কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
অভয়া মনসাদেবী জয় বিষহরি | ততক্ষণে দিল দেখা যতি রূপ ধরি || বামহস্তে কমন্ডুল ডাইন হস্তে কুশা | যতিরূপে ক্ষিতি তলে নামিল মনসা || বসিয়াছে রাখয়াল সব একত্র হইয়া | যত সব ধেনু তারা দিয়াছে ছাড়িয়া || হেন কালে পদ্মাবতী গেলা সেইখানে | রাখয়ালের ঠাঁই দুগ্ধ মাগিলা তখনে || ব্রাহ্মণের নারী আমি শোনরে রাখাল | ফুটি দুগ্ধ দেও মোরে যদি চাহ ভাল || বিজয় গপ্তে বলে গাইন কৌতুক হইল ভারি | সম্ভেদ পড়িল গাইন বলহ লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
যে যাহা মাগিল বর হউক পূরণ ||
পূজা সমাপিয়া রাখাল চারিদিকে চায় |
যার গোধন যেইখানে সেইখানে পায় ||
বৈকাল সময়ে তারা লয়ে বৎস গাই |
যে যেইখানে থাকে তথা লয়ে যাই ||
ঠাকুর সমান আজি সেবকের আদর |
রাখাল সবে বলে ভাই মনসার বর ||
বেহান বেলায় আজি পদ্মার ঘটচায় |
তবে যার যেই কর্ম সেই কর্মে যায় ||
লোকযাত্রা হইলেক সন্দে গেল দূর |
নিত্য নিত্য পদ্মাবতী পূজয়ে প্রচুর ||
হেন মতে পদ্মাবতী পূজে নিত্য নিত্য |
দৈবযোগে প্রমাদ পড়িল আচম্বিত ||
মনসার পাদপদ্ম ভাবিয়া হৃদয় |
গাইব হোসেন যুদ্ধ এইত সময় ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
২
একাদশী দ্বাদশী তিন দিনের উপবাসী দুগ্ধ চাহি তোমার গোচর | সহজে আমি অভাগিনী ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণী দুগ্ধ দিয়া প্রাণ রাখ মোর || তোরা রাখাল সর্বজন আমার বচন শোন খিদায়ে আমি রহিতে না পারি | যত কহে পদ্মাবতী রাখালে না দেয়ে মতি উপহাস্য করয়ে চাতুরি || রাখায়ালে কহে পুনি শোন তুমি ঠাকুরাণী মরিল কেন তোমার ব্রাহ্মণ | আছে এ মত কত যতি তুমি কি হও বড় সতী রূপ নাহি তোমার সমান || এই মত বেশ করি কোন যতি ভিক্ষা করি পুরুষ দেখিতে তোর ইচ্ছা | এথা হইতে যাও তুমি পুন পুন বলি আমি নহে তোমার হইবে সর্বনাশ | চলে অন্তরীক্ষে গতি হইয়া যে ক্রোধ মতি ধেনু যত সব হইল নাশ || রাখয়ালে দেখে মাঠে ধেনু সব নাহি গোঠে না দেখিয়া হইল হইল বিকল || যত মাঠ বিচারিয়া কোনখানে না পাইয়া উচ্চ স্বরে কান্দিতে লাগিল || রাখয়াল সকলে মিলি করিলেক হুলাহুলি কান্দিয়া হইল অচেতন | পদ্মাবতী পরশনে আনন্দে বিজয় ভনে শুনিয়া কৌতুক সর্বজন ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
ঝড় বৃষ্টি হইলে বড় রহিতে নাই ঠাঁই ||
গঙ্গাতীর কূল দিয়া লাফে লাফে যায় |
ঝড় বরিষায় তারে পথে লাগল পায় ||
ঝড় বরিষণে মোল্লা হইল কাতর |
চারি দিকে চাহিয়া দেখে বন বনমধ্যে ঘর ||
পরম আনন্দে তথা ছায়া লইতে গেলা |
