কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
*
বিষম “বিচিত্র নাটক”
অর্থাৎ
কবিদের মজ্ লিশ এবং ঐ নাটক দর্শন
কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
যোগেশচন্দ্র বাগল সম্পাদিত “বঙ্কিম রচনাবলী” ২য় খন্ড, ( ১৯৫৫ ) থেকে নেওয়া |
২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৫৩ তারিখে “সংবাদ প্রভাকর” –এ প্রকাশিত


দলমল ঝলমল,                               শত দীপ সচঞ্চল,
নিশাযোগে অট্টালিকা মাঝে |
সে আলোর কিবা নিভা,                 চন্দ্রিকার দিবা বিভা.
যেন তথা মিশিয়ে বিরাজে ||
কোটী দীপ কাঁচ মাঝে,                 কোটী তারা সুবিরাজে,
জ্বলে যেন হিরাময় বাসে |
কতই কুসুম তায়,                         ঝলমল শোভা পায়,
প্রভাময় সকলি প্রকাশে ||
ঝক্ মক্ ঝলমল,                          আলো মাঝে সচঞ্চল,
নৃত্যকীর বসন ভূষণ |
ঝকমোকে বেশ ধরি,                      বসেছে বিরাজ করি,
কবীশ্বর পাশে কবিগণ ||
ধীরে ধীরে বীণা বাজে,                  ধীরে ধীরে নিশি মাঝে,
মৃদু মৃদু গায় বামাস্বরে |
বিদ্যা আর অবিদ্যার,                     নৃত্য হবে দুজনার,
কে ছোট কে বড় জানিবারে ||

বিদ্যার নাচ
নাচে শশিমুখী, গজেশ গতি |
ললনা নলিতা, লাবণ্যবতী ||
কোমল কুসুম, কলিকা প্রায় |
কনক ভূষণ, কনক কায় ||
নিবিড় নিতম্ব, যৌবন ভার |
হাব ভাব হেলা, কত প্রকার ||
হেলিয়ে দুলিয়ে, নাচিছে ঘুরে |
ভূষা ঝলমল, কুসুম ঝুরে ||
প্রেমময় নীল, কোমল আঁখি |
স্থির রাখিয়াছে, ধরায় রাখি ||
বঙ্কিম নয়নে, বারেক চায় |
বিদ্যুৎ সমান, তখনি যায় ||
ঝাপ্টার মাঝে, বদন চাঁদ |
আশে পাশে ফেরে, বসন ফাঁদ ||
হাব ভাব কত লাবণ্যে মাখা |
যেমন নাচিছে, কেমন বাঁকা ||
ফিরিয়ে ফিরিয়ে, ফিরিয়ে ফেরে |
চলিয়ে চলিয়ে, চলিয়ে ধীরে ||
কখন কি রূপে, কোথায় আছে |
সমীরে সরোজী, যেমন নাচে ||
কিরূপ কি ভাব, কেমন ছবি |
দেখে গেল গলে, যতেক কবি ||
মন্ত্র মুগ্ধ সবে, অচল আঁখি |
বিদ্যা চলে গেল, তাদের রাখি ||

অবিদ্যার নাচ
আইল অবিদ্যা তবে, দেখে কাঁপে বুক |
ঢেঙ্গা মাগী পেটমোটা, হাঁড়ি পানা মুখ ||
বরণে হাঁড়ির তলা, ঝক্ মেরে যায় |
দীর্ঘ চুল দীর্ঘ দাঁত, সাঁচিপান খায় ||
বসন মলিন অতি, পচা গন্ধ গায় |
তিনি ফের নাচিবেন, নমস্কার পায় ||
ধূপ্ ধাপ্ কোরে নাচে, মেঝে করে চুর ||
পাঁকেতে নাফান যেন, ব্যাঙ্গ বাহাদুর ||
কবিগণ হেসে মরে, বলে এ কি পাপ |
পলাতে পারিলে বাঁচি, বাপ্ বাপ্ বাপ্ ||

অবিদ্যার প্রতি কবিদের
রহস্যোক্তি

অবিদ্যা এতেক বিদ্যা, শিখিল কোথায় |
মোহিত হইয়া মোরা, জিজ্ঞাসি তোমায় ||
পরিচয় দাও ধনি, কেন এত বিদ্যা |
আ মরি সুন্দরি তুমি, কাহার অবিদ্যা ||

