কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১  
মনসার জন্ম পালা

গৌরী কোন্দল পালা     

মনসা বিবাহ পালা     

অষ্ট নাগের জন্ম পালা   

অমৃত মথন পালা   

বনবাস পালা       

হাসন হুসন যুদ্ধ পালা     

গুয়াবাড়ি কাটা পালা       

ধন্বন্তরি বধ পালা     
১০
ছয় কুমার বধ পালা     
১১
ঝালুবাড়ির পূজা পালা  
১২
যমযুদ্ধ পালা      
১৩
যাত্রাপাটন পাটন পালা     
১৪
বস্তুবদল পালা     
১৫
ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা
১৬
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা    
১৭
লোহার বাসর ঘর নির্মাণ পালা     
১৮
লখিন্দর বিবাহ পালা       
১৯
লখিন্দর দংশন পালা   
২০
ভাসান পালা      
২১
স্বর্গারোহণ পালা     
  ১. হীরার ঘাটেতে ডিঙ্গা আইল সাতভাই   
২. সাহের কুমারী বেহুলা জানে উপদেশ   
৩. বেউলা গ কোন ঘাটে ভাসাইলা লখিন্দর   
৪. সুন্দর শরীর তোমার গেল ছারেখারে   
৫. চম্পক নগরে গেলা কিরূপ দেখিয়া আইলা   
৬. বেহুলা বলে প্রাণনাথ করি নিবেদন   
৭. লখাই বলে স্ত্রী জাতি কিবা কর্ম বুঝে   
৮. হেন কালে লখাই চলিল নিজ দেশে   
৯. ঝাটে চালাও নাও দেখি গিয়া বাপ মাও   
১০. নায়কেরে বর দেয় বিষহরি মায়   
১১. দেখি লখাই সাত ভাই কৌতুকে সোনেকা চাই   
১২. আনন্দিত চিত্তে চান্দ ডাকে ঘনে ঘন    
১৩ পদ্মার সহিত বাদ করি বারে বার   
১৪. মন্ডপ তোলায় চান্দ হরষিত মনে   
১৫. পূজা পাইয়া তুষ্ট মনসা সুন্দরী   
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা


হীরার ঘাটেতে ডিঙ্গা আইল সাতভাই |
চম্পকনগরে অদ্য দেখিবারে পাই ||
বেহুলা বলে প্রাণনাথ করি নিবেদন |
আজ্ঞা কর দেখিয়া আসি শ্বশুর চরণ ||
কিরূপে আছে রাজ্য চম্পকনগর |
কিরূপে আছেন মোর শ্বশুর সদাগর ||
রাত্রিদিন শাশুড়ী কান্দিয়া বিকল |
তোমার আজ্ঞা পাইলে জানিয়া আসি সকল ||
বেহুলার বচনে লক্ষ্মীন্দর হাসে |
একেশ্বরী যাইতে প্রিয়া যুক্তি নাহি আসে ||
পুনরপি বলে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের পাশ |
আমারে রক্ষা কে করেছিল এই ছয় মাস ||
আজ্ঞা করিল তবে বীর লক্ষ্মীন্দর |
চলিল সুন্দরী বেহুলা চম্পক নগর ||

.                                   ****************                         
সূচি...    


মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                   ২
সাহের কুমারী বেহুলা জানে উপদেশ |
কপটে ধরিল বেহুলা  ডোমনীর বেশ ||
মায়া ছন্দে ডোমনী বেশে বান্ধিলেক কেশ |
ঝাঁপি সাজইল যত ডোমনীর বেশ ||
আকৃতি প্রকৃতি যেন ডোমনীর বেশ |
চম্পক নগরে বেহুলা করিল প্রবেশ ||
ডোমনীর কথা শুনিয়া সোনেকা রাণী |
দ্বারী পাঠাইয়া তবে আনিল ডোমনী ||
ডোমনীর মুখপানে করে নিরীক্ষণ |
বেহুলার আকৃতি রাণী দেখে ততক্ষণ ||
সোনেকাj সাক্ষাৎ রহিল যোড় করি কর |
সোনেকা বলিল ডোমনী কোথায় তোর ঘর ||
সর্বাঙ্গ তিতিল সোনার নয়নের জলে |
বেহুলা বেহুলা বলি ডোমনী লইল কোলে ||
বুকে হাত দিয়া বলে মোর হইল কি |
ডোমনী নহ তুমি সাহে বানিয়ার ঝি ||
সোনেকা বলে বেহুলা কহ মোরে সাচে |
তোর দোষ নাহি কিছু দৈবে সে আছে ||
দশবার বলিলাম না পাতিলা চিত |
গুরুর বোল লঙ্ঘিলা হইল বিপরীত ||
দূরে যদি গেলা ভাসিয়া মাজুষে |
কোন নগরে লাগ পাইল টেটন পুরুষে ||
কোন ঘাটে ভাসাইলা মোর লক্ষ্মীন্দর |
সকল এড়িয়া শেষে গেলা ডোমের ঘর ||
মিছা না কহিও বধূ কহিও নিশ্চয় |
মনসার চরণে বিজয় গুপ্তের বিনয় ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
মনসামঙ্গল কাব্যের সূচি
*

.                                                           ****************                                                সূচি...    



মিলনসাগর
*
আথেব্যথে গেল যথা লক্ষ্মীন্দরের নাও ||
বেহুলার বিলম্বে লখাই চিন্তে মনে মন |
বাপের রাজ্যে গেল বেহুলা কেন এতক্ষণ ||
একদৃষ্টে বেহুলার পথ লখাই নেহালে |
হাসিতে হাসিতে বেহুলা গেল হেনকালে ||
বেহুলারে দেখিয়া লখাইর রোমাঞ্চিত কায় |
প্রণাম করিয়া বেহুলা উঠে সেই নায় ||
লখাইর পায়ের ধূলি মাথায় বেহুলা লইল |
একে একে চম্পক নগরের যত কথা কহিল ||
বার্তা পাইয়া লখাইর হইল কৌতুক |
কখন দেখিব আমি মা বাবার মুখ ||
ছয় ভাই লইয়া লখাই খল খল হাসি |
উলটি পালটি লখাই বেহুলারে জিজ্ঞাসে ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা



চম্পক নগরে গেলা               কিরূপ দেখিয়া আইলা
আমায় দেখেছ বাপ মায় |
আমায় বিদায় দিয়া                পাষাণে বান্ধিয়া হিয়া
হেন মা মোর আছেন কেমন ||
আমরা যে সাত ভাই                মা বলিতে লক্ষ্য নাই
মা বুঝি মোর বেড়ায় কান্দিয়া |
আমারে ভাসায়ে জলে             পাষাণ লইয়াছে কোলে
কাঁদিয়া কাটাই সর্বকাল  |
মা জানে সন্তানের মায়া            রক্তমাসে একই কায়া
মা বুঝি মোর হইয়াছে পাগল ||

.                                                           ****************                                                
সূচি...    



মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                  ৬
বেহুলা বলে প্রাণনাথ করি নিবেদন |
দেখিয়া আসিনু শ্বশুর শাশুড়ির চরণ ||
ক্ষণে ওঠে ক্ষণে বসে ক্ষণে গড়াগড়ি য়ায় |
লখাই লখাই বলি মায় কান্দিয়া বেড়ায় ||
বুকে হানিয়া কর বলে কোথা লক্ষ্মীন্দর |
লখাই লখাই বলি সদা করে হাহাকার ||
তোমার যত আভরণ সম্মুখে রাখিয়া  |
নিরবধি কান্দে রাণী লখাই বলিয়া ||
অন্ন পানি ত্যাগী রাণী লখাই বলি কান্দে |
মলিন হয়েছে অঙ্গ কেশ নাহি বান্ধে ||
আর যত লোক আছে চম্পক নগরে |
আনন্দে আছয়ে সবে প্রতি ঘরে ঘরে ||
আমারে ছাড়িয়া কোথা গেলিরে লখাই |
সকল ঘরে সুখ আছে আমার ঘরে নাই ||
শুনিয়া মায়ের দুঃখ করে হাহাকার |
কান্দিয়া আকুল লখাই ভাঙ্গে পাটোয়ার ||
কতক্ষণে মাতৃপদ দেখিব নয়নে |
এই বলিয়া ধারা বহে যুগল নয়নে ||
লখাই বলে বেহুলা কি চিত্ত উত্তাপ |
স্বরূপে নি দেখিলা আমার মা বাপ ||
বেহুলা বলে প্রাণনাথ কেন হেন বলি |
তোমা না দেখিয়া লোক শোকে ব্যকুলি ||
শোকাকুল সোনেকা কি কহিব আর |
দেখিলাম শ্বশুরের আস্তিচর্ম সার ||
তোমার বাপ দেখিলাম পাকা গোপ দাড়ি |
এবে বাম কান্ধে আছে হেতালের বাড়ি ||
আমারে দেখিয়া সে বলে মার মার |
সোমাই পন্ডিত লাগিয়া পাইলাম নিস্তার ||
ধাই চেড়ি দেখিয়া পাছে হইল শোক |
তোমার তরে কান্দে যত নগরের লোক ||
দেশে দেশে চাহিলাম জনে জনে সকল |
পরিচয় না দিলাম সবার কুশল ||
দেশের বার্তা পাইয়া কৌতুক সর্বজনা |
ডিঙ্গার পাইক গীত গায় কৌতুকে নাচে ধনা ||
বৈদ্য বিজয় গুপ্তের সরস রচিত |
বেহুলার প্রশংসা করে রোঙ্গাই পন্ডিত ||
দুই নাকে হাত দিয়া হাসে সাত ভাই |
এক দৃষ্টে বেহুলার মুখ নেহালে লখাই ||
সুখে দুঃখে বেহুলার মন অধিক উজ্জ্বল |
মনে মনে লক্ষ্মীন্দর চিন্তিয়া বিকল ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
সাধু সাধু বেহুলারে বলে সর্বজনা |
আনন্দিত হইল লখাইর ভাই ছয়জন |
বেহুলার সর্বাঙ্গে দিল রত্ন আভরণ ||
সকল ডিঙ্গার লোক আনন্দিত হইয়া |
লখাই বেহুলারে আবার করাইল বিয়া ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
মধ্যগাঙ্গে ভাসিয়া আইসে জিঙ্গা চৌদ্দখান ||
সমুদ্রে হারাইয়াছ তুমি চৌদ্দ নাও |
সেই রীত সেই গড় সেই দেখি ভাও ||
বার্তা পাইয়া মহাসাধু চিন্তে মনে মন |
আমার দেশে আইলে কেন না বুঝি কারণ ||
চান্দ বলে চাটিয়াল চলহ আর বার |
কাহার নাও কেবা আইসে বার্তা জানিবার ||
চান্দর বাক্যে চাটিয়াল উভা দিল লড় |
নাও বাহি আসিল লখাই কূলেতে সত্বর ||
দেশের চাপ দেখিয়া কৌতুক সর্বজনা |
হাতে মুদ্রা লইয়া সারি গায় ধনা ||
সকল পাইকে গাহে গীত ধনা বলিয়া দে |
নায়কের বৈরী পদ্মা করুক ক্ষে ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা



ঝাটে চালাও নাও                      দেখি গিয়া বাপ মাও
দেখিয়া জুরাক পরাণ  |  
মালিমে বল ভাল                       হের দেখ ঘরের চাল
উপরে সোনার বিচিত্র বাণ ||
সারিয়া  দেশে আইলা                    সকল বান্ধব পাইলা
ধন্য ধন্য তোমা সবার হিয়া |
চিরদিনে না দেখ নারীর মুখ              অন্তরে ঘুচিবে দুখ
শীঘ্র চল  নাও বাহ বল দিয়া ||
হের বাহিয়া ধর                       হীরার ঘাটে টুঙ্গি ঘর
তাহার উপরে দেখি পাখী |
অনেক পুরুষে নুন খাই                   চিরদিনে দেখা নাই
শীঘ্র চল চান্দ গিয়া দেখি ||
বাহ বাহ কান্ডারী ডাকে            আনন্দিত ডিঙ্গার লোকে
পাইকে বাহিয়া নে ঝাটে |
বিজয় গুপ্ত আনন্দে ভজে               সরস কোমল রাজে
ডিঙ্গা নাও মধ্য ঘাটে ||

.                                                           ****************                                                
সূচি...    