ঘরখান ভরিয়া দেখে রাখালের মেলা ||
স্বভাবে রাখাল জাতি মনে বড় রঙ্গ |
ঢাল ঢোল বাজায় কেহ বাজায় মৃদঙ্গ ||
ঘর মধ্যে ঘট গোটা সারি সারি সাজে |
তাহা দেখি মোল্লা বেটার বুকে বড় বাজে ||
কাজির প্রতাপে বেটার বড় অহঙ্কার |
খোদা খোদা বলি যায় ঘট ভাঙ্গিবার ||
ধর ধর বলিয়া সব রাখালে খেদায় |
প্রাণ লইয়া কেহ কেহ সারিয়া পলায় ||
দূরে থাকিয়া কেহ মেলিয়া মারে ঢেলা |
কেহ বলে কোন প্রাণে ঘরে ঢোকে শালা ||
চারিদিক বেড়িয়া ধূপের ধোঁয়া ধরে |
তোবা তোবা বলিয়া মোল্লা খোদা খোদা স্মরে ||
চোপড় চাপড় মারে আর ঘাড়কাতা |
পরিত্রাহী ডাকে মোল্লা হেট করে মাথা ||
( পদ্মার বরেতে রাখাল কারে নাহি ডরে |
সকল রাখালে মিলি অবিশ্রান্ত মারে ||
দুই হাতে কেহ বা উপড়ে গোপ দাড়ি |
ইজার ছিঁড়িয়া নিশান দিল সারি সারি || )
মাথায় পাগড়ী কেহ মেলে দুই পায় |
ছাগরক্ত মাখে মোল্লার মাথে আর গায় ||
এতেক দুর্গতি করি ক্ষমা নাহি মনে |
মন্ডপের খুঁটিতে নিয়া বান্ধিল যতনে ||
কাতর হইয়া মোল্লা বলে ঠাকুর ভাই |
আমারে এড়িয়া দেহ যথা তথা যাই ||
তোর দাড়ি মোর দাড়ি দাড়ি নাহি কার |
কাজির মোল্লার দাড়ি ধীরে ধীরে সার ||
ছাড়িয়া দিব তোরে খাওয়াইব বড়া |
গলায় বান্দিয়া দিব কাছিমের গুড়া ||
যাত্রাবর বলে আমি এই বুঝি তত্ত্ব |
এড়িয়া দিব যদি নাকে দেও খত ||
মুছাপের দিব্য কর মাথায় দিয়া হাত |
এই সব কথা না কহিবা কাজির সাক্ষাৎ ||
আপনার সুখেতে করহ হিন্দুয়ান |
আমি এই খত করি সবার বিদ্যমান ||
মোল্লা বলে ঠাকুর আমি এইমাত্র বুঝি |
পাও দিয়া দেও খত নাক দিয়া মুছি ||
( মুছাপের দোহাই দেয় সাতবার |
জনে জনেরে প্রণাম করে হাজার হাজার ||
এতেক শুনিয়া রাখাল সবে সদয় হইল |
দিব্য করাইয়া তবে মোল্লা ছাড়ি দিল || )
সকলেরে সেলাম দিয়া চলিল সত্বর |
এই রূপে চলি গেল কাজির গোচর ||
( বসিয়াছে কাজি আপন কাছারিতে |
আপনার চাকর সব রহিছে জোড়হাতে ||
সম্মুখে তামার বদনা হাতে ছড়িখান |
কাগজের বত্তা হাতে কিতাব কোরাণ || )
সৈয়দ মোল্লা জত লেখা জোখা নাই |
হেনকালে গেল তথা মোল্লা তকাই ||
কান্দিয়া কাজির আগে কহে দুঃখ লাগে বড়ি |
সংবাদ পড়িল গাইন বলরে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
৫
এদেশে অনিয়ম হইল আপনা রাখিতে নারিল কিবা কার্য থাকিয়া এদেশে | বদনা হেন ঘটের মাথা তাহার উপর ফুলের পাতা তস্তা হেন দেখিলাম ধূপতি || উবুর হইয়া দিলাম সেবা রক্ষা কর মহা দেবা রক্ষ রক্ষ দেবী পদ্মাবতী || হাগড়া বনে দিলুম হুতি ধরিয়া আনে হাতাহাতি চোয়াড়ে নাড়িতে নারি গালি || হাগড়ায় ধরিল দাড়ি টানিয়া খসাইতে নারি উফারিল যত গোপ দাড়ি || সদয়ে বসিয়া আছে ন্যায় অন্যায় বোঝে আর কাজী খাইছে আফিঙ্গ | যেমন বার্তা পাইল ক্রোধ করি কিলাইল কুবলে যেন ছুইল হিঙ্গ || কাজি গেলে না ছাড় ডাক এই মনে চাপিয়া যাক কহ গিয়া নেড় কাজীর আগি || পদ্মাবতী দরশনে সানন্দে বিজয় ভণে বড় ক্রোধ হইল নেড় কাজী ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
৬
( কাজীরা দুই ভাই একত্র বসিছে |
কান্দিতে কান্দিতে মোল্লা গেল তার কাছে ||
হিন্দুয়ালি হল রাজ্য তোমার কিসের কাজ |
পেয়াদা পাইক যত আছে শীঘ্র করি সাজ ||
এই ভাগীরথী তীরে অপূর্ব ভূত জাতি |
ঘরেতে ঢুকিয়াছিনু করিল দুর্গতি ||
হের দেখ দাড়ি নাহি মুখে রক্ত পড়ে |
দন্ত ভাঙ্গিয়াছে মোর চোপাড় চাপড়ে ||
পরিধান ইজার আমার দেখ সব ভাঙ্গা |
ছাগলের রক্তে দেখ মুখ মোর রাঙ্গা ||
যতেক মারিছে মোরে কিছু নাহি মনে |
কেবল ধূপের ধোঁয়ায় না দেখি নয়নে ||
খোদার নাম জিগির করি কেহ কাছে নাই |
বড় ভাগ্যে ভান্ডিয়া আসিনু তোমার ঠাঁই ||
শুনিয়া কুপিত কাজী চারিদিকে চায় |
অফিঙ্গের লায়েক বেটা আকাশের দিকে চায় ||
হারামজাত হিন্দুর এত বড় প্রাণ |
আমার গ্রামেতে বেটা করে হিন্দুয়ান ||
গোটে গোটে ধরিব গিয়া যতেক ছেমরা |
এড়া রুটি খাওয়াইয়া করিব জাতি মারা |
ওস্তাদ মোল্লা মোর অপমান হয় |
তাহারে এমন করে প্রাণে নাহি ভয় || )
শেক সাইদ চলে বড় বড় পাঠান |
সাচান সিচান চলে কাজীর যোগান ||
মোল্লা সব চলে মুখে বড় বড় গোপ |
ইষকারি কুত্তা চলে দিতে চাহে ছোপ ||
যদি গিয়া লাগ পাম যতেক হিন্দুয়া |
জাতি নাশ করিব আজি গোস্ত খিলাইয়া ||
হুসন কাজি চলিল পায়ে দিয়া চামর |
ধোপকাপড়ি চলে লক্ষ লক্ষ খোজা ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন কৌতুক হইল ভারি |
সম্ভেদ পড়িল গাইন বলহ লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
৭
সাজ সাজ বাদ্য বাজে লড়ালড়ি কাজী সাজে হুড়াহুড়ি হোসেন নগর | কার হাতে শরমুটি কার হাতে তালের লাঠি সাজে কাজী লয়ে তীক্ষ্ণ শর || হারামজাত হিন্দু আছে ভূত ধেয়ে পলায় পাছে হুড়াহুড়ি ছেড়ে ঝাটে চল | চারিদিকে সব ঘেরি ধরিব যতন করি শরীরে দ্বিগুণ বাসি বল || হাসেন মনসা আই তুরকের রক্ষা নাই গোটে গোটে দংশিব তুরুক | সর্বলোকে পরম কৌতুক ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
৮
পঞ্চ ছন্দে নানা বাদ্য বাজে ত তথায় |
আওয়াজে বার্তা পাইল হোসেনের মায় ||
( সেই ছিল হিন্দুর কন্যা তার কর্মফলে |
বিবাহ করিল কাজী ধরি আনি বলে || )
হিন্দুর দেবতা বুড়ি ভাল মত জানে |
আবাসে রহিয়া মোল্লা হিন্দুয়ানি মানে ||
