কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণীর কবিতা
কবি
বিভাবতী দেবী চৌধুরাণীর
পরিচিতির পাতায় . . .
*
অনন্তের ডাক
কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণী
কাব্যগ্রন্থ “খোঁজে” (১৯২৫) থেকে
নীল অস্তাচল পথে,
. মুছি’ স্বর্ণ-রেখা,
. যাত্রা করে মলিন তপন ;
মিলায় ছায়ার বুকে
. শেষ আলো-লেখা,
. রচি এক মায়ার স্বপন।
মর্ম্মরি বিলাপের চির-
. শ্যামল বনানী,
. সকরুণ অজ্ঞাত ভাষায় ;
গগনে মেঘের ফাঁকে
. বিদায়ের বাণী
. ফুটে ওঠে তারায় তারায়।
মূরছায় বেলাভূমে
. অশ্রান্ত উচ্ছ্বাস
. তটিনীর অফুরান গীতি ;
পবন ফেলিছে মৃদু
. ব্যথাভরা শ্বাস
. আসে ভাসি জন্মান্তর স্মৃতি।
আমারে ঘিরিয়া নামে
. নিবিড় আঁধার,
. গ্রাসে ক্রমে দিকদিগন্তর,
অনাহত ধ্বনি এক
. ডাকি বার বার
. ভরি ওঠে বিশ্ব চরাচর
গরলে অমৃতে পূর্ণ
. বিচিত্র মরতে
. কতবার যাই আর আসি ;
আসিছে আহ্বান আজি
. অনন্তের পথে
. ধরায় যে বড় ভালবাসি।
চাহি না অনন্ত সুখ,
. অনন্ত আলোক,
. চিরশান্তি অনন্ত সান্ত্বনা ;
হতে চাই ভরা এই
. জরা মৃত্যু শোক
. ধরণীর ক্ষদ্র ধূলি-কণা।
সেথা কি ফুটিয়া ফুল
. থাকে গে এমন---
. দিকচক্র, বনরাজি নীলা,
এমনি সুষমাময়
. গগন ভূবন
. প্রকৃতির শোভাময় লীলা?
যাইতে চাহে না প্রাণ,
. তবুও একেলা
. ছুটিয়াছি অজানা সে পথে।
এ কি মহা আকর্ষণ,
. কাহার এ খেলা,
. কি আছে সে নূতন জগতে?
. *****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি
বিভাবতী দেবী চৌধুরাণীর
পরিচিতির পাতায় . . .
*
অতিথি
কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণী
কাব্যগ্রন্থ “খোঁজে” (১৯২৫) থেকে
কে তুমি অজানা অতিথি?
ছাপিয়া আলোক,
. ছাপিয়া তপনে
ঘনায় বাদল
. গগনে ভূবনে,
এমন সময়
. বাতায়ন পথে
পশিলে কেমন এ রীতি?
কেন আগমন গোপনে?
অচেনা ফুলের
. কোমল সুরভি
মাখা দেহে তব---
. তুমি কোন্ কবি ;
কোন্ জগতের
. রূপ-রস-গান
লুটিছে তোমার চরণে?
কি এক বিপুল পুলকে---
অনিমেষ আঁখি
. তোমার দরশে
শিহরি উঠিনু
. চকিত পরশে
মধুর বাণীর
. অজানা রাগিণী
ধ্বনিছে দ্যুলোকে ভূলোকে?
রাজদূত তুমি চিনেছি---
নব কিশলয়
. আমের মুকুলে
বাতাসে তোমার
. উত্তরি দোলে
মনে পড়ে এক
. সোনার স্বপনে
তোমারেই যেন হেরেছি!
যে লিপি এনেছ বহিয়া
ফাগুনের বনে
. যেথা ফুল-হাট
সে লেখা সেথায়
. করিয়াছি পাঠ---
আমার মনের
. নিভৃত লোকে
ধ্যানে ওঠে তাহা ফুটিয়া!
. *****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি
বিভাবতী দেবী চৌধুরাণীর
পরিচিতির পাতায় . . .
*
হারাণো স্বপন
কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণী
কাব্যগ্রন্থ “খোঁজে” (১৯২৫) থেকে
স্বপন আমার
. গিয়াছে হারায়ে
. কি দেখিনু তাহা পড়ে না মনে,
ছুটেছিনু কোন্
. সাগরের বুকে
. গিয়েছিনু কোন্ ফুলের বনে?
ফুটেছিনু বুঝি
. তারা হয়ে ওই
. নীল গগনের বিশাল দেহে
রামধনু হয়ে
. উঠেছিনু হাসি
. নীরদের পাশে আলোর স্নেহে?
ছায়াপথ হয়ে
. করিনু সরল
. অমরীগণের গমন-পথ,
ছিনু তরুছায়া?
. পাখীর কণ্ঠে
. ফুটিনু প্রভাত কাকলীবৎ ?
ঢেউ হয়ে আমি
. সুদূরের পানে
. ছুটে যাই গেয়ে কতই গান?
ফিরে আসি, কভু
. সিকতার পরে
. মূরছিয়া পড়ি হতাশ প্রাণ?
বরষার বিলে
. ফুটিনু কমল,
. ঊষার প্রথম আলোক-লেখা,
ছিনু বারিধারা,
. মেঘের কণ্ঠে
. হীরকের মালা বিজলী রেখা?
কি ছিনু স্বপনে---
. মাঠে মাঠে বুঝি
. রমার হরিৎ আঁছল খানি,
জ্যোছনা স্বপনে
. হাসে ধরা যবে
. আমি সে চাঁদিমা নিশার রাণী?
