কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১  
মনসার জন্ম পালা

গৌরী কোন্দল পালা     

মনসা বিবাহ পালা     

অষ্ট নাগের জন্ম পালা   

অমৃত মথন পালা   

বনবাস পালা       

হাসন হুসন যুদ্ধ পালা     

গুয়াবাড়ি কাটা পালা       

ধন্বন্তরি বধ পালা     
১০
ছয় কুমার বধ পালা     
১১
ঝালুবাড়ির পূজা পালা  
১২
যমযুদ্ধ পালা      
১৩
যাত্রাপাটন পাটন পালা     
১৪
বস্তুবদল পালা     
১৫
ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা
  ১. নাগরথে চড়িয়া চলিল বিষহরি   
২. কেবল চান্দর কাজে মনসা সমুদ্র মাঝে    
৩. একেবারে মেঘ বায়ু করিল গমন   
৪. কান্ডার ধরিও দড় তরঙ্গ হইল বড়   
৫. সাধু বলে জল মধ্যে হের দেখ ধনা   
৬. গগন ঢাকিল মেঘে পবন চলিল বেগে   
৭. যাবৎ সদয় মোরে দেব মহেশ্বর   
৮. কান্দে সাধু বলে হরি হরি   
৯. নৌকায় থাকিয়া দেখে চান্দ সদাগর   
১০. পদ্মা বলে নদ নদী কিবা চাও আর   
১১. উপদেশ বল মোকে শরীর বিদরে শোকে   
১২. প্রণমি তোমারে পদ্মা মোরে কর দয়া   
১৩. রতি ধাইর সঙ্গে সোনাই করিল উত্তর   
১৪. রাজ্যের ঠাকুর চান্দ সোনা তার ঘরণী   
১৫.  বর দিল বিষহরি দশ মাস গর্ভে ধরি   
১৬. ধর লো ধর লো মোরে ধর লো বেড়িয়া   
১৭. পাখালিয়া গঙ্গাজলে পাঠুর মাথায় তৈল ঢালে   
১৮. এক দুই তিন চারি পঞ্চ দিন গণন   
১৯. কভু নাহি জানে চান্দ মাগিবার ভাও   
২০. বিষাদ ভাবিয়া চলে নগর ভিতর   
২১. দক্ষিণ পাটনা দূর কনক নগর পুর   
২২. কি কথা তোমারে বলিবরে মিতা   
২৩. প্রথমে দিলাম ভাত কাসি   
২৪. মাসী বলে ঠাকুরাণী এদিক দাও মন   
২৫. চান্দরে দেখিয়া সোনার চক্ষের জল পড়ে   
১৬
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা    
১৭
লোহার বাসর ঘর নির্মাণ পালা     
১৮
লখিন্দর বিবাহ পালা       
১৯
লখিন্দর দংশন পালা   
২০
ভাসান পালা      
২১
স্বর্গারোহণ পালা     
হস্তে ধরি বলেন শিব না কান্দ মনসা |
আচে পূরাব তোমার মনের আশা ||
ধূলা ঝারি কোলে লইল তখন |
আপন বসন দিয়া মোছেন বদন ||
কোপ পরিহর পদ্মা ঝাটে চলে যাও |
মনোসুখে ডুবাও গিয়া চান্দর চৌদ্দ নাও ||
ধন জন আদি যত থাকে তার নায় |
জল মধ্যে তার যেন প্রাণ রক্ষা পায় ||
পুত্রের অধিক মোর চান্দ বণিক |
জল মধ্যে দুঃখ যেন না পায় খানিক ||
মোর কথা এড়ি যদি চান্দরে দেও তাপ |
তুমি আমার ঝি নহে আমি নহে বাপ ||
মা যাহার ঘরে নাই বাপে করে দয়া |
বুঝিয়া শিবের মন গেল মহামায়া ||
মহাদেবের বচন পদ্মা না করে প্রকাশ |
মাগিয়া লইল বায়ু উনপঞ্চাশ ||
দ্বাদশ মেঘ লইয়া প্রধান প্রধান |
মেলানি করিয়া গেল আপনার স্থান ||
নেতা নেতা বলি পদ্মা ডাকে উচ্চরায় |
তখনি উঠিয়া নেতা বায়ুগতি ধায় ||
পদ্মাবতী বলে নেতা আর চিন্তা কিসে |
হাতে গুয়া লইয়া তুমি বেড়াও দেশে দেশে ||
নদনদী আছে যত পৃথিবী মাঝার |
সবের তরে জানাও গিয়া আমার সমাচার ||
যে যে ব্যথিত হয়ে আসে মোর কাজে |
কল্য যেন মিলে গিয়া কালিদহের মাঝে ||
নেতার বচনে পদ্মা গেলা গঙ্গার গোচর |
পদ্মারে দেখিয়া গঙ্গা চিন্তিত অন্তর ||
আসন উপরে বসি দেবী পদ্মাবতী |
গঙ্গার স্থানে কহিলেন আপন দুর্গতি ||
যত গালি পাড়ে চান্দ সহিতে না পারি |
নিরবধি বলে মোরে ধামনা ভাতারি ||
পিতৃ আজ্ঞা জান মাগো হয়েছে আমারে |
আপনি আজ্ঞা কর ডিঙ্গা ডুবাইবারে ||
গঙ্গা বলে শুন বাছা কহি গো তোমায় |
আমার এমন কার্য উচিত না হয় ||
এই পূজিয়াছ মোরে ছাগ মহিষ দিয়া |
হরিব চান্দর ডিঙ্গা কেমন করিয়া ||
এতেক শুনিয়া পদ্মা কুপিত অন্তর |
পূজা খেয়ে হইয়াছে চান্দর কুপ্পর ||
বহিছে উজান ভাটি পচা দ্রব্য ধোয় |
মনুষ্যে তোমার জল যেন নাহি ছোঁয় ||
এতেক শুনিয়া গঙ্গা হইল কাতর |
রহ রহ বলিয়া ধরেন দুই কর ||
শাপ বিমোচন পদ্মা করহ সত্বরে |
ডুবাব চান্দর ডিঙ্গা কহিনু তোমারে ||
পদ্মা বলে মোর কথা নড়িবার নহে |
না খাইবে জল তব মাত্র কলিদহে ||
চোদ্দ ডিঙ্গা না ডুবিবে এই কালিদয় |
আনহ সংবাদ দিয়া নদী সমুদয় ||
এক কথা শুন কহি দেবী বিষহরি |
চান্দ মলে পাছে সোনা হইবেক রাড়ি ||
এতেক শুনিয়া পদ্মা হরষিত মন |
গঙ্গারে প্রণাম করি করিলা গমন ||
পদ্মার বচনে নেতা আনন্দ বিশেষ |
হাতে গুয়া লইয়া পদ্মা যায় দেশে দেশ ||
অনায়াসে ভ্রমে নেতা বড় আচাভুয়া |
সর্ব নদনদীর তরে দিল পান গুয়া ||
নেতা বলে নদনদী শুনহ বচন |
চান্দ পদ্মার বিসম্বাদ জান সর্বজন ||
সে সকল দুঃখ দেখি দেব মহেশ্বর |
চান্দর ডিঙ্গা ডুবাইবে সমুদ্র মাঝার ||
যাহার যাহার ব্যথা পদ্মাবতীর কাজে |
কল্য গিয়া মিলিবে সবে কালিদয়ের মাঝে ||
নদ নদী জানাইয়া নেতা গেল ঘর |
ত্বরিত গমনে গেল পদ্মার গোচর ||
প্রভাত সময়ে কাক ডাকে ঘনে ঘন |
তোলপাড় করে হেথা মনসার মন ||
নাগরথে চড়ি পদ্মা চলিল সত্বর |
ত্বরিত গমনে গেলা কালিদয় সাগর ||
চৌদ্দ ডিঙ্গা লইয়া চান্দ যায় সেই পথে |
পথ আগুয়াইয়া পদ্মা রহিল নাগরথে ||
নিকটে রহিয়া মায় খলখলি হাসে |
হেন কালে দেখে কত নদ নদী আসে ||
চান্দর দিকে নদনদী চাহে ঘনে ঘন |
মহাবেগে চলে বায়ু পঞ্চাশ যোজন ||
মলয়া শীতল বায়ু ঘন ঘন বয় |
একভিতে থাকে মেঘ আর ভিতে যায় ||
চারিভিতে মেঘগণ ছাইল আকাশে |
এক চাপ হইয়া যত নদ নদী আইসে ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন কৌতুক হইল বড়ি |
এই কালে বোল গাইন সম্ভেদ লাচারি ||

