষ্ট আকাশে আলোকের মালা
.          বিকশিয়া তোলে জাগরণ-পালা,
এনে দাও যশঃ—বিদ্যা-কীর্ত্তি-শক্তি-অর্থ-আয়ু !
বিষ-জর্জ্জর ভুবনে বহুক তব নিঃশ্বাস-বায়ু |

হীন বন্ধন-ভঞ্জন-করা কৃপার প্রসাদী-দানে—
সত্যরূপে মা জাগাও ভারতে জড়ত্ব-অবসানে |
.           নমি গো হৃদয়-কাম্য-ভরণি,
.           নমি গো চণ্ডি রিপু-নিসূদনি,
শুভ-দর্শন দিবে, সুধাময়ি, দশভূজা-রূপে কবে |
সিংহবাহিনী জাগ্রতা হও প্রাণের আকুল স্তবে |

.                   ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
সবুজ এ-বন মৃগনাভি-গন্ধে ভুরুভুর
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত বঙ্গশ্রী পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

মায়াবিনী | ( গান )

সবুজ এ-বন মৃগনাভি-গন্ধে ভুরুভুর |
রাজপুত্তুর আর তুমি যাও কতদূর !
ক্ষেতেতে নেই চাষ তবু ঐ ভরা যে ফসল,
লুকিয়ে কোথাও বাজায় রাখাল
.                    বাঁশীটি উতল,
কাঠুরিয়া কুঠার হানে পড়ে নাকো চোখে,
অলিমালা তোলে নিতুই গুঞ্জন মধুর ||

তর্ তরে ঐ নদীর বাঁকে আছে কুঁড়েখানি—
ঝুম্ কোলতা দুল্ চে সেথা’
.                      দিতেছে হাতছানি,
বকুলতলার ছায়ায় ব’সে
.                       চর্ কা কাটে মেয়ে,
গুণ্ গুণিয়ে মায়াবতী তুল্ চে
.                       মায়ার সুর ||

.                   ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
ব্যোম্ ব্যোম্ ব্যোম্
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত “বঙ্গশ্রী” পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

        গান

ব্যোম্ ব্যোম্ ব্যোম্
.         পাগ্ লা ভোলার চর,
হুম্  হাম্   হুম্
.           কর্  বে ঘাড়ে ভর |
.        খাও ভূতের কিল্
.        ধর্ বে পেটে খিল্
.        শিঙে ফোঁকো ব’সে—
.        ভর্ বে না উদর ||
( না-না –না ---আ-আ-আ-আ )

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
অতি বড় সেয়ানা
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত “বঙ্গশ্রী” পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

           গান

.    অতি বড় সেয়ানা
.            এই আমি গো এক্ টা !
ভয় যদি আসে কাছে মারি তিন গাঁট্টা |
যবে বুদ্ধির প্যাঁচ ঝাড়ি পটকায় পিত্ত,
ঘুরপাক্ খায় যত রাস্ কেল্ দৈত্য,
তিন ফুঁকে তিন লাফে করে দিই চ্যাপ্ টা |
( হোঃ-হোঃ-হোঃ-হোঃ-হোঃ – গোগ্ গো-গোগ্ গো-গোঃ )

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
রাজপুত্তুর যায় যায় যায় রে
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত “বঙ্গশ্রী” পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

.     [ সম্মেলক গান ]

রাজপুত্তুর যায় যায় যায় রে---
.               সোনার নায়ে |
চল্ লো তরী ঐ শান্ত বায়ে |
বিধাতারি বর গলায় মালা, ( তা’র )
আশা-অভয় নিয়ে রচা ডালা,
ব্রহ্মাস্ত্র রয় তা’র গোপন তূণে,
শক্তি যে বুকে তা’র রয় লুকায়ে |

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
যদি পথে আসে বন-গহন
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত বঙ্গশ্রী পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

