শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রী সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত বইটিতে, ১৮৪৭ খৃষ্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র
বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত যন্ত্র থেকে প্রকাশিত, এবং “কৃষ্ণনগরের রাজবাটীর মূল পুস্তক দৃষ্টে পরিশোধিত”,
“অন্নদামঙ্গল” কাব্যগ্রন্থের পাঠ অনুসরণ করা হয়েছে।  যে সকল পুঁথি ও মুদ্রিত সংস্করণের পাঠ এই গ্রন্থের
পাদটীকায় দেওয়া হয়েছে তা হলো :---

পু১ --- প্যারিসে ফরাসী জাতীয় গ্রন্থাগারে (বিব্লিওতেক নাসিওনাল) ভারতীয় পুঁথি-সংগ্রহের মধ্যে রক্ষিত
.        ১১৯১ বঙ্গাব্দে লিখিত “বিদ্যাসুন্দর”-এর পুঁথি।
পু২ --- বর্ধমান জেলায় প্রাপ্ত এবং সাহিত্য-পরিষদের পুঁথিশালায় রক্ষিত ৮৮৮ সংখ্যক “বিদ্যাসুন্দর”-
.        এর পুঁথি। ১২০৪ বঙ্গাব্দে লিখিত।
পু৩ --- বর্ধমান জেলায় প্রাপ্ত এবং সাহিত্য-পরিষদের পুঁথিশালায় রক্ষিত ১৪০১ সংখ্যক “বিদ্যাসুন্দর”-
.        এর পুঁথি। ১২০৯ বঙ্গাব্দে লিখিত।
গ    --- ১৮১৬ খৃষ্টাব্দে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্য কর্ত্তৃক প্রকাশিত সচিত্র “অন্নদামঙ্গল”। “অনেক পণ্ডিত
.         দ্বারা শোধিত হইয়া শ্রীযুত পদ্মলোচন চূড়ামণি ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের দ্বারা বর্ণ শুদ্ধ করিয়া”
.         প্রকাশিত।
.         রসমঞ্জরী --- ১৮১৬ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত।
পু৪ --- ১২২৮ বঙ্গাব্দে (১৮২১ খৃষ্টাব্দ) লিখিত ও বর্ধমানে প্রাপ্ত “অন্নদামঙ্গল”-এর পুঁথি। সাহিত্য-
.        পরিষদের সংগ্রহশালায় রক্ষিত ৯৫৪ নং পুঁথি।
পী   --- ১৮২৮ খৃষ্টাব্দে শেয়ালদহ পীতাম্বর সেনের যন্ত্রালয়ে মুদ্রিত “অন্নদামঙ্গল”।
বি   --- ১৮৪৭ খৃষ্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত যন্ত্র থেকে প্রকাশিত “অন্নদামঙ্গল”।
.        “কৃষ্ণনগরের রাজবাটীর মূল পুস্তক দৃষ্টে পরিশোধিত।”
মু    --- ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দে মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশের সাহায্যে “সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয়”-সম্পাদক কর্তৃক
.        প্রকাশিত “অন্নদামঙ্গল” (২য় সং)। “অনেক স্থানের পুস্তকের সহিত ঐক্য এবং সংশোধন
.        পূর্বক মুদ্রিত।”
বিদ্যাসুন্দর
অন্নদামঙ্গল কাব্য (দ্বিতীয় খণ্ড),
কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র
শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রী সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৯৪৩ (ভাদ্র ১৩৫০)
গর্ভসংবাদ শ্রবণে রাণীর তিরস্কার
বিদ্যাসুন্দর, অন্নদামঙ্গল কাব্য (২য় খণ্ড)
কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র

যত সখীগণ                              বিরস বদন
রাণীর নিকটে যায়।
করি জোড়পাণি                      নিবেদয়ে বাণী
প্রণাম করিয়া পায়॥
ঠাকুরকন্যার                        যে দেখি আকার
পাণ্ডুবর্ণ পেট ভারি।
গর্ভের লক্ষণ                         এ ব্যাধি কেমন
ঠাহরিতে কিছু নারি॥
দেখিলে আপনি                       যে হৌক তখনি
সকলি হবে বিদিত।
শুনি চমকিয়া                            চলে শিহরিয়া
মহিষী যেন তড়িত॥
আকুল কুন্তলে                          বিদ্যার মহলে
উত্তরিলা পাটরাণী।
উদর ডাগর                             দেখি হৈল ডর
রাণীর না সরে বাণী॥
প্রণমিতে মারে                       বিদ্যা নাহি পারে
লজ্জায় পেটের দায়।
কাপড়ে ঢাকিয়া                          প্রণমে বসিয়া
বৈস বৈস বলে মায়॥
গালে হাত দিয়া                         মাটিতে বসিয়া
অধুমুখে ভাবে রাণী।
গর্ভের নক্ষণ                              করি নিরিক্ষণ
কহে ভালে কর হানি॥
ও লো নিশঙ্কিনী                           কুলকলঙ্কিনী
সাপিনী পাপকারিণী।
শাঁখিনীর প্রায়                          হরিয়া কাহায়
আনিলি ডাকি ডাকিনী॥
ডরে মোর ঘরে                       বায়ু না সঞ্চরে
ইহার ঘটক কেবা।
সাপের বাসায়                       ভেকেরে১ নাচায়
কেমন কুটিনী সে বা॥
না মিলিল দড়ি                         না মিলিল কড়ি
কলসী কিনিতে তোরে।
আই মা কি লাজ                      কেমনে এ কাজ
করিলি খাইয়া মোরে॥
রাজা মহারাজ                        তাঁরে দিলি লাজ
কলঙ্ক দেশে বিদেশে।
কি ছাই পড়িলি                         কি পণ করিলি
প্রমাদ পাড়িলি শেষে॥
এল কত জন                             রাজার নন্দন
বিবাহ করিতে তোরে।
জিনিয়া বিচারে                      না বরিলি কারে
শেষে মিটে গেলি চোরে॥
শুনি তোর পণ                             রাজপুত্রগণ
অদ্যপি আইসে যায়।
শুনিলে এমন                             হইবে কেমন
বল কি তার উপায়॥
সন্ন্যাসীটা আছে                        ভূপতির কাছে
নিত্য আসে তোর পাকে।
কি কব রাজায়                      না দিল তাহায়
তবে কি এ পাপ থাকে॥
আমি জানি ধন্যা                    বিদ্যা মোর কন্যা
ধন্য ধন্য সর্ব্ব ঠাঁই।
রূপগুণযুত                            যোগ্য রাজসুত
হইবে মোর জামাই॥
রাজার ঘরণী                           রাজার জননী
রাজার শাশুড়ী হব।
যত কৈনু সাধ                         সব হৈল বাদ
অপবাদ কত সব॥
বিদ্যার মা ছলে                      যদি কেহ বলে
তখনি খাইব বিষ।
প্রবেশিব জলে                      কাতি দিব গলে
পৃথিবী বিদার দিস॥
আ লো সখীগণ                    তোরা বা কেমন
রক্ষক আছিলি ভালে।
সকলে মিলিয়া                        কুটিনী হইয়া
চূণ কালি দিলি গালে॥
তোরা ত সঙ্গিণী                      এ রঙ্গে রঙ্গিণী
এই রসে ছিলি সবে।
ভুলালি আমায়                      দানি ভাঁড়া যায়
সঙ্গী ভাঁড়া যায় কবে॥
থাক থাক থাক                        কাটাইব নাক
আগে ত রাজারে কহি।
মাথা মুড়াইব                          শালে চড়াইব
ভারত কহিছে সহি॥

