কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
১  
মনসার জন্ম পালা

গৌরী কোন্দল পালা     

মনসা বিবাহ পালা     

অষ্ট নাগের জন্ম পালা   

অমৃত মথন পালা   

বনবাস পালা       
  ১. বৈদ্য বিজয় গুপ্ত বলে মধুর ভারতী    
২. শুন বাপ ত্রিপুরারি আমি কন্যা একেশ্বর   
৩. মহাদেব বলে পদ্মা শুনহ বচন    
৪. কান্দে দেব মহেশ্বর তুমি কন্যা একেশ্বর    
৫. মনসার বাক্যে শিব হইল সুস্থির    
৬. বনবাসে আছেন দেবী নেতার সংহতি    
. কনক সিংহাসন মনসার আসন     
৮. এইরূপে রহে পদ্মা জয়ন্তী নগর    
৯. পুরীতে প্রবেশিলা মনসা কুমারী   

হাসন হুসন যুদ্ধ পালা     

গুয়াবাড়ি কাটা পালা       

ধন্বন্তরি বধ পালা     
১০
ছয় কুমার বধ পালা     
১১
ঝালুবাড়ির পূজা পালা  
১২
যমযুদ্ধ পালা      
১৩
যাত্রাপাটন পাটন পালা     
১৪
বস্তুবদল পালা     
১৫
ডিঙ্গা বুড়ান, লক্ষ্মীন্দরের জন্ম ও চান্দ লাঞ্ছনা পালা
১৬
লখিন্দরের বিবাহের জোড়ানি পালা    
১৭
লোহার বাসর ঘর নির্মাণ পালা     
১৮
লখিন্দর বিবাহ পালা       
১৯
লখিন্দর দংশন পালা   
২০
ভাসান পালা      
২১
স্বর্গারোহণ পালা     
শিব বলে মহামায়া বুঝিলাম আশ |
স্থির হও মনসারে দিব বনবাস ||
মনসারে ডাকিয়া বলেন মহেশ্বর |
বনবাসে দিব তোমায় চলহ সত্বর ||
এই কথা যখন শুনিল শিব মুখে |
আকাশ ভাঙ্গিয়া যেন পড়িলেক বুকে ||

.                                   ****************                         
সূচি...    


মিলনসাগর
ফিরিয়া না চাহে চন্ডী দারুণ হৃদয় ||
বিশেষ বুঝিলাম মাগো তোমার মনের আশ |
বিদায় লইয়া মাগো যাই বনবাস ||
শিবপুরী থাক তুমি আমি যাই বন |
তোমার নাহিক দোষ কপালের লিখন ||
জানিনু বড়ই তোমার নিষ্ঠুর শরীর |
প্রণাম করিয়া পদ্মা চলে ধীরে ধীর ||
শিব ঠাঁই শুনি তুমি দয়াময়ী প্রচুর |
অবে সে বুঝিলাম তব দয়া কত দূর ||
শুন মাতা ভগবতী পর্বত দুহিতা |
পাষাণ তোমার কায়া জানিনু সর্বদা ||
এমন অকথ্য কথা কোনজন বলে |
আপন কন্যাকে নিজে ফেলে ভূমিতলে ||
তব সম নিদারুণ আর কে বা আছে |
না জানি বিধাতা তোমায় গড়িল কোন ছাঁচে ||
যে বিধাতা তোমার করিল গঠন |
পাইলে বিষের তেজে বধিতাম জীবন ||
চলে কি না চলে পদ্মা ধীরে ফেলে পাও |
নয়নের জলে পদ্মার ভিজে সর্ব গাও ||
আপনার কর্মফল আপনি নিন্দা করি |
নাগরথে আরোহণ করিল বিষহরি ||
বৃষ পৃষ্ঠে আরোহণ করি মহাদেব |
মনসা লইয়া গেল জয়ন্তী নগর ||
গহন কানন তথা দেখিতে ভয়ঙ্কর |
তথায় রাখিল পদ্মা দেব মহেশ্বর ||
সিংহ ব্যাঘ্র চলে তথা অতি বিপরীত |
এই কালে বল ভাই লাচারির গীত ||