ছিনু সেই বাঁশী---
. অভিসার পথে
. যাহার মধুর সুরটি বাজে,
কোজাগরী সাঁঝে
. আলিপনা ছবি
. আঁকে মোরে বধূ আঙিনা মাঝে?
ভুলে গেছি, হায়,
. কোথা ছিনু আমি---
. ছিলাম সেথায় লতা কি ফুল?
জাগরণ মিছা
. অথবা স্বপন
. কোনটি আমার মনের ভুল?
. *****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি
বিভাবতী দেবী চৌধুরাণীর
পরিচিতির পাতায় . . .
*
অশান্তি
কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণী
কাব্যগ্রন্থ “খোঁজে” (১৯২৫) থেকে
জীবনের পরপারে আছে পরলোক,
. আলো কি আঁধার সেথা---
. বাস্ব না স্বপ্নময়
জরা-মৃত্যু-শোকে পূর্ণ অথবা অশোক?
জীবনের ভ্রমণ পথ যেথা হয় শেষ,
. নীলোর্ম্মি সাগর তলে,
. অথবা গগন পারে,
তপনে কি চন্দ্রমায়---কোথা সেই দেশ?
আসিয়াছি যেথা হতে যাইব আবার
. নজ্ঞত্রে না মেঘলোকে,
. কোথা সে বিস্মৃত রাজ্য?
জ্ঞানের অতীত তাহা ঘেরা অন্ধকার?
আসে কি বসন্ত-দূত হ’তে সেউ পুর
. আহ্বান বারতা বহি
. নিয়ে যায় পুরাতনে,
সাজাইয়া ধরণীরে নূতন মধুর?
আছে কোন্ রাজা সেথা অথবা সে রাণী?
. খুঁজিছে মানব-চিত্ত,
. জানায় এ ধরণীরে,
বৈশাখী গগন কার বজ্র-দীপ্ত বাণী?
সন্ধ্যার আলোক আনে কাহার আভাষ?
. শরতে শেফালি-গন্ধে,
. ঊষার রক্তিমা মাঝে,
আসে ভাসি কিসের পরম আশ্বাস?
সিন্ধু তরঙ্গময় অবিশ্রান্ত রোল
. কোন্ মহামন্ত্রে পূর্ণ?
. কাহার বন্দনা গাহে
তটিনীর চিরন্তন উতলা কল্লোল?
অশান্ত লভিবে কবে শান্তির নির্ব্বাণ?
. কোথায় জ্ঞানের শেষ?
. খুলে যাবে যবনিকা
কে দিবে রহস্যের পরম সন্ধান?
আস্তিকের প্রাণময় সরল বিশ্বাস,
. কে কহিবে সত্য কিনা---
. অথবা কিছুই নাহি
চিরসত্য উচ্ছৃঙ্খল তীব্র অবিশ্বাস?
হয় তো সকলই ভুল---বিশ্ব অন্ধবৎ
. চলিতেছে ভুল পথে---
. অপূর্ব্ব আলোক সিন্ধু
একদিন ভাসাইবে সমগ্র জগৎ!
. *****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর
কবি
বিভাবতী দেবী চৌধুরাণীর
পরিচিতির পাতায় . . .
*
নবযুগে
কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণী
কাব্যগ্রন্থ “খোঁজে” (১৯২৫) থেকে
আজ ভূবনে
. ফুলের বনে
. আগুন লেগেছে---
মরা গাঙে
. দু’কূল ভেঙ্গে
. জোয়ার এসেছে ;
দীবন মরণ তুচ্ছ করে
এগিয়ে চল লক্ষ্য ধরে,
ঝাঁপিয়ে পড় রূপ-সায়রে,
. দেবতা ডেকেছে---
ওই যে তাহার
. অভয় বাণী
. আকাশ ছেয়েছে।
অগ্নি-শিখা
. জয়ের টিকা
. পরায় তাহারে---
যে আজ মরণ
. করে বরণ
. নিবিড় আঁধারে ;
ভাঙ্গরে আজি পাষাণ-কার
দেখুক চেয়ে তপন, তারা,
স্রোতের সাথা জীবন-ধারা
. মিশছে এ পারে---
সঞ্জীবনী
. মিলবে আবার
. নদীর ও পারে।
কোথায় মালা
. বরণ ডালা
. সাজিয়ে তোরা নে,
শূন্য পথে
. সোনার রথে
. দেখ্ না মহানে---
এ কোন্ রাজা সিংহাসনে
বসতে আসে শুভক্ষণে
আশার আলো নয়ন কোণে
. সকল বয়ানে---
রক্তকমল
. উঠছে ফুটে
. বিশ্ব-পরাণে।
শঙ্খ বাজা
. তোরণ সাজা
. দৃষ্টি খুলেছে---
পাবি আবার সোনার খনি
পাবি তোদের বক্ষ-মণি
ওই শোনা যায় চরণ-ধ্বনি
. দেবতা এসেছে ;
বর নে রে আজ
. মুক্ত ধারায়
. বাঁধন খসেছে।
বক্ষ চিরে
. রক্ত দে রে
. মায়ের চরণে ;
পাবি সুধা
. মিটবে ক্ষুধা
. মৃত্যু বরণে।
কাটিয়ে অমানিশার রাতি
উঠবে জ্বলে হাজার বাতি
সুন্দরেরই হবি সাথী
. অমর জীবনে---
জয় ধ্বনি
. উঠবে তোদের
. সকল ভূবনে।
. *****************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর