|
বিদ্যাসুন্দর অন্নদামঙ্গল কাব্য (দ্বিতীয় খণ্ড), কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রী সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৯৪৩ (ভাদ্র ১৩৫০) |
বিদ্যাসুন্দর কাব্যের সূচি |
বিপরীত বিহারারম্ভ বিদ্যাসুন্দর, অন্নদামঙ্গল কাব্য (২য় খণ্ড) কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র সুন্দরীর করে ধরি সুন্দর বিনয় করি কহে শুন শুন প্রাণেশ্বরী। আজি দিনে দুপ্রহরে দেখিলাম সরোবরে কমিলিনী বান্ধিয়াছে করী॥ গিরি অধোমুখে কাঁদে এ কথা কহিতে চাঁদে কুমুদিনী উঠিল আকাশে। সে রশ দেখিতে শশী ভূতলে পড়িল খসি খঞ্জন চকোর মিলি হাসে॥ কি দেখিনু আহা আহা আর কি দেখিব তাহা কি জানি ঘটাবে বিধি কবে। তুমি কন্যা এ রাজার তোমারি এ অধিকার১ দেখাও যদ্যপি দেখি তবে॥ বিদ্যা বলে মহাশয় এ না কি সম্ভব হয় রায় বলে দেখিনু প্রত্যক্ষ। এ দুঃখে যদ্যপি তার এখনি দেখাতে পার কি কর সিদ্ধান্ত পূর্ব্বপক্ষ॥ সুন্দরী বুঝিয়া ছলে মুচকি হাসিয়া বলে বড় অসম্ভব মহাশয়। শিলা জলে ভাসি যায় বানরে সঙ্গীত গায় দেখিলেও না হয় প্রত্যয়॥ রায় বলে আমি করী তুমি কমলিনীশ্বরী বন্ধহ মৃণালভুজপাশে। আমি চাঁদ পড়ি ভূমি ফুল্ল কুমুদিনী তুমি উঠ মোর হৃদয়আকাশে॥ নয়ন খঞ্জন মোর নয়ন চকোর তোর দুহে মিলি হাসিবে এখনি। ঘাম ছলে কুচগিরি কাঁদিবেক ধীরি ধীরি করি দেখ বুঝিবে তখনি॥ শুনি মনে মনে ধনী বাখানে নাগরমণি বিনা মূলে কিনিলে আমারে। অন্তরে না সহে ব্যাজ বাহিরে বাড়ায় ল্যাজ এড় মেনে হারিনু তোমারে॥ পুরুষের ভার যাহা নারী নাকি পারে তাহা তুলিতে আপন ভার ভারি। আজি জানিলাম দড় পুরুষ নির্লজ্জ বড় লাজে বাধে নৈলে কৈতে পারি॥ শিখিয়াছ যার কাছে তাহারি এ গুণ আছে সে মেনে কেমন মেয়ে বটে। ভাল পড়া পেয়েছিল ভাল পড়া পড়াইল লাভে হৈতে মোরে ফের ঘটে॥ লাজ নাহি চল চল কেমনে এমন বল পুরুষের এত কেন ঠাট। যার কর্ম্ম তারে সাজে অন্য লোকে লাঠি বাজে কে কোথা দেখেছে হেন নাট॥ চেতাইলে বুঝি চেত যৌবনে অলস এত বুড়া হৈলে না জানি কি হবে। ক্ষমা কর ধরি পায় বিফলে রজনী যায় নিদ্রা যাও নিদ্রা যাই তবে॥ আমারে বুঝাও ভাবে এ কর্ম্মে কি সুখ পাবে আমি কিছু না পাই ভাবিয়া। হৃদয়ের রাজা হয়ে চোর হেন হেঁটে রয়ে কি লাভ নিগ্রহ সহিয়া॥ করিয়া সুখের নিধি পুরুষে গড়িল বিধি দুঃখ হেতু গড়িল তরুণী। তাহা করি বিপরীত কেন চাহ বিপরীত এ কি বিপরীত কথা শুনি॥ রায় বলে পুন পুন সাধিলে যদি না শুন অরণ্যে রোদনে কিবা ফল। কথায় বুঝুনু কাজ আমা হৈতে প্রিয় লাজ লাজ লয়ে করহ কৌশল॥ দিয়াছি যে আলিঙ্গন করিয়াছি যে চুম্বন২ সে সব ফিরিয়া মোরে দেহ। কল্যাণ করুন কালী নাহি দিও গালাগালি দেশে যাই মনে রেখ স্নেহ॥ হাসি ঢলে পড়ে ধনী কি বলিলা গুণমণি ফিরে দেখ চুম্ব আলিঙ্গণ। এ কি কথা বিপরীত দুই মতে বিপরীত দায়ে কাটে কুমুড়া যেমন॥ না দেখি না শুনি কভু যদি ইহা হবে প্রভু না পারিব থাকিতে প্রদীপ৩। ভারত দিলেন সায় যে কর্ম্ম করিবে তায় অপ্রদীপে হইবে প্রদীপ॥৪ |