কবি বাসুদেব দেব-এর কবিতা
*
দেখা দাও প্রতিদিন
কবি বাসুদেব দেব

দুঃখে আছি, প্রতিদিন তুচ্ছতা সরিয়ে গেখা দাও
প্রতিটি দেশলাই কাঠি বারুদে ঠুকলেই যেন
তোমার মুখশ্রী জ্বলে ওঠে
সেই ঋণ পুড়ে পুড়ে শোধ দেব আমি প্রতিদিন

প্রতিটি চায়ের কাপে যেন টের পাই
তোমার ওষ্ঠের তাপ
যন্ত্রণায় আছি,
প্রতিটি ক্ষতের মুখে তোমার হাতের
স্পর্শের গোলাপে যেন ফুটে ওঠে রোজ
প্রতিজ্ঞা আমার

কষ্টে আছি, বৃষ্টি হয়ে এসো
যেন ভিজে না যায় কখনো আমার দেশলাই---

.             *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিনা বিজ্ঞাপনে
কবি বাসুদেব দেব

বিশ্বাসে অ্যালার্জি হয় ভালোবাসায় কষ্ট
শজারু জগতের কাছে ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে ঋণ
অরুন্ধতী, এ-শরীর খড়ের, কতকাল ধরে

মানুষ এ-সব জেনেছে ছেনেছে
চুলের মধ্যে গ্রাম্য জোনাকি ত্বকের ভাঁজে পিচ্ছিল নুন
উঁচু বাড়ির জানালা থেকে মানুষ লুকিয়ে চুরিয়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে
ফুরিয়ে যাওয়া টুথপেস্ট খালি মোড়ক তুলো ব্যান্ডেজ
নষ্ট ভোগের উচ্ছিষ্টে ভরে যাচ্ছে প্রত্যাশা আর শিল্প
প্রতিবন্ধী পুতুল বাতিল মোজা পলিথিন আর ধাতুর টুকরো
এইসব ফসলে কেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে আগাছার জঙ্গল
আর আমার সংসার, অরুন্ধতী, কতবার বদলাল
কত রকমের তোমার টেলিফোন নম্বর

ভাঙা বাল্বের দুঃখী চোখ গতিহারা ঘুঙুরের নারব অভিযোগ
চূড়ান্ত হয়ে উঠেছে আজ বনতুলসীর ঝোপে
কী নধর ওই দুঃখ বিষাদ স্মৃতি-লতা
এইসব অর্থহীন অসম্পূর্ণতা মরিচে সয়া-সসে মাখিয়ে
চামচে করে একটু
কটু করে চেখে দেখো
এ-শরীর খড়ের আগুনের হাড়গোড় মলমূত্র বীজাণুর
খিদে তেষ্টা কামের কামড় এ-সব দু-ঘন্টার ছায়াছবি
প্রতিদিন এই উ
নুন আর মশারির পূজা, বাজে সিরিয়াল
এসো অরুন্ধতী, বিশ্বাস-ভালোবাসা-ভদ্রতা-কাপড়চোপড় সরিয়ে
শুরু হোক আমাদের জানাশোনা শ্রেষ্ঠ ব্যাভিচার
সন্তানহীন বর্তমানের বাজার

.             *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রাঙা সখী ভালো থেকো
কবি বাসুদেব দেব

টেলিফোনে বল্লে : “ভালো আছি”
কী রকম ভালো আছো রাঙা ?
আমাকে ছাড়াই তুমি ভালো আছো ? থাকো
পান মুখে শুতে যাও অন্য কার ঘরে
আমি বয়ে যাই অশ্রুধারা
.                কুয়াশায় ঢেকে যায় সাঁকো

অলৌকিক স্মৃতিযান ছুঁড়ে দেয় ম্লান মেঘচ্ছায়া
তোমার সংক্ষিপ্ত হাতে রুমালের মত পড়ে থাকে
এক কোণে ভুলে যাওয়া নাম
.                রাতে বৃষ্টি নামে
গোপন শরীরে নয় আমি যাই অধিক গোপনে
তোমার উত্সব রাতে জেগে থাকি বিষণ্ণ জানালা
কখন নিজের কাছে দাঁড়াবে একেলা সব অলঙ্কার খুলে
ছুঁয়ে দেবে আলগোছে অন্ধকারে নিমগ্ন সেতার
কে যে কার এ জগতে কেউ তা জানে না
থাকো তুমি স্বপ্নে ও বাস্তবে
মিশে থাকো আগুনে ও নুনে
বিছানার ভাগ তুমি এই জন্মে নিলে না যদিও
অবচেতনায় তীব্র জাগো হাসনুহেনা

তোমার ওষ্ঠের দূরে বেপরোয়া প্রমত্তবৈশাখী
অকাল চুম্বন তোলে ঝড়
.                তছনছ করে আজো আমার সংসার
আমি ক্ষয়ে যাই রোজ সাবানের মতো হাহাকার
.                        তোমার দুর্লভ স্পর্ষ ছাড়া
রাঙা সখী ভালো থাকো রানি
তোমার দৃষ্টির দূরে পরিণামহারা এক কিশোর পিওন
.                        চলে যায় চির অভিমানী

