কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
শিব বলে মহামায়া বুঝিলাম আশ | স্থির হও মনসারে দিব বনবাস || মনসারে ডাকিয়া বলেন মহেশ্বর | বনবাসে দিব তোমায় চলহ সত্বর || এই কথা যখন শুনিল শিব মুখে | আকাশ ভাঙ্গিয়া যেন পড়িলেক বুকে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
ফিরিয়া না চাহে চন্ডী দারুণ হৃদয় ||
বিশেষ বুঝিলাম মাগো তোমার মনের আশ |
বিদায় লইয়া মাগো যাই বনবাস ||
শিবপুরী থাক তুমি আমি যাই বন |
তোমার নাহিক দোষ কপালের লিখন ||
জানিনু বড়ই তোমার নিষ্ঠুর শরীর |
প্রণাম করিয়া পদ্মা চলে ধীরে ধীর ||
শিব ঠাঁই শুনি তুমি দয়াময়ী প্রচুর |
অবে সে বুঝিলাম তব দয়া কত দূর ||
শুন মাতা ভগবতী পর্বত দুহিতা |
পাষাণ তোমার কায়া জানিনু সর্বদা ||
এমন অকথ্য কথা কোনজন বলে |
আপন কন্যাকে নিজে ফেলে ভূমিতলে ||
তব সম নিদারুণ আর কে বা আছে |
না জানি বিধাতা তোমায় গড়িল কোন ছাঁচে ||
যে বিধাতা তোমার করিল গঠন |
পাইলে বিষের তেজে বধিতাম জীবন ||
চলে কি না চলে পদ্মা ধীরে ফেলে পাও |
নয়নের জলে পদ্মার ভিজে সর্ব গাও ||
আপনার কর্মফল আপনি নিন্দা করি |
নাগরথে আরোহণ করিল বিষহরি ||
বৃষ পৃষ্ঠে আরোহণ করি মহাদেব |
মনসা লইয়া গেল জয়ন্তী নগর ||
গহন কানন তথা দেখিতে ভয়ঙ্কর |
তথায় রাখিল পদ্মা দেব মহেশ্বর ||
সিংহ ব্যাঘ্র চলে তথা অতি বিপরীত |
এই কালে বল ভাই লাচারির গীত ||
@@--- ---@@ * এই পয়ারার্ধটি নেই
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
২ শুন বাপ ত্রিপুরারি আমি কন্যা একেশ্বর মা ভাই কেহ মোর নাই | মোর কোন হবে গতি ছাড়ি গেল প্রাণপতি সবে বাপ মহেশ্বর গোসাঞি || বনবাসে একেশ্বর মনে বাসি বড় ডর মরণ লাগি নাহি মোর দুঃখ | সিংহ ব্যাঘ্র আদি ভয় কি জানি কখন কি হয় তখনে চাহিব কার মুখ || বুঝেছি সতাইর আশ দিবে মোরে বনবাস কে বা নাম থুইল মহামায়া | আমি কন্যা সতী ঝি তাহার করেছি কি তিলমাত্র নাহি তাহার দয়া || ধরণী লোটায় বলে রাখ মা চরণ তলে অভয় চরণে দেও ঠাঁই | বিজয় গুপ্তের বাণী শুন পদ্মা ঠাকুরাণী জয়ন্তী নগরে তোমার ঠাঁই ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
৪
কান্দে দেব মহেশ্বর তুমি কন্যা একেশ্বর কেমনে বঞ্চিবা বনবাস | সিংহ ব্যাঘ্র চরাচর প্রাণে বাসি বড় ডর কান্দে শিব ছাড়িয়া নিঃশ্বাস || মা ভাই নাহি কেহ সেই দুঃখে দহে দেহ আমি বিনা আর কেহ নাই | আমি যে গৌরীর যশ লোকে ঘোষে অপযশ তোমায় বনে পাঠাইলে সতাই || কারে কি করিব রোষ তোমার কর্মের দোষ আমি কি বা করিনু তোমারে | দিয়া তোমার বনবাসে কি মতে যাইব দেশে এখন কি হইবে আমারে || মনসা বলেন বাপ ন করিও মনস্তাপ সতাইরে না বলিও মন্দ | কারে কি কহিতে পারি স্বামী ছাড়ে নিজ নারী সকলি মোর কপাল নির্বন্ধ || কি মোর করম দোষে তৃষ্ণায় সাগর শোষে মোর কেন হইল হেন গতি | পদ্মাবতী দরশনে সানন্দে বিজয় ভণে জয়ন্তী রহিল পদ্মাবতী ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