(  রাজপুত্র ও সঙ্গীদল )—গান

যদি পথে আসে বন-গহন—
অগম-সাগরে ঢেউয়ের রণ—
.        একাকী---একাকী
.        নব পথ আঁকি’---
যেতে হ’বে দূরে রাখিতে পণ |
কালো পাথরের ভাঙি ভ্রূকুটি—
পাহাড়ে ফাটায়ে চল্ বো ছুটি’ |
.         ভাঙিতে---গড়িতে
.         লবো শেষে জিতে---
জয়ধ্বজায় ঢাকি’ গগন |

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
মায়ের আঁচল নয় বীরেরি ছায়া
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত বঙ্গশ্রী পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

( রাজপুত্র ও সঙ্গীদল )—গান

মায়ের আঁচল নয় বীরেরি ছায়া !
সোনার খাঁচার মত ঘরেরি মায়া |
.        অলস খেলাখানি---
.        ভাঙিতে হ’বে জানি,--
হানিতে হ’বে নিতি বাধারি কায়া ||

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
ওরে -- রে – রে ভাই
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত বঙ্গশ্রী পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

  ( রাজপুত্র ও সঙ্গীদল )---গান

ওরে---রে---রে ভাই !
.           ছুটির বাঁশীর সুর নীল-গগনে,
বনে বনে আর বাতাসে বাতাসে পাহাড়ে নির্ঝরে
.                                মনে মনে |
ছাড়া পাখীর মত আনন্দরে,
আমার পরাণ আজি নেচে ফেরে,---
সপ্ত সমুদ্দুরে পাড়ি দেবো দূরে—
প্রবাল-ঘেরা শ্যামল দ্বীপের কোণে |
অসীমকালের রাজটীকা ভালে, ( তোমার )
অগম-পথে কে দীপটি জ্বালে |
কেন এ বাঁধন তবে---মুক্তি পেতেই হ’বে,
চঞ্চলতা জাগে ক্ষণে ক্ষণে ||

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
ও-ও-ও-ও! গিরি শিখর জল
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান | সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত বঙ্গশ্রী পত্রিকার ভাদ্র ১৩৫১ (
সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ ) সংখ্যা থেকে পাওয়া |

  সকলে --- গান

ও-ও-ও-ও! গিরি শিখর জল!
কে করেছে পাগল তোরে---
.                কে করে চঞ্চল!
.        কল-কল হেসে,
.        ঝল-মল বেশে,
নীলের কোলো শ্যামল করিস্
.                অলকা-অঞ্চল॥
আয় আয় নিয়ে আয় রঙীন বাসর-ফুল।
বরণ-মালা সাজিয়ে নোবো সাজিয়ে দোবো চুল।
.        রাজার কুমার কই,
.        পথ চেয়ে যে রই,
আন্ রে ময়ূরপঙ্খী-নায়ে দৈত্যজয়ীর দল॥

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর
*
শ্যামল কানন সাজলো ফুলে        
কবি বাণীকুমার
তাঁর রাজপুত্র নাটকের গান। সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত “বঙ্গশ্রী” পত্রিকার আশ্বিন ১৩৫১
(অক্টোবর ১৯৪৪) সংখ্যা থেকে পাওয়া।

.        [ সমবেত গান ]

শ্যামল কানন সাজলো ফুলে
.                তোমার রাহিণীতে।
বেণু বাজে বেণু বাজে . . .
.                তোমার সুন্দর ঐ নাচের ভঙ্গীতে।
.        দেহো পুলক ভরি’
.        নাও বিবাদ হরি’
.        ফোটাও আনন্দ-মঞ্জরী,---
ভালে রণ-জয়ের তিলক শোভে,---
আলোক বীণা বাজাও বাজাও প্রাণের সঙ্গীতে॥
.                                [ সঙ্গীত-সমারোহ ]

.             ************************     
.                                                                              
সূচীতে . . .    




মিলনসাগর