কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
পূর্বদেশে আছে কন্যা করুণাময়ী নাম | সেই কন্যা দিয়া মম নাহি কোন কাম || সদাগর বলে ঠাকুর মশায় শুন দিয়া মন | বিদ্যা নামে কন্যার মম নাহি প্রয়োজন || ঈশান কোণে কন্যা আছে বেহুলা তার নাম | রূপবতী গুণবতী অতি অনুপম || উজানী নগরে আছে সাহে সদাগর তার নাম | সাহে সদাগরের কন্যা সে বেহুলা তার নাম || বেহুলা জীয়াইতে পারে ছয় মাসের মরা | রূপে বিদ্যাধরি তিনি মুনি মনোহরা ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
এক শত সখী সঙ্গে মুক্তাসরে যাই ||
বেহুলার কথা শুনি সুমিত্রা কুপিত |
কোল হইতে বেহুলারে ফেলিল ভুমিত ||
পরপুরুষ চাহিতে তোমার এই ছলা |
শুনিয়া লজ্জিতা বেহুলা কথা না বলিলা ||
এই সব কথা যদি কহিল বিস্তর |
কোপ মনে গেলা নিজ পুরীর ভিতর ||
বার্তা পেয়ে আসিলেক সাহে সদাগর |
বেহুলার ক্রন্দনেতে হইল ফাঁফর ||
বেহুলা বেহুলা বলি ডাকে উচ্চরায় |
কোন হেতু কান্না তব না বুঝি নিশ্চয় ||
আদরেতে বেহুলাকে সাহে লয় কোলে |
মুছিল চক্ষুর জল নেতের আঁচলে ||
বেহুলা বলেন পিতা শুন দিয়া মন |
এইখানে আমি দেখেছি স্বপন ||
মুক্তাসরে স্নানে যাব সঙ্গে সখীগণ |
তাহার কারণে আমি করেছি ক্রন্দন ||
সাহে বলে বেহুলাগো শুনহ বচন |
মুক্তাসরে স্নানে তুমি যাও এইক্ষণ ||
রাজার কুমারী তুমি নহে ছোটজনা |
সরোবরে স্নান করিবে তাহে নাহি মানা ||
এইক্ষণে যাও তুমি বিলম্ব নাহি আর |
বাপের বচনে বেহুলার হরিষ অন্তর ||
সাহে বলে মুক্তাসরে জঞ্জাল বিস্তর |
স্নান সমর্পিয়া ঘরে আসিও সত্বর ||
নানা বেশ করি পরে রত্ন অলঙ্কার |
সখীগণ লয়ে চলে মুক্ত সরোবর ||
মুক্তাসরে স্নানে যায় কৌতুক হইল বড়ি |
সংবাদ পড়িল ভাই বলরে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
২
শিবের নন্দিনী বিঘ্ন বিনাশিনী আমার আপদ হর | চল বিষহরি নাগ সঙ্গে করি আসিয়া আসনে উর || তব গুণ-কথা সুর মন গাঁথা গাইতে বাসনা মনে | শুন মনসে মনের হরিষে রাখিও তব চরণে || ব্রহ্মা আদি দেবগণ না বুঝে তোমার মন দেবগণ নাহি পায় ধ্যানে | তোমার মহিমা যত তাহা বা কহিব কত তুমি দয়াময়ী মুক্তি দানে || তোমার চরণে গতি রহুক আমার মতি ছায়া দেও অভয় চরণে | তুমি দেবী মহামায়া দেও মোরে পদ ছায়া মুক্ত কর এ ভব বন্ধনে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
অন্য ঘাটে যাও তুমি স্নান করিবারে ||
কল্য করিয়াছি আমি তিথি একাদশী |
চলিতে শকতি নাই আছি উপবাসী ||
এত রঙ্গে কথা কেন কেন এত ঠাট |
স্নান কর গিয়া তুমি পশ্চিমের ঘাট ||
টাট মাজ বাটি মাজ ব্রাহ্মণের যতি |
ঘাট ছাড়ি দাও মোরে পূজি পদ্মাবতী ||
একেত নাগরী বেহুলা আছে তাহে বল |
লাফ দিয়া পড়িলেক সরোবরের জল ||
চরণ গোথালি গেল ব্রাহ্মণীর গায় |
শাপ দিয়া ব্রাহ্মণী বলিল উচ্চরায় ||