.                                   ****************                         
সূচি...    


মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                 ৩
একেবারে মেঘ বায়ু করিল গমন |
বায়ুকোণ হইতে মেঘ যায় পূর্বকোণ ||
আচম্বিতে বরিষণে মুষলের ধারা |
চৌদ্দ ডিঙ্গা পরিপূর্ণ হইলেক ভরা ||
দেখি সদাগর ভয়ে হয় চমকিত |
একদৃষ্টে চাহে চান্দ কান্ডারির ভিত ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |
এই কালে বল ভাই লাচারির গীত ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
মনসামঙ্গল কাব্যের সূচি
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা



কেবল চান্দর কাজে                     মনসা সমুদ্র মাঝে
সংবাদ আনিল নদ নদী |
মন্দাকিনী চলে আগে             পর্বত লড়ে যাহার বেগে
আপনে চলিলা ভাগীরথী ||
সরস্বতী চলে ধীর                         ধবল যাহার নীর
পাতাল হইতে চলিল ভোগবতী |
আপনে যমুনা চলে                    হিল্লোল উঠিল জলে
কল্লোল উঠিল বিপরীত ||
খড়ি গঙ্গা ইছামতী                      আর লড়ে পদ্মাবতী
বড় নদী চলিল ত্বরিত |
বৃদ্ধ ভৈরব চলে                       দুই কূল ভাঙ্গিয়া জলে
পূর্বদিক যাহার বিক্রম ||
আপনে ভৈরব লড়ে                   শতমুখী যাহার আগে
সত্বরে চলিলা কালিদয় |
কুচগঙ্গা মহাবলী                         আর লড়ে কর্ণফুলি
আপনে চলিল ভগবতী ||
সব গঙ্গা  চলে আগে                    শত শত নদী সঙ্গে
আপনি চলিল মহাদেবী ||
বায়ুর সাহায্য লইয়া                   নদ নদী আসে ধাইয়া
শব্দ হয় অতি ঘোরতর |
পদ্মাবতী দরশনে                        সানন্দে বিজয় ভণে
ভয়েতে কান্দিছে সদাগর ||

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা



কান্ডার ধরিও দড়                        তরঙ্গ হইল বড়
পাতা হালে নাহি ছোয় পানি |
যেন কুমারের চাক                 চৌদ্দ ডিঙ্গা লইল পাক
ঝলকে ঝলকে উঠে পানি ||
ভাঙ্গিল নৌকার গলই                 ছিঁড়িল পাটের সরই
বিবাদে লাগিল মোরে কানি
ভয়েতে কাঁপিছে তনু                রাখিবারে না পারিনু
মজিলেক ডিঙ্গা চৌদ্দ খানি ||
বলে রোঙ্গাই ব্রাহ্মণ                     পদ্মারে কর পূজন
রক্ষা হবে সকল তোমার |
পদ্মারে পূজহ ফুলে                    তবে সে যাইবা কূলে
নহে প্রাণ না বাঁচিব আর ||
শুনি সাধুর হইল দুঃখ                 কি বলিলা আরে মূর্খ
আমার তরে না চিন্তিল হিত |
তুমি আমার ব্রাহ্মণ                     না বুঝি আমার মন
ভাল বোঝে সোমাই পন্ডিত ||
ফিরিয়া দেশেতে যাই                   বুঝিব তোর বড়াই
দ্বারেতে আসিতে করব মানা |
শুন তের নফর                           মোরে বলে দুরক্ষর
মোরে উপহাস করে ধনা ||
চান্দোর কুমতি আর্ত                না শোনে পরের যুকতি
পদ্মারে দেয় নানা গালি |
পদ্মাবতী দরশনে                         সানন্দে বিজয় ভনে
চান্দোর ধন জন দিল ডালি ||

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
বিজয় গুপ্ত বলে চান্দ কিবা কান্দ আর |
সাগরে ডুবিবে ডিঙ্গা নাহিক নিস্তার ||
মাথায় হাত দিয়া কান্ডারি সব কান্দে |
এই কালে বল ভাই লাচারির ছন্দে ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা



গগন ঢাকিল মেঘে                      পবন চলিল বেগে
দেখিতে নারিলাম বাপ ভাই ||
স্বপন দেখিলাম রাতি                এক কন্যা নাগজাতি
সর্পে বেষ্টিত সর্ব গাও |
অন্তরীক্ষে থাকিয়া চলে             ধরিয়া তোমার চুলে
সমুদ্রে ডুবাইল চৌদ্দ নাও ||
মিছা সে গৌরব কর                   মেঘের গতিক বড়
নিশ্চয় মজিব জল মধ্যে |
বরিষে মুষল ধার                         ডিঙ্গা হইল ভার
আজু প্রাণ রহে পুণ্যফলে ||
সমুদ্রে কাতর মন                        চিত্ত হরি নারায়ণ
প্রভু মোরে সঙ্কটে রক্ষা কর |
পদ্মাবতী দরশনে                      সানন্দে বিজয় ভণে
যাহারে সদয় দুর্গা মা ||

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

               ৭
যাবৎ সদয় মোরে দেব মহেশ্বর |
কি করিতে পারে মোর কাহারে মোর ডর ||
এতেক বলিয়া চান্দ জল মধ্যে ভাসে |
হেন কালে যত মেঘ বায়ুগতি আইসে ||
কান্ডারির বাক্যে সাধু চমকিত মন |
শিব দুর্গা ভাবে সাধু আর নারায়ণ ||
চান্দ বলে ভাই সব না করিও ভয় |
এবার তরাবে মোরে দেবী দুর্গা মায় ||
মহাদেব বলি চান্দ জল মধ্যে ভাসে |
হেন কালে দেখে যত বায়ু মেঘ আসে ||
শিলা বৃষ্টি বরিষণ পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে |
দেখিয়া তরাসে যত ডিঙ্গার লোক কাঁপে ||
কেহ বলে বাপ বাপ কেহ বলে ভাই |
কেহ বলে না দেখিলাম সহোদর ভাই ||
নাকে মুখে কাহার সামাইল পানী |
কেহ বলে না দেখিলাম ঘরের রমণী ||
পুত্র পুত্র বলি কেহ কান্দে দীর্ঘরায় |
কেহ কেহ কান্দে কার ধরিয়া গলায় ||
নৌকার লোক কান্দে দুঃখ লাগে বড়ি |
এই কালে বল ভাই করুণ লাচারি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা



কান্দে সাধু বলে হরি হরি |
দারুণ পদ্মার পাকে                       মজিলাম সমুদ্র মাঝে
না দেখিলাম চম্পকনগরী ||
দক্ষিণ পাটনে গেলাম                       বহুমূল্য ধন পাইলাম
এত দুঃখ করিলাম কোন কাজে |
যত নিষেধিল প্রিয়া                   তাহাতে না পাতিল হিয়া
নিশ্চয় মজিব জল মাঝে ||
ধনা বলে চান্দ শুন                          কিসের কর ক্রন্দন
এখন কহিতে কোপ বাড়ে |
সেই কালে ইহা জানি                        মনসারে বল কানি
তেকারণে এত দৈব পড়ে ||
ধনার নিঠুর বোলে                       মহাসাধু কোপে জ্বলে
তুই মোর সংবাদ পাইলি ধনা |
বারেক রাখেন চন্ডী আই                 এবার দেশেতে যাই
তোমার ভাঙ্গিব সম্ভাবনা ||
কান্ডার ধরিও দড়                            তরঙ্গ হইল বড়
পড়োয়ানে না ছোঁয় পানী |
ছিঁড়িল পাটের সরই                     ভাঙ্গিল ডিঙ্গার গলই
জৌঘর হইল খান খান ||
প্রমাণ পাথরের শিল                      খসিল ডিঙ্গার খিল
ঝলকে ঝলকে উঠিল পানী |
ব্রাহ্মণে বেদ পড়ে                        পৈতা উড়াইল ঝড়ে
গুণ ছিঁড়ি হইল খান খান ||
পদ্মাবতী দরশনে                         সানন্দে বিজয় ভণে
হরি হরি করয়ে স্মরণ |

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                ৯
নৌকায় থাকিয়া দেখে চান্দ সদাগর |
চৌদ্দ ডিঙ্গার জল হইল কাঁকাল সোসর ||
চান্দ বলে হরি হরি কি করিল দেবতা |
নিকটে বান্ধব নাহি কে কহিবে কথা ||
কাহাকে কহিব কথা কেবা বাপ ভাই |
দন্তে ঘাস করি  বলে রাখ দেবী মাই ||
যত পূজিলেন গঙ্গা একমন চিত্তে |
মোর কর্মফলে সব হইল বিপরীত ||
আজর ছিঁড়িয়া ডিঙ্গা পাক যায় স্রোতে |
এবার রাখ গঙ্গাদেবী তৃণ ধরি দাঁতে ||
চান্দ বলে জল মধ্যে হের দেখ ধনা |
পর্বত প্রমাণ সর্প মাথায় ধরে ফণা ||
দিমমণি জ্বলে যেন রবির কিরণ |
নিশ্চয় ডুবিবে নৌকা অবশ্য মরণ ||
ধনা বলে মহাসাধু না করিও ভয় |
শিবের চরণ ভাবে এড়াইব সংশয় ||
বৈদ্য বিজয় গুপ্তের সরস রচিত |
চন্ডির প্রসাদে রচিল মনসার গীত ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
যখন বেহুলা চাহে দিবা গো তখনে ||
তুমি ছাড়া মা মোর নাহিক সহায় |
জানিয়া বিধান কর যেবা মনে লয় ||
এতেক শুনিয়া গঙ্গা পদ্মার বচন |
ডাক দিয়া আনে তখন জলকন্যাগণ ||
গঙ্গা বলে শুন সবে আমার বচন |
চান্দর সকল কটক ভাসে সমুদ্র গহন ||
সাবধান হইয়া রাখিবা সঙ্গোপনে |
যখন চাহিবে পদ্মা দিবা তখনে ||
এতেক শুনিয়া তাহারা চলিল সত্বরে |
আঁখির নিমেষে গেল সমুদ্র মাঝারে ||
যতক কটক আনে গঙ্গার পুরীতে |
আঁখির নিমেষে পদ্মা জীয়াইল ত্বরিত ||
যেখানে আছে চান্দর ছয় বেটা |
সেখানে রাখিবা নৌকা চৌদ্দ গোটা ||
ধন জন ইতি রাখিল যতনে |
মেলানি করিয়া পদ্মা গেল নিজ স্থানে ||
চিৎ হইয়া ভাসে চান্দ নাহিক সম্বিৎ |
দেখিয়া মনসা দেবী হইল হরষিত ||
মরা জ্ঞানে ছো মারে চিল আর কাকে |
ব্যথা পাইয়া সদাগর মা বাপ ডাকে ||
বারেক প্রাণ রাখ দেব শূলপানি |
কৃপা কর মোরে দেবী ভবানী ||
তুমি বিনে গো আমারে কে করিবে নিস্তার |
এভব সঙ্কটে মা তুমি কর পার ||
নাগরথে পদ্মাবতী চাহেন কৌতুকে |
চিৎ হইয়া ভাসে চান্দ সমুদ্রের বুকে ||
নেতা কহে শুন কহি জয় বিষহরি |
চান্দ পাছে মরিলে সোনেকা হবে রাড়ি ||
একগাছি কলাগাছ আনিল কাটিয়া |
আখর লিখিয়া গাছ দিল ভাসাইয়া ||
আমারে পূজহ যদি চান্দ সদাগর |
চৌদ্দ ডিঙ্গা ফিরাইয়া দিব তব ঘর ||
মোর পূজা না করিয়া কর অহঙ্কার |
এখন হারাবা প্রাণ সমুদ্র মাঝার ||
আপনে পন্ডিত চান্দ স্থির করে মতি |
হাসিতে হাসিতে পড়ে মনসার পাঁতি ||
আখর ভরিয়া চান্দ প্রস্রাব করিয়া |
পুনর্বার পড়ে চান্দ জলে ঝাপ দিয়া ||
পত্র পড়িয়া চান্দর চক্ষুর পড়ে পানি |
এবে গাছ নাহি ছাড়ে লঘু জাতি কানি ||
যায় যাউক ছার প্রাণ কি লাগি বা রয় |
লঘুর ভর্ৎসনা আর শরীরে না সয় ||
উকি দিয়া চাহে চান্দ কেহ নহে কাছে |
দোহাতিয়া বাড়ি মারে সেই কলাগাছে ||
নাগরথে পদ্মাবতী আইসে শীঘ্রগতি |
কখন না ছাড়ে চান্দ আপন প্রকৃতি ||
নেতা বলে পদ্মাবতী চান্দর প্রাণ যাবে |
চান্দ মরিলে তোমার পূজা নাহি হবে ||
ধন জন গেল কেবল আছে একেশ্বর |
প্রাণে পাছে মরি থাকে চান্দ সদাগর ||
পদ্মার মহিমা কিছু বুঝান না যায় |
মধ্য গঙ্গা হইতে চান্দ কুলের কাছে যায় ||
গায় বস্ত্র নাই চান্দ হুকি দিয়া চায় |
সোনার কলসী পদ্মা গাঙ্গেতে ভাসায় ||
কলসী পাইয়া চান্দর গায়ে বল বাড়ে |
কলসী ভর করি চলিলেক পারে ||
ভূমি আকর্ষিয়া চান্দ তখন বসিল |
দুই চক্ষু মুছিয়া ধান্ধা ভাঙ্গিল ||
জর্জর হইয়াছে বড় উপবাস জলপানে |
পরিধেয় বসন নাই বসিছে বিবসনে ||
নেতার সঙ্গে যুকতি করিয়া পদ্মাবতী |
কপটে হইলা দেবী ব্রাহ্মণের যতি ||
যতি বলে আরে চান্দ এড়াইয়া সঙ্কট |
আমার সাক্ষাতে কেন বসেছে লেঙ্গট ||
ব্রাহ্মণ যতি আমি তোমার ধর্মের মাতা |
যতির কথা শুনিয়া চান্দর মনে লাগে ব্যথা ||
অধোমুখ হইয়া দেখে শরীর বিবসন |
দুই হাতে অধোদেশ ধরিল তখন ||
এক হাত বস্ত্র দিলা দেবী বিষহরি |
ধড়া পাইয়া চান্দ ততক্ষণে পরি ||
বস্ত্র পরিয়া দুঃখ ভাবে মনে মনে |
প্রণাম করিয়া পড়ে যতির চরণে ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন হও সাবহিত |
পয়ার এড়িয়া বল লাচারির গীত ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

১১

উপদেশ বল মোকে                   শরীর বিদরে শোকে
যাইব মুই চম্পক নগরী |
ভূমি আকর্ষিয়া গাও                   ধরিয়া যতির পাও
তুমি যতি মোর ধর্মমাতা |
আসিলাম লাভের আশ            ধরিলাম ভিখারির বেশ
মোর দুঃখের বিস্তর কথন ||
ধরিয়া যতির পায়                     কাঁন্দে চান্দ দীর্ঘরায়
শুন মোর দুঃখের কাহিনী |
দক্ষিণ পাটনে গেলাম                  বহমূল্য ধন পাইলাম
লইয়া গেল লঘুজাতি কানি ||
শুনিয়া চান্দর ভাষ                      মনে মনে পদ্মা হাস
কানি নাম হয় কোন জনা |
চান্দ বলে পোছ কি                        মনসা শিবের ঝী
তাহার দক্ষিণ চক্ষু কানা |
যতি বলে সাধু শুন                      এ হেন পুরুষের গুণ
মুখে আইসে কেবা কাহারে সহি |
বুঝিলাম কার্যের ভাও                  মুখদোষে পীড়া পাও
ইহাতে মনসার দোষ নাহি |
সহজে উদার মতি                      আমি ব্রাহ্মণের যতি
পথের উদ্দেশ আমি নাহি জানি |
কিবা চাহ তুমি হেথা                     চম্পক নগর কোথা
লোক মুখে কভু নাহি শুনি ||
হের দেখ কতদূর                           কনক মাণিক্যপুর
এখানে মাগিলে পাবা অন্ন |
পদ্মাবতী দরশনে                        সানন্দে বিজয় ভণে
যাহার সদয় নারায়ণ ||

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                 ১২
প্রণমি তোমারে পদ্মা মোরে কর দয়া |
হউক মধুর গীত দেহ পদছায়া ||
হেথায় মহাসাধু রহিলা এই মতে |
সোনেকার কথা শুন এক মন চিত্তে ||
রাত্রি দিন ভাবে রাণী সাধুর মঙ্গল |
নানারূপে সোনেকা ভাবিয়া বিকল ||
সোনেকারে দেখিতে আইল যত নারীগণ |
সোনেকার উদর দেখে গর্ভের লক্ষণ ||
সোমাই পন্ডিত বলে সোনেকা গো মাও |
পঞ্চমাস হইল তোমার পঞ্চামৃত খাও ||
সোনাইর ছয় পুত্র নিল যমরাজ |
মোরে গর্ভের তনয় কি করিবে কাজ ||
বৃদ্ধাকালে পুত্র মোর কি করিবে কাজ |
এখন পঞ্চামৃত খাব মুখে বাসি লাজ ||
ছয় মাস গিয়া সপ্তম ঊষা হেন |
বিদিত হইল যত গর্ভের লক্ষণ ||
অতি ক্ষীণ হইল তনু পেটে নাহি ভোক |
খাইতে না পারি অল্পক্ষণে ওক ||
তিতৈল জামীর আর বদরী ছোলঙ্গা |
সর্বক্ষণ তাম্বুল মুখে নাহি রঙ্গ ||
রাত্রি দিন ভাবে রাণী সাধুর মঙ্গল |
নানারূপ ভাবিয়া সোনেকা বিকল ||
অন্নজল না খায় শুইয়া থাকে রাত্রিদিন |
শরীর অচল হইল তনু হইল ক্ষীণ ||
আর কিছু না খায় ঝিকর খাইতে মন |
লতাপাতা শাক খাইতে করিল যতন ||
অবশেষে ধাই আসি করিল জিজ্ঞাসা |
কি বস্তু খাইতে তোমার গিয়াছে আশা ||
সোনা বলে ওগো ধাই কি কহিব কথা |
আনিয়া গাছিক শাক দেও লতাপাতা  ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                     ১৩
( রতি ধাইর সঙ্গে সোনাই করিল উত্তর |
শাক খাইতে ইছা খাইতে ইছা হইয়াছে মোর || )
শাক তুলিতে যায় ধাই চেড়ি |
বাহু লাড়া দিয়া ফিরে বাড়ি বাড়ি ||
পরিয়া পাটের শাড়ি |
শাক তুলিতে বেড়ায় বাড়ি বাড়ি ||
নাচে ধাই দিয়া বাহুলাড়া |
শাক তুলিতে পড়িয়া গেল সাড়া ||
ধাই ফিরে দিয়া কাঁক|লির হাতা |          
গাছি শাক দেও লতা পাতা ||
সাধের শাক খাইব রাণী |
আনিবা তুয়া সলুফা ঠেনা ঠেনি ||
গিয়া গাঙ্গড়াইয়া তোলে আর নলিতা |
মধুলতা খাইয়া আর পোলতা ||
লাউর ভাঙ্গে আগা কুমরের ভাঙ্গে ডোগা |
বাছিয়া বাছিয়া তোলে শাক ঢোল কমালির আগা ||
ঢুলায়া নটিয়া তোলে আর সরূপা |
মরিচের আগে তোলে রান্ধনি ধনিয়া ||
শাক তুলিয়া ধাই ঘরে যায়ে |
সানন্দে বিজয় গুপ্তে গায়ে ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                      ১৪
রাজ্যের ঠাকুর চান্দ সোনা তার ঘরণী |
সাধের শাক খাইতে আনে যতেক বাণিয়ানী ||
স্নান করিয়া চড়াইল রন্ধন |
আছিল সামগ্রী যত আনিল তখন ||
রাজ্যের ঠাকুর চান্দ ধনে অন্ত নাই |
রন্ধন সামগ্রী যত রাখিল ঠাঁই  ঠাঁই ||
আগে পূজিল অগ্নি জবা ফুল দিয়া |
লইল সামগ্রী যত ভাগ ভাগ করিয়া ||
তেঁতুল চলার অগ্নি জ্বলে ধপ ধপ |
নারিকেল কোরা দিয়া রান্ধে মুগের সূপ ||
( ধীরে ধীরে জ্বলে অগ্নি একমত জ্বাল |
কড়ির বেতাগে রান্ধে  কলাইর ডাল || )
ঝিঙ্গা পোলাকারী রান্ধে কাঁঠালের আঠি |
নারিকেল কোরা দিয়া রান্ধে বটবটি ||
আনিয়া বাথুয়া শাক করিল লেচফেচা |
লড়িয়া চাড়িয়া রান্ধে দিয়া আদা ছেঁচা ||
যমানী পুরিয়া ঘৃতের তৈলে পাক |
কটু তৈলে ভাজি তোলে গিমা শাক ||
নানা প্রকারে রান্ধে অনেক সুরস |
অনেক প্রকারে রান্ধে পিষ্টক পায়স ||
নিরামিষ রান্ধিয়া রাখিল একভিত |
মৎস্যের ব্যজনে সোনেকা দিল চিত ||
মৎস্য মাংস কাটিয়া করিল ভাগ ভাগ |
রোহিত মৎস্য দিয়া রান্ধে কলতার আগ ||
খান খান করিয়া কাটিয়া লইল চই |
ঝাঁজ কটু তৈলে রান্ধে বাইন মৎস্যের খই ||
চেঙ্গ মৎস্য দিয়া রান্ধে মিঠা আমের বৌল |
কলার মূল দিয়া রান্ধে পিপলিয়া শৌল ||
কৈ মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল |
জিরা মরিচে রান্ধে চিথলের কোল ||
উৎপল মৎস্য আনিয়া তার কাঁটা করে দূর |
গোল মরিচে রান্ধে উপলের পূর  ||
আনিয়া ইলিশ মৎস্য করিল ফালা |
তাহা দিয়া রান্ধে ব্যঞ্জন দক্ষিণ সাগর কলা ||
শৌল মৎস্য কাটিয়া করিল খান খান |
তাহা দিয়া রান্ধে ব্যঞ্জন আলু আর মান ||
মাগুর মৎস্য আনিয়া কাটিয়া ফেলে ঝুড়ি |
তাহা দিয়া রান্ধে ব্যঞ্জন আদামারি ||
শাইল তন্ডুল অন্ন রান্ধিল বিশেষ |
দুই তিন প্রকার রান্ধে পিষ্টক পায়েস ||
রন্ধন করিয়া রাণীর আনন্দিত মন |
বন্ধু-বান্ধব লইয়া করিল ভোজন ||
( নয় মাস গিয়া হইল দশ মাস |
প্রসব হইতে সোনার হইল উল্লাস ||
বেদনা জন্মিল তার শরীর দুর্বল |
বেদনা ধরিল রাণীর উদর ভিতর || )
বেদনায় কাতর রাণী দুঃখ লাগে বড়ি |
এই কালে বল ভাই করুণ লাচারি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

১৫

বর দিল বিষহরি                   দশ মাস গর্ভে ধরি
আজি সোনার প্রসব সময় |
উদরে দারুণ ব্যথা             তুলিতে না পারি মাথা
এবার পদ্মা রাখিও আমায় ||
পাও করে থর থর                 দেশে নাহি সদাগর
না জানি কি হইবে আমার |
কাঁকুলি বেদনা করে                 উদর ছিঁড়িয়া পড়ে
পদ্মাবতী দিলা কিবা বর |
দেখিয়া সোনার মুখ                 পদ্মার মনেতে দুঃখ
কামরূপে নামে ক্ষিতিতলে |
সোনেকার ঘরে ঢুকি                চাহিল অমৃত আঁখি
তখন সোনেকার গর্ভ চলে ||
অচেতন হইল তায়              তুলিতে না পারে কায়
উদরে বেদনা গুরুতর |
বেদনা হইল বড়                      ধাইকে কহিল ধর
প্রাণ মোর করে থর থর ||
কান্দে সোনা উচ্চৈঃস্বরে          কোথা গেল সদাগরে
ভয়ে অঙ্গ কাঁপে থর থর |
পদ্মাবতী দরশনে                  সানন্দে বিজয় ভনে
ভূমিতে পড়িল লক্ষ্মীন্দর ||

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                     ১৬
( ধর লো ধর লো মোরে ধর লো বেড়িয়া |
বৃদ্ধ কালে হইল ছাওয়াল আনন্দ লাগিয়া ||
ধর গো ছয় পুত্রবধূ ধর গো বেড়িয়া |
বৃদ্ধকালে ছেলে হয় মারে পুড়িয়া || )
এ খাটাল হইতে সোনা ও খাটালে যায় |
মধ্য খাটালে সোনা গড়াগড়ি যায় ||
রাম লক্ষ্মণ দুই শূল সোনার কাঁকালে চড়িল |
হস্তযোড়ে লক্ষ্ণীন্দর ভূমিতে পড়িল ||
মাটিতে পড়িয়া বালক ওঁয়া ওঁয়া বলে |
হেনকালে ধাই মা তুলে নিল কোলে ||
পুত্র পুত্র বলি সবে করে হুলা হুলি |
আনন্দিত হইল যত নারী গণে মিলি ||
সোনার কাটারি দিয়া নাড়ি ছেদ কৈল |
গঙ্গাজলে স্নান করি মায়ের কোলে দিল ||
( চৌদিকে বাজনা বাজে সুখী সর্বজন |
পুত্র মুখ দেখি সোনার আনন্দিত মন ||
নেতের কান্ডার মাঝে চৌদিকে বাজায়|
দুই হাতে ধরিয়া পুত্র কোলে লয় ||
পুত্র কোলে করি সোনাইর সুখ হইল বড়ি |
এই কালে বলে গাইন সরস লাচারি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

১৭

পাখালিয়া গঙ্গাজলে            পাঠুর মাথায় তৈল ঢালে
আনন্দিত সর্ব জন |
দেখিয়া পুত্রের মুখ                  সোনেকার বড় সুখ
বাজে সব বিবিধ বাজন ||
ভেউর মৃদঙ্গ বাজে                 আনন্দিত সর্ব রাজ্যে
হইল পুত্র চান্দ ভাগ্যবান |
ঢাক ঢোল বাজে কাড়া            সর্বরাজ্য পাইল সাড়া
শুনিয়া আনন্দ সর্বজন ||
নেতার কান্ডার মাঝে             চৌদিকে বাজনা বাজে
পুত্র কোলে লইল সোনেকায় |
পদ্মাবতী দরশনে                     সানন্দে বিজয় ভনে
মনসার দাস হইল লখাই ||

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                   ১৮
এক দুই তিন চারি পঞ্চ দিন গণন |
ছয় দিন ষষ্ঠী পূজা নিশি জাগরণ ||
সপ্তমে উঠানী করে শাস্ত্র ব্যবহার |
দিনে দিনে বাড়েই লখাই পদ্মাবতীর বর ||
ছয়মাস যখনেতে হইল কুমার |
অন্নপ্রাসন জন্য দ্বিজ আনিল বিস্তর ||
সংবাদ দিয়া আনিলেক সোমাই ব্রাহ্মণ |
শুভক্ষণে করিলেক অন্ন আরম্ভন ||
সোনেকার তরে যুক্তি করিল তখন |
থুইল লক্ষ্মীন্দর নাম ওঝা বিচক্ষণ ||
পুত্রমুখ দেখিয়া সোমাই মনে মনে হাসি |
গগনে উদয় যেন শরতের শশী ||
দিনে দিনে বাড়ে কুমার দেবতার বর |
এক দুই তিন হইল চতুর্থ বত্সর ||
চান্দর ব্যথিত বড় সোমাই ব্রাহ্মণ |
শাস্ত্র পড়ান তারে হইয়া এক মন ||
দিনে দিনে বাড়ে লখাই মনসার বর |
সাত বত্সরের হইল কুমার লক্ষ্মীন্দর ||
শুভদিন পাইয়া করাইল কর্ণভেদ |
রাজনীতি শিখাইল জানাইল বেদ ||
শুভদিনে লক্ষ্ণীন্দরের বিদ্যা আরম্ভিল |
নানা বিদ্যায় লক্ষ্মীন্দর রত্নতুল্য হইল ||
সূচরিত্র বুদ্ধিমান মধুমাখা বাণী |
সর্ব শাস্ত্রেতে বিদ্বান হইল তখনি ||
রাজার তনয় লখাই সিংহাসনে বসে |
সূক্ষ্ম বিচার করে সে মধুর আবেশে ||
এইমতে রহিল হেথা বাল লক্ষ্মীন্দর |
হেথায় দেশেতে চলে চান্দ সদাগর ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                   ১৯
কভু নাহি জানে চান্দ মাগিবার ভাও |
ঘরে ঘরে বেড়াইয়া বলে বাপ মাও ||
কলার বাকল পায় অনেক যতনে |
তাই দেখি সদাগর হরষিত মনে ||
উদর ভরিয়া আজি করিব ভোজন |
এতদিনে প্রসন্ন হইল দেব ত্রিলোচন ||
এতেক ভাবিয়া নামে জলের ভিতর |
স্নান করি সদাগর পূজিল শঙ্কর ||
নেতা বলে পদ্মাবতী চান্দর জাতি যায় |
কলার বাকল হরি আনহ হেথায় ||
নেতার বোলে পদ্মা না করিল আন |
গাভীরূপে কলার বাকল হরিল তখন ||
গাভী দেখিয়া চান্দ করে হায় হায় |
লঘুজাতি কানি আমার বাকল খেয়ে যায় ||
মোর হাতে আছে বড় হেতালের গোড়া |
চোরা গাভীর লাগ পাইলে করিতাম গুড়া গুড়া ||
এইমতে চান্দে কান্দে দুঃখ পাইয়া অতি |
বিজয় গুপ্তেরে রাখ দেবী পদ্মাবতী ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
আপন পরিচয় দেন চান্দ সদাগর ||
চম্পক নগরে বাস নাম চন্দ্রধর |
চৌদ্দ ডিঙ্গা লইয়া গেলাম দক্ষিণ সহর ||
জলমধ্যে বিড়ম্বিল লঘুজাতি কানি |
অন্নভিক্ষা চাই আমি শুন দ্বিজমণি ||
এতেক শুনিয়া দ্বিজ করিল উত্তর |
মোর দাসী আছে বিবাহ করিয়া থাক মোর ঘর ||
এতেক বলিয়া দ্বিজ চান্দরে যায় লইয়া |
আপন পুরীর মধ্যে গেলেন চলিয়া ||
দ্বিজ বলে হের আইস ছাঁছিয়া |
তোর ভগ্নী এর ঠাঁই দেও নিয়া বিয়া ||
সেই মাগী হরিষ হইল বড় ভালা |
দুইটা স্তন যেন দুই খানা ছালা ||
কাটা কাটা মাথা আঙ্গুল দুই চারি চুল |
চান্দর সম্মুখে দাঁড়ায় যেন আচাভুয়া ভুল ||
হস্ত পাতিল যেন চান্দ সদাগর |
কতখানি তৈল আনি দিল দ্বিজবর ||
স্নান করিবারে চলে চান্দ সদাগর |
বনের আগে গিয়া সাধু উঠিয়া দিল লড়||
লড় দিয়া যায় সাধু ফিরি ফিরি চায় |
মনে মনে ভাবে চান্দ পাছে মাগী আয় ||
বিশেষিয়া ভাবে তবে চান্দ অধিকারী |
সম্মুখে দেখে এক বিচিত্র বাড়ি ||
সেই দেশের রাজা নাম চন্দ্রধর |
অন্যায় ন্যায় বুঝে পরম সুন্দর ||
আচম্বিতে চান্দ সেই পথে যায় |
মিতা মিতা বলি তারে ডাকে উচ্চরায় ||
ফিরিয়া চায় চান্দ চিনিতে না পারে |
লড়াইয়া আসিয়া তাহার গলা  ধরে ||
মিতার তরে কহে চান্দ দুঃখ লাগে বড়ি |
এইকালে বল ভাই সরস লাচারি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

২১

দক্ষিণ পাটনা দূর                       কনক নগর পুর
তথা রত্ন রহে গড়াগড়ি |
হীরা মন মাণিক্য ধন                হেলা করে সর্বজন
চট হরিদ্রায় বড় করি ||
তথায় নানা ধন পাইয়া          দেশে চলিলাম ধাইয়া
ত্বরিতে আসিলাম কালিদয় |
হেনকালে বিধি লাগে            আকাশ ঢাকিয়া মেঘে
বিবাদে লাগিল মনসায় ||
ঝাপে ঝাপে বহে বাও            আজরে না রহে নাও
ধন জন হারাইলাম সকলে |
কানি করিল বল                        ধন জন গেল তল
প্রাণ রক্ষা পাইলাম পুণ্যফলে ||
মন্ডল কহিছে মিতা             না কহিও দুঃখের কথা
এত দুঃখ সহন না যায় |
আজ নিশি অবশেষে                যাইও আপন দেশে
সানন্দে বিজয় গুপ্ত গায় ||

