কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
১ মা নাহি পদ্মাবতীর বাপের বড় দয়া | বিক্রম জানিয়া পালেন দেবী মহামায়া || আগচ্ছ মনসা দেবী হইয়া অনুমতি | সেবক শরণ লইবে করিয়া ভকতি || ফণী মণি মানিক্যের রচিয়া অলঙ্কার | উনকোটি নাগ লইয়া দিল পাটোয়ার || শিবের তনয়া দেবী জগত পূজিত | গীত অনুসারে দেবী ওলাও ভূমিত || কে তোমায় পূজিতে পারে কাহার শকতি | সেই সে পূজিতে পারে যাহার ভকতি || জনমে জনমে হই রাধা কানুর দাস | তোমার পদে ফুল দিতে মনে করি আশ || সর্ব আগে বন্দম দেব নারায়ণ | অনাদি কারণ প্রভু সৃষ্টির পালন || হংসরথ বাহনে ব্রহ্মা কমল লোচন | বৃষভ বাহনে বন্দম দেব ত্রিলোচন || সরস্বতী দেবী বন্দম বচন দেবতা | যাহার প্রসাদে গাই সরস কবিতা || জরত্কারু মুনি বন্দম করিয়া ভকতি | ভক্তি পুরঃসর বন্দম দেব গণপতি || আস্তিক নামে মুনি বন্দম পদ্মার তনয় | ব্যাস বশিষ্ঠ বন্দম সানন্দ হৃদয় || একে একে বন্দিলাম যত দেবগণ | সংক্ষেপে ন্দিলাম মাগো তেমার চরণ || আসন চাপিয়া সে হরের দুহিতা | ডাহিনে সুগন্ধা দেবী বামে বসে নেতা || বন্দনা বন্দিতে গীত হবে অনুক্ষণ | অবশেষে বন্দি পদ্মা তোমার চরণ || গাইন বন্দম বাইন বন্দম সঙ্গের পঞ্চভাই | ঘট ছাড়ি লড় যদি শিবের দোহাই || বৈদ্য বিজয় গুপ্তের মধুর ভারতী | সর্বক্ষণ রক্ষা যারে করেন পদ্মাবতী || ছাড়িলাম বন্দনা গাইন গীতে দাও মন | পদ্মাবতীর বিবাহ বলি শুন সর্বজন ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
( নানা পুষ্প ফুটে সেই বনের ভিতর |
দেখিয়া কৌতুক বড় আনন্দ অপার ||
কুলের ধনু হাতে কাম জুড়িলেক বাণ |
কটাক্ষে হরিয়া নিল জগত্কারু প্রাণ ||
কামবাণে মোহিত হইল জরত্কারু |
চক্ষু মেলি দেখে মুনি তপোন চারু ||
শৃঙ্গ দিয়া হরিণে কামড়ায় হরিণীরে |
এইমতে রহিলা মুনি তমসার তীরে ||
এ কথা শুনিয়া শিব আনন্দিত মতি |
নারদ মুনি পাঠাইয়া দিল শীঘ্রগতি ||
জরত্কারু দেখিয়া আনন্দিত মন |
অশেষ বিশেষ কথা কহিলা দুইজন ||
জরত্কারু কহে নারদ কহিতে বাসি লাজ |
না কহিলে সিদ্ধ না হইবে আপন কাজ ||
বাপের আজ্ঞা পাইয়াছি আমি বিয়া করিতে চাই |
অপরূপ কন্যা আমি কোথা গেলে পাই ||
( নারদ মুনি কথা কহে অধিক বাড়ে আশ |
এবে হইতে হবে শিবের সুখ অভিলাষ ||
পরম কারণে শিব এবে হইয়াছি সুখী |
তাঁহার ঘরে কন্যা আছে পদ্মা চন্দ্রমুখী ||
সহজে ঘটক জাতি বড়ই চতুর |
মুনিরে লইয়া নারদ আসিল দেবপুর || )
কার্তিক গনেশ নন্দী ডাকে তিনজন |
তিনজনের তরে বলে অশেষ বচন ||
তিনজনের তরে শিব করিয়া আদেশ |
চন্ডিকার গৃহে শিব করিলা প্রবেশ ||
চন্ডিকার কহিলা কথা কৌতুক হইল বড়ি |
সংবাদ পড়িল গাইন বল রে লাচারি |
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
৩