শুদ্ধ ভাবে হই যদি ব্রাহ্মণের যতি |
বিবাহের রাত্রে খাইও নিজ পতি ||
ব্রহ্ম শাপ যতি তবে দিল দীর্ঘ রায়ে |
বিজয় গুপ্ত স্তুতি করে মনসার পায় ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
এতেক বলিয়া দোহে ডুব দিল জলে |
কত দূরে গিয়া দুহে উঠিল সত্বরে ||
শঙ্খ সিন্দুর পায় বেহুলা সুন্দরী |
যতির সামগ্রী পায় দেবী বিষহরি ||
ভিজা বস্ত্র এড়িয়া নির্মল বস্ত্র পরি |
দূরে থাকিয়া দেখে চান্দ অধিকারী ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
লখাইর সঙ্গে কর গিয়া শুভ প্রয়োজন ||
সাহে বলে কন্যা হইয়াছে বিয়া দিতে চাই |
যোগ্যবর পাইলে কন্যা দিব তার ঠাঁই ||
সবে বলে যোগ্যবর বাল লক্ষ্মীন্দর |
এই বরে কন্যা দেও সাহে সদাগর ||
( এত শুনি সম্মত হইলা সদাগর |
সাহে বলে গণক আনি দিন ধার্য কর ||
মুকাই গণক বলি চান্দো ডাকে উচ্চ স্বরে |
পাঁজি হাতে করি আইল চান্দের গোচরে ||
পাঁজি বিচারিয়া তবে নাহি দেখে ভাল |
বিবাহের দিনে দেখে সর্পের জঞ্জাল ||
তাহা দেখি ক্রুদ্ধ হইল সদাগর |
চোপার চাপড় মারে গালের উপর ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন কৌতুক হইল বড়ি |
এই কালে বল গাইন সরস লাচারি || )
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
৮
প্রথমে পাতিলা তুমি খড়ি |
মনসা কাটিল গুয়াবাড়ি ||
দ্বিতীয় গণনা পরিপাটি |
মহাজ্ঞান হরিলেক নটি ||
তৃতীয়ে গণনা কৈলা খড়ি |
মরিল ওঝা শঙ্কু গাড়র ||
চতুর্থে গণনা কৈলা সার |
ছয় পুত্র মরিল আমার ||
পঞ্চমে গণনা কৈলা ভাও |
সমুদ্রে ডুবিল চৌদ্দ নাও ||
ষষ্ঠে গণনা কৈলা খড়ি |
তাহে বল নাগের হুড়াহুড়ি ||
এই তোমার গণনা সপ্তম |
এহাতে রুষিল তোরে যম ||
মূর্খ হইয়া আইস সাধুর মেলে |
এবার মরিবি দেশে গেলে ||
কি করিব তোমার মিছা বাদে |
সবংশে গাড়িব এক খাদে ||
বিজয় গুপ্তের সরস বচন |
মুকাই গণক করিল বন্ধন ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
৯
( এতেক দেখিয়া পদ্মার চিন্তা হইল মন
নেতা নেতা বলি পদ্মা ডাকিল তখন )
পদ্মা বলে শোন নেতা রজকের ঝি
বিহা না হইল লখাই মোর হবে কি
গণকে বলে লগ্ন নাহি ছয় মাস
বিহা না হইলে লখাইর কার্য হয় নাশ
এত শুনিয়া নেতা কহে পদ্মার তরে
নারদকে পাঠাইয়া দাও লগ্ন করিবারে
নেতার বচনে পদ্মা স্থির করে মন
স্মরণ করা মাত্র আইল তপোধন
পদ্মা বলে শুন মুনি আমার বচন
লখাই বেহুলার বিয়া না হইল লগ্নের কারণ
আমার বচনে তুমি চলহ সত্বর
বিবাদের দিন কর গিয়া চান্দের গোচর
পদ্মার বচনে চলিল মুনিবর
এই কালে বল ভাই লাচারি সুন্দর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১০
চলিল নারদ মুনি পদ্মার বচন শুনি সত্বরে উজানী নগরে | ভাঙ্গা ছাতি দিয়ে মাথে পুরাতন পাঁজি হাতে বচনে নরের প্রাণ হরে || গণকের বেশ যত স্বরূপে ধরিল তত ত্রিদন্ডী ধরিল গুণ | গণকের বেশে চলে শুন শুন বাক্যবলে উত্তরিল সাহের ভবন || উচ্চৈঃস্বরে পড়ে পাঁজি দ্বদশী তিথি আজি নক্ষত্র হয়ত অশ্বিনী | ছয়দন্ড আয়ুষ্মানযোগ তারপর সৌভাগ্যযোগ দ্বাদশ দন্ডের পর ত্রয়োদশী জানি || গণকে যত কয় চান্দ শুনিতে পায় পাঁজি শুনি হইল হরষিত | বিজয় গুপ্ত সার হরিষ হইল সদাগর গণক আসিল বিদিত ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
ততক্ষণে যায় গণক বিদায় হইয়া ||
সম্মান পাইয়া গণক বড় তুষ্ট হইল |
বিদায় মাগিয়া গণক তখনই চলিল ||
( কতদূর গিয়া মুনির হইল স্মরণ |
পিরিয়া চান্দের আগে চলি তখন ||
চান্দের সাক্ষাতে তব করে নিবেদন |
মুকুন্দেরে পাইলে দেশে করিল গমন ||
এতেক শুনিয়া সাধু না করিল আন |
মুকুন্দেরে আনি দিন গণক বিদ্যমান ||
মুকুন্দেরে ছাড়ান করিয়া ভাল মতে |
মাণিক অঙ্গুরি দিল মুকুন্দের হাতে ||
বিদায় হইয়া মুনি নিজঘরে যায় |
মনসার চরণে বৈদ্য বিজয় গুপ্ত গায় || )
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
বণিক সমাজে আমি রাখিব অখ্যাতি ||
সাহে বলে কিবা কন্যা হইল মোর ঘরে |
ডোলায় ভরিয়া কন্যা ডুবাব সাগরে ||
বিজয় গুপ্ত বলে সুমিত্রা না কর ক্রন্দন |
বেহুলা করিবে লোহার কলাই রন্ধন ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
সোমাই কে দিল সাহে বহু অলঙ্কার |
পাইক গণেরে দিল বহু ব্যবহার ||
দুই বেহাই কোলাকুলি করি কুতূহলে |
মেলানি করিয়া সাধু নিজঘরে চলে ||
দোলায় চড়িয়া সাধু চলিল ত্বরিত |
চম্পক নগরে গিয়া মিলিল আচম্বিত ||
পুরীর ভিতর চান্দ করিল গমন |
সোমাই প্রভৃতি গেলা সোনাইর সদন ||
চান্দরে দেখিয়া সোনাই আসন তেজিল |
বেউলার প্রশংসা সাধু করতে লাগিল ||
চান্দ বলে সোনেকা শুনহ বচন |
কল্য করাব বিয়া লখাই নন্দন ||
বিজয় গুপ্তে বলে গাইন কৌতুক হইয়া বড়ি |
সংবাদ পড়িল ভাই বলরে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১৪
উজানী নগরে বাস সাহ নামে সদাগর তার কন্যা বেহুলা সুন্দরী | রূপে বিদ্যাধরী কিবা যতিরে বলিল যেবা শুনিলাম সকল সাক্ষাতে || মরা বাঁচাইতে পারে ডিঙ্গা ডুবিলে সাগরে অনায়াসে পারে সে তুলিতে | শুনিয়া বধূর গুণ সোনা আনন্দিত মন আনন্দে জিজ্ঞাসে ঘনে ঘন | জয় দেয় উচ্চরায় আনন্দে মঙ্গল গায় ভক্ত বিজয় গুপ্তের বচন ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১৫
সোনাই গ নিকটে আসিয়া কথা শুন |
কত কহিব বিয়া সুন্দর লখাই ||
বেউলা আসিছিলি জল ভরিতে |
দেখিলাম তাহারে সাক্ষাতে ||
বেউলা আমার পরম সুন্দরী |
সাক্ষাতে স্বর্গ বিদ্যাধরী ||
মরা সউল দিলাম বেউলার হাতে |
তাহা বেউলায়ে জিয়ায় সাক্ষাতে ||
বেউলায়ে মরিলে জিয়াইতে পারে মড়া |
ডুবিলে তুলিতে পারে ভরা ||
যতিরে বলিল যত ঠানে |
তাহা মুই শুনিলাম কানে ||
বেহুলা বধূ ডুবে ডুবে যায় |
শঙ্খ সিন্ধুর জলে পায় ||
বেউলার গুণ দেখহ সাক্ষাত |
লোহার কলই হইয়াছে ভাত ||
দেখিয়া বধূর গুণ কলা |
শুনিয়া আনন্দিত হইলা ||
জয় জয় দিল উচ্চরায় |
সানন্দে বিজয় গুপ্তে গায় ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১৬
লক্ষ্ণীন্দরের বিয়া আনন্দিত হিয়া |
বণিক সমাজে আনে গুয়া পান দিয়া ||
যোড় হস্তে জ্ঞাতি গণে বলিল বচন |
বিবাহ করাব আমি লখাই নন্দন ||
চম্পক নগরের লোক সবে আনন্দিত |
উচ্চৈঃস্বরে গান বাদ্য অতি সুললিত ||
দেবগণ পূজা করে যথাশাস্ত্র নীত |
আর যত কার্য করে মঙ্গল বিহিত ||
রাজ্যের ঠাকুর চান্দ ধনে অন্ত নাই |
নানা বিধ বিয়ার সজ্জা করে ঠাঁই ঠাঁই ||
হেনকালে বেলা হইল অবশেষ |
জয় জয় দিয়া করে লখাইর অধিবাস ||
পুত্র কোলে করি চান্দ বসিলা আসনে |
উচ্চৈঃস্বরে বেদধ্বনি করয়ে ব্রাহ্মণে ||
ঘট পাতে ব্রাহ্মণে জয় জয় দিয়া |
প্রথমে অধিবাস করে তৈল গন্ধ দিয়া ||
চতুর্দিকে ব্রাহ্মণে করে কোলাহল |
তবে ছোঁয়ায় নিয়া ঘট মঙ্গল ||
ব্রাহ্মণগণে বাক্য পড়ে মনে কুতূহলে |
স্বর্ণঘট ছোয়াইল লখাইল কপালে ||
অধিবাস করাইল তবে বড় হরষিত |
আপনার গৃহেতে গেল কুলপুরোহিত ||
রজনী প্রভাত হইল অরূণ উদয় |
সানন্দ হইল বড় সাধুর হৃদয় ||
ফুল্লশ্রী গ্রামে বিজয় গুপ্তের নিবাস |
পয়ার প্রবন্ধে বলি লখাইর অধিবাস ||
প্রভাতে হইল যদি সূর্যের উদয় |
সবাকারে সদাগর বলিছে বিনয় ||
চারিদিকে বাদ্য বাজে শুনি সুললিত |
এইকালে বল ভাই লাচারির গীত ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১৭
স্নান করি গঙ্গাজলে বিচিত্র মন্ডপ তলে বৃদ্ধি করয়ে সদাগর | উচ্চারিয়া বলে হরি স্বস্তি বচন পড়ি ধান্য দূর্বা লয়ে হস্তোপর || আনিয়া বটের পাত সিন্দুর গুলিল তাত ষোড়শ মাতৃকা পূজা করে | গোমাই লিপিয়া ছিটা ধান্য দূর্বা সিন্দুরের ফোটা প্রথমে পূজিল বসুন্ধরে || নাছিয়া খোলের খালি আতপ তন্ডুল ঢালি পাত্রে পাত্রে রাখিল সকল | সারি দিয়া গুয়া পান কদলী কলা মর্তমান প্রতি সজ্জায় মিষ্ট নারিকেল || অষ্টপাত্রে অষ্টধুতি দক্ষিণা দিল যথাবিধি বুঝিয়া বুঝিয়া পাত্রে করে দান | চান্দ করে নান্দীমুখ পিতৃলোকের বাড়ে সুখ বুদ্ধি করে চান্দ মতিমান্ || রজত কাঞ্চন পান ভান্ডার ভাঙ্গিয়া আন আজু মোর সফল জীবন | পদ্মাবতী দরশনে সানন্দে বিজয় ভণে যাহার সদয় নারায়ণ ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
চান্দ বলে ভাই সব চল ঝাট করি |
সকলে লইয়া যাইব উজানী নগরী ||
চান্দর বচনে সবের আনন্দিত মতি |
লখাইর সঙ্গে যাইতে চলে শীঘ্রগতি ||
চান্দ বলে আরে পুত্র প্রাণের লক্ষ্ণীন্দর |
যাত্রা করি চল ঝাটে উজানী নগর ||
নানা রত্ন অলঙ্কার দিতে লাগে গায় |
যাত্রা করি লক্ষ্ণীন্দর উজানীতে যায় ||
বিয়ার বেশে লক্ষ্ণীন্দর উজানী করে ধাড়ি |
সংবাদ পড়িল ভাই বলরে লাচারি ||
