কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রর কবিতা |
স্ত্রীজাতি কথন রসমঞ্জরী থেকে কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র অতঃপর চারি জাতি বর্ণিব কামিনী। পদ্মিনী চিত্রিণী আর শঙ্খিনী হস্তিনী॥ পদ্মিনী নয়ন কমল কুঞ্চিত কুন্তল ঘন কুচস্থল মৃদু হাসিনী। ক্ষুদ্র রন্ধ্র নাসা মৃদু মন্দ ভাষা নৃত্য গীতে আশা সত্য বাদিনী॥ দেবদ্বিজে ভক্তি পতি অনুরক্তি অল্প রতিশক্তি নিদ্রা ভোগিনী। মদন আলয় লোম নাহি হয় পদ্মগন্ধ কয় সেই পদ্মিনী॥ চিত্রিণী প্রমাণ শরীর সর্ব্ব কর্ম্মে স্থির নাভি সুগভীর মৃদু হাসিনী। সুকঠিন স্তন চিকুর চিকণ শয়ন ভোজন মধ্য চারিণী॥ তিন রেখা যুত কণ্ঠ বিভূষিত হাস্য অবিরত মন্দ গামিনী। মদন আলয় অল্প লোম হয় ক্ষারগন্ধ কয় সেই চিত্রিণী॥ শঙ্খিনী দীঘল শ্রবণ দীঘল নয়ন দীঘল চরণ দীঘল পাণি। মদল আলয় অল্প লোম হয় মীনগন্ধ কয় শঙ্খিনী জানি॥ হস্তিনী স্থুল কলেবর স্থুল পয়োধর স্থুল পদ কর ঘোর নাদিনী। আহার বিস্তর নিদ্রা ঘোরতর রমণে প্রখর পর গামিনী॥ ধর্ম্মে নাহি ডর দম্ভ নিরন্তর কর্ম্মেতে তত্পর মিথ্যাবাদিনী। মদন আলয় বহু লোম হয় মদ গন্ধ কয় সেই হস্তিনী॥ ************** . সূচিতে মিলনসাগর |
পুরুষ জাতি কথন রসমঞ্জরী থেকে কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র চারি জাতি নায়িকার শুনহ নায়ক। শশ মৃগ বৃষ অশ্ব সন্তোষদায়ক॥ পদ্মিনীর শশ পতি মৃগ চিত্রিণীর। বৃষে শঙ্খিনীর তুষ্টি অশ্বে হস্তিনীর॥ রুপ গুণ দোষ সব নায়িকার মতন। চারি জাতি নায়কেতে লক্ষণ সম্মত॥ রসভাণ্ড মত রসদণ্ড ভেদ হয়। ছয় আট দশবার পরিমাণ কয়॥ নর নারী স্বভাবেতে বিশেষ সে হয়। কহিতে কবিতা বাড়ে ক্ষোভ এই রয়॥ ************** . সূচিতে মিলনসাগর |
যৌবন কখন রসমঞ্জরী থেকে কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র যৌবনের চারি ভেদ শুন বিবরণ। আগে বয়ঃসন্ধি পরে নবীন যৌবন॥ সুব্যক্ত যৌবন আর সম্পূর্ণ যৌবন। তার পর বৃদ্ধ ভাব বুঝ বিচক্ষণ॥ যৌবনের সন্ধিকাল দ্বাদশ বত্সর। দশম নিয়মে কন ব্যাস মুনিবর॥ যৌবন পরম ধন স্ববশ ইন্দ্রিয়গণ শিশু বৃদ্ধ দেখি লোক রসকথা কহে না। বালকের শুদ্ধি নাহি বৃদ্ধ হৈলে হতবুদ্ধি যুবা বিনা রস আর কোনখানে রহে না॥ যুবা সূর্য্য বলবান যুবা চন্দ্র দ্যুতিমান যুবা বিনা সংসারে ভার অন্যে বহে না। কিবা নর কিবা অন্য যৌবনে সকল ধন্য যৌবন হইল নষ্ট দেখি দেহ রহে না॥ নারীর যৌবন বড় দুরন্ত। শরীরের মাঝে পোষে বসন্ত॥ বিনোদ বিনানে বিনায়ে বেণী। পুরুষে দংশিতে পোষে সাপিনী॥ কত কত অলি নয়নে ঘোরে। মধুবাক্যে কত কোকিল ঝোরে॥ মলয় বাতাস শ্বাসেতে বহে। সৌরভে সুরভি গৌরব নহে॥ কমল আনন আননে থাকে। বান্ধুলি মধুর অধরে থাকে॥ দুখানি বিষাণ নিশান রেখে। হৃদয়ে মলয়ে রেখেছে ঢেকে॥ লোহিত কমল মৃণাল সাথে। অভরণে ঢেকে রেখেছে হাতে॥ ত্রিবলী ডোরেতে বেন্ধে অনঙ্গ। কটিতটে থুয়ে দেখয়ে রঙ্গ॥ সম্বরে অম্বর দিয়া কান্তার। মদন সদন রস ভাণ্ডার॥ কিশলয় করি করের ভয়। চরণের তলে শরণ বয়॥ যৌবন মরম না জানে যেবা। পণ্ডিত তাহারে বলয়ে কেবা॥ তপ জপ জ্ঞান দান যে কিছু। সকলি যৌবন ধনের পিছু॥ যৌবন এ তিন অক্ষর লেখ। যে যানে মরম উত্তম দেখ॥ যৌবন মরম যে যানে নাই। প্রথম ছাড়িয়া তাহারি ঠাঁই॥ যদ্যপি যৌবন উদ্যম করে। প্রথমের মত গলিয়া মরে॥ ভারতচন্দ্রের ভারতী যোগ। যৌবনেতে কর যৌবন ভোগ॥ ************** . সূচিতে মিলনসাগর |