এখানে "সম্ভবত" বঙ্কিমচন্দ্রের কাব্য-সমগ্র সংগ্রহ করা হয়েছে। "সম্ভবত" এই জন্য যে বঙ্কিমের রচিত
কয়েকটি গান লোকমুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে যা আমরা এখনও সংগ্রহ করে উঠতে পারিনি। কেউ
তা আমাদের পাঠালে আমরা প্রেরকের নাম এই পাতায় উল্লেখ করবো, আমাদের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ।
আমরা মিলনসাগরে কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা তুলে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে
পারলে আমাদের এই প্রচেষ্টার সার্থকতা। মিলনসাগরে এই পাতা কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি
আমাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
উত্স -
- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, "কবিতাপুস্তক", ১৮৭৮।
- দুর্গাদাস লাহিড়ী, বাঙালীর গান, ১৯০৫।
- যোগেশচন্দ্র বাগল সম্পাদিত "বঙ্কিম রচনাবলী", ২য় খণ্ড, ১৯৫৪।
- অলোক রায়, "বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়", বাংলার মনীষা ১, ১৯৮৬।
- শিশিরকুমার দাশ, "সংসদ বাংলা সাহিত্য সঙ্গী", ২০০৩।
- সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, "সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান", ১৯৭৬।
- গৌতম চক্রবর্তীর প্রবন্ধ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২০১১।
- উইকিপেডিয়া
- দীপক সেনগুপ্ত-র প্রবন্ধ অবসর.নেট ওয়েবসাইট।
কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ই-মেল - srimilansengupta@yahoo.co.in
এই পাতা প্রথম প্রকাশ - ২০০৫।
পরিবর্ধিত সংস্করণ - ০৫.০৭.২০১৬।
সাধের প্রেমে না পূরিল গানটির সংযোজন - ৩.৯.২০১৬।
বঙ্কিমচন্দ্র ও শরত্চন্দ্রের কবিতা নিয়ে সুকুমার সেনের উদ্ধৃতির প্রতিবাদ - ১০.৯.২০২০।
...
কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় - জন্মগ্রহণ করেন
অবিভক্ত বাংলার চব্বিশপরগণা জেলার, নৈহাটির
কাঁটাল পাড়ায় ( বানানভেদে কাঁঠালপাড়া )। পিতা
যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ডেপুটি কালেক্টর। মাতা
দুর্গাসুন্দরী দেবী ছিলেন যাদবচন্দ্রের দ্রিতীয়া স্ত্রী এবং
পণ্ডিত ভবানীচরণ বিদ্যাভূষণের কন্যা। চার ভাইয়ের
মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন সেজ। ১৮৪৯ সালে তাঁর পিতা
মেদিনীপুর থেকে কাঁটালপাড়ায় ফিরে এলে, ফেব্রুয়ারী
মাসে, সেকালের রীতি অনুসারে, তাঁর বিবাহ দেওয়া
হয় মাত্র পাঁচ বছরের বালিকা মোহিনী দেবীর সঙ্গে। ১৮৫৯ সালের শেষ দিকে প্রথমা পত্নী মোহিনী দেবীর
মৃত্যু হয়। তাঁদের এক পুত্র হয়। মেদিনীপুরের নেগুয়ায় কর্মরত থাকার সময়ে দ্বিতীয়বার, ১৮৬০ সালের জুন
মাসে হালিসহরের সীতারাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা, রাজলক্ষ্মী দেবীকে বিবাহ করেন। তাঁদের তিন কন্যা হয়।
শিক্ষা-দীক্ষা -
কবির হাতেখড়ি হয় পাঁচ বছর বয়সে কুলপুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে এবং তাঁর পড়াশুনা শুরু হয়