বৃষের পৃষ্ঠে চড়ি শিব চলে শীঘ্রগতি |
কান্দিতে কান্দিতে গেল যথায় পার্বতী ||
মহাদেব বলে গৌরী শুন দিয়া মন |
তোমার মনের বাঞ্ছা হইল পূরণ ||
নিশ্চিন্তে আমার গৃহে থাক গো ভবানি |
শুনিয়া দেবতা কত মন্দ বলে জানি ||
গৌরী বলে নিবেদন শুন ত্রিলোচন |
পদ্মা দিয়া অপকীর্তি কপাল লিখন ||
আপন পুরীতে যদি আইলা ত্রিলোচন |
এথায় জয়ন্তীর কিছু শুন বিবরণ ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
বামে বসিল নেতা রজককুমারী ||
শিবের কুমারী পদ্মা সৃষ্টির পূজিত |
রত্ন-সিংহাসনে বসে নাগ চারিভিত ||
অপার মহিমা দেবী জগতের মাতা |
সন্মুখে দাঁড়ায় ধামু বাম পাশে নেতা ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
৭
কনক সিংহাসন মনসার আসন অলংকার অপূর্ব নির্মাণ | মাণিক্য রত্নহার সুবর্ণের অলঙ্কার রত্ন পট্টবস্ত্র পরিধান || গাইনেতে গাহে গীত নাচে তাল সুললিত নানা পুষ্পগন্ধ আমোদিত | দিব্য জল সরোবর রাজহংস চরাচর নানা বৃক্ষ শোভে চারিভিত || কমল কুমুদ গন্ধ জলে শোভে পুষ্পবৃন্দ প্রকাশিত নিশির আঁধার | যত পাখি জলচর শব্দ করে বহুতর মধুপান করয়ে ভ্রমর || চারি পাশে শোভে অতি যত পুষ্প নানা জাতি পারিজাত জবা কুরুবক | নাগেশ্বর বকুল নানাবিধ ফুটে ফুল সুকরবী টগর পম্পক || কেতকী অতুলখন্ড বিষ্ণুপদি নীলকন্ঠ জবাপুষ্প আছে নানা জাতি | গাঁথি আর তুরিয়াল কেশর নন্দদুলাল কৃষ্ণচূড়া শোভা করে অতি || করবী কুসুম ধাই মালতী কুসুম তাই কেতকী ধুতুরা পলাশ | আম গুয়া নারিকেল নাগরঙ্গ শ্রীফল বেল নানা ফুল শোভে চারি পাশ || ফুল ফুটে নানা জাতি দেখিতে সুন্দর অতি প্রকাশিত শরত কমল | পুষ্পের মাহাত্ম্য যত তাহা বা কহিব কত কোকিলেতে করে কোলাহল || বৃক্ষ শোভে চারিভিত দেখি সবে আনন্দিত দেখি উচ্চ পর্বত আকার | গুয়া নারিকেল তাল আম আর কাঠাল বৃক্ষ দেখি লাগে চমত্কার || শিমূল আর আমলুসি আমলকী তুলসী বট অশ্বথ্ব দেখি স্থানে স্থান | তাল আর তমাল জম্বুরা মৌফল ভাল ফল মধ্যে যাহার বাখান || কমলা নাগরঙ্গ লেবু আর ছোলঙ্গ পাতিলেবু কাগজি সুন্দর | চালিতা কাউফল ডউয়া আর যত ফল টেবা ফল আছে ত বিস্তার || জাতিফল এলাচি লবঙ্গ বনের ঔষধি সঙ্গ বৃক্ষ সংখ্যা যত আছে আর | বৃক্ষ আছে নানা জাতি লিখিতে বাহুল্য পুথি কি কহিব বাখান তাহার || মলয়া শীতল বায় কোকিলা পঞ্চম গায় ভ্রমরের শব্দ বহুতর | এ সব অপূর্ব রীত শোভা করে চারিভিত দিব্যপুরী জয়ন্তী নগর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
৮
এইরূপে রহে পদ্মা জয়ন্তী নগর |
মনোসুখে আছে দেবী হয়ে স্বতন্তর ||
জয়ন্তী নগরী পুরী দেবী মনসার |
আপন বিক্রমে পদ্মা হইল প্রচার ||
স্বর্গ হতে গেলেন গৌরী সঙ্গে করি বাদ |
বনবাসে আছে দেবী সহ পারিষদ ||
পারিষদগণ সহ আছেন বিষহরি |
বাম ভিতে আছে নেতা রজক কুমারী ||
পদ্মার চরণ বিনা আর নাহি ধর্ম |
সর্বক্ষণ যুক্তি দেন এই মাত্র কর্ম ||
দূর হয়ে রহে ধামু পদ্মার আজ্ঞায়|
যে কার্যে পাঠান পদ্মা সেই কার্যে যায় ||