মিলনসাগর
*
মধুকর নায় দেখে পুত্র সাত জন ||
ঘনপাকে সাত পুত্রের খন্ডিল সন্তাপ ||
সাত ভাই দেখিল বুড়া মা আর বাপ |
দূরে থাকি ভাই করিল নমস্কার ||
আশীর্বাদ করিল চান্দ কৌতুক অপার |
বসন ঢাকিয়া  গা দুটি কর যুড়ি ||
বেহুলা নমস্কার করে শ্বশুর শ্বাশুড়ী ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

১১

দেখি লখাই সাত ভাই              কৌতুকে সোনেকা চাই
মোর আজ সফল জীবন |
বেহুলা লখাই নিয়া কাছে            আনন্দে সোনেকা নাচে
কৌতুক হইল সর্বরাজ ||
যত পুরনারী আছে                    কেহ হাসে কেহ নাচে
চৌদিকে মঙ্গল হুলাহুলি |
রাম রাম বলে রাণী                     সুললিত বাজে শুনি
নাগরথে মনসা আসিলা ||
চান্দ বলে বধূ শুন                      কি কব তোমার গুণ
তুমি মোর রাখিলা সকল |
শুভক্ষণে আসিলা ঘাটে                  তবে গা তোল ঝাটে
নায় থাকিয়া কোন ফল ||
সোনেকা বলে লক্ষ্মীন্দর                মায়ের প্রাণ রক্ষা কর
তীরে উঠ দেখি চাঁদ মুখ |
সাত পুত্রের নাম ধরি                 ডাকে সোনেকা সুন্দরী
পাশরিল যত শোক দুঃখ ||
শুনিয়া মায়ের কথা                       মনেতে পাই ব্যথা
কূলে উঠিল সাত ভাই |
একে একে সাতজনে                     বন্দিল মায়ের চরণে
নানা বাদ্য বাজে ঠাঁই ঠাঁই ||
সাতপুত্র পাইয়া কাছে                  আনন্দে সোনেকা নাচে
হৃদয়ে খন্ডিত বেদনা |
করিয়া যে নিরক্ষণ                         দিল পুত্র আলিঙ্গন
কোলে করি লইল সাতজনা ||
যত পুরনারী আছে                বেউলা লইয়া তারা নাচে
চম্পক নগরের গেল দুঃখ |
নাচে সবে বাহু তুলি                    অন্য করে কোলাকুলি
পাসরিল সব দুঃখ শোক ||
নগরেও জয় জয়                           সকল আনন্দ জয়
জয় ধ্বনি দিলেন যুবতী |
নানাবিধ রঙ্গ করে                       পুত্র লইয়া চলে ঘরে
বিজয় গুপ্তের করুণ লাচারি ||

.                                                           ****************                                                
সূচি...    



মিলনসাগর
*
উচ্চৈঃস্বরে কান্দে সোনা ভাবিয়া করুণ ||
এতেক শুনিয়া চান্দর কোপ বাড়ে |
বধূর গৌরব ছাড়ি কোপে ডাক পাড়ে ||
পুত্রবধূ গৌরবিতা তে কারণে সব |
আর জন হইলে উচিত ফল দিব ||
যে হস্তে পূজি মুই ত্রিশ দেবতা |
সেই হস্তে মুই কানিরে করিব পূজা ||
হেনকালে আকাশেতে হইল দৈববাণী |
পদ্মাবতী পূজা কর শুন সাধু মণি ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                  ১৩
পদ্মার সহিত বাদ করি বারে বার |
সেই পদ্মা করিবেন বাদের উদ্ধার ||
এতেক শুনিয়া চান্দ বিরস বদন |
চান্দরে ডাকিয়া চন্ডী বলিল তখন ||
পদ্মাবতী পূজা কর চান্দ সদাগর |
একই মূর্তি দেখ সব না ভাবিও পর ||
যেই জন দেখে বিষ্ণু সেই মহেশ্বর |
কুবের বরুণ দেখ চন্দ্র দিবাকর ||
যেই জন ভগবতী সেই বিষহরি |
পদ্মার প্রসাদে আমি ভবসিন্ধু তরী ||
দক্ষিণ হস্তে পূজি আমি ত্রিদশ কোটি দেবা |
বাম হস্তে পুষ্প দিব মার্গে দিব সেবা ||
পদ্মা দুর্গা সম দেখি নয়ন গোচর |
তবে সে পূজিব পদ্মা বলিল সত্বর ||
এক রথে পদ্মা দুর্গা অন্তরীক্ষে থাকি |
দুইজনে দেখে চান্দ একই মুরতি ||
দোহার সমান বেশ দেখিয়া তখন |
চিনিতে না পারে চান্দ পদ্মা কোনজন ||
দক্ষিণেতে দশভূজা বামে পদ্মাবতী |
কর যোড় করি চান্দ করিল মিনতি ||
এমন মুরতি আমি কভু দেখি নাই |
এতকাল মোরে কেন না বলিবে আই ||
যেই মুখে বলিয়াছি লঘুজাতি কানি |
সেই মুখে ভস্ম দেয় জগত জননী ||
পূজিতে প্রতিজ্ঞা করে চান্দ সদাগর |
হরিষ হইল বড় পদ্মার অন্তর ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                  ১৪
মন্ডপ তোলায় চান্দ হরষিত মনে |
আনিল মন্ডপ সজ্জা বিবিধ বাঁধনে ||
স্ফটিকের স্তম্ভ দিয়া খুঁটি করে সারি |
থামের উপর তুলি দিল সাইর চারি ||
ময়ূরের পুচ্ছ দিয়া ছাইল দুই চাল |
নামায় শানের ভিটি শোভে অতি ভাল ||
যোগ বুঝিয়া দুর্গা কহিল ভারতী |
পদ্মাবতী পূজা কর হইও বিভূতি ||
ভবানীর চরণ সাধু পদ্মা পানে চায় |
ভবানীর রূপে দেখা দিল দেবী মনসায় ||
চান্দ বলে পুরোহিত নহিবে অন্যথা |
কিরূপে পূজিব পদ্মা বল সেই কথা ||
ইহা শুনি পুরোহিত যোড় করি কর |
কহিব পূজার কথা শুন সদাগর ||
সুবর্ণের পিড়ি ঘট করিয়া স্থাপন |
গন্ধপুষ্প ধূপ দীপ বিবিধ বাজন ||
ছাগ মহিষ বলিদান বিবিধ রচনা |
জয় জয় হুলাহুলি বিবিধ বাজনা ||
ইহা শুনি সদাগর হইল সাবহিত |
সুবর্ণের ঘট চান্দ গড়িল ত্বরিত ||
লক্ষের পুটলি চান্দ আঁচলে বান্ধিয়া  |
বাজারে চলিল সাধু হরষিত হইয়া ||
কুমারের দোকানে কেনে ঘট আর সরা |
মালীর দোকানে কেনে নবদন্ড ঝরা ||
বানিয়া দোকানে কেনে গন্ধ আগর |
বাছিয়া বাছিয়া কেনে তেলেঙ্গা ছাগল ||
পিড়ির উপর পঞ্চঘট করিল স্থাপন |
ব্রাহ্মণ পড়িল স্বস্তি বচন ||
ধূপ দীপ নৈবদ্য গন্ধ চন্দন |
ছাগ মহিষ দিয়া করিল পূজন ||
ডাক দিয়া পদ্মাবতী চান্দ স্থানে কয় |
হেতাল দেখিয়া আমার প্রাণ কাঁপে ভয় ||
এত শুনি সদাগর আনন্দিত মন |
হেতাল কাটিয়া পাজাল জ্বালিল তখন ||
হেতাল কাটিয়া চান্দ করে থুব থুব |
তার মধ্যে পোড়া দিল মনসার ধূপ ||
ঘটে অধিষ্ঠান হইল দেবী পদ্মাবতী |
প্রণাম করিল চান্দ করিয়া ভকতি ||
নমস্তে আস্তিকমাতা তক্ষকের জননী |
নমস্তে দেবী জগত্কারু রমণী ||
নমস্তে বিষহরি সর্বদুঃখ নাশিনী |
নমস্তে জগতমাতা ভবভয় নাশিনী ||
নমস্তে পাতালরূপা পুষ্পবনবাসিনী |
নমস্তে অখিলরূপা রবিসুততাপিনী ||
নমোনমঃ নাগরূপা নাগবংশ রক্ষিণী |
নমোনমঃ ভগবতী হরগৌরী মোহিনী ||
নমস্তে মনসা দেবী সর্বশঙ্কানাশিনী |
নমোনমঃ জগতমাতা সর্বসিদ্ধিদায়িনী ||
তুমি রক্ষ তুমি মোক্ষ তুমি বিশ্বজননী |
তুমি জল তুমি স্থল চরাচর বন্দিনী ||
সৃষ্টি স্থিতিপ্রলয় তুমি, তুমি মূলধারিণী ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কাল পাইয়া স্বর্গে গেল চান্দ বানিয়া ||
মনসুখে রচিল কবি বিজয় গুপ্ত |
হরি হরি বল ভাই হইল সমাপ্ত ||
দম্পতিকে কর কল্যাণ কুশল |
নানাবিধ সুখ ভোগ বঞ্চিয়া চিরকাল ||
অবশেষে গাইনে বাইনে মাগিয়া লও বর |
ঘরে দিবা ধন জন গলায় মধুর স্বর ||
জয় জয় হুলাহুলি করে দেবপুরী |
মনসা আনন্দে সবে বল হরি হরি  ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    



মনসা মঙ্গল কাব্য সমাপ্ত



মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা



বেউলা গ কোন ঘাটে ভাসাইলা লখিন্দর |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                   ৪
সুন্দর শরীর তোমার গেল ছারেখারে |
ফলিলেক পূর্বে যে কহিল সদাগরে ||
হেলায় মজাইলে তুমি জাতি আপনার |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                  ৭
লখাই বলে স্ত্রী জাতি কিবা কর্ম বুঝে |
অরণ্য মধ্যে বসিয়া নানা সুখ ভুঞ্জে ||
শ্বশুর শাশুড়ি আর বাপ ভাই রাখে |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                ৮
হেন কালে লখাই চলিল নিজ দেশে |
হুড়াহুড়ি হইল তথা সোনেকার আবাসে ||
হেথায় সোনেকা দেখে চারি নিদর্শন |
ক্রমে ক্রমে তখিত করে জনে জন ||
সিদ্ধ দানেতে দেখে মেলেছে অঙ্কুরী |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                 ১০
নায়কেরে বর দেয় বিষহরি মায় |
হীরার  ঘাটে চৌদ্দ ডিঙ্গা লখাই চাপায় ||
ঘাটে লাগাইয়া পাইকে গায় সারি |
কূল পাইয়া গাবরে করে হুড়াহড়ি ||
এক ঠাঁই ডিঙ্গার লোক দেখিয়া সকল |
নগরের লোকে বলে আইল পর দল ||
পাত্র মিত্র লইয়া চান্দ যুক্তি করে সার |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

               ১৫
পূজা পাইয়া তুষ্ট মনসা সুন্দরী |
ডাক দিয়া বলে শুন চান্দ অধিকারী ||
এইক্ষণে আন গিয়া বেহুলা লক্ষ্মীন্দর |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

স্বর্গারোহণ পালা

                 ১২
আনন্দিত চিত্তে চান্দ ডাকে ঘনে ঘন |
বেহুলার বাক্য বিনে না ওঠে একজন ||
মা বাপের দুঃখ দেখি কাতর লখাই |
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি
কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে
জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো।
srimilansengupta@yahoo.co.in