আসিল হিন্দুর বেটী বড় দৈবফলে |
ধাই আসি জানাইল বাহির দখলে ||
কেহ বলে কেন আইল খোনকারের ধাই |
আগে যাইয়া আমি সেলাম জানাই ||
আগে পাছে বান্দি সব বুড়া বিবি চলে |
এইরূপে ধাইয়া গেল বাহির দখলে ||
রহ রহ বকে হেথায় বেগমে |
বুড়ি বিবি আসিয়াছে না দেখে চসমে ||
কেহ লে কেন আইল ঠাকুর দিদজি আই |
আগু হইয়া সেলাম করিল দুই ভাই ||
দয়া করি বুড়ি এখন বুঝায় সানন্দে |
এইকালে বল ভাই লাচারির ছন্দে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
ভূতের নাম শুনিয়া কাজির পেয়াদা রোষে |
চোত্রার ফুল নিয়া মার্গেতে ঘষে ||
বিষম চোত্রার বিষ নহে সহিবার |
দ্বিগুন পোড়ানা হইল হইল ফাপর ||
হাতের ঢাল মাথার পাগড়ি তার উপর থুইয়া |
হারামজাত হিন্দুর ভূত মার চুবাইয়া ||
ঝাপ দিয়া পড়ে গিয়া জলের ভিতর |
দ্বিগুন পোড়ে গা হইল হইল ফাঁপর ||
সকল কাপড় কুমার করিয়া বোঝা |
ধীরে ধীরে যায় যেন বিলাতিয়া ধোপা ||
সত্বরে চলিল কাজি মহলের ভিতর |
এইসব কথা কহিও গিয়া বিবির গোচর ||
বন্দিশালে রহিল গিয়া যত রাখালগণ |
শিয়রে বসিয়া পদ্মা কহেন স্বপন ||
পদ্মা বলে পুত্র সব দুঃখ নাহি আর |
হোসেন হাটি আমি আজি করিব সংহার ||
কি হইল কি হইল নেতা কিনা হইল মোরে |
রাখালের যত দুঃখ না সহে শরীরে ||
প্রথমে আমার পূজা লোকেতে প্রচার |
হোসেন বাঁধিয়া নিল যতেক রাখাল ||
বিষ অগ্নি করিয়া পুরিব হোসেনহাটি |
দংশিব সকল তুরুক না রাখিব একগুটি ||
বিষ অগ্নি করিয়া পুরিব গাছের পাতা |
সানন্দে বিজয় ভণে পদ্মাবতীর কথা ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
বিষম বোড়ার বিষ নহে সহিবারে |
মা বাপ ডাকে বেটা হাহাকার করে ||
কেহ বলে চাও চাও কেহ বলে কি |
দুই হাতে বুক হানে কাঁদে জোলার ঝি ||
সর্ব গাত্র কাঁপে জোলার কাল বিষের ঘায় |
কান্দিয়া কহিতে লাগে ধরি জোলার পায় ||
( সবধর বলে চাচা জানিছি নিশ্চয় |
ভুতের ছাও এই দৈবে সে নয় || )
নিশ্চয় জানিল চাচা নাহিক জীবন |
আপন জানিয়া তুমি কার্যে দেহ মন ||
চিকণ কাপড় তাঁতে বিকের বড় টান |
একখানা চিরিয়া করিব সাত খান ||
বেসাতির সঞ্চয় তার কিছু নাহি ঘরে |
পোন চারি কড়ি দেও জোলা ঝির তরে ||
ভাঁড়া পুঁজি করি যেন দিন কত খায় |
যাবৎ না অন্যখানে নিকা গিয়া বর ||
এতেক বলিয়া জোলা হইল অচেতন |
কালবিষে আচ্ছাদিল হারাইল জীবন ||
জোলাঝি ক্রন্দন করে দুঃখ লাগে বড়ি |
সংবাদ পড়িল গাইন বলেরে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১২
আরে আরে জোলা উঠি দেখ মাউগ পোলা আচম্বিতে তোমার হইল কি | এখানে বিছানায় ছিলা নানা সুখে আরোপিলা কোছের কাড়িয়া খাইলা পান || জোলা ছিল বড় ধনী বুনাইয়া দিত লাল ভুনি পরিয়া বেড়াইতাম বাড়ি বাড়ি | কত কথা কব পতি এ কোন চিকন তাঁতি এহার সমান নাহি কারিগরি || মোর দুঃখের ওর নাই নিকা বসি যার ঠাঁই মাসেক না থাকি তার ঘরে | কত দুঃখ সব গায় দশ দিন নাহি যায় এই মাসে তিন নিকা মোরে || এই দুঃখে আমি কান্দি সতরাটা করি যদি এত আদর নাহি কার হাতে | আসিনু তোমার ঘরে খোদায় বঞ্চিতে মোরে তোমা হারালাম আচম্বিতে | হাটে যাইতে কহি ঝাটে লড় দিয়া যাইত হাটে বেসাতি আনিত নানা ভাইতে | শৌল, মাগুর, কৈ আলু মানকচু চৈ গুয়া পান আনিতে নানা মতে || আদার সুন্দর ঝাল খাইতে পোড়ায় গাল কহিতে বিদরে মোর বুক | কি হইল মোর আজি কেন বিধি দিল বাজী এখন চাহিব কার মুখ | গুপ্তে বলে জোলা ঝি মল জোলা করিবা কি ভাল হইল মরিয়া গেল জোলা ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১৩
নগরে কান্দন শুনি বিপরীত রায় ||
লড় দিয়া আসিল তখন জোলা ঝির মায় ||
বুড়ি বলে আগো ঝি কেন কান্দ আর |
মরিল জামাই তোর পাবি আর বর ||
সবে তোর মাতা আমি আর কেহ নই |
বিশ ফতরা গেলে নিকা দিব আর ঠাঁই ||
দিন কথ থাক গিয়া নিরামিষ খাইয়া |
সাতা খানা গেল কাইন দিব ভাল চাহিয়া || )
মার বাক্যে জোলা ঝির জুড়াল হৃদয় |
কান্দিয়া মায়ের স্থানে ধীরে ধীরে কয় ||
নিশ্চয় কহিল মাতা শান্ত কর মন |
শুনি প্রাণ কাঁপে নিরামিষের কারণ ||
খোদায় বঞ্চিল মোরে এই দিন হতে |
এই কয় দিন মুই বঞ্চিব কি মতে ||
সাতদিন নহে মাতা সাতটি বৎসর |
কেমনে বঞ্চিব ঘরে আমি একেশ্বর ||
নিরামিষ খাইলে নাহি বাঁচিবার আশ |
তাহার বাড়িতে আছে কুকুরার বাস ||
পুত্রের মরণ দেখি স্থির নহে মন |
বিষাদ ভাবিয়া বুড়ী যুড়িলেক ক্রন্দন ||
নাগরথে পদ্মাবতী অহঙ্কারে ভোলা |
পুত্র কোলে করি কান্দে তাজদি জোলা ||
সুতা চোরা জোলা কান্দে দুঃখ লাগে বড়ি |
সংবাদ পড়িল গাইন বল রে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১৪
কান্দে জোলা করিয়া করুণ দাড়ি বাহি পড়ে লোহ বিঘতিয়া খাইল পো কালবিষে হইল অচেতন || জোলা মরে মীর সা বধূ কান্দে শুন না বধূ শান্তাইয়া নেও ঘরে | সয়তান না হহুকঘরে (? ) সেবকে তোমার দয়া করে হেন বধূ লইয়া গেল পরে || জোলা বলে কি হাতনা বধূ কান্দে শুন না একেবারে বিধি হইল বাম || এইত যৌবন-কালে বিধি আমা বাম হইলে কোথায় পাইব হেন জন || হেন করে মোর হিয়া কাজিরে অস্থানে নিয়া বুড়া বয়সে করিয়া লই কাইল | এত বলি বুড়া কান্দে পায় ধরি বধূ কান্দে ভাত খাও এড়িয়া কান্দাইল || আর খসম পাবা না মোরে ছাড়ি যাইও না মনে লয় থাক মোর সাথে || মনে সরম বাস পাছে কেতাবে কোরাণে আছে নিকা বস যদি লয় চিতে || পদ্মাবতী দরশনে সানন্দে বিজয় ভণে সূতা বেচা জোলা বেয়াক্কেল | নহে কেন হেন হবে এত কষ্ট কেন পাবে কাজি বেটা ইহার মক্কেল |