বাড়িতে, গুরুমশায় রামপ্রাণ সরকারের কাছে। ১৮৪৪ সালে, পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে, ছ-বছর বয়সে
তাঁকে ইংরেজী স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। দুর্গাদাস লাহিড়ী তাঁর "বাঙালীর গান" কাব্য সংকলনে
লিখেছেন, "১২৩৫ সালে (১৮৪৬) তাঁহার পিতা কর্মসূত্রে মেদিনীপুরে অবস্থান করায়, বঙ্কিমচন্দ্র তত্রত্য
ইংরেজি বিদ্যালয়ে পাঠাভ্যাসে প্রবৃত হন ; সেখানে প্রতিবত্সর ডবল প্রমোশন পাইয়াও, বালক বঙ্কিমচন্দ্র
পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করিতেন।"
১৯৪৯ সালে পিতা আবার কাঁটালপাড়ায় ফিরে এলে তিনি বাড়িতেই সংস্কৃত শ্লোক ও বাংলা কবিতাচর্চা
শুরু করেন শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে। এর পর ভর্তি হন হুগলী নদীর ওপারে হুগলী কলেজের জুনিয়র
বিভাগের প্রথম শ্রেণীতে। তারপর হুলী কলেজে সাত বছর পড়েন। ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায়
তিনি কলেজের সর্বশ্রেষ্ঠ ছাত্র হিসেবে বৃত্তি লাভ করেন।
এই সময়ে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা এবং প্রথম প্রকাশিত রচনা
“কামিনীর প্রতি উক্তি”, ১৮ই মার্চ ১৮৫৩ তারিখের সংখ্যায়। দু-বছর সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় তাঁর অনেক
গদ্য ও পদ্য প্রকাশিত হয়।
১৮৫৬ সালে তিনি ভর্তি হন কলকাতার প্রসিডেন্সী কলেজের আইন বিভাগে। তাঁর প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ
“ললিতা। পুরাকালিক গল্প। তথা মানস” এই বছরেই প্রকাশিত হয়।
১৮৫৭ সালের জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয়, যার চ্যান্সেলার ছিলেন বড়লাট (গভর্নর
জেনারেল) লর্ড ক্যানিং এবং ভাইস চ্যান্সেলার ছিলেন তদানীন্তন সুপ্রীম কোর্টের চীফ জাস্টিস স্যার জেমস
উইলিয়াম কোলভিল্।
সেই বছরই, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রবর্তন করে এবং আইন বিভাগের ছাত্র হিসাবে সেই
পরীক্ষা দিয়ে তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৮৫৮ সালে প্রথম বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হলে ১৩ জনের মধ্যে
দুজন কৃতকার্য হন। বঙ্কিমচন্দ্র দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অন্য জনের নাম
যদুনাথ বসু। তাই বঙ্কিমচন্দ্রই ভারতবর্ষের প্রথম স্নাতক বা গ্রাজুয়েট! প্রথম বছরের পরীক্ষার সময় বেশী
ছিল না বলে ছয়টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটি বিষয়ে পাশ করার ফলে শুধু সেই বছরের জন্য তাঁদের অনধিক
সাত নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়। ( অলোক রায়, বাংলার মনীষা ১, পৃষ্ঠা ১১০ )
প্রেসিডেন্সী কলেজে আইনের ক্লাস করতে করতেই তিনি ১৮৫৮ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি
কালেক্টারের পদে নিযুক্ত হওয়ার ফলে আইন পরীক্ষা দেওয়া হয়নি সেবার। তিনি ১৮৬৯ সালে বি.এল.