সাজিল মুনির সুত রূপে গুণে অদভুত গগন যুড়িল গন্ধবাসে | চন্দনে লেপিত তনু হাতে ফুল করে ধনু কাম যেন সাজে মধু মাসে || চৌদলে আরোহণ চলে যত মুনিগণ দ্বিজ সৃষ্টি হইল সারি সারি | তার যন্ত্রে গাহে গীত গাহে নাচে সুললিত পরম সুন্দর দিব্য নারী || চলিয়াছে মুনি যত তাহা বা কহিব কত কমন্ডুল দন্ড গোটা | দুই হাতে লইয়া কুশা এইত মুনির দশা কপালে ধরেন দীর্ঘ ফোটা || বিজয় গুপ্তের কি কয় রসিকের মনে লয়ে শিবপুরী মিলিল জামাই || দেখিয়া মুনির সাজ পরিহরি রহে লাজ দিব্যনারী আইল ঠাঁই ঠাঁই ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
৫
স্নান করিয়া জলে বিচিত্র মন্ডপ তলে বৃদ্ধিতে বসিলা নারায়ণ | উচ্চারিয়া বলে হরি স্বস্তি বচন পড়ি হাতে ধান্য দূর্বা গঙ্গাজল || আনিয়া বটের পাত সিন্দুর সুললিত তাত ষোড়শ মাতৃকা পূজা করে | গোমাই লিপিয়া ছিটা ধানদূর্বা সিন্দুরের ফোঁটা প্রণামে পূজিল বসুধরে || পাতিয়া খোলের খালি আতপ তন্ডুল ঢালি পাত্র নাছি সারি সারি ( দিল ? ) সারি দিল গুয়া পান কদলি কলা মর্তমান প্রতি সজ্জে মিষ্ট নারিকেল || অষ্ট পাত্রে অষ্ট ধুতি দক্ষিণা দিল যথারীতি বুঝিয়া পাত্রে করে দান | শিব করে নান্দীমুখ পিতৃলোকের বাড়ে সুখ বৃদ্ধি করিল নারায়ণ || রজত কাঞ্চন দান ভান্ডার ভাঙ্গিয়া আন আজু হইতে হউক সফল || পদ্মাবতী পরশনে সানন্দে বিজয় ভণে যাহারে সদয় নারায়ণ ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
৬
স্থানে স্থানে নানা বাদ্য বাজে সুললিত |
কাশীর যতেক লোক হইল আনন্দিত ||
ভাট বিপ্রগণে তুষিল ত্রিপুরারি |
বিচিত্র সাজনে আইসে সঙ্গে মুনিগণ ||
জরত্কারু দেখিয়া সবে আনন্দিত |
যেন ভিত পদ্মাবতী বর তেন ভিত ||
মঙ্গল স্নান করাইতে নারীর হুড়াহুড়ি |
এই কালে বল ভাই সরস লাচারি ||
( ললিত মধুর বাদ্য বাজে মনোহর |
বিবাহের মঙ্গল স্নান করে মুনিবর ||
সতী পুত্রবতী যত দেবতার নারী |
স্নানের সজ্জা লইয়া দাঁড়াইল সারি সারি ||
সম্মুখে প্রদীপ জ্বলে জলপূর্ণ ঘট |
আপনি চন্ডিকা আইলা মুনির নিকট ||
চারিদিকে হুলাহুলি জয় জোকার |
কনক আসনে বসে মুনির কুমার ||
পূর্ণ ঘট হাতে করি আরো দধি ধাম |
কৌতুকে নারীগণে করায় মঙ্গল স্নান ||
তিল তৈল আমলকী গিলা হরিদ্রা পিঠালী |
লিপিয়া মুনির গায় কৌতুকে জল ঢালি ||
পঞ্চনখে রজকে লিপিয়া দিল ক্ষার |
জাহ্নবীর জলে স্নান করে বার বার ||
স্নান করি মুনিবর কেশের তোলে জল |
তিতা বস্ত্র এড়ি ধুতি পরিল নির্মল ||
বিচিত্র আসনে মুনি বসিল কৌতুকে |
কনক দর্পণ নাপিত ধরিল সম্মুখে ||
আগর চন্দন চুয়া সুগন্ধি বিশেষ |
ধূপের ধোঁয়া দিয়া বাসিত করে কেশ ||
জয় জয় হুলাহুলি মঙ্গল বাদ্যগীত |
করিল ক্ষৌরকর্ম দেবের নাপিত ||
মনিবরের রূপ এখন নারীগণে চাহে |
মনসার চরণে বৈদ্য বিজয় গুপ্ত গাহে ||
মুনিরে দেখিয়া সবে হইল কুতুহল |
বসিলেন মুনি ছায়া মন্ডপের তল ||