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
পথে যাইতে বিঘতিয়া সাত জনে খায় |
ধীরে ধীরে বিঘতিয়া ঘরে চলি যায় ||
এথা হতে নাগ তবে যায় চলিয়া |
পথে যাইতে খাইল কাজির শতেক হালিয়া ||
কাজির মোকাম ঘরে বাসা সাপ |
মোল্লা মারিয়া সব করিল খারাপ ||
নাগরথে পদ্মাবতী অহঙ্কারে ভোলা |
বিঘতিয়া দংশিল যত ছিল জোলা ||
বিজয় গুপ্ত বলে গাইন দুঃখ লাগে বড়ি |
সম্বেদ পড়িল ভাই লরে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১৬
( নাগ লয়ে উন কোটি বেড়িল হোসেন হাটি ডরে কাঁপে যতেক তুরুক | কাজির ঘর ভাঙ্গা ঝাপ তাহা দিয়া যায় সাপ বিবি পলায় পদ্মার কৌতুক || সর্প ভয়ে পড়ে মূত্র খাইল কাজির পুত্র ঢলিয়া পড়িল ততক্ষণ | দারুণ বিষের জ্বালে আঁখি ঘোরে তনু জ্বলে নাকে শ্বাস বহে ঘনে ঘন || ) কাজিপুত্র সাপে খাইল ওঝায় বাড়িতে আইল ওঝা বলে এর প্রাণ নাই | কালাতুরি নামে বান্দী সেই বলে শুন কাজি বিবিরে খাইল বিষম ঠাই || কেতাব কেরাণ ছাড় আপনি ফু দিয়া ঝাড় অন্য ওঝার দেখার যোগ্য নয় | কি কব কহিতে লাজ মাথায় পড়িল বাজ হেন স্থান দেখিবার নয় || ( হোসেনের মা বলে পুত কেন ক্ষেপাইলে ভুত শরীরে না সহে দুঃখ আর || নাগ ফেরে ঘরে ঘরে যারে খায় সেই মরে সেনহাটি হইল ছারখার || ) মরিল দুলাল বান্দী তার লাগি কান্দে কাজি মনে রহিল তার কথা | আর সব যত কান্দি তাহার মত যত বান্দী ইহার সম পাকানী নাহি হেতা || ফুটন্ত ধুতুরার ফুল যেন দেখি দন্তমুল মাথায় উকুন শতে শতে | কাজি কান্দে মনস্তাপে গোলাম খাইল সাপে বিবিরে প্রবোধ দিবে কে || বাড়িতে যাইতাম খুইয়া বিবির সঙ্গে থাকিত শুইয়া সারারাত্রি থাকিত উজাগার || ( বুড়া কাজির খাইল পোহ মনস্তাপে যায় মোহ হাসেন হোসেন চাহে দংশিবার || মায়ে পোয়ে কথা কয় তাহে প্রাণ স্থির নয় চৌদিকে বেড়িয়া উঠে সাপ | সাপ দেখি ভয়ঙ্কর হাসেন হোসেনের ডর ভয়ে পড়ে জলে দিয়া ঝাপ || দুই ভাই জলে ভাসে তাহা দেখি নাগ হাসে চেয়ে ছিলো নাগ ধরিবার | আপনার হিত চাও পূজহ পদ্মার পাও বিজয় গুপ্ত রচিল পয়ার ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১৭
জল হইতে ভাই উঠিল যখন |
মায়া পাতিয়া নাগ লুকাইল তখন ||
জল হইতে উঠি কাজি ভাবে অপমান |
রাখাল সঙ্গে বাদ করি হারাইলাম পরাণ ||
এক গোটা ভুত আইল বিঘত প্রমাণ |
সেই যে করিল মোর এত অপমান ||
এখনি পূজিব পদ্মা বিলম্ব নাহি আর |
কার ঠাঁই পুছিব মুই পূজার সমাচার ||
