মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ মহাতব-এর কবিতা
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
.        বিভাসমিশ্র --- ঝাঁপতাল


উঠে ওই রাঙা রবি, আলো করি ভূবনে |
জাগে সব নর নারী, দেখি তাঁর কিরণে ||
হাসিল গগন-তল, হাসিল সাগর-জল,
পুলকিত পাখিদল, ঘোষে হর্ষ-সুতানে |
সবে করো তাঁর নাম, বৈকুণ্ঠ যাঁহার ধাম,
করো তাঁর গুনগান, কীবা বনে বিজনে ||
            
          *******************

.                                                   উপরে
*
.        গৌড়সারঙ্গ --- কাওয়ালি


ওই দেখো ভানু ক্রমে মধ্যাকাশে বিরাজিল |
নদী-সরসী-সলিল তাঁর তেজে উজলিল ||
প্রখর কর প্রভাবে, অবসন্ন সবে ভবে,
নলিনী হাসে গরবে, পাখি নীড়ে প্রবেশিল |
পবন পাপকততুল, জরোজরো ফুলকুল,
হে রবি বিজয়ে কহো, কে তোমারে বিরচিল ||

        
      *******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.        গৌড়সারঙ্গ --- কাওয়ালি


তারাদল নিশা সহ ধীরে ধীরে লুকাইল |
বিকচ-কমলমুখী ঊষা হাসি দেখা দিল ||
বিধু-ছবি সুমলিন, দীপশিখা প্রভাহীন,
ভূবন যেন নবীন, রুচির রাগে শোভিল |
মৃদু মৃদু গন্ধবহ, বহিছে সৌরভ সহ,
হে ঊষে বিজয়ে কহ, কে তোমারে বিরজিল ||

      
             *******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     সিন্ধুমিশ্র --- একতালা


সকলই তো গেছে যাতনা রয়েছে |
মনোসাধ মম, সব মিটে গেছে ||
পুত্র পরিবার, পিতা মাতা আর,
সকলই তো গেছে, আছে হাহাকার,
সুখ গেছে চলে, আছে তার স্থলে,
দুঃখের অনল, সতত জ্বলিছে ||

    
       *******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     মুলতান --- একতালা


আজি নিশি শশিহীনা, যেন মসিমাখা কায় |
এত তারা তবু তারা, সে অভাব না ঘুচায় ||
মোময়ী বিভাবরী, আঁধারে মুখ আবরি,
কাঁদিছে যেন গুমরি, শশি-শোকে উভরায় |
সবই আছে এক বিনা, যমিনী লাবণ্যহীনা,
সতী হলে পতিহীনা, আর সে কিছু না চায় ||
বিজয়-আশ্বাসবাণী, শুনো গো নিশা-কামিনি,
পুন আসি নিশামণি, হাসি তুষিবে তোমায় |
কিন্তু কাল-ক্রুর হিয়া, কত চিত আঁধারিয়া,
লয়েছে যাহা হরিয়া, দেবে কি তা পুনরায় ||

  
             *******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     ধ্যানমিশ্র --- একতালা


নদী ও সময়, সমান উভয়,
ধীরে ধীরে বয়, লয়ে সমুদয় |
সচেষ্ট সুজন লভয়ে রতন,
জড় অভাজন, দুঃখভাগী হয় ||
ক্রমাগত ধায়, পিছে না তাকায়,
হাসায় কাঁদায়, যথা মনে লয়,
অনন্ত সাগরে, মিশে গেলে পরে,
কিছুতেই আর আসে না ফিরে,
হলে অজতন, জন্মের মতন,
আরতো কখনও পাবে না বিজয় ||


.        ******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     গৌরী --- একতালা


