কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা |
শিশির বর্ণনাছলে স্ত্রী-পতির কথোপকথন কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যোগেশচন্দ্র বাগল সম্পাদিত “বঙ্কিম রচনাবলী” ২য় খন্ড, ( ১৯৫৫ ) থেকে নেওয়া | ৫ ফেব্রুয়ারী ১৮৫৩, “সংবাদ প্রভাকরে” প্রকাশিত | লঘুললিত স্ত্রী | হইয়াছে জল বড়ই শীতল, ছুঁইলে বিকল হইতে হয় | আগে যে জীবন, জুড়াত জীবন সে বন এখন, নাহিক সয় || সুখদ মলয়, হইলেক লয়, এলো হিমালয়, শীতল অতি | পদার্থ সকল, সমীরণ জল, কি কাল শীতল, হলো সম্প্রতি || সকল শীতল, করয় বিকল, কিন্তু অপরূপ, নিরখি তায় | সমস্ত শীতল, প্রতপ্ত কেবল, বোধ হয় প্রাণ, তোমার গায় || পতি | মোরে নিরন্তর, তব নেত্রকর, পাবক প্রখর, দাহন করে | মম দেহোপর, বহ্নি খর তর, তাই উষ্ণভাব, এ দেহ ধরে || স্ত্রী | কেন বিভাবরী, দীর্ঘ দেহ ধরি, ধরায় বিহরি, রহে এখন | ত্যজিতে ধরণী, না চায় রজনী, বল গুণমণি, শুনি কারণ || পতি | নয়ন মুদিয়ে, থাক ঘুমাইয়ে, তখন হেরিয়ে, তোমার মুখ | সতী বিভাবরী, শশী জ্ঞান করি, হেরি প্রাণপতি, পায় কি সুখ || আছে যতক্ষণ, শশী প্রাণধন, পাইয়ে রতন, না ত্যজে তায় | তাই বিভাবরী, পতি বোধ করি, বহুক্ষণ ধরি, রয় ধরায় || কিন্তু লো যেক্ষণে, নিদ্রার ভঞ্জনে, চাহিয়া নয়নে, উঠ প্রভাতে | হেরি ও নয়নে, নিশা ভাবি মনে, কুমুদী সতিনী, পালায় তাতে || স্ত্রী | অতিশয় ঘন, বল কি কারণ নিরখি প্রভাতে, এ কুঙ্ঝটিকা | কেন সব হয়, ধূমাকার ময়, কি ধূম হইল, ধরা ব্যাপিকা || পতি | এবে আর দর্প, না করে কন্দর্প, তাহার কারণ, শুন ইহার | তব নিকেতন, আসিল মদন, আপন যাতন, দিতে তোমায় || কিন্তু তব স্থান, হরের সমান, যে বহ্নি নয়নে, সে ভস্ম হয় | তাই ধনি তার, শক্তি সে প্রকার, অবনীতে আর, নাহিক রয় || ভস্ম হৈল শর, তার কলেবর, প্রবল দহনে, দাহন হয় | দাহনে ধূম, ব্যাপে নভোভূম, ভ্রমেতে কুআশা, লোকে কয় || স্ত্রী | কি কারণ প্রাণ, শঙ্কর সমান, মোরে কর জ্ঞান, উন্মত্ত প্রায় | কোথায় কি মম, হের হর সম, তোমারে বুঝাতে, হইল দায় || পতি | বিবেচনা করি, তোরে প্রাণেশ্বরী, বলি ত্রিপুরারি, প্রলাপ নয় | হরের ভূষণ, সব বিলক্ষণ, তোমার অঙ্গেতে, তুলনা হয় || হরের ইন্দুর, সমান সিন্দুর শিরে লো তোমার, কি শোভা পায় | সদা, শিরোপরি, আছ সিঁথিপরি, তিন ধারা ধরি, গঙ্গা খেলায় || স্কন্ধ শিরোপরে, হরের বিহরে, সদা ফণিবরে, ভীষণ অতি | বেণী ফণিবর, তব নিরন্তর, স্কন্ধ শিরোপর, রয় তেমতি || যেইমত হরে, কন্ঠে বিষধরে, তেমতি গরল, তুমিও ধর | কিন্তু কন্ঠে নয়, কিছু অধো রয়. বিশেষিয়া বলি, ও পয়োধর || যে গরল হরে, কন্ঠদেশে ধরে, কাছে না এনে সে নাশিতে নারে | কিন্তু পয়োধরে যে গরল ধরে, দূর হইতেই, মানবে মারে || যদি বল প্রিয়ে, কন্ঠে না রহিয়ে আধোভাগে কেন, গরল রয় | কন্ঠে রৈলে তবে, মুখ কাছে রবে, মুখামৃতে বিষ. নিস্তেজ হয় || স্ত্রী | কি মূঢ় মানব কোলে নিজ সব, দুরন্ত পাবক, লয়েছে টানি | বিশ্বাসঘাতক, সেই সে পাবক, করিবে দহন, তাহা না জানি || পতি | দোষ দাও পরে, নিজ দোষোপরে, দৃষ্টি নাহি কর, কি অপরূপ | আপনি কেমনে আপন নয়নে, রেখেছো অনল, কহ স্বরূপ || স্ত্রী | তবে প্রেমাধার রাখিব না আর, নয়নে আমার, কাল অনল | দেখ প্রাণ ধন, মুদিয়া নয়ন, তাড়াই আগুন, শয্যায় চল || পতি | যদি তুমি প্রাণ নাহি দিলে স্থান, কোথায় অনল, যাইবে আর | পৃথিবীতে আর, স্থান নাহি তার || তাহে বলী শীত, বিপক্ষ তার || যাইবে যথায়, যাইবে তথায়, দুরন্ত শাত্রব, শীত ধাইয়ে | এমতে ধরায়, নাহি স্থান পায়, শেষে জলে যায়, রয় ডুবিয়ে || তাই দেখ কাল, নিশা শেষকাল, উঠে জল হোতে, ধূমের রশি | তাই বলি প্রিয়ে, স্থান না পাইয়ে, হয়েছে অনল, সলিল বাসি || . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |
সাধের প্রেমে না পূরিল সাধ, একি রে বিষাদ কবি কঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রসাদকুমার মুখোপাধ্যায় কর্তৃক সংগৃহীত ও প্রকাশিত "সহস্র-সঙ্গীত" গীত-সংকলন, তৃতীয় সংস্করণ, ১৮৯২, থেকে নেওয়া। যোগেশচন্দ্র বাগল সম্পাদিত বঙ্কিমরচনাবলীতে এই গানটি নেই। ॥ ঝিঝিট, কাওয়ালী॥ সাধের প্রেমে না পূরিল সাধ, একি রে বিষাদ। নিরবধী অপরাধী, বিনা অপরাধ॥ সদা যারে ভাবি মনে, কভু সে না ভাবে মনে, কত আর সব প্রাণে, বিষম প্রমাদ। যার লাগি অপরাধ, সেই দেয় অপবাদ, কে হেন সাধিল বাদ, ঘটালে প্রমাদ॥ . **************** . সূচীতে . . . মিলনসাগর |