.                                                          ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                 ২২
কি কথা তোমারে বলিবরে মিতা |
অন্ন দিয়া প্রাণ রাখ শেষে শুনবা কথা ||
এতেক শুনিয়া মন্ডল চলিল সত্বর |
কহিল সকল কথা গৃহিণী গোচর ||
গৃহিণীরে ডাকিয়া কহিল সব কথা |
রন্ধন করহ শীঘ্র খাবে চান্দ মিতা ||
এতেক শুনিয়া যায় করিতে রন্ধন |
একে একে রান্ধিলেন পঞ্চাশ ব্যঞ্জন ||
দেবার্চনা করি সাধুর আনন্দিত মন |
বাড়ির ভিতরে যায় করিতে ভোজন ||
সুবর্ণের থালে রাণী অন্ন লইয়া |
চান্দর সম্মুখে দিল হাত বাড়াইয়া ||
পদ্মাবতী বলে নেতা ঝাটে তথা যাও |
মায়ারূপ ধরি গিয়া সকল অন্ন খাও ||
মায়া করি নেতা বসিলেন সদাগরে পাশে |
চান্দ বলে খাব আমি মনের হরিষে ||
অন্ন পাইয়া পঞ্চগ্রাস করে সদাগর |
মায়ারূপে সেই অন্ন হরে বিষহর ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন কৌতুক হইল বড়ি |
এই কালে বল ভাই সরস লাচারি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
এত রাজ্যের মধ্যে করিতে নারিলি চুরি |
কোন সাহসে আইলি তুই সোনেকার পুরী ||
কাঙ্গালিয়া বেটা তুই আজি কোন ফলে |
লক্ষ্মীন্দর দেখিলে তোমারে দিবে শালে ||
দাসীর হাতে চান্দ হইল জর্জর |
প্রাণ রাখ রাখ বলি ডাকে উচ্চৈঃস্বর ||
লাজে হেট মাথা চান্দ দাসী পাড়ে গালি |
অন্তরে থাকিয়া পদ্মা হাসে খলখলি ||
দুই গাছি কলার ছোটা করিয়া যোড়া |
দুই হাতে দড়ি দিয়া বান্ধে পিঠমোড়া ||
ছোটার বন্ধনে তার আঁখির জল পড়ে |
পুষ্পবনে চোর থুইয়া ধাই গেল ঘরে ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন দুঃখ হইল বড়ি |
সোনাইর বিলাপে বল করুণা লাচারি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                 ২৪
মাসী বলে ঠাকুরাণী এদিক দাও মন |
চোর পাইলাম আমি লখাইর পুষ্পবন ||
অবোধ পাগল এক বড়ই বর্বর |
সেই বলে মোর নাম চান্দ সদাগর ||
আমারে দেখিয়া চোর লড় দিল ভয় |
ধরিয়া মারিলাম তারে যত মনে লয় ||
আচম্বিতে সদাগর ঠাকুরের নাম লয় |
তাহা দেখিয়া মোর প্রাণ কাঁপে ভয় ||
সোনা বলে ধাই তুমি নাহি বল আর |
ঝাটে করি আন চোর আমার গোচর ||
দাসীর বচনে সোনার জল পড়ে চক্ষে |
এখনি দেখিনু স্বপ্ন দৈব হেন ঠেকে ||
সোনার বচনে ধাই দিল উভা লড় |
বন্ধন সহিত নিল সোনাইর গোচর ||
না চিনিয়া সোনেকা বলিল ছুরি আন |
হাতে ধরি চোর শালার কাট দুই কান ||
মনে মনে চান্দ বানিয়া করিল বিচার |
আপনার দেশে আইলাম কান হারাইবার ||
পরিচয় হয় তখন চান্দ অধিকারী |
এই কালে বল ভাই সরস লাচারি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
এই পুত্র লক্ষ্ণীন্দর তোমার নন্দন ||
যেইকালে যাও প্রভু করিতে সফর |
পঞ্চমাস গর্ভ ছিল আমার উদর ||
সুবুদ্ধি মাসী ভাল যুক্তি দিল মোরে |
লিখন লিখিয়া দিল সবার ভিতরে ||
সেই গর্ভে পুত্র মোর দেখহ বিদিত |
পুত্র আনিয়া সোনাই দিলেন ত্বরিত ||
( বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসার বর |
জন্ম অধ্যায় পালা এখানে সোসার || )

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা


নাগরথে চড়িয়া চলিল বিষহরি |
তাড়াতাড়ি ধাইয়া গেল গঙ্গাদেবীর পুরী ||
প্রণাম করিয়া বলে তুমি আমার মাতা |
মন দিয়া শুন কহি মোর দুঃখের কথা ||
জাতি হীন চান্দ বেটা নগরের ছার |
তাহাতে হইল মোর কুলের খাঁখার ||
লুকাইয়া পূজে সোনা ভাবিয়া সঙ্কট |
বার্তা পাইয়া বাম পায় ভাঙ্গে মোর ঘট ||
ঝির অপমান তুমি দেখিবা কেমনে |
সকল নিবেদিলাম মাতা তোমার চরণে ||
মোর মনে লয় মাতা যদি তুমি আজ্ঞা দেও |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                ৫
সাধু বলে জল মধ্যে হের দেখ ধনা |
পর্বত সমান ঢেউ মাথায় ধরে ফণা ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                  ১০
পদ্মা বলে নদ নদী কিবা চাও আর |
ডুবাও চান্দর ডিঙ্গা সমুদ্র মাঝার ||
অন্তরীক্ষে দেবগণ রথে চড়ি দেখে |
সমুদ্রে চান্দর ডিঙ্গা ডুবে একে একে ||
প্রথমে ডুবিল ডিঙ্গা আজেলা কাজেলা |
বাঁকে বাঁকে থাকি খায় শতেক ছাগলা ||
তার পাশে ডুবে ডিঙ্গা নামে শঙ্খতলি |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                ২০
বিষাদ ভাবিয়া চলে নগর ভিতর |
কেহ বলে কেবা তুমি কি নাম তোমার ||
কেহ বলে এই বেটা হয় দুষ্ট চোর |
কেহ বলে এই বেটা সহজ বর্বর ||
উলটি পালটি বেড়ায় নগর মাঝার |
নগর প্রধান হয় সাধু চন্দ্রধর ||
হীরাবতী নামে রাণী আছে তার |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

             ২৩
প্রথমে দিলাম ভাত কাসি |
তারে কৈল পঞ্চ গ্রাসি ||
হেন করি ভাত গ্রাস করে |
নাকের বাঁশী চড় চড় করে ||
ননদিনী তোর ভাইয়ারে ডাক দিয়া আন সানে |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা

                 ২৫
চান্দরে দেখিয়া সোনার চক্ষের জল পড়ে |
আহা প্রাণনাথ বলি পদতলে পড়ে ||
হেনমতে নারীগণ আছে গন্ডগোলে |
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি
কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে
জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো।
srimilansengupta@yahoo.co.in