কবি বিজয় গুপ্ত-র মনসামঙ্গল কাব্য যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
|
মালিনীরে দেখি সবার কৌতুক হইল বড়ি | এইকালে বল ভাই সরস লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
মুখের ছাঁদেতে চন্দ্রের রূপ করিল চুরি ||
কনক চম্পক যেন দেখিতে কলেবর |
হস্তী শুন্ড বাহু হেন অতি মনোহর ||
দাড়িম্বের বিচি যেন দন্ত ঝলমল |
দেখিলে তরুণ জনে হইবে বিহ্বল ||
চকিতে চকোর দুই নয়ন তাহার |
জিনিয়া বাধিল ফুল অধর সুন্দর ||
( কণক চম্পক তনু সুন্দর তাহার |
হস্তি শুন্ড জিনিয়া বাহু পরম সুন্দর || )
দেখিয়া তাহার শোভা কেবা নাহি ভোলে |
খঞ্জন নয়ন দুই সরোবর কোলে ||
মৃগমদ মিশাইয়া চন্দন দিল গায় |
কণক নূপুর তুলিয়া দিল দুই পায় ||
অধরে তুলিয়া দিল খদিরের রস |
পারিজাতের মালা পরে দেখিতে রূপস ||
কাঞ্চনের ঝরা দিল দুই হস্তে তুলি |
দুই হস্তে তুলিয়া দিল বক্ষের কাঁচলি ||
সুবেশ করিয়া চলে জয় বিষহরি |
দধির পসার লইয়া চলে একেশ্বরী ||
ধন্বন্তরি বধিতে চলিল বিষহরি |
পদ্মার চরণে বিজয় গুপ্তে নমস্কার করি ||
কপটে চলিল পদ্মা গোয়ালিনীর ছন্দে |
এইকালে বল ভাই লাচারির প্রবন্ধে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
২
শুনহ আমার বাণী ঘরে চলে মালিনী চলি যাও আপনার ঘর | কল্য আনিও ফুল ইনাম দিব বহুমূল যেন খাও এ বার বৎসর || তোমার হেথা আগমন সবে হরষিত মন রূপ দেখি প্রাণ নহে স্থির | তুমি সামান্য নহ কেন আসা ভাঙ্গি কহ কামে মোর দগ্ধ হয় শরীর || হেন দেখ অদ্ভুত নাহি হয় ঝি পুত বাঝার লক্ষণ দেখি গো তোমার | পুত্র হবে যত চাও আমার ঔষধ খাও এই বীর্যে জন্মিবে কুমার || ঔষধ চিনাব আমি আর ওঝা হইবা তুমি লোকে তোমায় পূজিবে যতনে | খুঁজিয়া বা না আনে যাচিয়া দিবা আপনে তুষ্ট হইলাম তোমার বয়নে | শুনিয়া শিষ্যের বাণী ঘরে চলে মালিনী কহিল দিও যত মনে লয় | কহিল দিও যত মনে লয় | বিজয় গুপ্ত বলে সার মোরে কর নিস্তার মনসা কলঙ্কিনী কভু নয় ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
৪
সাজিয়া গোয়ালিনীর বেশে চলিল শঙ্কুর দেশে কপটে বধিতে ধন্বন্তরি | রঙ্গে ছন্দে বান্ধে খোপা পৃষ্ঠেতে পাটের থোপা শ্রবণে সোনার মদন কড়ি || স্বর্ণ অলংকার গায় চলন্ত নূপুর পায় উল্লাসে পরিল পাটের শাড়ী | চন্দনে লিখিল অঙ্গ কপালে তিলক রঙ্গ মুখ পানে করে খল খল || মানিক্যদোসর জ্যোতি গলায় শোভিছে পাতি নয়ন ভরিল কাজল | বল্লভা দুই কুঁচ ভার হৃদয়ে মুকুতা হার দুই পায় পরিল পাশলি || কাছিয়া কাপড় পিন্ধে রূপে বিদ্যাধরী নিন্দে দধির পসার লইয়া চলি | পদ্মাবতী কুতূহলে খঞ্জন গমনে চলে যথা ওঝা ধন্বন্তরি থাকে | দাঁড়াইয়া ওঝার পাশে আড় নয়নে হাসে দধি লবা ঘন ঘন ডাকে || শতেক শিষ্য লইয়া মেলা ধন্বন্তরি করে খেলা গোয়ালিনী বলে দই দই | ওঝার বিক্রম বুদ্ধি কাড়িয়া লইল দধি আজি গোয়ালিনী যাবা কই || গোয়ালিনীর ঠাট দেখি হাসে ওঝা আড় আঁধি শতেক শিষ্য করে হুড়াহুড়ি | বিজয় গুপ্ত বলে সার রসিক জনের চমৎকার দধি লোভে তুলিল গাড়রী ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