*******************

১ –   পু১, পু৪, গ, পী --- বেঙ্গেরে

****************


.                              
কবির মূল সূচিতে ফেরত . . .   


মিলনসাগর
বিদ্যাসুন্দর কাব্যের সূচি
১   রাজা মানসিংহের বাঙ্গালায় আগমন    
২   বিদ্যাসুন্দর কথারম্ভ    
৩   সুন্দরের বর্দ্ধমান যাত্রা          
৪   সুন্দরের বর্দ্ধমান প্রবেশ    
৫   গড় বর্ণন        
৬   পুরবর্ণন
৭   সুন্দরদর্শনে নাগরীগণের খেদ    
৮   সুন্দরের মালিনীসাক্ষাৎ    
৯   সুন্দরের মালিনীবাটী প্রবেশ        
১০ মালিনীর বেসাতির হিসাব       
১১ মালিনী সহ সুন্দরের কথোপকথন    
১২ বিদ্যার রূপবর্ণন        
১৩ মাল্যরচনা      
১৪ পুষ্পময় কাম ও শ্লোকরচনা          
১৫ মালিনীকে তিরস্কার           
১৬ মালিনীকে বিনয়     
১৭ বিদ্যাসুন্দরের দর্শন       
১৮ সুন্দরসমাগমের পরামর্শ   
১৯ সন্ধিখনন    
২০ বিদ্যার বিরহ ও সুন্দরের উপস্থিতি   
২১ সুন্দরের পরিচয়      
২২ বিদ্যাসুন্দরের বিচার       
২৩ বিদ্যাসুন্দরের কৌতুকারম্ভ     
২৪ বিহারারম্ভ       
২৫ বিহার     
২৬ সুন্দরের বিদায় ও মালিনীকে প্রতারণা  
২৭ বিপরীত বিহারারম্ভ         
২৮ সুন্দরের সন্ন্যাসিবেশে রাজদর্শন        
২৯ বিদ্যা সহ সুন্দরের রহস্য      
৩০ দিবাবিহার ও মানভঙ্গ         
৩১ সারীশুক বিবাহ ও পুনর্ব্বিবাহ        
৩২ বিদ্যার গর্ভ     
৩৩ গর্ভসংবাদ শ্রবণে রাণীর তিরস্কার     
৩৪ বিদ্যার অনুনয়     
৩৫ রাজার বিদ্যাগর্ভ শ্রবণ        
৩৬ কোটালে শাসন        
৩৭ কোটালের চোর অনুসন্ধান       
৩৮ কোটালগণের স্ত্রীবেশ        
৩৯ চোর ধরা          
৪০ কোটালের উত্সব ও সুন্দরের আক্ষেপ  
৪১ সুড়ঙ্গদর্শন       
৪২ মালিনী নিগ্রহ         
৪৩ বিদ্যার আক্ষেপ      
৪৪ নারীগণের পতিনিন্দা        
৪৫ রাজসভায় চোর আনায়ন   
৪৬ চোরের পরিচয় জিজ্ঞাসা        
৪৭  রাজার নিকটে চোরের পরিচয়         
৪৮ রাজার নিকটে চোরের শ্লোকপাঠ  
৪৯ শুকমুখে চোরের পরিচয়      
৫০ মশানে সুন্দরের কালীস্তুতি         
৫১ দেবীর সুন্দরে অভয় দান         
৫২ ভাটের প্রতি রাজার উক্তি      
৫৩ ভাটের উত্তর         
৫৪ সুন্দর প্রসাদন       
৫৫ সুন্দরের স্বদেশগমনপ্রার্থনা     
৫৬ বিদ্যাসুন্দরের সন্ন্যাসীবেশ    
৫৭ বার মাস বর্ণন           
৫৮ বিদ্যা সহ সুন্দরের স্বদেশযাত্রা