কবি বিদিশা করীম-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
রোজ নামচা
বিদিশা করীম     
( এই কবিতাটি "প্রগতি" পত্রিকার ঈদ সংখ্যা, চুয়াল্লিশ বর্ষ, ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল | এটিই কবি বিদিশা
করীম-এর ৭ বছর বয়সে লেখা, প্রথম প্রকাশিত কবিতা )

আন্টি যখন পড়াতে আসে
.        আমি থাকি ঘুমিয়ে,
মা আমায়  ডেকে তোলেন
.        দুচার কথা শুনিয়ে |
আন্টি  যখন বসে থাকে
.        আমি খাই চা,
কী ভাবে যে রেহাই পাব
.        ভাবছি মনে তা |
আন্টি যখন পড়তে বলে
.        আমি করি খেলা ,
পড়ায় যে হায় মন বসে না
.        তাই করি অবহেলা |

.                        আন্টি যখন চলে যায়
.                                আমি স্নান করি,
.                        স্নান সেরে খাবার খেয়ে
.                                স্কুল ড্রেস পরি |
.                        এরপর  দাদুর সাথে
.                                রওনা দিই স্কুলে |
.                        দাদু আমায় নিয়ে যায়
.                                তার ভাঙা সাইকেলে |

মায়ের সঙ্গে বাড়ী ফিরে
.        আবার করি খেলা,
আমার ঘরে হরেক রকম
.        খেলনা আছে মেলা |
মা আদর করে প্রায় বলে
.        বিদিশা তুমি পড়,
ভালো করে পড়লে একদিন
.        তুমি হবে অনেক বড় |

.                        সন্ধ্যার পর দাদুর কাছে
.                                পড়তে আমি বসি  |
.                        পড়াতো হয় অষ্টরম্ভা
.                                বেশী দেখি টিভি |

রাত দশটায় খাবার খেয়ে
.        ঘুমিয়ে আমি পড়ি,
ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি
.        শিয়রে  মা দাঁড়িয়ে
হাতে নিয়ে ছড়ি |


               এমনি করে আমার
.                                সারাটা দিবস কাটে,
.                        আনমনে কভু চেয়ে থাকি
.                                গাঁয়ের শ্যামল মাঠে ||
                                                               

.                      ****************                                                  
সূচিতে    


মিলনসাগর
*
আনন্দ
বিদিশা করীম     
( এই কবিতাটি "প্রগতি" পত্রিকার ঈদ সংখ্যা, ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল )


আনন্দ আমার সারা জীবনের সাথী
আনন্দ গাছে গাছে উড়ে বেড়ায় |
যে আনন্দ রয়েছে শিশুর কোলে
সে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে শিশুর খেলায়,
কিন্তু আনন্দকে কেউ কিনে নিতে পারে না----
ডাকাত চোর এদের কাছে নেই কোনো আনন্দ |
এই দুঃখ  ভেঙে দেবে কান্না দুঃখকে
দুঃখী জনের সবার শ্রেষ্ঠ হল সানন্দ শুধু সানন্দ,
আমার কাছে আনন্দ বিক্রি আছে-----
আমি আনন্দেরই ফেরিওয়ালা |
ঐ গরুটিরও আনন্দ আছে ---
ওই গাছটির কাছে |
আমরা সবাই আনন্দকে কাছে টানবো,
দুঃখ কান্নাকে দুহাত দিয়ে সরিয়ে |
আমার কাছে আনন্দ বিক্রি আছে
আমি আনন্দেরই ফেরিওয়ালা  |                                

.            **************                                                                   
সূচিতে    


মিলনসাগর
*
ঈদের খুশি
বিদিশা করীম     
( এই কবিতাটি "প্রগতি" পত্রিকার ঈদ সংখ্যা, ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল )


.            ১

ঈদের হাওয়া চলে এল
.        আর কত দেরী,
একটা করে দিন পার হয়ে যায়
.        পার হয়ে যায় নিশি |

রাতের পর দিন আসবে
.        আসে খুশীর ঈদ,
যেথায় যাব,  বলবে সবাই
.        ঈদ মুবারক  ঈদ ||


.             ২

ঈদের আগে আসে এক রাত
.        যার নাম চাঁদরা |
চাঁদ রাতে সবাই খুশী
.        নাচবো সবাই নাচ |
আর ঈদের দিনে সালাম করে
.        পাতো নরম হাত,
ঈদ সেলামী  না আদায় হলে
.        মুঠবো না আর হাত |
এমনি  করে  কাটাবো
.        আমরা সারাদিন,
খাওয়া দাওয়া হৈ হুল্লোড়
.        নাচবো তা ধিন ধিন ||