অবিদ্যা
“প্রবল প্রতাপশালী, অসভ্য রাজন |
সসাগরা ধরা নিজে, করিল শাসন ||
  তাঁহার সুখের মোরা, দুই পাট রাণী |
প্রথমা অবিদ্যা আমি, দ্বিতীয় দুর্ব্বাণী ||”
পুত্র এক পেয়ে মেনে, পরাণে বেঁচেছি |
কিন্তু আগে বল সবে, কেমন নেচেছি ||

কবিগণ
এমন সুন্দর নাচ, কভু দেখি নাই |
তাই এক অভিলাষ, করেছি সবাই ||
 সুখী হব পুত্র তব, দেখিবারে পেলে |
কে জানে সে কতগুলি, তোমার তো ছেলে ||

কুবিদ্যা
ছেলের গুণের কথা, কি কহিব আর |
রূপেতে আমারি মত, বাছা বাঁচা ভার ||
ভাল যাত্রা করে সে, যে, নিজে অধিকারি |
নাচিতে গাহিতে বাছা, স্বরূপ আমারি ||
  কিন্তু আজ পারে কি না, নাহি যায় বলা |
কেবল ঝক্ ড়া কোরে, ভাঙ্গিয়াছে গলা ||
সতিনী পালিত পুত্র, আছে এক ছোঁড়া |
সেই কালামুকো হলো, ঝক্ ড়ার গোড়া ||
এক দিন তারে দেখে, আমার তনয় |
মাই ধোরে কোলে বোসে, মৃদু মৃদু কয় ||
“ওমা ওমা হেদে দেখ, দাদার এখন |
রাজ ভোগ খেয়ে দেহ, ফুলেছে কেমন ||
আমি কহিলাম উহা, বলো না রে আর |
ওপোড়া কপালে কাল, হয়েছে তোমার ||
সব কথা শুনিতে না, পেয়ে কবি ভালো |
মনে মনে কাল অর্থে করিলেন কালো ||”
হইল বিষম মনে, অভিমান বোধ |
বারে বারে কটু বোলে, দেয় প্রতিশোধ ||
তাই তারে গালি দিল, কুমার আমার |
সে দ্বন্দ্বে মেরেছে হুড়ো, বুঝি কাকে আর ||
দুজনের সনে দ্বন্দ্ব, এ আর কেমন |
একা গাই দুই ষাঁড়, সে জ্বালা যেমন ||

কবি ঈশ্বর
সে তোমার পুত্র নয়, ভাল জানি আমি |
তা হইলে হবে কেন, বিদ্যাপথগামী ||
বিদ্যালয়ে থাকে ছেলে, বিদ্যা অনুরাগী |
তোর ছেলে হবে কেন, দূর বুড়ো মাগী ||

কুবিদ্যা
তুই চুপ্ কর্ মেনে, সে ছেলে আমার |
তাই পরিচয় দেছে, আপনি কুমার ||
সে কথা শুনেছে সবে, জগৎ সংসারে |
প্রভাকর সাক্ষ্য আছে, জিজ্ঞাসহ তারে ||

কবিগণ
যাহা হৌক্, ডাক তারে, শুনিব গো গান |
ছেলের মুখের গীত, অমৃত সমান ||

কুবিদ্যার ছেলে ডাকা
আয় যাদু আয় যাদু, আয় ঝপ কোরে |
মহা গুণি কবি যত, ডাকিতেছে তোরে ||
গু নি তে ডাকিছে তোরে, পাবি রে খাবার |
আয় আয় আয় বাবা যাদুরে আমার ||
গাহিবে সন্তোষ মনে, খাবে যাহা দিবে |
এতেক বিমল মুখে মিষ্ট দেখাইবে ||
আয় আয় ধনমণি, মুখ রাখ্ মার |
আমার হোস্ গো তুই, সর্ব্ব ধন সার ||

ছেলে আসিতে আসিতে বলিতেছে
মাকো তোর চাবালেরে, ডাক্ দিলি ক্যান্ |
যাতে নার্ লাম মাগো, হ্যাঁ—

মিত্র কবি
-----Walk up man.

