সব হলো বৃথা না শুনিল কথা, না ছাড়ে সাবিত্রী শবের মমতা, নারে পরশিতে সাধ্বী পতিব্রতা, . অধর্ম্মের ভয়ে ধর্ম্মের পতি | তখন কৃতান্ত কহে আর বার, অনিত্য জানিও এ ছার সংসার, স্বামী পুত্র বন্ধু নহে কেহ কার, . আমার আলয়ে সবার গতি ||
. ৮
“রত্নছত্র শিরে রত্নভূষা অঙ্গে, রত্নাসনে বসি মহিষীর সঙ্গে, ভাসে মহারাজা সুখের তরঙ্গে, . আঁধারিয়া রাজ্য লই তাহারে | বীরদর্প ভাঙ্গি লই মহাবীরে, রূপ নষ্ট করি লই রূপসীরে, জ্ঞান লোপ করি গরাসি জ্ঞানীরে, . সুখ আছে শুধু মম আগারে ||
. ৯
“অনিত্য সংসার পুণ্য কর সার, কর নিজ কর্ম্ম নিয়ত যে যার, দেহান্তে সবার হইবে বিচার, . দিই আমি সবে করমফল | যত দিন সতী তব আয়ু আছে, করি পুণ্য কর্ম্ম এসো স্বামী পাছে— অনন্ত যুগান্ত রবে কাছে কাছে, . ভুঞ্জিবে অনন্ত মহা মঙ্গল ||
“রবি তথা আলো করে, না করে দাহন, নিশি স্নিগ্ধকরী, নহে তিমির কারণ, মৃদু গন্ধবহ ভিন্ন নাহিক পবন, . কলা নাহি চাঁদে, নাহি কলঙ্ক | নাহিক কন্টক তথা কুসুম রতনে, নাহিক তরঙ্গ স্বচ্ছ কল্লোলিনীগণে, নাহিক অশনি তথা সুবর্ণের ঘনে, . পঙ্কজ সরসে নাহিক পঙ্ক ||
. ১২
“নাহি তথা মায়াবেশ বৃথায় রোদন, নাহি তথা ভ্রান্তিবশে বৃথায় মনন, নাহি তথা রিপুবশে বৃথায় যতন, . নাহি শ্রমলেশ, নাহি অলস | ক্ষুধা তৃষ্ণা তন্দ্রা নিদ্রা শরীরে না রয়, নারী তথা প্রণয়িনী বিলাসিনী নয়, দেবের কৃপায় দিব্য জ্ঞানের উদয়, . দিব্য নেত্রে নিরখে দিক্ দশ ||
. ১৩
“জগতে জগতে দেখে পরমাণুরাশি মিলিছে ভাঙ্গিছে পুনঃ ঘুরিতেছে আসি, লক্ষ লক্ষ বিশ্ব গড়ি ফেলিছে বিনাশি, . অচিন্ত্য অনন্ত কালতরঙ্গে | দেখে লক্ষ কোটী ভানু অনন্ত গগনে, অনন্ত বর্ত্তন রব শুনিছে শ্রবণে, . মাতিছে চিত্ত সে গীতের সঙ্গে ||
“তাই বলি কন্যে, ছাড়ি দেহ মায়া, ত্যজ বৃথা ক্ষোভ ; ত্যজ পতিকায়া, ধর্ম্ম আচরণে হও তার জায়া, . গিয়া পুণ্যধাম | গৃহে যাও ত্যজি কানন বিশাল থাক যত দিন না পরশে কাল, কালের পরশে মিটিবে জঞ্জাল, . সিদ্ধ হবে কাম ||”
. ১৬
শুনি যমবাণী জোড় করি পাণি, ছাড়ি দিয়া শবে, তুলি মুখখানি ডাকিছে সাবিত্রী ; -- “কোথায় না জানি, . কোথা ওহে কাল | দেখা দিয়া রাখ এ দাসীর প্রাণ, কোথা গেলে পাব কালের সন্ধান, পরশিয়ে কর এ সঙ্কটে ত্রাণ, . মিটাও জঞ্জাল ||
. ১৭
“স্বামিপদ যদি সেবে থাকি আমি, কায় মনে যদি পূজে থাকি স্বামী, যদি থাকে বিশ্বে কেহ অন্তর্য্যামী, . রাখ মোর কথা | সতীত্বে যদ্যপি থাকে পুণ্যফল, সতীত্বে যদ্যপি থাকে কোন বল, পরশি আমরে, দিয়ে পদে স্থল, . জুড়াও এ ব্যথা ||”
. ১৮
নিয়মের রথ ঘোষিল ভীষণ, আসি প্রবেশিল সে ভীম কানন, পরশিল কাল সতীত্ব রতন, . সাবিত্রী সুন্দরী ! মহাগদা তবে চমকে তিমিরে, শবপদরেণু তুলি লয়ে শিরে, ত্যজে প্রাণ সতী অতি ধীরে ধীরে . পতি কোলে করি ||