যারে যেই কর্মেতে থুইলা বিষহরি |
সেই কার্যে থাকে সেই দন্ডবৎ করি ||
নাগেতে বেষ্ঠিত পদ্মা হইলেন রাজা |
দানব গন্ধর্ব দেব সবে করে পূজা ||
শিবের কুমারী হন স্বয়ং পদ্মাবতী |
ত্রিভুবনে পূজা করে করিয়া ভকতি ||
পূজা না করিয়া যেবা করে উপহাস |
পদ্মার কোপেতে হয় সবংশ বিনাশ ||
ভকতি করিয়া যেবা করয়ে পূজন |
মনোভীষ্ট সিদ্ধ তার হয় ততক্ষণ ||
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন |
কদাচ নাহিক তার অকাল মরণ ||
স্ত্রী যার ঘরে নাই স্ত্রী আসবে ঘরে |
আশা পরিপূর্ণ হয় মনসার বরে ||
মনসার ঘট যেবা করবে স্থাপন |
তিন কুল হয় তার স্বর্গেতে গমন ||
নায়কেরে বর দিয়া পূর্ণ করে আশ |
চিরকাল হয় তার স্বর্গপুরে বাস ||
শ্রীপদ্মাপুরাণ পুথি থাকে যার ঘরে |
গৃহদাহ নাহি হয় মনসার বরে ||
( জগত ঈশ্বর শিব নাহি যার মূল |
কর্ণমূলে শোভাকরে ধুতুরার ফুল ||
ললাটে বিমল শশী পরিধানে ছাল |
কন্ঠপরে কিবা শোভা করে হারের মাল ||
শিঙ্গা ডম্বুর শোভা করে দুই করে |
প্রণাম সর্বদা কর সেই মহেশ্বরে || )
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
৯
পুরীতে প্রবেশিলা মনসা কুমারী |
মোরে বুদ্ধি বোল নেতা ধোপার কুমারী ||
দেবের আলয় নহে সাগরের জল |
চতুর্দিক উপরে বোল হয় তারি সাল ||
না জানি কখনে মোরে কিবা দৈব পড়ে |
চতুর্দিক দেখিয়া আমার প্রাণ পোড়ে ||
মহামায়ার বাক্যে বাপু দিল বনবাস |
মোর প্রাণ লইতে হইল চন্ডীর প্রয়াস ||
নেতা বলে মনসা তোমার ভয় নাই |
এই অষ্টজনে তোমার বাড়িতে বড়াই ||
নাগলোকের উপরে জগত মাতা তুমি |
তোমার তরে আর কি বলিব আমি ||
অন্নপ্রাশন চূড়া পৈতা করি অষ্টজন |
মায়ের নিকটে থাকি বলিল বচন ||
নাগ লোকে বলে মা করে তোমার ভয় |
সাগর শুষিতে পারি হেন মনে লয় ||
এত শুনি পদ্মাবতী আনন্দিত মন |
আমন্ত্রণ করিল সকল নাগগণ ||
পদ্মার সংবাদে নাগ আসিল সাইয়া |
পদ্মার চরণে শরণ লইল গিয়া ||
বিজয় গুপ্তে রচে পুথি মনসার বর |
বনবাস পালা হইল এইখানে সোসর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
১ বৈদ্য বিজয় গুপ্ত বলে মধুর ভারতী | তার কন্ঠে অধিষ্ঠান দেবী পদ্মাবতী || অষ্টপুত্র বলবন্ত দেবী বিষহরি | পালন করেন শিব অনুরাগ করি || বাপের গৌরবে পদ্মার কারে নাহি ভয় |
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
৩
মহাদেব বলে পদ্মা শুনহ বচন |
এমন মায়ের লাগি কান্দ কি কারণ ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
৫
মনসার বাক্যে শিব হইল সুস্থির |
নয়নের জলে ভিজে সকল শরীর ||
দেবের নির্বন্ধ আছে কি কহিব কথা |
নেত্রের জলেতে তখন জন্মিলেক নেতা ||
কন্যা দেখিয়া শিব ভাবিতে লাগিল |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
বনবাস পালা
৬
বনবাসে আছেন দেবী নেতার সংহতি |
বিমরিশ দুইজনে করেন যুকতি ||
নেতা বলে পদ্মাবতী, চিন্তিলাম উপায় |
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো। srimilansengupta@yahoo.co.in
|
|
|