কবিশ্বর
কও রে কি নাম তোর, বাস কি নগর |

ছেলে
নাম বুনো অধিকারী, বেণাবনে গর্ ||

মিত্র কবি
মাপ কর রাখ বাপু,  দুটো দিশি বোলে |
বল্ দেখি কিসে আলো, উপরেতে ঝোলে ||

বুনো
চাতালেতে ওড়া বুঝি, ডোমেতে বা বেচে |
ক্যাঁচের দোচনাওলা, জোলাইয়া দেচে ||

চট্ট
বল দেখি সাদা কেন, ঘরের দেয়াল |
মহা ব্যাধি হোয়েছে কি, তোলা গেছে ছাল ?

বুনো
বুজি বা এ ভারে, পারে দোষে চিতাইচে |
কি কাওয়ারে দৈবাৎ, কারে হাগাইচে ||

মিত্র
চট্ট এর ভাষা এ যে, বোঝা হোলো দায় |
অনুবাদ কোরে বল, তবে বোঝা যায় ||

কুবিদ্যা
ভেকো হলে কেন বাছা, কথা কও দড় |
মিছে কেন খাটো হও, জোবে হও বড় ||
দাঁড়ায়ে কি কর, গালি,  দেও যথোচিত |
না হয় গানেতে কর, সবারে মোহিত ||

বুনোর গীত
॥ রাগিণী ঝিঝিট্ | তাল খেম্ টা॥

সব সন্ন্যাসী এবার |  হব সন্ন্যাসী এবার |
কোণের ভিতরে শুক্ নো নাড়ী, সইতে নারি আর |
তোর্ সনে লো পিরীত কোরে,
শিবের পূজা গেল ঘুরে,
অধিকারী নামটি ধোরে, ঘন্টা নাড়া সার ||
কেমন গেয়েছি সবে, কও তো বিশেষ |

সব কবি
বেশ বেশ বেশ বুনো,  বেশ বেশ বেশ ||

চট্ট
বেশ ভাই ফিরে গাও, আর একবার |
শুনিয়া জুড়াই ফের, শ্রাবণের দ্বার ||
অথবা শুনেছি তুমি, কবি মহাগুণী |
একটি কবিতা ভাল, পড় দেখি শুনি ||
  স্বপ্ন বা ধর্ম্মের ক্লেশ, ফেলে দাও জলে |
কহ তো প্রেমের গুণ, কবিতা কৌশলে ||

বুনোর কবিতা পাঠ
প্রেম সবে কর সার,                 প্রেমময় এ সংসার,
আকাশ পাতাল মহীতলে |
সত্য ত্রেতা দ্বাপরাদি,                  প্রগাঢ় প্রণয়ে বাঁধি,
ভাসায়েছে সুখেতে সকলে ||
প্রেম তরে কত লোক,                হয়ে গেল পরলোক,
শিবের হইল ধ্যান ভঙ্গ |
সমুদ্র মন্থন কালে,                   মোহিনীর প্রেমজালে ,
গিরীশের ঘটিল কি রঙ্গ ||
শ্রীরাম প্রেমের তরে,                  কতই রোদন করে,
দেশে দেশে উদ্দেশিয়া নারী |
জ্বালা পায় কতবার,           শেষেতে সে প্রেমের তার,
হইল বানর অধিকারী ||
দ্বারকানাথ গো আর,               গোপাল মাঝেতে তার,
মন বাঁধা গরু রাধিকার |
দ্বারকায় লাজ খেয়ে,                    বরিল বানরী মেয়ে,
দাস জাম্বুবানের কথায় ||

যিনি নিজে রামেশ্বর, রসিকের মণি |
ছিল তাঁর কত আর, রসিকা রমণী ||
রুক্মিণী রূপসী রামা, সত্যভামা সতী |
দ্বারকা স্বর্গের সম, ছিল শোভাবতী ||
সে শোভা এখন কোথা, কোথা সেই হরি |
মোহিনী মন্ডল কোথা, সব গেছে মরি |
যত ছার পশু পক্ষী, বাসা করে তায় |
শৃগাল কুক্কুরে হাগে, দ্বারকায় গায় ||
তাইতে হইল মোর, কবিতার শেষ |

