একি শুনি অকস্মাৎ, বিনা মেঘে বজ্রপাত--- মৌন দোষে হবে না কি লাঙ্গুল কর্তন | এস তবে সহচর, সপ্তমে তুলিয়া স্বর উচ্চকন্ঠে করি আজি সবারে জ্ঞাপন, আমরা করিনি কভু আইন লঙ্ঘন | কোথা কোন দুরাচার “সিডিসন” পরচার করে, তার শিরে হোক এই অশনি পতন | কোথা কে বিদ্রোহী জন, কর এবে সম্বরণ লেখনী, রসনা আর স্বরাজ-স্বপন ; করিও না অপব্যয় অমূল্য জীবন |
স্বাক্ষর --- যত ভূমি-অধিকারী যে ক’টি লাঙ্গুল-ধারী | যার আছে জমিদারী | যত সভ্য অনাহারী |
. ****************** . সূচিতে . . .
মিলনসাগর
|
ছিল বাঁধা সংসারে ; ত্যজি’ সে পিঁজর চলিল কানাই, এবে শত কোটি শ্যাম ভারত-গগনে দেখা দিবে পুনঃ | (ধন্য তোমার নাম! ) শ্যাম-ঋণ-পাশে রয়েছে যে বাঁধা সকল বঙ্গবাসী, অনেকে তাদের করিল প্রণতি শ্যামে কারাগারে আসি’ | জগতে শ্যামের বিপুল আদর হ’ল না বর্তমানে,---- যদিও ভকতি নীরব প্রবাহ বহে বাঙ্গালী প্রাণে ! যত কৃতঘ্ন হোক সংসার তবু এ কানাই-স্মৃতি ভারত-হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে জাগরূক র’বে নিতি ! বীর সন্তান জাগিয়া প্রভাতে স্মরিবে কানাই নাম : প্রাতঃস্মরণীয় কানাই মোদের, বল বল “বন্দে শ্যাম |”
. ****************** . সূচিতে . . .
মিলনসাগর
|
. এখন হয়েছ তুমি তস্করের লীলাভূমি
. আমাদের বাসযোগ্য নহ তুমি আর |
. পাথর পাতকী সব এবে অধিবাসী তব,
. হৃদয় বিদরে হেরি দুর্গতি তোমার |
. কোথা তব ধর্ম নীতি, কোথা সে শান্তি প্রীতি ?
. এবে তুমি জনয়িত্রী মায়া ছলনার |
. কেন মা ! করুণ স্বরে ডাকিলে আবার ?
. বড় জ্বালা মাতঃ বিদেশে এসেছি,
. বড় দুঃখে জননী গো | তোমায় ত্যজেছি |
. সেই স্নেহপূর্ণ ভোর, বিজন অরণ্য ঘোর,
. তেমন মুখর স্থান কোথা কি দেখেছি ?
. কি যে সুখ ছিল তায় বলিতে পারি না হায় |
. ওই মাতৃকোলে বসে স্বরূপ ভুলেছি |
. পেয়ে ঐ মাতৃবুক ভুলেছি বেদনা দুখ,
. কুটীরে থাকিয়া মাগো ! প্রাসাদ ভেবেছি |
. জনম ভূমিরে হায় ! সহজে কি ছাড়া যায় ?
. স্বর্গাধিক গরীয়সী তোমারে জেনেছি |
. পাষাণে বাঁধিয়া মন, সেই রম্য তপোবন
. তোমার স্নেহের কোল, তবু যে ত্যজেছি |
. বড় জ্বালা পেয়ে মাগো ! বিদেশ এসেছি |
. সেই লতা পাতা ঘেরা ছোট নীড়খানি,
. চারদিকে বিভীষণ শ্যাম অরণ্যানী ,
. খল, দস্যু ও তস্কর শার্দ্দুলাদি নিশাচর,
. নানারূপে নিপীড়ন করিত | জননি !
. সেই যে নিষ্ঠুর রাতে প্রাণটুকু নিয়ে হাতে
. অনিদ্রায় জাগিতাম সারাটি রজনী
. অবশেষে যে সময় নিতান্ত অসহ্য হয়,
. তখন আসিনু ছাড়ি তোর বুকখানি
. সেই লতা পাতা ঘেরা স্নেহ নীড়খানি
. “রবিণ নীরব কেন এতদিন ধরি ?”
. কি গান গায়িব মাতঃ ! প্রাণ মুগ্ধ করি ?
. সে কোমল ফুল্ল প্রাণে সংসারের বিষবাণে
. শত ছিদ্র হইয়াছে---তাই জ্বলে মরি |
. এবে দেখি সমুদয় অনল গরলময়,
. সুখের সঙ্গীত তাই গিয়াছে বিস্মরি !
. সেদিনের সুধাকরে আজি হলাহল করে,
. সে সৌন্দর্য্য দেখিতাম আজি আঁখি ভরি,
. সে সৌন্দর্য্য নাই ভবে কি হইল ? বুঝি তবে
. বিগত শৈশব সব লয়ে গেছে হরি |
. এখন পরাণ যেন হয়েছে মরুভু হেন,
. দুখের সঙ্গীত গায় হৃদি দীর্ণ করি |
. শুনি সে করুণ গীতি মনে কি পাইবে প্রীতি,
. হইবে কি সুখী মাতঃ ! আপনা পাসরি ?
. রবিণ নীরব তাই এতদিন ধরি !
. যাও মাতঃ চলি, আর পথ রোধিও না,
. নীরবে সরিয়া যাও, কথা কহিও না |
. করুণা মমতা রাশি আবার উঠিবে ভাসি |
. কাজ কি ? নিবানো বহ্নি আর জ্বালিও না |
. বলিয়ে স্নেহের কথা মরমে দিও না ব্যথা
. নিদ্রিত স্মৃতিরে জাগায়ে দিও না |
. আমি দীর্ঘশ্বাস আর মুখপানে বার বার
. করুণ নয়নে মাগো ! পুণ্য চাহিও না
. যাও মা ! নীরবে চলি পথ রোধিও না |
. ******************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
গ্রীষ্ম
কবি বেগম রোকেয়া
( মৌলবী মোহম্মদ আব্দুল হাকিম সাহেব সম্পাদিত ইসলাম দর্শন, ভাদ্র ১৩৩০ )
কে গেঁথেছে তারা-ফুল নীল আকাশে ;
ব্যর্থ স্বপ্ন
মিস্ রোকেয়া খাতুন
( মোহাম্মদ, আকরম খাঁ সম্পাদিত মাসিক মোহম্মদী ৫ম বর্ষ , বৈশাখ ১৩৩৯ )
জীবনের পূর্ণতম পরিপূর্ণ খনে