কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণীর কবিতা |
শেষে কবি বিভাবতী দেবী চৌধুরাণী কাব্যগ্রন্থ “খোঁজে” (১৯২৫) থেকে সেদিন আসিবে মোর যবে, গ্রাসিবে জীবন ঘোর আঁধার করাল ছায়া এই দেহ পুড়ে ভস্ম হবে।--- দেহ মোর মিশে যাবে মৃত্তিকার সনে, এক আমি বহু হয়ে রহিব ভুবনে, ফুটিয়া উঠিব কভু নিশার স্বপনে, মন লোকে ফুটিব নীরবে, তরু বল্লী ছায়া ঢাকা আমার এ খেলা ঘরে স্মৃতি মোর জাগিবে গৌরবে। বনে বনে ভাসিয়া ভাসিয়া সুরভির সাথে আমি পুষ্পের পরাগ রাগে, নিশিদিন উঠিব হাসিয়া। বাদল নিশীথে কভু ঘন বরষায়, ধরণীর দ্বারে দ্বারে মত্ত ঝটিকায় সাড়া দিবে প্রাণ মোর, উদ্ভাসি ধরায়, মূহুর্মূহু যাব চমকিয়া, চঞ্চল বিদ্যুতে মিশি---আলেয়ার আলো সম জগতেরে ছলনা করিয়া। মিশে যাব অরুণিমা সনে, কখনো ফুটিব ওই দিনান্তের রক্তরাগে আলোছায়া সম্মিলন ক্ষণে। লঘু হয়ে ভেসে যাব বাতাসে বাতাসে, মিশে যাব জীবনের প্রতি শ্বাসে শ্বাসে, সাগরের প্রাণময় তরঙ্গ উচ্ছ্বাসে, তটিনীর অশান্ত জীবনে, মিশে যাব তৃণদলে---কোমল শিশির সিক্ত তাহাদেরি শ্যামল শয়নে। হবে মোর প্রাণের মিলন তুষার কণিকা সাথে, প্রপাতের ধারা সনে মিশে যাবে জীবন স্বপন। ইন্দ্রধনু সুষমায় সপ্তবর্ণ রেখা মেঘে রৌদ্রে মেশামিশি হাসি অশ্রু লেখা ; আকাশের নীলিমায় কভু দিব দেখা, শশাঙ্কের নির্ম্মল কিরণ, তাহাকে মিশিয়া আমি ফিরিব দিগন্ত পথে গ্রহে গ্রহে দিয়া নিমন্ত্রণ। গগনের সপ্তর্ষি সভাতে--- তারার মাঝারে থাকি চাহিব ধরার পানে স্নেহভরে কভু অমারাতে। কখনো ফুটিব আমি যৌবনের রাগে, তরু-লতিকার দেহে শ্যামল সোহাগে, অজানার গানখানি সকলের আগে পাখী কণ্ঠে গাহিব প্রভাতে। আমার প্রাণের ধারা মিলাবে দেবতা নরে মিশাইবে মর্ত্ত্য অমরাতে। . ***************** . সূচিতে . . . মিলনসাগর |