৫
কেমন তোমার স্বামী তোমা পাঠায় একাকিনী গোয়ালা কেমনে আছে ঘরে | তুমি নও দুখিনী ধনবতী হেন গণি সর্ব গায় স্বর্ণ অলঙ্কার || এত ধন যাহার আছে সে কি দধি ঘোল বেচে হাটে মাথায় পসার | দেখিয়া তোমার কষ্ট মনেতে হয়েছি রুষ্ট স্বামী তোমার বড়ই নচ্ছার || হেন আমি অনুমানি হবা তুমি দ্বিচারিণী বেড়াও পুরুষ অন্বেষণে | দুষ্টজনে লাগ পায় দধি ঘোল কাড়িয়া খায় তাহে ভয় নাহিক অন্তরে || তোমার তাতে নাহি ভয় হৃষ্টমতি অতিশয় নষ্ট তুমি হবে গো সুন্দরী | দিন গেলে যাও ঘরে বেড়াও তুমি স্বতন্তরে দধি ঘোলের না লও বুঝি কড়ি || সরু মাজার ঠান ভাঙ্গিলে হয় খান খান বড়াই তোমার করিব চুর | বলিয়া এসব বোল মূল্য করে দেখি ঘোল শিষ্য সব বড়ই চতুর || কহিছে বৈদ্য বিজয় খাইয়া বুঝ কেমন হয় দধি ঘোল চুকা কি মধুর |
@@ - - এখানে প্রিপদীর অর্ধেক নেই - - @@
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
রাজকর দেই মোরা নিজ ঘরে বসি ||
খাই বিলাই আর করি যে সঞ্চয় |
যত কিছু দেশ এই পসারেতে হয় |
বিনা দুঃখে কাহার কড়ি না হয় উত্পত্তি |
আমার সকল এই ঘরের সম্পত্তি ||
নিশ্চিন্তে খাইয়া বেড়াও হাঁড়িতে না দেও ফুক |
নিজের বলিতে তোমার চাঁদ হেন মুখ ||
চপল চরিত্র যাহার ডাঙ্গর উত্তর |
তিলেক না রহি আমি তাহার গোচর ||
অত্যন্ত দীঘল তোমার ডাঙ্গর উদর |
চিরকাল পর ভাতে তোমার আদর ||
টাকিয়া কপাল তোর থাক পরের ঘরে |
মুষ্টি অন্ন খায় যথা কাকে আর কুকুরে ||
টিকি কপাল সরিষা মালা গলে |
বচনে সাগর বান্ধ পথ বাহু ছলে ||
বিজয় গুপ্ত বলে এই কীর্তি মনসার |
শুনাইয়া শিষ্যগণে বলে আর বার ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
আমিও করিব তার অনুরূপ কাজ ||
এতেক বলিয়া ওঝা মনে ক্রুদ্ধ হইয়া |
ব্রহ্ম গোটা ভস্ম করে ঔষধ আনিয়া ||
মূলনাশ করিয়া ওঝা যায় আনন্দেতে |
জ্যোতীশ্বরের ঠাঁই গিয়া জানাইল দূতে ||
তাহা শুনি জ্যোতীশ্বরের অধিক কোপ বাড়ে |
আথেব্যাথে শিষ্যগণ ধায় উভালড়ে ||
তাড়াতাড়ি শিষ্যগণ ধায় লড় দিয়া |
এত শুনি জ্যোতীশ্বর চলিলেক ধাইয়া ||
ব্রহ্ম গোটা জিয়াইল ঔষধ আনিয়া |
সেই ঠাই ওঝারে তব এড়িল বান্ধিয়া ||
তোমার গুণে আমার যশ করি যাও নাশ |
জ্যোতীশ্বরের গুণ কিছু করিব প্রকাশ ||
জ্যোতীশ্বরের জ্ঞানে বৃক্ষ জল বহে স্রোতে |
সকল লোক তুষ্ট হইল সেই জল হইতে ||
কোথায় শঙ্কুর ওঝা কোথায় গাড়ুরী |
জ্যোতীশ্বরের হাতে তার ভাঙ্গিল চাতুরি ||
এই সকল কথা আমি জানি ভালে ভাল |
বাপ মায়ের কোল আমি তখন ছাওয়াল ||
বত্সরেক বৃক্ষ হইয়া আছিল ওঝায় |
কত লোক পাও মুছিয়াছে তার গায় ||
থাকুক আমার কার্য আর হীন জাতি |
তাহারে আসিয়া কত মারিয়াছে লাথি ||
অন্য ঠাঁই গিয়া তুমি বড়াই দেখাও |
অন্যঠাই কহ গিয়া চলি ঘর যাও ||
আর যদি কথা কহ করিয়া যে রোষ |
বিদ্যানাশ করিব যে মোর নাহি দোষ ||
মর্মকথা কহে দেবী কোপে শিষ্যগণ |
মিছা পরিপাটি করি কহিছে বচন ||
বলি সভা বিদ্যমানে পয়ার প্রবন্ধ |
মিলিল আসিয়া গীত লাচারির ছন্দ ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
৮
করাইব সেবা সতী না যাও গোয়াল জাতি ভাঙ্গিব মুখের তরবারি | জানাইয়া জ্ঞাতি লোকে ফল করাইব তোকে কি করিবে তোর ধন্বন্তরী || আমারে বলিবা ওঝা লোকে তোরে করে পূজা এতেক তোমার দুষ্টমতি | আনি সুচতুর কার্যে থাকিয়া চান্দর রাজ্যে বাদ যার পদ্মার সংহতি | আমি যখন বাড়ি যাব কান্দিয়া স্বামীরে কব যত কিছু কহিছ আমারে | আমি গোয়ালের নারী দধি ঘোল বেচি নারি আজি ঠেকায় তোমারে || শুনিয়াছি আদ্যমূলে দেশে সে গোয়াল পেলে কার গালি কত দিবি আর | শুনি গোয়ালিনী বাণী শিষ্যগণ কানাকানি বিজয় গুপ্ত রচিল সুসার ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
ওঝার পায়ের ধুলা লইয়া লিপিল শরীর ||
মরে ছিল শিষ্যসব জীল আরবার |
হেন মতে সবাকার হউক নিস্তার ||
শিষ্য জীয়াইয়া ওঝা পায় মারে তালি |
কোপমনে ওঝা পদ্মারে পাড়ে গালি ||
কোপে ওঝা পদ্মারে বলে খলতর |
লাচারি পড়িল ভাই বলহ সত্বর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১০
আমারে মারিতে হেন তোমার মনে লয় কেন কেবা তোরে দিল হেন বুদ্ধি | গোটা কত নাগ পাশ তেকারণে লোকে ঘোষ বিবাদে আগল বিষহরি | হেন বুদ্ধি কেবা করে লোকে দোষে তাহারে আমি বিষ খাইলে না মরি || কি কহিব আপন কথা মহাজ্ঞান দিল নেতা তেকারণে আজ অমর | সাপ খাম বিষ পেম চারিযুগে মুই জীম যমের ভয় নাহিক আমার || বনে বনে খেলম ক্ষণেক বাঘেতে চলম ক্ষণেক চলম মহিষের পৃষ্ঠে | খেচর দানব দূত প্রেত পিশাচ ভুত যক্ষিণী পলায় মোর দৃষ্ট || মুই ধোপাঝি শিষ ঝারি ভরে পেম বিষ তক্ষক চিবাইতে পারি দন্তে | ধন্বন্তরি কথা কয় পদ্মার মনেতে ভয় বিজয় গুপ্ত রচিল সানন্দে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১১
বিষ দধি মিছা গেল পদ্মা পাইল লাজ |
নেতার ঠাঁই জিজ্ঞাসা করে কি করিব কাজ ||
মোরে বুদ্ধি বল নেতা রজক কুমারী |
কিরূপে বধিব আমি ওঝা ধন্বন্তরি ||
বিষ খাইল ওঝা না করিল বিমরিষ |
কি বুদ্ধি করিব নেতা বল উপদেশ ||
পূজা যদি না হইল জীবনে কিবা ফল |
এত বলি পদ্মাবতী কাঁদিয়া বিকল ||
নেতা বলে কি করিব মনে ভয় করি |
ওঝারে বধিতে আমি যুক্তি দিতে নারি ||
শঙ্কুর হেন শিষ্য মোর নাহি ত্রিভুবনে |
গুরু হইয়া শিষ্যের মৃত্যু কহিব কেমনে ||
আমা ছাড়ি শঙ্কু রায় নাহি জানে আর |
সেবায় সন্তুষ্ট হইয়া দিলাম তারে বর ||
আমার প্রতাপে ওঝা অমর অজয় |
প্রাণের অধিক আমার ওঝা শঙ্কু রায় ||
কোপ কর তাপ কর যেবা কর কর্ম |
তবু না কহিব ওঝার যে মর্ম ||
তোমার কাজ থাকুক যদি সাজিয়া আসে যম |
তবু না টুটিবে আমার ওঝার বিক্রম ||
জগত জননী তুমি যেবা মনে লয় |
আপনি ভাবিয়া দেখ আছে যে উপায় ||
এতেক বলিয়া যদি রজক কুমারী |
মনে মনে ভাবে জয় বিষহরি ||
জগত জননী দেবী ভাবিতে চিন্তিতে |
শঙ্কুর নগর দেবী চলিল ত্বরিতে ||
সহেলার বেশ ধরিলা বিষহরি |
কপটে বাধিতে যায় ওঝা ধন্বন্তরি ||
ধন্বন্তরির স্ত্রী কমলা সুন্দরী |
তাহার সঙ্গে সহেলা করে দেবী বিষহরি ||
পদ্মার সঙ্গে কহে কথা কৌতুক হইল বড়ি |
সংবাদ পড়িল ভাই বলরে লাচারি ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১২
যদি শঙ্কুর না থাকে বাড়ি তবে প্রবেশিও পুরি পাছ দ্বারে যাইও তাড়াতাড়ি | তবে যদি দেখা হয় দিও তুমি পরিচয় কহিও অতি সতী ব্রাহ্মণী নারী || কহিবে কমলা সুন্দরী কহিও আমি জাতি ব্রাহ্মণী লইতে আইলাম তোমার শরণ || সর্বসুখ অতিশয় কর্মদোষে স্বামী নির্দয় আজি নিশি দেখিলাম স্বপনে || এ সব কহিও কথা তবে পাবা মর্মকথা চলে পদ্মা নেতার বচনে || বিজয় গুপ্ত বলে সার মোর গতি নাহি আর দয়া করি রাখ ও চরণে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
এতেক বলিয়া যদি লইতে পার লাগ |
কার্যসিদ্ধি হইবে আর বাড়িবে সোহাগ ||
মর্ম বৃত্তান্ত জানিও মৃত্যু কাহার হাতে |
এ সব বৃত্তান্ত তুমি জানিও ভাল মতে ||
আজি তার ঠাঁই জিজ্ঞাসিব যে নিশ্চয় |
হরষিত পদ্মাবতী আপন হৃদয় ||
পদ্মাবতী দিলেন তারে বিস্তর অলঙ্কার |
কমলাও দিল তারে অনেক ব্যবহার ||
বিদায় করিয়া ঘরে গেল কমলাসুন্দরী |
শ্বেত মাছি হইয়া রহিল বিষহরি ||
দিবা অবসানে ওঝা আসিল বাড়িতে |
করিল ভোজন স্নান যে আছে বিহিতে ||
ভোজন করিয়া ওজা শুইল দিব্য খাটে |
কমলা সুন্দরী গিয়া বসিল নিকটে ||
অলঙ্কারে কমলা হইয়া বিভূষিতা |
স্বামীর নিকটে গেলা হইয়া আনন্দিতা ||
কামদৃষ্টে চাহিয়া জয় বিষহরি |
পঞ্চবাণ ছাড়ে কাম সুসন্ধান করি ||
শঙ্কুরে বলে কমলা মোর প্রাণধর |
আলিঙ্গন দিয়া মোর প্রাণ রক্ষা কর ||
শৃঙ্গার আশায় ওঝা হাত দিল গায় |
ক্রোধ করি কমলা দূরে সরিয়া যায় ||
সহজেতে হইল আমি ওঝার ঘরণী |
গুণেজ্ঞান কারে বলে কিছু নাহি জানি ||
এতেক জানিলে প্রভু মোর পুরে আশ |
হাসিতে হাসিতে বসি তোমার পাশ ||
মুই জিজ্ঞাসিলাম তুমি না কর কপট |
তবে কামরসে বসি তোমার নিকট ||
অন্তরীক্ষে পদ্মাবতী প্রসন্ন বদন |
ওঝার ঠাঁই কমলা জিজ্ঞাসে তখন ||
কমলা বলে প্রভু কহত সত্বর |
কিরূপে হইল তোমার অক্ষয় পাজর ||
মহাজ্ঞানের কথা কহিবে বিস্তর |
তবে সে তোমার সঙ্গে থাকিব একত্তর |
পুত্র কন্যা না হইল সংসারে নাহি ব্যথা |
কিরূপ আমার ঠাঁই কহ সত্য কথা ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১৪
ওগো প্রিয়ে কমলা সুন্দরী শুন আমি তোমা বলি হেন বোল বলা তব উচিত না হয় | তুমি বল দেখি সই আর হইলে প্রাণ লই যত দুঃখ উপজিল কায় || আমারে লইতে সন্ধি কোন চোরে দিল বুদ্ধি সে তোর আসিল সর্বনাশে | | এতকাল জানি আমি অতি শুদ্ধ নারী তুমি আজি কেন এ বোল প্রকাশে || নিশ্চিত থাক তুমি অতি দীর্ঘজীবী আমি মরণ নাহিক মোর ভিতে | চিরকাল মোর সঙ্গে থাক তুমি নানা রঙ্গে বিচ্ছেদ না হবে জন্মান্তরে || তুমি না জান সার এ বোল না বল আর মূলতত্ত্ব না কহিতে যুয়ায় | শুনিয়া ওঝার কথা মনসার মমে ব্যথা বৈদ্য বিজয় গুপ্ত গায় ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১৫
স্বামীর কথায় কমলার চিত্ত অসুস্থ |
চরণে পড়িয়া বলে শুন প্রাণনাথ ||
বাপ মোর পুণ্যবান মা ভগবতী |
বড় ভাগ্যে পাইলাম তোমা হেন পতি ||
এতকাল প্রভু মোরে না কহিলা সার |
কেমনে মরণ হয় কেমনে নিস্তার ||
না কহিলা মহাজ্ঞান মূল কথা শুদ্ধি |
আপদে পড়িলে তবে ভাবিয়া কোন বুদ্ধি ||
কোপে না কহিলা মোর মনে বাসে |
ভাবিতে চিন্তিতে মুখে রাও না আসে ||
কমলার বোলে ওঝার মনেতে কৌতুক |
হেন ছার কর্মে প্রিয়া মিছা পাও দুঃখ ||
আমি যেরূপ ওঝা কেবা জানে গুণ |
যে কথা কহিব আমি চিত্ত দিয়া শুন ||
শুন প্রিয়া শশীমুখি তোমারে বুঝাই রে |
কহিব মর্ম কথা বুঝাইব পরে ||
তক্ষক বাসুকী আদি যত যত নাগ |
দন্তে চিবাইতে পারি যত পাই লাগ ||
গুণের দর্পে মোর আকাটা আকূট |
একমাত্র আছে মোর মরণের পথ ||
অমর শরীর নহে অবশ্য মরণ |
আমার লিখন নাই যমের ভবন ||
সাপ মাত্র বৈরী আছে শুন সাবধানে |
আমি মাত্র জানি তারে মনসা পাছে শুনে ||
সেও আর আমি যদি থাকি এক ঘরে |
তবু সে প্রাণে মোরে কি করিতে পারে ||
ভাদ্র মাস মঙ্গলবার অমাবস্যা হয় |
তক্ষকে মস্তক যদি খায় ত নিশ্চয় ||
সেই যদি লাগে পায় নির্বন্ধে আমার |
তবে সে তাহার হাতে বিপদ আমার ||
প্রাণ সমর্পিলাম রাখিও যতনে |
একারণে মর্ম কথা কহি তোমার স্থানে ||
তক্ষকে দংশে যদি ব্রহ্মতালুকায় |
তবে সে আমার মৃত্যু জানিও নিশ্চয় ||
তাহাতে ঔষধ দিলে আছে প্রতিকার |
ঝুলিতে ঔষধ তবে আছে ত আমার ||
রথে থাকি মনসা শুনিলা সত্বর |
বিজয় গুপ্ত রচে পুথি মনসা বর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
পাত তুলিয়া চাও কিবা আছে তলে ||
ধোপাঝী বোলে মোর চিত্ত অসুস্থ |
পাত তুলিয়া দেখি একগোটা ভাত ||
কোপে বলে ধোপাজী কি বলিলি ছার পো |
পাতের তলে ভাত থুইলা ভান্ডিলি মো ||
ক্ষে যারে আরে পুত্র ভোজন এড়ি উঠ |
মোর বরে হও পুত্র আকটা আকূট ||
তক্ষক আদি যত নাগ মহাবিষময় |
তোর নাম শুনিয়া পলাইয়া যাবে ভয় ||
নেতার বচনে আমি বড় পাইলাম ব্যথা |
যোড় হাতে জিজ্ঞাসিলাম সার কহ মাতা ||
পাতে থুইলাম ভাত না দেখিলাম দৈবে |
কেমনে মৃত্যু মোর কহিবে যে মোরে ||
তোমার চরণ বই আর গতি নাই |
মরণের প্রতিকার কহ দেবী আই ||
স্থির হইয়া বলিলাম না করিলাম ভয় |
কহিব সকল কথা যে জানি নিশ্চয় ||
বিধাতার নির্বন্ধ মোর দোষ নাই |
সর্পমুখে হইল তোমার মরণের ঠাঁই ||
চারিযুগে নেতার কথা সত্য হেন জানি |
যে মতে মিলিবেক সকল সন্ধানি ||
গুণের কারণে সর্প না করিও হেলা |
ভাদ্রমাসে মঙ্গলবার অমাবস্যা মেলা ||
স্ত্রীর সঙ্গে শুইয়া থাকিবে দিব্য খাটে |
হেনকালে তক্ষক যদি দংশে ললাটে ||
নিশ্চয় সেই দিন তোমার মরণ |
যত তন্ত্র মন্ত্র তোমার না হবে স্মরণ ||
ঔষধ আনিয়া দিলে বাঁচন নিশ্চয় |
একদন্ডের অধিক হইলে ঔষধের গুণ নয় ||
এত বলি ধোপা ঝী গেল নিজ বাসে |
ত্বরিত আসিলাম আমি আপন আবাসে ||
মোর ভয় সাপ বেড়ায় যেন চোর |
কোথায় থাকিয়া তক্ষক ললাটে দংশিবে মোর ||
স্ত্রীবুদ্ধি প্রিয়া তুমি চঞ্চল চরিত |
স্থির হইয়া শুন তুমি নাগের নাহি ভিত ||
স্ত্রীর স্থানে ওঝা কহিল নিজ দশা |
নিকটে থাকিয়া তাহা শুনিল মনসা ||
আপদ নিকট হলে নানা বুদ্ধি ঠেকে |
তথায় আছিল পদ্মা ওঝা নাহি দেখে ||
স্বামীর বচনে কমলার দূরে গেল ভয় |
হাসিয়া আপন ঘরে গেলা মনসায় ||
দুই জনে নানা কথা হাস পরিহাস |
রতি সুখে কুতূহলে রজনী প্রকাশ ||
ধন্বন্তরি মর্মকথা পাইল বিষহরি |
ডাক দিয়া আনে পদ্মা নাগ অধিকারী ||
খাইতে বসিতে পদ্মার আর চিন্তা নাই |
ভাদ্র মাসের অমাবস্যা কত দিনে পাই ||
এক দুই করিয়া পদ্মা লিখে নিতি নিতি |
আচম্বিতে ভাদ্র অমাবস্যা তিথি ||
পদ্মা বলে বিধি মোর মিলাইল কাজ |
ডাক দিয়া আনিল তক্ষক মহারাজ||
যত উপজিল কথা কহিল তখন |
ধন্বন্তরি বধিতে চল এইক্ষণ ||
ব্রহ্মতালুকায় তাহার ঘা দিবা তুমি |
মন্ত্রবলে ঔষধ হরিয়া নিব আমি ||
এতেক শুনিয়া নাগ চলিল ত্বরিত|
ধন্বন্তরির ঘরে ঢুকিল আচম্বিত ||
খাটালে দাঁড়াইয়া নাগ চারিদিকে চায় |
ঔষধের ঝুলি হরিয়া নিল মনসায় ||
অকাল নিদ্রা হয় বড় অশুভের চিহ্ন|
দুইজনে নিদ্রা যায় সুখে হইয়া ক্ষীণ ||
তক্ষক বলে আমি আর কিবা চাই |
নিদ্রায় ধন্বন্তরি ওঝা এইকালে খাই ||
নিদ্রা যায় ধন্বন্তরি আপনার সুখে |
বজ্র ঠোকর মারে ব্রহ্মতালুকে ||
বিষ উগারিয়া নাগ উভালড়ে ধায় |
ঔষধের ঝুলি লইয়া মনসা পালায় ||
নিদ্রায় থাকিয়া ওঝা দেখিল স্বপন |
তক্ষকে দংশিল ওঝার হইল মরণ ||
কোপমনে না চেতায় কমলাসুন্দরী |
আসন করিয়া যোগ ধরে ধন্বন্তরি ||
কিবা যোগ কিবা মন্ত্র কিছু না আসে মুখে |
কাল পুরিলে তার কার বাপে রাখে ||
হাত বাড়াইয়া চাহে ঔষধের ঝুলি |
কপটে হরিয়া তাহা নিল বিষহরি ||
স্ত্রীর ঠাঁই মর্ম কথা কহিয়া হারাইলাম সকল |
স্ত্রীর ঠাঁই মর্ম কহে তাহার জীবন বিফল ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১৭
আমার মরণ জানি কারে বলিয়াছ ধনি সেই প্রাণ নিলগো সম্প্রতি | স্বামীর মরণ কথা বলিয়াছ যথা তথা এই তব রহিল অখ্যাতি || যার স্বামী সাপে খায় সে কেমনে নিদ্রা যায় লোক মুখে থুইলা অপযশ | বারে বারে বলি আমি কথা না শুনিলে তুমি এবে মোর প্রাণ হইল নাশ || না কহিলে মর্ম কথা মনেতে পাইতা ব্যথা কথা শুনি করিলা যে কর্ম | আগে যদি জানি হেন তবে কি আমি কখন স্ত্রীর কাছে বলি সব মর্ম || বিষেতে পরাণ পোড়ে তুমি সুখ শয্যা-পরে না শুনিলা আমার বচন | ওঝার করুণা শুনি চৈতন্য পাইলা ধনি কমলা যে যুড়িল ক্রন্দন ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১৮
আহা প্রভু প্রাণপতি কোথা গেল এত রাতি একাকিনী ফেলিয়া আমায় | আজীবনে কোন দিন না করিলে কার্য হেন এবে কেন হইলে নির্দয় || কারে বা করিব রোষ সকলি আমার দোষ অগ্নি দিলাম আপন কপালে | কোথা হইতে আইল নারী সহেলার বেশ ধরি সে রাক্ষসী প্রভুরে নাশিলে || হায় আমি কি করিব কার কাছে দাঁড়াইব প্রভু বিনে কি হবে আমার | স্বামী বিনে অবলার সংসারে কে আছে আর বিপদেতে কে করে নিস্তার || হায় হায় কব কারে শোকেতে হৃদি বিদরে কোথা গেল ডাকিনী সহেলা || মনেতে কুমতি রাখি আমারে শিখাল সখী স্বামী সঙ্গে করিবারে কলা || প্রভুর মরণ লাগি আমি যে দোষের ভাগী স্বামী বধে কি হবে আমার | আমি অতি অভাগিনী কুলবতী কলঙ্কিনী এ পাপে মোর নাহিক নিস্তার || হায় আমি কি করিব জলেতে পরাণ দিব নহে প্রাণ ত্যজিব অনলে | পদ্মাবতী কর সার বিলাপে কি হবে আর সানন্দে বিজয় গুপ্ত বলে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১৯