@@--- ---@@ * এই পয়ারার্ধটি নেই

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
মনসামঙ্গল কাব্যের সূচি
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা


                            
শুন বাপ ত্রিপুরারি                আমি কন্যা একেশ্বর
মা ভাই কেহ মোর নাই |
মোর কোন হবে গতি              ছাড়ি গেল প্রাণপতি
সবে বাপ মহেশ্বর গোসাঞি ||
বনবাসে একেশ্বর                   মনে বাসি বড় ডর
মরণ লাগি নাহি মোর দুঃখ |
সিংহ ব্যাঘ্র আদি ভয়           কি জানি কখন কি হয়
তখনে চাহিব কার মুখ ||
বুঝেছি সতাইর আশ              দিবে মোরে বনবাস
কে বা নাম থুইল মহামায়া |
আমি কন্যা সতী ঝি                 তাহার করেছি কি
তিলমাত্র নাহি তাহার দয়া ||
ধরণী লোটায় বলে                   রাখ মা চরণ তলে
অভয় চরণে দেও ঠাঁই |
বিজয় গুপ্তের বাণী                 শুন পদ্মা ঠাকুরাণী
জয়ন্তী নগরে তোমার ঠাঁই ||

.                                                             ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা



কান্দে দেব মহেশ্বর                  তুমি কন্যা একেশ্বর
কেমনে বঞ্চিবা বনবাস |
সিংহ ব্যাঘ্র চরাচর                  প্রাণে বাসি বড় ডর
কান্দে শিব ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ||
মা ভাই নাহি কেহ                  সেই দুঃখে দহে দেহ
আমি বিনা আর কেহ নাই |
আমি যে গৌরীর যশ               লোকে ঘোষে অপযশ
তোমায় বনে পাঠাইলে সতাই ||
কারে কি করিব রোষ              তোমার কর্মের দোষ
আমি কি বা করিনু তোমারে |
দিয়া তোমার বনবাসে               কি মতে যাইব দেশে
এখন কি হইবে আমারে ||
মনসা বলেন বাপ                        ন করিও মনস্তাপ
সতাইরে না বলিও মন্দ |
কারে কি কহিতে পারি              স্বামী ছাড়ে নিজ নারী
সকলি মোর কপাল নির্বন্ধ ||
কি মোর করম দোষে                 তৃষ্ণায় সাগর শোষে
মোর কেন হইল হেন গতি |
পদ্মাবতী দরশনে                      সানন্দে বিজয় ভণে
জয়ন্তী রহিল পদ্মাবতী  ||

.                                                             ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
বৃষের পৃষ্ঠে চড়ি শিব চলে শীঘ্রগতি |
কান্দিতে কান্দিতে গেল যথায় পার্বতী ||
মহাদেব বলে গৌরী শুন দিয়া মন |
তোমার মনের বাঞ্ছা হইল পূরণ ||
নিশ্চিন্তে আমার গৃহে থাক গো ভবানি |
শুনিয়া দেবতা কত মন্দ বলে জানি ||
গৌরী বলে নিবেদন শুন ত্রিলোচন |
পদ্মা দিয়া অপকীর্তি কপাল লিখন ||
আপন পুরীতে যদি আইলা ত্রিলোচন |
এথায় জয়ন্তীর কিছু শুন বিবরণ ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
বামে বসিল নেতা রজককুমারী ||
শিবের কুমারী পদ্মা সৃষ্টির পূজিত |
রত্ন-সিংহাসনে বসে নাগ চারিভিত ||
অপার মহিমা দেবী জগতের মাতা |
সন্মুখে দাঁড়ায় ধামু বাম পাশে নেতা ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা



কনক সিংহাসন                          মনসার আসন
অলংকার অপূর্ব নির্মাণ |
মাণিক্য রত্নহার                        সুবর্ণের অলঙ্কার
রত্ন পট্টবস্ত্র পরিধান ||
গাইনেতে গাহে গীত                 নাচে তাল সুললিত
নানা পুষ্পগন্ধ আমোদিত |
দিব্য জল সরোবর                   রাজহংস চরাচর
নানা বৃক্ষ শোভে চারিভিত ||
কমল কুমুদ গন্ধ                  জলে শোভে পুষ্পবৃন্দ
প্রকাশিত নিশির আঁধার |
যত পাখি জলচর                    শব্দ করে বহুতর
মধুপান করয়ে ভ্রমর ||
চারি পাশে শোভে অতি        যত পুষ্প নানা জাতি
পারিজাত জবা কুরুবক |
নাগেশ্বর বকুল                     নানাবিধ ফুটে ফুল
সুকরবী টগর পম্পক ||
কেতকী অতুলখন্ড                   বিষ্ণুপদি নীলকন্ঠ
জবাপুষ্প আছে নানা জাতি |
গাঁথি আর তুরিয়াল                 কেশর নন্দদুলাল
কৃষ্ণচূড়া শোভা করে অতি ||
করবী কুসুম ধাই                    মালতী কুসুম তাই
কেতকী ধুতুরা পলাশ |
আম গুয়া নারিকেল                নাগরঙ্গ শ্রীফল বেল
নানা ফুল শোভে চারি পাশ ||
ফুল ফুটে নানা জাতি             দেখিতে সুন্দর অতি
প্রকাশিত শরত কমল |
পুষ্পের মাহাত্ম্য যত              তাহা বা কহিব কত
কোকিলেতে করে কোলাহল ||
বৃক্ষ শোভে চারিভিত             দেখি সবে আনন্দিত
দেখি উচ্চ পর্বত আকার |
গুয়া নারিকেল তাল                  আম আর কাঠাল
বৃক্ষ দেখি লাগে চমত্কার ||
শিমূল আর আমলুসি                    আমলকী তুলসী
বট অশ্বথ্ব দেখি স্থানে স্থান |
তাল আর তমাল                    জম্বুরা মৌফল ভাল
ফল মধ্যে যাহার বাখান ||
কমলা নাগরঙ্গ                          লেবু আর ছোলঙ্গ
পাতিলেবু কাগজি সুন্দর |
চালিতা কাউফল                    ডউয়া আর যত ফল
টেবা ফল আছে ত বিস্তার ||
জাতিফল এলাচি লবঙ্গ                  বনের ঔষধি সঙ্গ
বৃক্ষ সংখ্যা যত আছে আর |
বৃক্ষ আছে নানা জাতি              লিখিতে বাহুল্য পুথি
কি কহিব বাখান তাহার ||
মলয়া শীতল বায়                    কোকিলা পঞ্চম গায়
ভ্রমরের শব্দ বহুতর |
এ সব অপূর্ব রীত                  শোভা করে চারিভিত
দিব্যপুরী জয়ন্তী নগর ||

.                                                             ****************                                                
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা

               ৮
এইরূপে রহে পদ্মা জয়ন্তী নগর |
মনোসুখে আছে দেবী হয়ে স্বতন্তর ||
জয়ন্তী নগরী পুরী দেবী মনসার |
আপন বিক্রমে পদ্মা হইল প্রচার ||
স্বর্গ হতে গেলেন গৌরী সঙ্গে করি বাদ |
বনবাসে আছে দেবী সহ পারিষদ ||
পারিষদগণ সহ আছেন বিষহরি |
বাম ভিতে আছে নেতা রজক কুমারী ||
পদ্মার চরণ বিনা আর নাহি ধর্ম |
সর্বক্ষণ যুক্তি দেন এই মাত্র কর্ম ||
দূর হয়ে রহে ধামু পদ্মার আজ্ঞায়|
যে কার্যে পাঠান পদ্মা সেই কার্যে যায় ||
যারে যেই কর্মেতে থুইলা বিষহরি |
সেই কার্যে থাকে সেই দন্ডবৎ করি ||
নাগেতে বেষ্ঠিত পদ্মা হইলেন রাজা |
দানব গন্ধর্ব দেব সবে করে পূজা ||
শিবের কুমারী হন স্বয়ং পদ্মাবতী |
ত্রিভুবনে পূজা করে করিয়া ভকতি ||
পূজা না করিয়া যেবা করে উপহাস |
পদ্মার কোপেতে হয় সবংশ বিনাশ ||
ভকতি করিয়া যেবা করয়ে পূজন |
মনোভীষ্ট সিদ্ধ তার হয় ততক্ষণ ||
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন |
কদাচ নাহিক তার অকাল মরণ ||
স্ত্রী যার ঘরে নাই স্ত্রী আসবে ঘরে |
আশা পরিপূর্ণ হয় মনসার বরে ||
মনসার ঘট যেবা করবে স্থাপন |
তিন কুল হয় তার স্বর্গেতে গমন ||
নায়কেরে বর দিয়া পূর্ণ করে আশ |
চিরকাল হয় তার স্বর্গপুরে বাস ||
শ্রীপদ্মাপুরাণ পুথি থাকে যার ঘরে |
গৃহদাহ নাহি হয় মনসার বরে ||
( জগত ঈশ্বর শিব নাহি যার মূল |
কর্ণমূলে শোভাকরে ধুতুরার ফুল ||
ললাটে বিমল শশী পরিধানে ছাল |
কন্ঠপরে কিবা শোভা করে হারের মাল ||
শিঙ্গা ডম্বুর শোভা করে দুই করে |
প্রণাম সর্বদা কর সেই মহেশ্বরে || )

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা

               ৯                      
পুরীতে প্রবেশিলা মনসা কুমারী |
মোরে বুদ্ধি বোল নেতা ধোপার কুমারী ||
দেবের আলয় নহে সাগরের জল |
চতুর্দিক উপরে বোল হয় তারি সাল ||
না জানি কখনে মোরে কিবা দৈব পড়ে |
চতুর্দিক দেখিয়া আমার প্রাণ পোড়ে ||
মহামায়ার বাক্যে বাপু দিল বনবাস |
মোর প্রাণ লইতে হইল চন্ডীর প্রয়াস ||
নেতা বলে মনসা তোমার ভয় নাই |
এই অষ্টজনে তোমার বাড়িতে বড়াই ||
নাগলোকের উপরে জগত মাতা তুমি |
তোমার তরে আর কি বলিব আমি ||
অন্নপ্রাশন চূড়া পৈতা করি অষ্টজন |
মায়ের নিকটে থাকি বলিল বচন ||
নাগ লোকে বলে মা করে তোমার ভয় |
সাগর শুষিতে পারি হেন মনে লয় ||
এত শুনি পদ্মাবতী আনন্দিত মন |
আমন্ত্রণ করিল সকল নাগগণ ||
পদ্মার সংবাদে নাগ আসিল সাইয়া |
পদ্মার চরণে শরণ লইল গিয়া ||
বিজয় গুপ্তে রচে পুথি মনসার বর |
বনবাস পালা হইল এইখানে সোসর ||

.              ****************                                                                 
সূচি...    


মিলনসাগর
*
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা


বৈদ্য বিজয় গুপ্ত বলে মধুর ভারতী |
তার কন্ঠে অধিষ্ঠান দেবী পদ্মাবতী ||
অষ্টপুত্র বলবন্ত দেবী বিষহরি |
পালন করেন শিব অনুরাগ করি ||
বাপের গৌরবে পদ্মার কারে নাহি ভয় |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা

              ৩
মহাদেব বলে পদ্মা শুনহ বচন |
এমন মায়ের লাগি কান্দ কি কারণ ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা

            ৫
মনসার বাক্যে শিব হইল সুস্থির |
নয়নের জলে ভিজে সকল শরীর ||
দেবের নির্বন্ধ আছে কি কহিব কথা |
নেত্রের জলেতে তখন জন্মিলেক নেতা ||
কন্যা দেখিয়া শিব ভাবিতে লাগিল |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল

বনবাস পালা

          ৬
বনবাসে আছেন দেবী নেতার সংহতি |
বিমরিশ দুইজনে করেন যুকতি ||
নেতা বলে পদ্মাবতী, চিন্তিলাম উপায় |
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি
কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে
জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো।
srimilansengupta@yahoo.co.in