.                ৩

হিন্দু,  মুসলমান,  শিখ মিলে
.        করো কোলাকুলি,
মনের মধ্যে থাকবে না কোন
.        দ্বন্দ্ব  দলাদলি |
হিন্দু ও মুসলমানের থাক্
.        সুখের সম্পর্ক,
এক  বৃন্তে দুটি কুসুম
.        হোক মিলনের ধর্ম ||                                     

.            **************                                                                   
সূচিতে    


মিলনসাগর
*
সোনালী
বিদিশা করীম     
( এই কবিতাটি "প্রগতি" পত্রিকার ঈদ সংখ্যা, ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল )


সোনালীর নিশাতে সোনালী স্বপন,
সোনালীর প্রাভাতে সোনালী তপন |
সোনালীর সকালে কী যেন কী পাওয়া,
সোনালীর বিকালে কী চমত্কার হাওয়া |
সোনালীর অলংকারে ঢাকা আছে দেহ,
সোনালীর রঙেতে মাখা জননীর গেহ |
সোনালীর আকাশেতে এসেছে শরৎ
সোনালীর আনন্দে ভরে যায় জগৎ |
সোনালীর ধানের গন্ধে ছেয়ে যায় ধরণী
সোনালীর গোধূলিতে সুরের শঙ্খধ্বনি ||


.            **************                                                                   
সূচিতে    


মিলনসাগর
*
ভাবনা
বিদিশা করীম     
( এই কবিতাটি এখানেই প্রথম প্রকাশিত হল, রচনাকাল ২০১১ )

“কেন আমি,
কেন আমি হতে পারলাম না ধনী বাবার ছেলে
কেন আমি হতে পারলাম না সবার আদরের
কেন” ?   আমার জন্ম এক কুঁড়ে ঘরে |


“কেন আমি,
কেন আমি হতে পারলাম না কঁড়ে ঘরের ছেলে
কেন আমায় যেতে দেয়না সবাই খেলতে গেলে
কেন” ?


“যদি আমি অট্টালিকার ছেলে হতাম
তাহলে আমাকে বৃষ্টির জলে ভিজতে হত না
পড়তে হত না জ্বরে” |


“যদি আমি কুঁড়ে ঘরের ছেলে হতাম
তাহলে করতে পারতাম স্পর্শ বর্ষধারাকে
খেলতে পারতাম তার সঙ্গে” |


“যদি আমি অট্টালিকার ছেলে হতাম
তাহলে চড়তে পারতাম প্লেন
খেলতে পারতাম মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি” |


“যদি আমি কুঁড়ে ঘরের ছেলে হতাম
চড়তাম আমি ঠেলাগাড়ী
চালাতে পারতাম লাঠি দিয়ে চাকাগাড়ী” |


“যদি আমি অট্টালিকার ছেলে হতাম
খেতাম আইসক্রীম চকোলেট
সুখে ভরে যেত এ পাগল মন” |


“যদি আমি কুঁড়ে ঘরের ছেলে হতাম
খেতাম আমি কোরা বরফ
চুষে চুষে লাল নীল সব রং” |


“যদি আমি অট্টালিকার ছেলে হতাম
তাহলে গাড়ী চড়ে যেতাম পড়তে
পড়া হলে ফিরে আসতাম গাড়ীতে” |


“যদি আমি কুঁড়ে ঘরের ছেলে হতাম
বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে করতে যেতাম পড়তে
.          পড়া হলে ফিরে আসতাম এক সাথে” |


“যদি আমি অট্টালিকার ছেলে হতাম
খেলতে যেতাম কোনো এক নাম করা মাঠে
অরেঞ্জ জুস নিয়ে হাতে” |


“যদি আমি কুঁড়ে ঘরের ছেলে হতাম
খেলতাম এক পচা কাঁদা ভর্তি মাঠে
ওদের সঙ্গে কাঁদা মেখে” |


“আমি কী পারব এই বিলাসিতার জীবন থেকে মুক্তি পেতে
আমার স্বপ্ন কী পারবে এই মাটি ছুঁতে” ?


“আমি কী পারব এই যন্ত্রণাদায়ক জীবন থেকে মুক্তি পেতে
আমার স্বপ্ন কী পারবে ঐ আকাশ ছুঁতে” |
                                                       

.            **************                                                                   
সূচিতে    


মিলনসাগর