পরীক্ষা পাশ করেন এবং প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
কর্মজীবন -
তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৮৫৮ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে, যশোহর শহরে। এরপর মেদিনীপুরের নেগুয়া
১৯৬০-১৯৬৩, খুলনা ১৮৬০-১৮৬৩, বারুইপুর ১৮৬৪-১৮৬৯, মুর্শিদাবাদ ১৮৭০-১৮৭৪, ২৪পরগণার বারাসাত
ও মালদহের রোড সেস্ বিভাগ ১৮৭৪-১৮৭৬, হুগলী ১৮৭৬-১৮৮১, হাওড়া ও আলিপুর ১৮৮১-১৮৮২,
ওড়িষ্যার জাজপুর ১৮৮২-১৮৮৩, হাওড়া ১৮৮৩-১৮৮৫, যশোহরের ঝিনাইদহ ১৮৮৫-১৮৮৬, ওড়িষ্যার ভদ্রক
ও হাওড়া ১৮৮৬-১৮৮৮ অবধি কাজ করে ১৮৮৮ সালে শেষবারের জন্য আলিপুরে পোস্টিং পান। এখান
থেকেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টারের পদে ১৪ই সেপ্টেম্বর ১৮৯১ তারিখে ৫৩ বছর বয়সে
সরকারী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৮৮৫ সালেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৮৮৭ সাল থেকে
কলকাতার প্রতাপ চাটুজ্যে লেন এ বাড়ী কিনে বসবাস শুরু করেন। এর আগে ১৮৭৭ সালে তাঁকে
পারিবারিক বিরোধের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় যার ফলে তিনি কাঁটালপাড়া ত্যাগ করে ভাড়া বাড়িতে থাকা
শুরু করেন। পিতা যাদবচন্দ্র তাঁকে তাঁর উইলে কাঁটালপাড়ার বাড়ীর ভাগ দিয়ে যান নি। ১৮৮৪ সালে
“দেবীচৌধুরাণী” উপন্যাসের উত্সরগপত্রে তিনি তাঁর পিতার উদ্দেশে লিখেছিলেন, “যাঁহার কাছে প্রথম নিষ্কাম
ধর্ম্ম শুনিয়াছিলাম, যিনি স্বয়ং নিষ্কাম ধর্ম্মই ব্রত করিয়াছিলেন, যিনি এখন পুণ্যফলে স্বর্গারূঢ়, তাঁহার পবিত্র
পাদপদ্মে এই গ্রন্থ ভক্তিভরে উত্সর্গ করিলাম।”
তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধুবর্গের মধ্যে ছিলেন দীনবন্ধু মিত্র, জগদীশনাথ রায়, অক্ষয়চন্দ্র সরকার, চন্দ্রনাথ বসু।
বঙ্কিমের স্নেভাজন নবীনদের মধ্যে ছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, নবীনচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ।
সাহিত্যজীবন -
তিনি বিখ্যাত তাঁর উপন্যাস ও বিভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধের জন্য। তাঁর বিশাল রচনা সম্ভারে রয়েছে শম্ভুচন্দ্র
মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত, Indian Field সাপ্তাহিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত তাঁর প্রথম ইংরেজী
উপন্যাস Rajmohan’s Wife (১৮৬৪)। এর পর তিনি ইংরেজী ভাষায় আর উপন্যাস না লিখলেও অনেক প্রবন্ধ
লিখেছিলেন।
১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর যুগান্তকারী উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী। সমালোচকরা এই উপন্যাসে স্যার
ওয়াল্টার স্কটের “আইভ্যানহো”-র ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন, কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং বলে গিয়েছেন যে
দুর্গেশনন্দিনী লেখার আগে তিনি “আইভ্যানহো” পড়েননি। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় কপালকুণ্ডলা
(১৮৬৬), মৃণালিনী (১৮৬৯)।
বঙ্কিমচন্দ্রের কবিতা এবং আধুনিক কবিতা -
কিশোরবস্থা থেকেই বঙ্কিমচন্দ্র লিখতে শুরু করেন। সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম
কবিতা তথা প্রথম প্রকাশিত রচনা “কামিনীর প্রতি উক্তি”, ১৮ই মার্চ ১৮৫৩ তারিখের সংখ্যায়। দু-বছর
সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় তাঁর অনেক গদ্য ও পদ্য প্রকাশিত হয়।
১৮৫৬ সালে কলকাতার প্রসিডেন্সী কলেজের আইন বিভাগে পড়তে পড়তেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম
গ্রন্থ, যা একটি কাব্যগ্রন্থ “ললিতা। পুরাকালিক গল্প। তথা মানস”। এই কাব্যগুলি বহু পরে কিছু সংশোধন
করে তিনি তাঁর “কবিতাপুস্তক” (১৮৭৮) কাব্যগ্রন্থে পুনপ্রকাশিত করেন।
“কবিতাপুস্তক” কাব্যগ্রন্থে আমরা বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা তিনটি অন্তমিলহীন আধুনিক কবিতা পাই। তিনি নিজে
এই ধরণের কবিতাকে “গদ্য কবিতা” বলেছেন। এই কাব্যগ্রন্থের বিজ্ঞাপন এ ( ভূমিকাতে ) তিনি খুব
সুন্দরভাবে গদ্য কবিতা সম্বন্ধে লিখেছেন যা আমরা হুবহু তুলে দিলাম . . .
. . . “কবিতাপুস্তকের ভিতর তিনটি গদ্য প্রবন্ধ সন্নিবেশিত হইয়াছে। কেন হইল, আমাকে জিজ্ঞাসা করিলে
আমি ভাল করিয়া বুঝাইতে পারিব না। তবে এক্ষণে যে রীতি প্রচলিত আছে, যে কবিতা পদ্যেই লিখিতে
হইবে, তাহা সঙ্গত কি না, আমার সন্দেহ আছে। ভরসা করি অনেকেই জানেন যে কেবল পদ্য কবিতা নহে।
আমার বিশ্বাস আছে, যে অনেক স্থানে পদ্যের অপেক্ষা গদ্য কবিতার উপযোগী। বিষয় বিশেষে পদ্য,
কবিতার উপযোগী হইতে পারে, কিন্তু অনেকস্থানে গদ্যের ব্যবহারই ভাল। যে স্থানে ভাষা ভাবের গৌরবে
আপনা আপনি ছন্দে বিন্যস্ত হইতে চাহে, কেবল সেই স্থানেই পদ্য ব্যবহার্য্য। নহিলে কেবল কবি নাম
কিনিবার জন্য ছন্দ মিলাইতে বসা এক প্রকার সং সাজিতে বসা। কবিতায় গদ্যের উপযোগিতার উদাহরণ
স্বরূপ তিনটি গদ্য কবিতা এই পুস্তকে সন্নিবেশিত করিলাম। অনেকে বলিবেন এই গদ্যে কোন কবিত্ব নাই---
ইহা কবিতাই নহে। সে কথায় আমার আপত্তি নাই। আমার উত্তর যে এই গদ্য যেরূপ কবিত্বশূন্য আমার
পদ্যও তদ্রূপ। অতএব তুলনায় কোন ব্যাঘাত হইবে না।"
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রাপ্ত সম্মাননা -
কবি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অবসর গ্রহণ করার পর ব্রিটিশ করসার তাঁকে ১৮৯১ সালে রায়
বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে C.I.E. ( Companion of the Order of the Indian Empire ) উপাধিতে ভূষিত
করেন। সর্বোপরি আপামর বাঙালী শ্রদ্ধায় তাঁকে “ঋষি বঙ্কিম” নামে উল্লেখ করে। কখন থেকে, কে বা কারা
তাঁকে ঋষি বঙ্কিম নামে উল্লেখ করেছেন তা অবশ্য আমাদের জানা নেই। যদি কেউ প্রমাণ সহ তা আমাদের
জানান তাহলে আমরা প্রেরকের নাম এই পাতায় উল্লেখ করবো।
১৮৭২ সালে তিনি প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন “বঙ্গদর্শন” মাসিক পত্রিকা। কবির বহু প্রবন্ধ ও উপন্যাস
ধারাবাহিকভাবে বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হতে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে “বিষবৃক্ষ” (১৮৭৩), “ইন্দিরা” (১৮৭৩),
“যুগলাঙ্গুরীয়” (১৮৭৪), “চন্দ্রশেখর” (১৮৭৫), “রজনী” (১৯৭৭), “কৃষ্ণকান্তের উইল” (১৮৭৮)। বঙ্গদর্শনেই
প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বিভিন্ন কৌতুক ও রহস্য প্রবন্ধ “লোকরহস্য”-এ (১৮৭৪), বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ “বিজ্ঞান
রহস্য”-এ (১৮৭৫), অসামান্য ব্যক্তিগত প্রবন্ধ “কমলাকান্তের দপ্তর”-এ (১৮৭৬), সমাজবিষয়ক প্রবন্ধ “সাম্য”
(১৮৭৯), ইতিহাস-দর্শন-সাহিত্যবিষয়ক অসংখ্য প্রবন্ধ প্রথমে “বিবিধ সমালোচনা” (১৮৭৬) পরে
“প্রবন্ধ পুস্তক” (১৮৮৯) এবং শেষে “বিবিধ প্রবন্ধ” (১৮৮৭, ১৮৯২) গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
১৮৭৬ সালে বঙ্গদর্শন পত্রিকার প্রকাশনা, বঙ্কিমচন্দ্র বন্ধ করে দেন। ১৮৭৭ সালে সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
সম্পাদনায় পত্রিকাটি আবার চালু হয়। ( বঙ্গদর্শন পত্রিকা নিয়ে দীপক সেনগুপ্ত-র একটি সুন্দর প্রবন্ধ অবসর.