দেবতার স্ত্রীগণ আসিল ততক্ষণ |
জরত্কারু মুনিরে দেখিবার কারণ ||
আলতা লিপিয়া কেহ দিয়াছে গায় |
এইরূপে ধাইয়া আসি মিলিল তথায় ||
হার গাঁথিতে কেহ লাগিয়াছে বিশেষ |
নারীগণে ধাইয়া আইল করিয়া সুবেশ ||
স্বামী কোলে করি কেহ বসিছে সম্মুখে |
স্বামী পরিহরি কেহ আসিল কৌতুকে ||
বিয়া দেখিতে আইল যত দেবগণ |
লাচারি প্রবন্ধে বলি শুন বিবরণ || )
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
৭
পদ্মাবতীর বিয়া হবে আনন্দিত মন |
পদ্মারে করায় বেশ যত নারীগণ ||
কহিতে না পারি পদ্মা যত করে বেশ |
ধূপের ধোঁয়া দিয়া সে বাসিত করে কেশ ||
সুবর্ণের কর্ণফুল কর্ণে আনি দিল |
নাকেতে বেশর দিল করে ঝলমল ||
গলায় হার দিল সুবর্ণের পাঁতি |
মধ্যে মধ্যে লাগাইয়াছে সুবর্ণের তথি ||
দুই হাতে তাড় দিল দেখিতে শোভন |
শঙ্খের সম্মুখে দিল সুবর্ণের কঙ্কণ ||
পায় খাড়ু দিল আঙ্গুলের পাশলি |
পরমা সুন্দরী যেন সোনার পুতলি ||
চক্ষুতে কাজল দিল যেন নীলোত্পল |
নাসিকা নির্মাণ যেন দেখিতে তিলফুল ||
মৃগ-মদ মিশাইয়া চন্দন দিল গায় |
কনক নূপুর দেবী তলিয়া দিল পায় ||
পদ্মাবতীর বিয়া হবে দেবে বলে ভাল |
লাচারি প্রবন্ধে ভাই বল এইকাল ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
৮
মঙ্গল মৃদঙ্গ বাজে আনন্দিত স্বর্গরাজ্যে কৌতুকে চলিল আয়োগণ | মঙ্গল সরা লিয়া কাঁখে চন্ডিকা চলিল আগে পট্টবস্ত্রে ঢাকিয়া শরীর || সর্বাঙ্গ ভূষিত করি যেন স্বর্গের বিদ্যাধরী আয়োগণ চলিল ধীরে ধীরে | আয়োগণ আসিল যত কেবা নাম জানে তত চৌদ্দ আয়ো আসিল ব্রাহ্মণী || দেখিয়া মুনির ঠান একদৃষ্টে করে ধ্যান ধন্য ধন্য মুনির নন্দন | কমলা বিমলা সতী শশিপ্রিয়া ভানুমতী রোহিণী রমণী হীরাবতী || সুগন্ধা সুভদ্রাবতী তিলোত্তমা সত্যবতী চন্দ্ররেখা চলে সত্যবতী || কৌশল্যা কুমারী ভামা চন্দ্ররেখা অনুপমা দুর্লভা বল্লভা রত্নমালা | সুশীলা যে চন্দ্ররেখা ভানুমতী দিল দেখা যমুনা জাহ্নবী চন্দ্রকলা || রোহিণী মলয়া মালা বিজয়া যে জয়া বিজয়া কমলা বিজয়া বিদ্যাধরী | পদ্মাবতী পরশনে সানন্দে বিজয় ভনে সারি দিয়া জ্বালিল প্রদীপ ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
৯
নারীগণ শিখাইল যতেক ঘটা ছুটা |
মুনির কপালে দিল চন্দনের ফোঁটা ||
একগুটি ফুল পদ্মা বিচিয়া ফেলিল |
আর গুটি ফুল পদ্মা চাপিয়া বসিল ||
মুনিবরে খেটে পুষ্প চম্পা নাগেশ্বর |
পদ্মাবতী খেটে পুষ্প কেয়ুর টগর||
অতি সুললিত বাদ্য শুনিলে জুড়ায় হিয়া |
সর্বনারীগণে দেখিতে আইল মুনি মনসার বিয়া ||
( আকাশ ভরিয়া দুন্দুভি বাজে, অপরূপ শুনি |
কৌতুকে রচিয়া বিবাহের বেশ বাহিরে দাঁড়াইল মুনি || )
কাঞ্চন আসনে জামাই বসিল অবশেষ হইল ভানু |
পূর্বমুখী হইয়া দেব মহেশ্বর ধরিল জামাইর জানু ||
বেদ বিধানে জামাই বরিল দেখিয়া লোকের তর্ক |
