কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের কবিতা ও ছড়া
*
রক্ত-ধোয়া               নুরুল আমিন          লাল রাজপথ,
ফেব্রুয়ারির              একুশ বুকের           বন-বীথিকার
শোকের শিবির          মাখা দুখের            মন গীতিকার !

ফেব্রুয়ারির             একুশ মানেই           ভাই জব্বার
গ্রহণগ্রস্ত                 দিন হলো শেষ         তাই সব্বার,
ফেব্রুয়ারির             একুশ মানেই           ভাই অহিউল
মায়ের পায়ের          শিকল বিকল           তাই বিলকুল  !

ফেব্রুয়ারির             একুশ শোনায়          আশার আজান
কান্দে বহিন            ভাইয়া-ভাবী            আম্মা-বা’জান,
ফেব্রুয়ারির             একুশ কাঁদায়           অদ্যাবধি
হৃদয় জুড়েই            ছলাৎ-ছলাৎ            পদ্মা নদী !

ফেব্রুয়ারির             একুশ সাজায়           স্বর্ণথালা
বন্দিনী মা-র            নন্দিনী পায়             বর্ণমালা,
ফেব্রুয়ারির             একুশ কাঁদায়           একুশ হাসায়
সুখের আশায়         বুকের বাসায়           ভাষায় ভাসায় !

.                    *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সারাদিনের কাজের শেষে ক্লান্ত জোয়ান-বুড়ো
হাজির হত সবাই সেথায় লেখাপড়ার টানে
পড়ার শেষে মাতত তারা গল্প-নাটক-গানে !

মন্দিরেতে সাজত ঠাকুর, বাজত ঘন্টা-কাঁসর
শীতের সময় বসত মাঠে যাত্রাপালার আসর |
মাঝেমাঝেই তরজা-ঝুমুর-বাউল-কবিগান
নকল রফি-কিশোর-লতার রাতজাগা ফাংশান !

সব কিছু মা গিলে খেলো ঐ নদী-রাক্ষুসি
আমরা সবাই সর্বস্বান্ত, ও-ই একা থাক খুশি !
এসব কথা বলতে মাগো যাচ্ছে ফেটে বুক
সব হারিয়ে কারো মনেই একফোঁটা নেই সুখ !
আর কেউ না বুঝুক মাগো, একটু তুমি বুঝো
কেমন করে কোথায় তোমার করব মাগো পূজো ?

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তৃপ্ত-তুফান তুলতে পারো
.      তবে
সুখের স্বর্গ নামবে দুখের
.      ভবে !

.       তোমরা যদি
সত্যের পথ ধরতে পারো
শঠের সাথে লড়তে পারো
পাহাড়-চুড়োয় চড়তে পারো
সব বাধা জয় করতে পারো
সোনার স্বদেশ গড়তে পারো

.            তবে
ফুটবে গোলাপ সবার বুকের
.             টবে !

.     *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সাথে নিয়ে       সতেরো-শো              কর্তাল ও খোল !
জলসাতে         ছিল আরও               মজার জিনিস
সব নাকি         লিখে গেছে                মেগাস্থিনিস !

.                  *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
খেয়েই ভ্যাবাচ্যাকা,
ভগবানের ভয় পেতো খুব
থাকতে একা-একা !

.  *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
চাল-গম-সুজি নেই, কোনও গলিঘুঁজি নেই
দুনিয়ার সাথে লড়ি দ্বন্দ্ব
ভগবান, আপনি কি অন্ধ ?

আমাদের বুলি নেই, ঢাকি নেই, ঢুলি নেই
গোলা নেই, গুলি নেই, রঙ নেই, তুলি নেই
শুধু ধু-ধু ধুলো-ধোঁয়া ধন্দ !
ভগবান, আপনি কি অন্ধ ?

আমাদের আশা নেই, মূক-মুখে ভাষা নেই
দুখ-ব্রতে হাসা নেই, সুখ-ব্রতে ভাসা নেই
শৈশব থেকে নিরানন্দ !
ভগবান,আপনি কি অন্ধ ?

.  *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
‘ফুল নেবে বাবু ? মালা নেবে মা-গো ?’ দাঁড়াতো দু-হাত মেলে
একদিন এক আধুনিকা-লেডি দিলে তারে ঠেলে ফেলে !
‘গেল ! গেল !  গেল !’ উঠলো আওয়াজ, থেঁতো মাংসের তাল
রজনীগন্ধা-গোলাপ-বালিকা-পিষে-মিশে লালে লাল  |
“হম হোঙ্গে কামিয়াব----- হম হোঙ্গে কামিয়াব---
.              হম হোঙ্গে কামিয়াব একদিন---
.              হো-হো মনমে হ্যায় বিশোয়াস---
.              পুরা হ্যায় বিশোয়াস-----
.              হম হোঙ্গে কামিয়াব একদিন  !”

.                 *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
শোষণের জাঁতাকলে আর কত ডলবে ?
ব্যথার পাহাড়গুলো বলো কবে গলবে ?
খেটে-খাওয়া মানুষই তো শেষ কথা বলবে !
চারিদিকে শোনো আজ, ভেসে আসে ওই ‘শোর’
ফিরিয়ে দিতেই হবে শৈশব ও কৈশোর
হাসিমাখা শৈশব---খুশি-আঁকা কৈশোর
শৈশব--শৈশব..কৈশোর..কৈশোর--

.        *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ওদের জীবনে নেই কোনও সুখ, নেই উত্সব-পূজো
অনাহারে পুরো অকালেতে বুড়ো, শরীরটা বেঁকে কুঁজো !
মাথা নুয়ে-নুয়ে যায় ঠেকে ভুঁয়ে, মরণই শান্তি-দাতা---
“ও আমার দেশের মাটি, তোমার ‘পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা”---

.                   *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
খেত ও খামার, খনি-ধনী লোহা-পিতল-তামার !
তবুও হেন, দুঃখ কেন ? কেন বিমর্ষ  ?
ভারতবর্ষ---ভারতবর্ষ--ভারতবর্ষ--

ভারতবর্ষ তোমার-আমার---তোমার-আমার
এখন সময় ওপরে ওঠার, নয়কো নামার !
জীবন লড়াই, বাঁচার বড়াই, নইলে ‘ফের-শো’
ভারতবর্ষ---ভারতবর্ষ----ভারতবর্ষ--

ভারতবর্ষ তোমার-আমার---তোমার-আমার
শপথ জোটার, সামনে ছোটার, নয়তো থামার !
নাও ন্যায়-নীতি, শুভেচ্ছা-প্রীতি, সুপরামর্শ
ভারতবর্ষ---ভারতবর্ষ---ভারতবর্ষ---

.           *************************  

.                                                                                          
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
আশায় হাসায়,  ভাষায় ভাসায়
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
       
জলছবি
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

ওই যে হোথায় নদীর বুকে ভাসছে গাঁদাফুল
ওইখানেতেই ছিল আমাদের প্রাইমারি ইসকুল  |
স্বপ্ন কবে সত্যি হবে
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

.       তোমরা যদি
ফুলের মতো ফুটতে পারো
নদীর মতো ছুটতে পারো
চাঁদের মতো উঠতে পারো
বাতাস হয়ে লুটতে পারো
দল বেঁধে সব জুটতে পারো
.         তবে
এই পৃথিবী সত্যি মধুর
.         হবে !

.      তোমরা যদি
ঐতিহাসিক জলসা
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

তিন-দিন            তিন-রাত              গালে ঠেসে পান
ভগবানের ভূত
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

স্যার বললেন,  প্রশ্ন কঠিন
জীবন যন্ত্র, মরণ মন্ত্র
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

আমাদের হাত নেই, ভাত নেই, জাত নেই
মেঝে নেই, ছাত নেই, দিন নেই, রাত নেই
জীবন জয়, মরণ ভয়
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

ডাস্টবিনে কেউ ফেলে দিয়ে গেলো এঁটো-কাঁটা শালপাতা
মাংসের হাড়, আধ-খাওয়া লুচি, চিবোনো মাছের মাথা  |
নিমেষে লাফিয়ে পড়লো পাঁচটা মানুষ, সাতটা কুকুর
জারি হলো ডিক্রি, কৈশোর বিক্রি
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

কোথা গেল সোনামাখা খুশি-আঁকা শৈশব ?
শোন্-শোন্ ভাই-বোন, শোন্ সাথী-সই সব
হলো নাতো লেখাপড়া, শেখা নাম-সই সব
জননী জন্মভূমিশ্চ
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

একশত কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে আমাদের জনসংখ্যা
গর্বেতে বুক ফুলে ওঠে, যেন নেই কোনও আর শঙ্কা  |
অথচ সবার  দু-বেলা জোটে না দু-টি ভাত, রুটি-লঙ্কা
ফ্যান-ফ্রিজ-ফোন, সুখী গৃহকোণ, সেসব তো লবডঙ্কা  !
ভারতবর্ষ, হোক আদর্শ
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

ভারতবর্ষ তোমার-আমার----তোমার-আমার
বামুন-কায়েত, কুমোর-কামার, চাঁড়াল-চামার !