সব কবি
বেশ বেশ বেশ বুনো, বেশ বেশ বেশ ||

কবীশ্বর
ভাল বটে দেখি তব, কবিতার ছটা |
পরে গালি দিতে তবে, এত কেন ঘটা ||
কেহ হোলো অসভ্যের, বল সেনাপতি |
কেহ বা যুদ্ধের মন্ত্রী, নিজে সাধু অতি ||
পর দোষে দেও হাত, নিজ দোষ ঢাকি |
তুমি তো বোসেছ হোয়ে, নিজে জয়ঢাকী ||

বুনোকবি
না প্রভু নাহিক আমি, অসভ্যের কেহ |
পালিত হোয়েছে শুধু, তাঁর অন্নে দেহ ||
   ভাল কোরে গালাগালি, দিতে যারে তারে |
আশ্রয় লয়েছি এসে, অসভ্য আগারে ||
কত লোক দিছে কত, মুখে চূণ কালি |
তবু যারে তারে দিই, দোহাতিয়া গালি ||
কিন্তু অসভ্যের ছেলে, পাছে কেউ কয় |
পরকে বলেছি তাই, অসভ্য তনয় ||
চট্ট ভাবে দিছে গালি, আমি নহি পটু |
তাকেও বলেছি তায়, গোটা-দুই কটু ||
গেলের বাজারে নাম, লিখেছি রাখিয়া |
চট্ট মিত্র মোর গাল, গিয়াছে খাইয়া ||
কোন মূঢ় বলে ওরে, গালে আমি কম |
তারা জানে গাল মোর, শক্ত কি নরম ||
কিন্তু ভয় করে, পাছে, ফিরে গালি খাই |
হাতে পায় ধোরে মানা, করিয়াছি তাই ||

চট্ট
বুঝেছি চতুর বট, বুদ্ধি ঢের ঘটে |
গালি দিয়ে মুখ চাপা, যুক্তিমত বটে ||
আঙ্গুর হইল টক্, পেলে না নাগাল |
ভয় খেয়ে সভ্য হলে, লিখিবে না গাল ||
যেমন নবোঢ়া হয়ে, রতিরসে বালা |
দুদিন ঠেকিয়ে শিখে, তার যত জ্বালা ||
দিন দুই ঘরে গিয়ে, স্বামিঘর ছাড়ে |
যত আরো পতি সাধে, তত আরো বাড়ে ||
কোলেতে বসায় পতি, উঠে যায় কেঁদে |
সেই রঙ্গ দাদা ভাই, বসিয়াছে ফেঁদে ||
   ছোঁড়াও তেমন নয়, ধোরে এনে জোরে |
বুক পুরে মনোরথ, লবে পূর্ণ কোরে ||

বুনোকবি
তুমি যে হে বোলেছিলে, কটু কহিবারে |
আমি নাকি পারিনেকো, দেখ এই বারে ||

চট্ট
বটে বটে খুব গালি, মিত্রে দেছ ভাই |
“মলমূত্র” আহারাদি, কিছু বাকি নাই ||
এক জোর ঘায়ে সব, করিয়াছ শেষ |
পাগল বুনোর ঘায়ে, যাব কোন্ দেশ ||
যেমন জনেক মূর্খ, রমণীর স্থান |
অরসিক বোলে কত, হৈল অপমান ||
পিরীতে রমণী দিল, কাণ মূলে তার ||
মূর্খ বলে রসিকতা, শিখেছি এবার ||
কত রস শিখিয়াছি, এই দেখ রামা !
কসালো ছুঁড়ির ঘাড়ে, বারে ইঞ্চি ঝামা ||
সেই রঙ্গ হলো তব, শুন ভাই বুনো !
কবিত্বে বাড়ালে তুমি, গালি দিয়ে দুনো ||
কেবল তোমার মুখে, গালি না যুয়ায় |
কিন্তু হে একটি কথা, জিজ্ঞাসা তোমায় ||
কটুতে অপটু তুমি, বলিয়াছি বটে |
তুমি তা জানিলে বলো, কাহার নিকটে ||

বুনোকবি
যে হোক্ না কেন তাতে, কি কার্য তোমার |
আগে বল দিছি গালি, কেমন এবার ||
তোমারে যা বলিয়াছি, বুঝেছ ত সব |
গোপনে বলেছি ঢের কর অনুভব ||

চট্ট
গাল দেছ দড় দড়                   হলো বাহাদুরি বড়,
বাড়িবেক যশ অবিরত |
আমরা শুনিয়া তায়,                   এসেছি কৃতজ্ঞতায়,
সেলাম বাজাতে গোটাকত ||
“নীচ যদি উচ্চ ভাবে,                  সুবুদ্ধি উড়ায় হাসে”
সুবুদ্ধি মহৎ জন মত ||
কি সুবুদ্ধি সূক্ষ্ম তব,                 লোকে করে অনুভব,
যার কি না যায় দেখা কিছু |
কেহ বলে কই কই,                   কেহ বলে, আছ ওই
কেহ বলে দড়ি বাঁধো পিছু ||
  হে উত্তরে মহল্লোক,                   একবার তেজে শোক,
সম্বোধিও নীচে মুখ ফুটে |
মনসুখে সব সব,                     কিছু মাত্র নাহি কব,
অঙ্গীকার করি করপুটে ||

মিত্র কবি
গালি দিলে প্রতিফল, অবশ্য পাইবে |
যেই মতি, সেই মতি, কেন না হইবে ||

বুনোকবি
এ মতি আমার নাহি, ছিল এত কাল |
কুবিদ্যা কুমতি দিয়ে, ঘটালো জঞ্জাল ||
সুবিদ্যা সুমাতা ছেড়ে, এসে তার কাছে |
এই মতি এই গতি, শেষ ঘটিয়াছে ||

কুবিদ্যা
আমি তোর মাতা নহি, সে তোমার মাতা |
সে তোমার প্রিয় হলো, খেলি মোর মাতা ||
আমি চলে যাই দেখি, কে কি করে তোর |
এখন করিবি তুই, কোন্ মা’র, জোর ||
কুবিদ্যা প্রস্থান ও বিদ্যা পুনরাগমন করিলেন

বিদ্যা
কেন বাছা তোরা সবে, কলহ করহ |
ভাই ভাই ভাবে সদা, ভাই ভাই রহ ||
সকলে একত্রে মোরে, আরাধনা কর |
সকলেই উপদেশ, দেন কবীশ্বর ||
সদাই সদ্ভাবে তবে, কেন না চলহ |
কি কারণে কর সবে, কেবল কলহ ||

মিত্র
তাই আমি কতবার, বুঝায়ে লিখেছি |
তার ফল গালাগালি, কেবল দেখেছি ||

অধিকারী
আমি ত দিই নে গালি, ওদের দুজনে |
শুধু কবিশ্রেষ্ঠ আমি, জেনে মনে মনে ||
করিলাম অপরূপ, স্বপন রচনা |
জগতেরে জানাবারে, নিজ গুণপনা ||

বিদ্যা
কিসে তুমি শ্রেষ্ঠ কবি, নিজ মনে লাগে |
কবিতা কাহাকে বলে, বল দেখি আগে ||

অধিকারী
যে জন মিলায় শব্দ, সুকোমল ভাষে |
সেই ত সুকবি বলি, আপনা প্রকাশে ||

বিদ্যা
তা নয় কবিতা বাছা, তা নয় তা নয় |
রামায়ণ পোড়ে তত, সুকবি না হয় ||
মুগ্ধ যদি, প্রকৃতির, মোহন বদন |
যেই মনোমত ভাবে, করে দরশন ||
সুখ দুখ রিপু রসে, হৃদয় মাঝার |
প্রকৃতির মোহাসনে, জন্মে যে বিকার ||
যেই ভাষে সেই ভাব, স্বরূপ প্রকাশে |
যে ভাষে আপনা সনে, হৃদয় সম্ভাষে ||
যথার্থ কবিতা সেই, সদা মোহময় |
শুধু রাম রাম বলা, কবিতা তো নয় ||
কিন্তু রামনাম তুমি, ছাড়িবে না দেখি |
যতে প করিয়ে কবি, কয় যত ঢেঁকি ||
সত্য কবিতায় রাখ, যতন বিশেষ |
কবি ঈশ্বরের ঠাঁই, লহ উপদেশ ||

.                                 
  ****************                                   
.                                                                                             
সূচীতে . . .    


মিলনসাগর