মাল্য আভরণ গন্ধ চন্দন আর দিল মধুপর্ক ||
বেদ বিধানে জামাই বরিয়া শিব রহিল এক কাছে |
পুরনারীগণ সঙ্গতি করিয়া গৌরী আসিল তাঁর কাছে ||
নানা আভরণে বেশ রচিয়া মুনি বসিল কনকপীঠে |
ছায়নি করিতে আসিল মনসা চাহে একদৃষ্টে ||
স্বামী নেহালিয়া মনসা কৌতুকে যেন মদন বিভিন্ন |
ভক্তিপুরঃসর প্রণাম করিয়া সাতার প্রদক্ষিণ ||
দেবগণ বলে মনসা সুন্দরী স্বামী পাইয়াছ ভাল |
নানাছলে পদ্মা চাওনি করে ছায়ামন্ডপের তল ||
মুনির সম্মুখে মনসা বসিল মধ্যে জলপূর্ণ ঘট |
নিজ্জল নয়নে মুখ নেহালে শেষে ঘুচায় অন্তস্পট ||
শাস্ত্রবিধানে মন্ত্র পঠিয়া বহ্মা হইল হোমী |
স্রক্ মুখে ঘৃত অনলে দিয়া চতুর্মুখে বেদধ্বনি ||
হস্ত কুশ জলে শিব বসিলা পুরোহিত হইল গুরু |
কন্যা উত্সর্গিয়া হাতে সমর্পিয়া স্বস্তি বলিল জগত্কারু ||
মুখ নেহালিয়া বাপের কৌতুক কন্যা দিল ভাল বরে |
সম্পূর্ণ আহুতি যজ্ঞেদিয়া বর বধূ নিলা ঘরে ||
জামাই চরিত্রে ভোজন করিল কৌতুক মুনির মনে |
মুখ শোধন পরে শয়ন সানন্দ বিজয় ভণে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
চন্ডী বলে মনসা বার্তা কহ সারা |
তুমি সুখে বসিছ জামাই কেন মরা ||
ঘন ঘন জিজ্ঞাসে চন্ডী করিয়া আদর |
নিঃশব্দে রহিল পদ্মা না দিল উত্তর ||
পদ্মা হইতে চন্ডী যদি না পাইল সন্ধান |
চরে বার্তা কহিল গিয়া মহাদেবের স্থান ||
বার্তা পাইয়া মহাদেব করে ছটফট |
ত্বরিত গমনে আইল পদ্মার নিকট ||
অচেতন মুনিবর না চাহে কোন ভিত |
পদ্মারে জিজ্ঞাসা করে এ কোন উচিত ||
নাহি রোগ নাহি শোক মৃত্যু কি কারণ |
আচম্বিতে হইল কিবা কহত লক্ষণ ||
জিজ্ঞাসেন মহাদেব পদ্মা না করে রাও |
সবার হিত করুক সেই পদ্মাবতী মাও ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন বুঝিও সম্বেদ |
লাচারি প্রবন্ধ বল পয়ার বিচ্ছেদ ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
১১
মোরে সত্য কহিবার উচিত | মুনি কেন ম’ল আচম্বিত || মনে মনে ভাবিয়া না পাই তোমার যোগ্য জামাই অনেক যতনে পাইলাম মুনিবর | তাহাকে আমি ভাল জানি অজর অমর মুনি তাহে কেন এত অথান্তর || তপের ফলে দেবের পূজিত হেন মুনি কেন ম’ল আচম্বিত আজ হ’ল বিয়া না হল বাসি রাতি | এ কামে পদ্মা বড়ই আখ্যাতি ||
যে মইল সেই মইল আপন কর্মদোষে | তোমার কলঙ্ক লোকে কেন ঘোষে || মনসা বলেন বাপ শুল শূলপাণি | ইহার কারণ আমি কিছু নাহি জানি | হেন কি তোমার মনে লয় | নারী লোক হইয়া আপন স্বামী খায় || আজু নিশি অবসানে হইলেক ঊষা | মোরে বলে তুই মোরে আনিয়া দে কুশা || কোপমনে মুনি মূর্ছিত হইল আপনি | আমি ত না জানি কেমনে ম’ল মুনি || হাসিয়া তবে বলেন দেব মহেশ্বরে | তোমার প্রতাপ পদ্মা কে সহিতে পারে || মুই বুঝিলাম কার্যের হেন দশা | শীঘ্র করি জিয়াইয়া দাও গো মনসা || বিধির নির্বন্ধ কভু না যায় খন্ডন | বিজয় গুপ্তের সরস বচন ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