এই সব শুনিয়া পদ্মা হাসিলেন বিস্তর |
নারদ ডাকিয়া পদ্মা আনিল সত্বর ||
পদ্মা বলে তপোধন শুনহ বচন |
ঘট মাথায় করি নেও যেথা হাসেন হোসেন ||
কেবা লঙ্ঘিতে পারে পদ্মার বচন |
মাথায় করিয়া ঘট চলে তপোধন ||
সুবর্ণের ঘট গোটা বিচিত্র নির্মাণ |
দেখিয়া জিজ্ঞাসা করে ভাই দুইজন ||
কাহার ঘট লইয়াছ দ্বিজ কি কার্য ইহার |
আমার ঠাঁই কহিবা ইহার সমাচার ||
দ্বিজ বলে এই ঘট দেবী মনসার |
হারাইলা যত ধন পাইবা আর বার ||
এত শুনি কাজির আনন্দিত মন |
সেই ঘট লইল দিয়া বহুমূল্য ধন ||
বিচিত্র মন্ডপ ঘর দেখিতে সুন্দর |
বাছিয়া বাছিয়া আনে অনেক দ্বিজবর ||
খই দই রচনা আনিল ঠাঁই ঠাঁই |
ভক্তিভাবে পূজা করে বিষহরি আই ||
মহিষ ছাগল আনি ভরিলেক বাড়ি |
নাপিত আনিয়া কাজি মুড়িলেক দাড়ি ||
প্রথমে পূজিল ঘট ভক্তি করি আজি |
ব্রাহ্মণে পূজে ঘট প্রণাম করে কাজি ||
মত মারিয়াছিল জীল ততক্ষণ |
বান্ধা ছিল যত রাখাল হইল মোচন ||
( কাজি বলে ভাই সব দুঃখ না ভাবিও মনে |
যত অপরাধ মোর ক্ষমিবা এখনে ||
হরষিত রাখাল সব চলিল সত্বর |
অবিলম্বে চলি গেল আপনার ঘর || )
বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসার বর |
হাসেন হোসেন পালা এইখানে সোসর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১ নেতার সঙ্গে পদ্মাবতী যুক্তি করে সার | মর্ত্যলোকে মোর পূজা না হল প্রচার || নেতা বলে পদ্মাবতী শুনহ বচন |
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
৩
ধেনু হরি বিষহরি কৌতুক বড় মন |
নিদ্রাবতীরে আজ্ঞা করিলা তখন ||
মনসার আজ্ঞায় নিদ্রাবতী চলিল তখন |
অচেতন করিল গিয়া সব শিশুগণ ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
৪
দক্ষিণে হোসেনহাটি গ্রামের নিকট |
তথায় যবন বসে দুই বেটা শঠ ||
হাসন হোসেন তারা দুই ভাইর নাম |
দুইজনে করে তারা বিপরীত কাম ||
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
৯
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১০
মায়ের বচনে কাজী থর থর কাঁপে |
হাতে হাতে কচালে অধর ওষ্ঠ চাপে ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১১
নেতা বলে পদ্মাবতী কান্দ কি কারণ |
স্মরণ করিয়া আন যত নাগগণ ||
নেতার বচনে পদ্মা চিন্তে মনে মন |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
হাসন হুসন যুদ্ধ পালা
১৫
জোলাহাটি উঠিল ক্রন্দনের রোল |
বিঘতিয়া বোড়া করে এত গন্ডগোল ||
যাহার যেই ইষ্ট মিত্র সেই দিল মাটি |
নগরের মধ্যে জোলা নাহিক এক গুটি ||
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো। srimilansengupta@yahoo.co.in
|
|
|