নেট ওয়েবসাইটে, অবশ্যপাঠ্য। )
এরপর প্রকাশিত হয় “আনন্দমঠ” (১৮৮২), “রাজসিংহ” (১৮৮২), “দেবীচৌধুরাণী” (১৮৮৪), বঙ্কিমচন্দ্র প্রবর্তিত
“প্রচার” (১৮৮৪ - ১৮৮৯) পত্রিকায় “কৃষ্ণচরিত্র” (১৮৮৬), “সীতারাম” (১৮৮৭), অক্ষয়চন্দ্র সরকার সম্পাদিত
“নবজীবন” পত্রিকায় “ধর্মতত্ত্ব” (১৮৮৮) প্রভৃতি।
তাঁর সর্বাধিক বিতর্কিত, ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পটভূমিকায় সন্ন্যাসী বিদ্রোহ অবলম্বনে রচিত, উপন্যাস
“আনন্দমঠ” (১৮৮২)। স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র, মূল স্লোগান “বন্দেমাতরম” ধ্বনি এই আনন্দমঠেরই
অংশ। গুলিবিদ্ধ হয়ে পতাকা হাতে মাতঙ্গিণী হাজরার মৃত্যুবরণ করতে করতে শেষ বাক্য ছিল এই
“বন্দেমাতম্”। কত স্বাধীনতা সংগ্রামী "বন্দেমাতরম্" ধ্বনি দিতে দিতে, হাসিমুখে, ফাঁসির মঞ্চে উঠে মৃত্যুবরণ
করে শহীদ হয়েছেন। যে লেখনি থেকে উঠে আসে দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগের মন্ত্র, তা কি আমরা
কোনো ভাবে অবজ্ঞা করতে পারি? বিতর্ক যতই হোক ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই বই ও
তার বন্দেমাতরম্ গানটির ভূমিকা অসীম। রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে গানটির প্রথম দুটি স্তবক জাতীয় সঙ্গীত
হিসেবে জাতীয় কংগ্রেস স্বীকৃতি দেয়। পরে দেশ স্বাধীন হবার পর জাতীয় গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
( বন্দেমাতরম্ নিয়ে গৌতম চক্রবর্তীর, আনন্দবাজার পত্রিকার, ২০১১-র এই লেখাটি অবশ্যপাঠ্য )
ওড়িষ্যার জাজপুরে থাকার সময় ১৮৮২ সালে জেনারেল অ্যসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনের অধ্যক্ষ উইলিয়াম
হেস্টির সঙ্গে হিন্দুধর্ম নিয়ে স্টেটস্ম্যান পত্রিকায় তর্ক-বিতর্কে মেতেছিলেন। এই বিতর্কের সময়ে তাঁর
দৃষ্টিভঙ্গির স্বাতন্ত্র পরিস্ফুট হয়।
রবীন্দ্রনাথের বঙ্কিম বর্ণনা -
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত্কারের বিবরণে লিখেছেন . . .
“লেখা পড়িয়া এতদিন যাঁহাকে মহৎ বলিয়া জানিতাম চেহারাতেও তাঁহার বিশিষ্টতার যে এমন
একটি নিশ্চিত পরিচয় আছে সে কথা সেদিন আমার মনে খুব লাগিয়াছিল। বঙ্কিমবাবুর খড়গনাসায়, তাঁহার
চাপা ঠোঁটে, তাঁহার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভারি একটি প্রবলতার লক্ষ্মণ ছিল। বক্ষের উপর দুই হাত বদ্ধ করিয়া
তিনি যেন সকলের নিকট হইতে পৃথক হইয়া চলিয়াছিলেন, কাহারও সঙ্গে যেন তাঁর কিছুমাত্র গা-ঘেঁষাঘেঁষি
ছিল না, এটাতেই সর্বাপেক্ষা বেশি করিয়া আমার চোখে ঠেকিয়াছিল।”
বঙ্কিমচন্দ্র ও শরত্চন্দ্রের কবিতা নিয়ে সুকুমার সেনের উদ্ধৃতির প্রতিবাদ - পাতার উপরে . . .
আনন্দ পাবলিশার্স থেকে রথযাত্রা ১৩৯২-এ (জুন ১৯৮৫) সুকুমার সেন সম্পাদিত শরৎ সাহিত্য সমগ্রের
ভূমিকা “শরত্চন্দ্রিকায়”, তিনি লিখেছেন . . .
, “বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস বার বার পড়ে শরত্চন্দ্র বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যরসে জারিত হয়েছিলেন এবং
তাঁর নিজের রচনাতেও তাই সেই রসই নিজস্ব পাক খেয়ে ক্ষরিত হতে থাকে। সুতরাং বঙ্কিমচন্দ্র যে
শরত্চন্দ্রের সাহিত্যগুরু, তাতে সন্দেহ নেই। বঙ্কিমচন্দ্রের এমন প্রভাবের অনুকূলে শরত্চন্দ্রের মানসিকতায়
কিছু প্রস্তুতিও ছিল। এ প্রস্তুতি হল কোন কোন বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ভাবসমতা। দুজনেই
কবিতাকে এড়িয়ে গেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র অবশ্য প্রথম জীবনে কবিতা লিখে সাহিত্য জগতে ভিড়তে চেষ্টা
করেছিলেন। সে কবিতা সমাদৃত হয়নি। তা নিতান্তই মক্শ। তিনি তখন আর পাঁচজন শিক্ষিত কলেজিয়ান
রূপে ঈশ্বরগুপ্তের চেলা হতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি দুটো একটা গান লেখা ছাড়া কবিতার দিকে আর পা
বাড়ান নি।
. কবিতা রচনা সাহিত্যকর্মের মধ্যে এক হিসাবে সহজতম। সব কবি সাহিত্যিকেরই প্রথম সাধ হয়
কবি হবার, এবং কিশোর বয়সে অনেকেই দু-চারটে কবিতা লিখে থাকেন। শরৎচন্দ্রও তা করে থাকবেন।
কিন্তু সেটা কখনও প্রকাশ করার চেষ্টা করেননি। (সেরকম রচনার কোন উল্লেখ কোথাও দেখেছি বলে মনে
পড়ছে না। )
. শরত্চন্দ্র যে সাহিত্যক্ষেত্রে রচনায় ও সমালোচনায় কবিতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছিলেন, তার
কারণ কী? তাঁর গদ্য রচনায়---মানে গল্পে উপন্যাসে এতটা হৃদয়রস ঢেলে দিয়েছিলেন বলেই কি পদ্য রচনায়,
কবিতায় তাঁর স্পৃহা ছিল না? এতে শরত্চন্দ্রের সাহিত্য কর্মে কিছু ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয়। তিনি যদি
কবিতা বুঝতে পারতেন তাহলে রবীন্দ্রনাথকে অতটা উপেক্ষা করতেন না। তাঁর অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের গল্পে
গোড়া থেকেই শরত্চন্দ্রের প্রবেশ অবারিত ও সহজ হতে পারতো। তার ফলে তাঁর নিজের রচনা সমৃদ্ধতর
হতে পারত।”
শরত্চন্দ্রের কবিতার প্রসঙ্গ থেকে আমাদের একটু সরে বঙ্কিমের কবিতার প্রসঙ্গে আসতে হচ্ছে। তার জন্য
পাঠকের কাছে আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
উপরোক্ত উদ্ধৃতিটি শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন মহাশয়ের লেখা হলেও তাঁর এই উদ্ধৃতি সম্বন্ধে কয়েকটি কথা
বলতেই হচ্ছে। প্রথমত তাঁর মতে বঙ্কিমচন্দ্রের কবিতা সমাদৃত হয়নি, কথাটি সত্যের অপলাপ বললে
অতিকথন হবে না বিন্দুমাত্র। বঙ্কিমচন্দ্রের কবিতার লাইন তো একটি দেশের আপামর জনগণের প্রতিবাদের