পদ্মাবতী রাও না করে মুনির বাড়ে রাগ |
মুনি বলে পদ্মাবতী ঝাটে বর মাগ ||
আপনি বলেন মুনি শুনগো মনসা |
মন সুখে মাগ বর যেবা তোমার আশা ||
চারিদিকে হুড়াহুড়ি পদ্মা চমত্কার |
পুত্রবর পুত্রবর বলে অষ্টবার ||
পদ্মার চনে হাসিলেন মুনি মহাশয় |
হাসিয়া মুনিবর পূর্ব কথা কয় ||
তোমার দোষ নাহি কিছু আছে দৈব হেতু |
আজু হইতে তোমার গর্ভে রহিবেক ঋতু ||
অষ্টজন পুত্র হবে তোমার সম্পূর্ণ সময় |
বর দিয়া মুনি বলে শুনহ নিশ্চয় ||
নাগজাতি জন্মিবেক বলে মহাতেজা |
এই অষ্টজন হবে নাগগণের রাজা ||
নাগজাতি জন্মিবেক সহোদর অষ্ট ভাই |
তাহা হইতে হবে তোমার অনেক বড়াই ||
নাভি হস্ত দিয়া আস্তিক করিলা স্মরণ |
আস্তিক সাক্ষাৎ হইল তপের কারণ ||
বর দিয়া জরত্কারু স্থির হইয়া রহে |
পদ্মার পেটে হাত দিয়া পুনর্বার কহে ||
( আস্তিক মহামুনি পদ্মার নন্দন |
আশীর্বাদ করিয়া গেল তপোধন || )
শিবের কুমারী পদ্মা জগতের মাও |
ভক্তিভাবে পূজা কর মনসার পাও ||
সনাতন তনয় রুক্মিণী গর্ভজাত |
সেই বিজয় গুপ্তেরে রাখ জগন্নাথ ||
বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসার বর |
পদ্মাবতী বিবাহ পালা এখানে সোসর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
২
বাপ ঘরে আছে পদ্মা সতন্তরে খায় |
গৌরব করিয়া পালন করে মহামায়া ||
মা নাহি পদ্মাবতীর বাপে করে দয়া |
বিক্রম জানিয়া পালন করেন মহামায়া ||
দিনে দিন বাড়ে ভোগ ভুঞ্জিয়া বিশাল |
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
৪ জরত্কারু আসিল হেন জানিল কারণ | দেবতার নারীগণ আইল ততক্ষণ || রত্নময় আসনে বসিল শূলপাণি | হেনকালে আসিল তথায় জরত্কারু মুণি || জরত্কারু দেখিয়া শিব হরষিত মন | বিনয়ে করিয়া দিল বসিতে আসন || মহাদেব বোলে মুনি শুন দেবগতি | তমি বিবাহ কর মোর কন্যা পদ্মাবতী || জরত্কারু বোলে গোঁসাই তুমি জগতের পতি | তোমার বাক্য লঙ্ঘিতে কাহার শকতি || এত শুনি হরষিত হইলা শূলপাণি | কার্তিক গণপতি নন্দী ডাক দিয়া আনি || তিন জনের প্রতি শিব করিলা আদেশ | কল্য বিবাহ পদ্মার অদ্য অধিবাস || চন্ডিকারে বোলে শিব মনে রঙ্গ ভারি | সম্বাদ পড়িল গাইন বোলহ লাচারি ||
৪
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
১০
পদ্মাবতীর বিয়া হইল শুভ প্রয়োজন |
মুনি মনসা তবে করিল শয়ন ||
ধীরে ধীরে এখন কহিলা মুনিবর |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
মনসা বিবাহ পালা
১২
হেন মুনি মইল বড়ই অপযশ |
না জানি কিবা হয় অবশেষ ||
বাপের বচন শুনিয়া পদ্মাবতী |
স্বামীর নিকটে গেলা অতি শীঘ্রগতি ||
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো। srimilansengupta@yahoo.co.in
|
|
|