.             *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
কালোঘোড়ার খুরের তলায়
কবি বাসুদেব দেব

কালোঘোড়ার খুরের তলায় আমার কুঞ্জবিতান বসিয়ে
তুমি কোথায় গেলে
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে এই পাতাবাহার একবার মাথা কোটে ধুলোয়
একবার পাখা সাপটায় আকাশে
ভয় পেয়ে আমার পোষা পাখিগুলো একে-একে উড়ে যাচ্ছে

অক্ষিপটের দূরতম সীমান্তে কাঁটাতার পেরিয়ে রঙিলার উদ্দাম ঘাগরা
ভাঙাগড়ার যাদুর রাজ্যে আমার অস্তিত্বের লতায় ফুল-ফল . . .
আমার অঞ্জলি-দেওয়া সাদা ফুল অবহেলায় ভেসে যাচ্ছে

কালোঘোড়ার খুরের তলায় জগত্প্লাবী মূর্ছার নাভিমূলে
নীলকমলের অকারণ আলস্য জাগরণ
অন্ধকারের সজীব খামারে নরীনৃত্যমান কোন্ আলোর হাত
কি খুঁজে ফেরে আমার প্রবহমান মুক্ত পয়ারের মত

আমার অঞ্জলি-দেওয়া সাদা ফুল অবহেলায় ভেসে যাচ্ছে

.      
             *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
রক্তজবা
কবি বাসুদেব দেব

এইমাত্র হেরে গেল যুবতীর কাছে
.                তরুণ মৃত্যুর ছলাকলা
সমাধিতে ফুল নিয়ে চলেছে মিছিল
দীর্ঘ ক্লান্ত গানের শিখরে
রক্তজবা ফুটেছে কৌতুকে
অবাধ্য স্পর্ধায়
শরীরের বাঁকে কুয়াশায় জ্বলে ওঠে হেডলাইট
উড়ে যায় আলাভুলো পাতা

ঝকঝকে দাঁতের উপর সূর্য ওঠে
সুন্দরীর প্রতিটি আঙুলে নখে চোখের তারায়
.                সূর্য ওঠে
প্রতি রোমকূপে অনন্ত মৌমাছি আর
.                জোয়ারের গুঞ্জরন রাশি
নাভিমূলে ঘূর্ণি ওঠে অরোরার
কোমরে খাগড়ার মত সমুদ্র মৌসুমী
স্তনিক মন্দিরে জাগে স্তব ওড়ে স্পর্শের বিদ্যুৎ

সমাধির ওপরে সে উত্কীর্ণ কবিতা বসে থাকে
পায়ের পাতায় তার
পৃথিবীর সব ফুল অশ্রু আর আয়ু জড়ো হয়

.              *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
প্রণাম
কবি বাসুদেব দেব

পাহাড়তলির গাঁয়ে কাঠকুটো ভালোবাসা দিয়ে
সে-ই জ্বেলেছিল অগ্নি শিখিয়েছে নাচ
সে-ই দিয়েছিল স্বাদ মহুয়ার গড়েছে কুঠার
দেখিয়েছে টিলা থেকে হরিণের শিঙে গাঁথা
রক্তমাখা আদিবাসী চাঁদ

অনেক দিয়েছে সে তো আজ তাঁকে কিছু দিতে হয়
একান্ত আপন মৃত্যুভয় মাঝরাতে হঠাৎ পিপাসা
কিছু ভ্রম ভ্রমণের কিছু পদাবলী
স্খলিত স্পর্শের কান্না

এই সব তাঁকেই প্রণাম

.   *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চল্লিশের পর
কবি বাসুদেব দেব

অন্ধকারে দেশলাই খুঁজতে গিয়ে
সেদিন আমি তোমার বুক ছুঁয়েছিলাম
আজ তোমার আমার চল্লিশ বয়ে যায়
আমার তৃষ্ণা নিঃশব্দ রানওয়ে থেকে
একটা নৈশ প্লেনের মত উড়ে চলেছে
সেই শৈলাবাসের দিকে
যেখানে একটা সাজানো বাংলোর মত তুমি
সেখানে যে যায়সে নাকি আর ফেরে না
অন্ধকারের মধ্যে আজো ফুল ফোটে
আমি কেবল ঠাণ্ডার ভয়ে বাগানে যেতে ভয় পাই

.  
          *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
হাঁস
কবি বাসুদেব দেব

আমার ব্যর্থতা নিয়ে তোমার করুণাময় হাত
আত্ম অবক্ষয়ে ক্লান্ত নির্জন বিষাদ
মৃত্যুর ক্ষমার মত অন্ধকারে জেগে থাকে একা
ইতিহাস এরকম লুকিয়ে রেখেছে কত
মলাটবিহীন বই পরিচিতিহারা এলবাম

তুমি সব জানো দেখো ঐ তো গরবী সাদা হাঁস
কেমন চলেছে ভেসে
.        জলে রেখে ভেজাও নি তাকে
ও রকম রাখো না আমাকে

.         *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর