কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের কবিতা ও ছড়া
|
ঘুচে যাক রোগ-শোক, মুছে যাক দ্বেষ-দ্বিধা-দ্বন্দ্ব
দোস্তিতে-স্বস্তিতে-বস্তিতে মস্তির ছন্দ |
স্নেহ-মায়া-মমতার, সংহতি-সমতার বন্ধন
নন্দিত--- বন্দিত ---ছন্দিত জীবনেরই চন্দন |
এনো প্রাণে তৃপ্তির-দৃপ্তির-দীপ্তির প্রেরণা
শ্রান্তিতে-ভ্রান্তিতে শান্তির পথ কেউই ছেড়ো না |
লাঞ্ছিত-মন দাও বাঞ্ছিত-স্বপ্নেতে ভরিয়ে
হাসনুহানার হাসি যাক সুখে বুকে-মুখে ছড়িয়ে |
জীবনের সব জেদ, জাতপাত-ভেদাভেদ, দ্বেষ-রেশ শেষ হোক
আলো-আশা ভালোবাসা দিয়ে ঠাসা পৃথিববীটা একটাই দেশ হোক |
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
স্বাদে মিঠেকড়া না-মানুষী ছড়া
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
. এক
সাদা-বিল্লী কালো-বিল্লীকে
বলে, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি,
কিন্তু দিদি-গো আসতে তোমার
হলো কেন এতো দেরি ?
কালো বলে, শোন, বলবো কি বোন
আসছিলুম বেশ হেঁটে,
কোথ্বেকে এক মানুষ এসেই
দিলো - রে রাস্তা কেটে |
. দুই
চিড়িয়াখানার একটা বাঁদর
বন্ধুকে বলে---লাকি,
মানুষেরা বলে, আমরা ওদেরই
পূর্বপুরুষ নাকি ?
খুউব রেগে লাকি বলে, তাই নাকি
‘শয়তান’ বলে কারে,
এর চেয়ে আর বড় অপমান
বল্ কিবা হতে পারে ?
. তিন
কুকুরের মেয়ে কুকুরকে দেখে বলে
কি হলো, কি হলো, কাঁদো কেন তুমি ড্যাড ?
মানুষ তোমাকে দেখলেই কেন মারে ?
বুঝতে পারি না, Are men all mad ?
তাই শুনে কেঁদে কুকুর মেয়েকে বলে
ওদের মনে কে জ্বালাবে বোধের আলো ?
আসল কথা কি, বলি শোন্ , মানুষেরা
দেখতে পারে না কোনদিনও কারো ভালো |
. চার
বাঁদরছানাটা সিংহছানাকে ধ’রে
শেখাচ্ছিল সেদিন গাছেতে চ’ড়তে,
তাই দেখে মা-বাঁদরি বললে ছেলেকে
ওরে বোকা-হাঁদা, সাধ হয়েছে কি ম’রতে ?
খাল কেটে কেন আনিস কুমির ডেকে ?
স্যার ঠিকই বলে, বুদ্ধিটা তোর ফিকে,
আমরা কোথায় পালিয়ে বাঁচব তখন
ওরা যদি সব গাছে ওঠা যায় শিখে ?
. পাঁচ
বাঘের ছানাটা বেড়ালছানাকে বলে
চুড়ি ক’রে কিছু খাবি না-রে কোনদিন,
লোকে যেন ‘চোর’ বলে না কখনও তোদের
খুব সাবধান , করবিনা কাজ হীন |
জ্ঞান দিতে তোকে ব’য়েই গিয়েছে আমার
তোদের ‘মাম্মি’কে মাসি বলি কিনা তাই ,
আমাদের ভয়, পাছে মানুষের দল
বলে, চোরে-চোরে সব মাসতুতো ভাই |
. ছয়
গভীর বনে আপন মনে
দারুণ মজা-রঙ্গেতে,
বাঘের ছানা খেলছিল এক
হরিণছানার সঙ্গেতে |
তা দেখে বাঘিনী বললে ছেলেকে
কতদিন তোকে বলেছি ---এই,
খাবার জিনিস নিয়ে সোনামণি
একদম খেলা করতে নেই |
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
বিচ্ছুগুলো মা-কে ডেকেই তক্ষুণি তা জানায় |
কেমন জব্দ পাঁচজনই আজ ? দেখছো আঁধার দুনিয়া ?
কারো ডেঙ্গু , কারো কালাজ্বর, কারো চিকুনগুনিয়া |
পূজোর ক’দিন বেডে শুয়েই খাও ঝোল-ভাত-রুটি
আমি চললাম শ্বশুরবাড়ি , আমার লম্বা ছুটি |
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
উষ্ণায়নের ফলে কৈলাসের হবে না কোনই ক্ষতি |
শুনেই স্বস্তি দেবদেবীদের কাটলো সবার ভয়
চেঁচিয়ে উঠেই বলল সবাই ‘জয় ব্রহ্মার জয়’ !
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
মা বললেন, যাবি-যাবি, থামা কান্নার সুর-রে
চেঁচায় সবাই, থ্যাঙ্ক ইউ মম্, হিপ-হিপ-হিপ-হুররে !
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
এবার থেকে তোমার পূজোই করবো আমরা শুরু!
গণ্ শা-কেতো, লক্ষ্মী-সুরো, দুগ্গা-দশভুজো
চাই না ওদের, মর্ত্যে এখন চলবে অসুরপূজো!
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
ছোটখাটো কিচ্ছু ছেলেমেয়ে বিচ্ছু
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
. ১
মা-কে এসে বললে কেঁদেই
আট-বছরের ছোট্ট লালু,
এই দ্যাখো, রাম গাঁট্টা মেরেই
ফুলিয়ে মাথায় করল আলু |
মা বললেন, কোথায় পাজি ?
চল, পেলে চড় মারব গালে,
বললে লালু, রামকে নিয়ে
ওর মা গেছে হাসপাতালে !
. ২
স্বর্গেতে যায় ভালো-ভালো লোক
নরকেতে যায় পাজি,
এবার বলো তো, স্বর্গেতে যেতে
আছো কে কে ঠিক রাজি ?
স্যারের কথায় সব তোলে হাত
কেঁদে বলে একা হীরে,
বাবা বলেছেন, যাবে না কোথাও
এসো সোজা ঘরে ফিরে !
. ৩
‘কালকের কাজ করা ভালো আজ
আজকের কাজ এখনই’,
লেখা আছে বহু বইয়েতে এ কথা
কখনও কি পড়ে দ্যাখোনি ?
খোকা বলে : বাবা, জানা ভালো, তবে
বেশি ভালো চুপ থাকাটা,
দিয়ে দাও দেখি আজই কালকের
হাতখরচের টাকাটা !
. ৪
মাইনে তোকে দেবো এখন
মাসে পাঁচশো টাকা,
ছ’মাস বাদেই ডবল, মানে
হাজার, হিসেব পাকা |
বললে বিশু, ঠিক আছে স্যার
যাচ্ছি এখন ঘরে,
চুক্তি পাকা, হাজার টাকা
আসব ছ’মাস পরে |
. ৫
কানটা ধ’রে বেজায় জোরে
মা বললেন : খোকা,
কোমরে তুই গামছা বেঁধেই
করিস কি রোজ বোকা ?
আচমকা কানমলা খেয়েই
বললে খোকা কেঁদে
দু’দিন বাদেই পরীক্ষা তাই
পড়ছি কোমর বেঁধে !
. ৬
বাবা বললেন দারুণ রেগেই
. হতচ্ছাড়া রাম,
তোর জন্যই ডুবল আমার
. সাত-পুরুষের নাম |
রাম বললে , নাম ডুবেছে
. সেও আমার দোষ ?
জানলে সাঁতার, ডুবত না নাম
. করতে না আপসোষ !
. ৭
বললে জগাই, তোর ছোটভাই
ছুটছে কেন অমন ক’রে ?
ওর বয়সী কুকুর আমার
ছুটতে পারে দ্বিগুণ জোরে |
বললে রাধা, তুই তো গাধা
সত্যি হাঁদা কথায় - কাজে,
কুকুর ছোটে দ্বিগুণ বেগেই
কারণ ওদের দ্বিগুণ পা যে !
. ৮
তুমি কোন্দলে, থাকো কোন্ দলে ?
প্রশ্নটা শুনে ভয়ে,
হয়ে কাঁচুমাচু , বলে হেসে পাঁচু
আমি থাকি স্যার ছ’--য়ে |
হতে পারি খোকা, নই তবু বোকা
বুদ্ধি মাথাতে আছে,
ছ’-য়ে নেই ভয়, জানি ভালো নয়
থাকা কারো সাতে-পাঁচে !
. ৯
বললে ভোঁদা, শোন্ রে হাঁদা
শুনলি আমার গলা সাধা
এমন গলা একটা দুটোই
খুঁজলে মেলে লাখে,
বললে হাঁদা, গাইছিলি গান ?
আমি ভাবলাম, হায় ভগবান
লাঠি দিয়ে কেউ পেটাচ্ছে খুব
তোদের কুকুরটাকে !
. ১০
মা-কে ডেকে বললে কেঁদেই
. সাত বছরের তুতুল,
এই দ্যাখো মা, পিন্টু আমার
. দিয়েছে ভেঙেই পুতুল |
মা বললেন, পিন্টু পুতুল
. ভাঙল কেমন ক’রে,
---পুতুল দিয়েই ওর মাথাতে
মেরেছিলাম মা জোরে !
. ১১
মিস্ বললেন, মিথ্যে কথা
বলা খারাপ, বুঝলি লতা,
তোদের মতন বয়েসে মোটেও
বলতাম না মিথ্যে কথা |
ছয়-বছরের মিষ্টি লতা
বললে হেসেই নাচিয়ে ভুরু,
মিথ্যে কথা বলা তবে মিস্
কবে থেকে ঠিক করলে শুরু ?
. ১২
ভাষা-শিক্ষার ক্লাসেতে সেদিন
. মিস্ বললেন, আশা,
সকলেই কেন নিজের ভাষাকে
. বলেন ‘মাতৃভাষা’ ?
হেসে বলে আশা, মায়েরাই মিস্
. কথা বলে হরদম,
বাবারা তো শোনে, বলার সুযোগ
. পায় তারা খুবই কম !
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না |
শেক্সপীয়র , ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস , বা বায়রণ
ভাষা ওঁদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রণ |
. কাজী নজরুল--রবীন্দ্রনাথ
. ওঁদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
“মাইকেল” হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে --- উচ্ছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না |
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
রাত্রে-ফোটা ফুলগুলো সব হয় কিভাবে সাদা?
বললে হাঁদা, হায়রে গাধা, এ তো সবাই জানে
অবাক হয়েই তাকিয়ে কেন থাকিস আমার পানে?
রাত্রে-ফোটা ফুলগুলো না ঘুমিয়ে জেগে থেকে
হয় সাদা রোজ সারা দেহেই জ্যোত্স্না মেখে মেখে!
. *********************
. সূচিতে . . .
মিলনসাগর
রং-বদলের ব্যাপারস্যাপার
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
দিল্লী থেকে বিল্লি এলেন দুধের মতন সাদা
কলকাতার এক কালো-বেড়াল বললে তাকে, দাদা!
পৃথিবীটা একটাই দেশ হোক
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
নিঃস্ব বিশ্বভূমি, আর তুমি হোয়ো নাকো ক্ষুণ্ণ
এ-মাটি সবার ‘মা’-টি, স্বর্গের চেয়ে খাঁটি পুণ্য |
মুছে দাও মন থেকে সব ভয়, সংশয়-লজ্জা
গড়ে তোলো সকলেরই বুকে সুখে শান্তির শয্যা |
দূর করো অতীতের তিক্ততা-রিক্ততা-দুঃখ
আঁকো মধু-মন্তরে অনুভূতি অন্তরে সূক্ষ্ম |
ঘুচে যাক হা-হুতাশ, লোভ-ক্ষোভ, পাপ-তাপ-চিহ্ন
অসুর যাবে শ্বশুরবাড়ি
মিঠেকড়া পূজোর ছড়া
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
অসুর যাবে শ্বশুরবাড়ি পশুর পায়েস খেতে
শিব-দুর্গার দারুণ বিপদ
মিঠেকড়া পূজোর ছড়া
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
কৈলাসে আজ গলছে বরফ উষ্ণায়নের ফলে
দুর্গা যাবেন বাপের বাড়ি
মিঠেকড়া পূজোর ছড়া
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
দুর্গা যাবেন বাপের বাড়ি, সঙ্গে যাবে কে ?
লক্ষ্মী-সুরো, গন্ শা-কেতো, কোমর বেঁধেছে |
অসুর-পূজো, কসুর খুঁজো
মিঠেকড়া পূজোর ছড়া
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
মহাদেব খুব গেলেন রেগেই টি.ভি.র খবর শুনিয়া,
বংগালীবাবু বাংলামে কাবু
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার
ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’, কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না |