দৃপ্ত স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছিল --- “বন্দেমাতরম”! যা গাইতে গাইতে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ফাঁসির মঞ্চে উঠে
আত্ম বলিদান দিতে প্রস্তুত ছিলেন, যা একটি জাতির আত্মবলিদানের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই কবির
কবিতা সমাদৃত হয়নি এ কথা মেনে নেওয়া ইতিহাসের অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। দ্বিতীয়ত
বঙ্কিমচন্দ্রের কবিতা ও গানের সংখ্যা মোটেই “দুটো-একটা” নয়। মিলনসাগরেই বঙ্কিমচন্দ্রের পাতায় রয়েছে
২৩টি গান ও ২৯টি কবিতা। যার মধ্যে রয়েছে ৩টি বঙ্কিমের ভাষায় “গদ্য কবিতা”! বঙ্কিমচন্দ্রকে সেদিক
দিয়ে “আধুনিক বাংলা অন্তমিলহীন কবিতার জনক” বলেই আমরা মনে করি। এছাড়া তাঁর আরও গান
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে যা এখনও তাঁর “সমগ্র” সংকলনে সন্নিবেশ করা হয়নি।
এ বিষয়ে তপন মল্লিক চৌধুরীর খবর অনলাইন ওয়েবসাইটে ধারাবাহিকভাবে লেখা “রবিবারের পড়া:
সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সংগীতজ্ঞান”, প্রবন্ধটি প্রণিধানযোগ্য। শেষ পর্বে তিনি লিখেছেন যে . . .
“বঙ্কিম অনুজ পূর্ণচন্দ্রের একটি লেখা থেকে জানা যায়, যখন বঙ্কিমের ১৩-১৪ বছর বয়স সেই সময় দাদা ও
ভাইদের সঙ্গে নৌকায় ভাসান দেখতে বঙ্কিম ফরাসডাঙা যাচ্ছিলেন। ভাগীরথীর পূব পাড়ের শ্মশানে তখন
শবদাহ হচ্ছিল। শ্মশানে এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে জলন্ত চিতায় ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছিল, তাকে ধরে
রেখেছিল তার বাড়ির লোক। এই ঘটনায় বঙ্কিমের চোখ জলে ভরে যায়। কিশোর বঙ্কিম নৌকায় বসেই
একটি গান লিখে সুর সংযোগ করেছিলেন। মল্লার রাগিণীতে তৈরি সেই গান বহু কাল প্রচলিত থাকার পর
লুপ্ত হয়ে যায়। গানটির কথা… ‘হারালে পর পায় কি ফিরে মণি – কি ফণিনী, কি রমণী?’ . . .”
এই গানগুলির বেশ কয়েকটা পূর্ণরূপে, এখনও আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি। তাই মিলনসাগরের কবি
বঙ্কিমচন্দ্রের সংগ্রহে তোলা সম্ভব হয়নি। আমরা তাই বলি যে মিলনসাগরে বঙ্কিমের গানের পাতা এখনও
অসমাপ্ত রয়েছে। এ হেন বঙ্কিমের কবিতা সমাদৃত হয়নি !? সুকুমার সেনের এই কথা অহেতুক ও
অহিতকর।
শরত্চন্দ্রের কবিতার প্রসঙ্গে ফিরে সুকুমার সেনের “তিনি যদি কবিতা বুঝতে পারতেন তাহলে রবীন্দ্রনাথকে
অতটা উপেক্ষা করতেন না।” এই উক্তিটিরও প্রতিবাদ করতে হয়। প্রথমে “শরত্চন্দ্র কবিতা বুঝতে
পারতেন না”, একথা মেনে নেওয়া শ্রেফ অন্যায় করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। তাঁর উপন্যাসের কবিত্ব
নিয়ে সৌরেন্দ্রনাথ মিত্র দ্বারা প্রকাশিত “শরৎ-তর্পণ” গ্রন্থে, অজয়কুমার ঘোষের “উপন্যাসের কৃতিত্ব ও
শরত্চন্দ্র” প্রবন্ধটি পড়লে এ বিষয়ে ভুল ধারণার উপসম হবে। সেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন . . .।