কোপ মনে নাহি কমলা সুন্দরী |
অতি কোপে বলে তারে ওঝা ধন্বন্তরি ||
দ্বিচারিণী মত কর্ম করিলা বিস্তর |
যোগের নিয়ম কথা কহিল বিস্তারি ||
তোমার সনে আমার দেখা না হইবে আর |
তেকারণে করিলা এ সব অবান্তর ||
যে বৈরী আছিল তাহার পুরিল আশ |
তোমা হইতে তাহার কার্যের প্রকাশ ||
ওঝার শয্যায় শুনি ক্রন্দনের রাও|
আথেব্যাথে শিষ্যগণে তুলিলেক গাও ||
শিষ্যগণ বলে বাপ এ কোন বৃত্তান্ত |
যোগ ভাবিয়া বাপ চিত্ত কর শান্ত ||
যার হাতে পাইয়াছ তুমি অবসাদ |
কেন ভাব গুরু তুমি এতেক প্রমাদ ||
যদি যোগ ভাব গুরু হয়ে এক মন |
বিপক্ষে কি করিবেক চিন্তা অকারণ ||
ওঝা বলে শিষ্যগণ কত সহিতে পারি |
কপটে প্রাণ হরিয়া নিল বিষহরি ||
স্ত্রীর ঠাঁই মর্ম কহি হারাইলাম সকল |
তেকারণে বিধি মোর পুরাইল কাল ||
ব্রহ্মগোটা ভস্ম হইল তক্ষকের ঘায়ে |
কতদূর উড়াইয়া নিল তার বায়ে ||
মন্ত্রবলে ব্রহ্মগোটা জীল আরবার |
আপনা রাখিতে গুরু লাগে কত ভার ||
ঔষধের ঝুলি গুরু থুইলা কোথায় |
তাহাতে আছে বুঝি জীবন উপায় ||
তাহারে আন গুরু দৃঢ় করি মতি |
বিজয় গুপ্ত বলে তাহা নিল পদ্মাবতী ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
২০
ওঝা বলে শিষ্য সব শুনহ বচন |
ঔষধ আনিয়া ঝাটে রাখহ জীবন ||
মলেয়া মন্দার মেরু হিমালয় গিরি |
তাহাতে ঔষধ আছে নামে শ্রীহরি ||
সেই ঔষধ আন গিয়া রাত্রের ভিতর |
তবে সে জানিও বাপ আমার নিস্তার ||
মেরুদন্ড গুরুর যে রাখিও যতনে |
রাখিও গুরুরে সবে অতি সাবধানে ||
আমি কি কহিব গুরু তুমি জান ভালে |
লাগিল ঘরেতে চুরি নাই কোন কালে ||
অমাবস্যার চান্দ গুরু ঘরে করে বন্দী |
তিন কালের সার গুরু জানে নানা ফন্দী ||
পূর্ণিমার চন্দ্র যেন যোলকলা পূর্ণ |
ষোলকলা পরিপূর্ণ এই তার চিহ্ন ||
যাবৎ না আসি গুরু ঔষধ লইয়া |
তাবৎ থাকিও গুরু সাবধান হইয়া ||
লইয়া পায়ের ধুলি চলিল সত্বর |
গাইছে বিজয় গুপ্ত মনসার বর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
২১
চলিল ধোনা মোনা ওঝারে করিয়া মানা পর্বতে ঔষধ আনিবারে | বিশাল্য করণী আনি বাঁচাইতে ওঝার প্রাণী ঘা মুখে লাগায়ে দিয়ে তারে || তোমারে কহিলাম সার সব দেখি অন্ধকার মন্ত্র মোর মুখে নাহি আসে | রহে মোর কলেবর সঘনেতে বহে স্বর নাশিল আমার বুদ্ধি বিষে || বিষেতে করিল অন্ধ নাহি বুঝি ভাল মন্দ অস্থির করিল মোরে বিষে | ঔষধের ঝুলি হরি নিয়া গেল বিষহরি প্রাণ মোর রহিবে কিসে || শুনিয়া ওঝার বচন চলিল যে দুই জন যথায় ঔষধ শীঘ্রগতি | বিশাল্যকরণী পাই তবে আর ভয় নাই ঔষধ আনিব এই রাতি || ঔষধ লইয়া হাতে ধোনা মোনা হরষিতে চলিলেক ধন্বন্তরি যথা | হেন কালে নদীতীরে ওঝারে সৎকার করে কমলা সঙ্গেতে জ্বলে চিতা || তার মাঝে চিতাপরি কান্দে সব গড়াগড়ি শিষ্যগণ কান্দে উচ্চৈস্বরে | তাহা দেখি দুইজন বিস্মিত হইল মন মায়া বলে সকল পাসরে || কপটেতে বিষহরি কমলার বেশ ধরি ডাকিলেন পুত্র পুত্র বলি | আহা রে দারুণ বিধি হারালেম আঁচলের নিধি প্রভু বিনা হারালেম সকলি || কমলারে দেখে সবে দুভাই ব্যাকুল তবে মস্তকে হইল বজ্রাঘাত | কমলা নিকটে এল ঔষধ কুন্ডে ফেলিল কান্দে দোহে মাথে দিয়া হাত || কিবা পুত্র পরিবার ঘরেতে না যায় আর কান্দে দোহে পড়িয়া ভূমিত | যদি ইচ্ছা কর সতী ভজ তবে পদ্মাবতী বৈদ্য বিজয় গুপ্তের রচিত || তুমি যে আমার গুরু জ্ঞানেতে হও কল্পতরু সংসারে তোমা নাহি বৈরী | সবে তোমা ভালবেসে কিবা দেবে কি মানুষে ভিন্ন ভাবে দেখে বিষহরি || তুমি চলে যাও কোথা আমাকে ফেলিয়া হেথা হেথা রব আর কি সাহসে | মনসা-চরিত গীত শুনিলে সে সুললিত গাইলেন মনসার দাসে ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
|
চান্দর সঙ্গে বাদের উপায় কি ||
আপনে না করে পূজা জগতে করে মানা |
পথে ঘাটে দেয় বেটা চৌকি আর থানা ||
বিজয় গুপ্ত কবি কহে কীর্তি মনসার|
ধন্বন্তরি বধ পালা এইখানে সোসর ||
. **************** সূচি...
মিলনসাগর
কবি বিজয় গুপ্তর মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১ রত্ন সিংহাসনে আছেন বিষহরি | ডাক দিয়া আনিলেন রজক কুমারী ||
|
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
৩
আপন পুরীতে তবে গেল বিষহরি |
ডাক দিয়া আনিলেক রজক কুমারী ||
পদ্মা বলে শুন নেতা আমার বচন |
যে কথা কহি আমি তাহে দেও মন ||
একে একে বলিল দেবী যত বিবরণ |
যেরূপ চতুর দেখিলাম শঙ্কুর শিষ্যগণ ||
কাটিলাম গুয়াবাড়ি জীয়াইল ধন্বন্তরি |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
৬
শুনি কোপ বাড়িলেক দেবী মনসার |
শুনিয়া গোয়ালিনী বলে আরবার ||
কর্ম করাইতে ভাল পাইয়াছি ভাতার |
শিষ্যের বচনে দেবী বলে আরবার ||
যে জন আমার ধন দেখিতে না পারে |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
৭
তোমার জাতি ধর্ম ভাল শুন গো সুন্দরী |
দুনা কড়ি লও যেবা লয় চিতে |
ভালমন্দ জান তোমরা কোঁদল করিতে ||
আর যত কড়ি পাও যেই সোই রীতে |
দুঃখ হয় গোয়ালিনী সে সব বলিতে ||
পসার ভাঙ্গিয়া তোমার হাঁড়ি কর চূর |
আমার ঠাঁই দেখাও তোমার হার কেয়ুর ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
৯
গোয়ালিনী বলে আমি সত্য করি কই |
কোন কালে বেচি নাই চুকা ঘোল দই ||
সর্বলোকে খায় দধি স্বাদ নহে টুটা |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১৩
নেতার বচনে পদ্মাবতী স্থির করে মন |
দিব্যবস্ত্র অলঙ্কার লইল তখন ||
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
১৬
শিশুকালে যখন পুষিল বাপ মায় |
একমনে পূজিলাম ধোপাঝীর পায় ||
গুরুবরে দেখিলাম সাক্ষাৎ দেবকায়া |
কবি বিজয় গুপ্তর
মনসা মঙ্গল
ধন্বন্তরি বধ পালা
২২
বসিল দুই শিষ্য ঝাড়ি গায়ের ধূলা |
এই পাতায় কোনো ভুল-ত্রুটি চোখে পড়লে অথবা যদি কোথাও ভুল বলে মনে হয়, তাহলে আমাদের এই ইমেলে জানাবেন। আমরা শুধরে নেবার চেষ্টা করবো। srimilansengupta@yahoo.co.in
|
|
|