স্বভাবে সুন্দর বড় চান্দর নন্দন |
বিবাহের বেশে সাজে সাক্ষাৎ মদন ||
বিবাহের মঙ্গল যত করিলেক মায় |
বিজয় গুপ্ত স্তুতি করে মনসার পায় ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১ যখন গেলা তুমি দক্ষিণ সহর | পঞ্চমাসের গর্ভ ছিল আমার উদর || গর্ভ লক্ষণ পত্র দিলেক আনিয়া | পত্র দেখিয়া কেন বিস্ময় কর হিয়া || সুস্থির হইয়া বস বাটার তাম্বুল খাও | শুভক্ষণ করিয়া পুত্রের মুখ চাও || সোনার বচনে সাধু হরষিত মন | লক্ষ্মীন্দ্রকে ধরি সাধু দিল আলিঙ্গন || লক্ষ লক্ষ চুম্ব দিল বদন কপালে |
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
৩
হেন কালে আসিল তথা সোমাই পন্ডিত |
কহিতে লাগিল তবে চান্দর বিদিত ||
সাহে নামে সদাগর উজানিতে ঘর |
তাহার ঘরে কন্যা আছে পরম সুন্দর ||
অনেক পুরুষে করে শিবলিঙ্গ পূজা |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
৪
স্নানে চলিল বেহুলা সাহের কুমারী |
আগে পাছে সখীগণ যায় সারি সারি ||
বাপে সাজাইয়া দিল সাহে বাণিয়ার দোলা |
মুখখানি পুর্ণিমার চাঁদ দন্তগুলি ছোলা ||
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
৫
নহে যায় পা গোথালি শাপ দিয়া দেও গালি তোমার শাপেতে বল মোর হবে কি ? দেখিয়াছি যত পতি রাত্রে করে উপপতি আমার সহায় আছে মহাদেবের ঝি ||
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
৬
বেউলা বলে যতি তুমি শোন দিয়া মন |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
৭
যত পুরনারী আছে বেহুলার সঙ্গে |
পুরীমধ্যে চলে সবে নানাবিধ রঙ্গে ||
সাহের বাড়ির পরে উত্তর নগর |
তথায় পদ্মার পুরী পরম সুন্দর ||
সেই পুরী গেলা তবে বেহুলা সুন্দরী |
ভক্তিভাবে স্তব করে দেবী বিষহরি ||
( মোরে বর দেও মাগো দেবী পদ্মাবতী |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১১
চান্দ বলে অন্য গণক আনহ সত্বর |
মুকাই না পারিবেক লগ্ন করিবার ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১২
বাহিরে বসিল গিয়া সাধুর নন্দন |
বিদায় মাগহ এখন সাধু মহাজন ||
সাহে বলে তোমার সঙ্গে গুপ্ত প্রয়োজন |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১৩
আপন মন্দিরে আছে বেহুলা সুন্দরী |
শিয়রে বসিয়া স্বপ্ন দেখান বিষহরি ||
গা তোল গা তোল বেহুলা কত নিদ্রা যাও |
শিয়রে মনসা দেবী চক্ষু মেলি চাও ||
ভোজন করিবে হেথা চান্দ সদাগর |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১৮
রাজ্যের ঠাকুর চান্দ ধনে অন্ত নাই |
সবাকার সন্নিধান করে এক ঠাঁই ||
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা
১৯
সাজিলেক নৃপবর সুন্দর লক্ষ্ণীন্দর বিয়ারবেশে উজানীতে যায় |
|
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো। srimilansengupta@yahoo.co.in
|
|
|