দ্বিতীয়ত “তাহলে রবীন্দ্রনাথকে উপেক্ষা করতেন না” - একথার মধ্যেও আমরা কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।
রবীন্দ্রনাথ তখন বাংলা সাহিত্যের নিশ্চিতভাবে শ্রেষ্ঠ কবি এবং শরত্চন্দ্রও সে সময়ে বাংলা সাহিত্যে
সবচেয়ে শক্তিমান, খ্যাতিমান ও সফল গদ্য সাহিত্যিক। তাঁদের চিঠিপত্র থেকে যা বোঝা যায় যে,
সব বিষয়ে তাঁদের মতের মিল না থাকলেও, শরত্চন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের মতামতকে চরম প্রাধান্য দিতেন।
রবীন্দ্রনাথের কথায় তিনি দুঃখ পেতেন, অভিমান করতেন, রাগের মাথায় পত্রের উত্তর লিখেও ডাকে দিতেন
না, এসব তো সে-ই করে যে উপেক্ষা করতে পারে না! তাই আমরা জোরগলায় বলতে পারি যে, শরত্চন্দ্র
রবীন্দ্রনাথকে উপেক্ষা কোনও কালেও করেন নি। তাঁরা পরস্পরকে খুশি করতে চাটুকারিতার আশ্রয় নেন
নি। তাঁদের পারস্পরিক চিঠিপত্রের ভেতর থেকে সে কথাই প্রবলভাবে শ্রবণীয় এবং স্পষ্টভাবে ভাস্বর হয়ে
ওঠে, অন্যথা নয়।
এখন পর্যন্ত আমরা সুকুমার সেনের লেখা কোন কবিতা খুঁজে পাই নি। পেলেই মিলনসাগরে তাঁর কবিতার
পাতা তৈরী করা হবে। যদি তিনিও কবিতা না লিখে থাকেন তাহলে কি শরত্চন্দ্রের সম্বন্ধে তিনি যা
লিখেছিলেন, তা ধার করে কি বলা উচিত হবে যে --- সুকুমার সেনও কবিতা বুঝতেন না এবং কবিতাকে
উপেক্ষা করেছিলেন?! এত অবাস্তবিক সরলিকরণ আমাদের পক্ষে সুকুমার সেনের সম্বন্ধে করা যেমন
হাস্যকর হবে তেমনই হবে তাঁর কাছ থেকে শরত্চন্দ্রের সম্বন্ধে করা উক্তিটি।
গ্রন্থটির প্রকাশকের বড় দুর্ভাগ্য যে যাঁকে দিয়ে শরত্চন্দ্রের রচনা-সমগ্র সম্পাদনা করালেন, তিনিই মনে
করতেন যে শরত্চন্দ্র কবিতা বুঝতে পারতেন না আর সেই হেতু “শরত্চন্দ্রের সাহিত্য কর্মে কিছু ক্ষতি
হয়েছে”! কবিতা বুঝতে না পারার জন্য তিনি রবীন্দ্রনাথকে অতটা উপেক্ষা করতেন! ফলে তাঁর নিজের
রচনাই যথাযতভাবে সমৃদ্ধ হয় নি!"
এত তির্যক ভাবনা আর মন্তব্য যাঁর সাহিত্য-সৃষ্টির প্রতি, তাঁর “রচনা-সমগ্র” সম্পাদন করার কাজ কেন যে
হাতে নিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন, সেটা ভেবেই অবাক হ’তে হয়!
এটাও বলতে হয় যে আনন্দ পাবলিশারস-এর এই ব্যাপারটা দেখা উচিত ছিল যে, যে সাহিত্যিকের রচনা-
সমগ্র ছাপিয়ে তাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁর সম্বন্ধেই তাঁরই রচনা-সমগ্রে, এত অপমান-জনক কথা কেন লেখা
থাকবে? এখানে "জুতো মেরে গরু দান" প্রবাদের কেবল জুতো মারাটাই করা হয়েছে। গরু-দানটা হয়নি।
তাতে অবশ্য ব্যবসার কোনও ক্ষতি হয় নি।
আমরা জানি যে শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন মহাশয়ের বিরুদ্ধে এই কথা লেখায় বিদ্বজ্জনদের অনেকেই আমাদের
উপরে অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ হবেন। তবু আমরা আমাদের মন্তব্যে স্থির থাকছি।