মা বলে তোরে ডাকিলে জুড়াবে এ পোড়া মন |
মা-হীনের বড়ো সাধা করিতে মা সম্বোধন ||
মা-স্নেহৃবিশ্ব-বাঞ্ছিত, বিজয় তাহে বঞ্চিত,
সম্বল কেবল তাত, তিনি জেন সুখে রন |
সুশীতল তাঁর প্রেমে, জুড়াই এ মরুভূমে,
সে ভাবে সতত তিনি, তোষেন মন জীবন |
জগদম্বে কৃপা-খনি, তুমি বিনা কে জননী,
মাতৃহীন অভাগার, ঘুচাবে মনোবেদন ||


.        ******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     বসন্তবাহার --- একতালা


হেরি বসন্ত-শাখায়, কোকিল হর্ষে গায় |
তরুগণ শোভা পায়, শীত ভয়ে পলাইল ||
দশ দিক আমোদিত, ত্রিভূবন হরষিত,
ফুলকুল বিকশিত, অলিদলে মাতাইল |
স্বভাবের শোভা দেখি, জুড়ায় সবার আঁখি,
বিজয় হইয়া সুখী, বিধাতারে প্রণমিল ||


.        ******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     সাহানা --- ঝাঁপতাল


আইল বরষা-কাল ছাইয়া আকাশ ভাল,
ঢাকি রবি-কর-জ্বাল ছুটিছে জলদদল ||
প্রভঞ্জন শনশনে, ভগ্ন করে তরুগণে,
ভীষণ মেঘ-গর্জনে, কম্পিত সদা ভূতল ||
আঁধারিয়া চারিধার, পড়িতেছে বারি-ধার,
অনিবার এ আঁধার বিদ্যুতে বাড়ে কেবল |
দিগঙ্গনা ম্লানমুখী, ধরণি মুখ নিরখি,
হয়ে পর-দুঃখে দুঃখী, কাঁদে বুঝি অবিরল ||
গেলে এ দুঃখ-যামিনী, পুন আসিবে অবনী,
হইয়া শস্য-শালিনী, পাবে সুখ নিরমল |
দুঃখ দেন ভগবান, করিবারে সুকল্যাণ,
দুঃখান্তে সুখ বিধান, এ নিয়ম অবিচল |
শোক ক্ষোভে জ্ঞানোদয়, কষ্টভোগে কর্ম লয়,
রমেশ-পদে বিজয়, বিশ্বাস রাখো অটল ||


.            ******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     জয়জয়ন্তী --- ঝাঁপতাল


ধরায় অমরা-নিন্দি অলকা সুখ-আগার |
জনমভূমির মতো বলো কোথা আছে আর ||
যথা ক্ষুদ্র তরুলতা, থাকে মরমেতে গাঁথা,
বায়ু সদা স্নেহ-কথা, কহে কানে অনিবার |
এ স্থান জননী সম, ত্রিলোকেতে নিরুপম,
মায়ের হৃদয় সম, শুভ প্রেম-পারাবার |
যেখানেতে ঘাটে মাঠে সুখস্মৃতিফুল ফোটে,
পশু, পক্ষী, পতঙ্গটি, মনে হয় আপনার |
স্বাস্থ্য, ধন, মান, আশে, ছাড়িয়া হেন স্বদেশে,
দেশান্তরে যায় যেবা, কত কষ্ট হয় তার |
ত্যজি আজি নিজালয়, চলিলাম হিমালয়,
শ্রীপদে হিমাদ্রি-সুতে, অর্পিয়া দাসের ভার |
বিজয় তব তনয়, কোথাও করে না ভয়,
চিন্ময়ী মায়ের কোলে, সুখেতে দেয় সাঁতার ||


.            ******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     লুমখাম্বাজ --- ঠুংরি


ভালোবাসা বড়ো খাসা, লোভে মেশা কভু নয় |
আশার পিপাসা যাতে সে যে নেশা বিষময় ||
আপনা ভুলিলে পরে, ভালোবাসা যায় পরে,
তৃষা আশা লোভ ইচ্ছা কিছু তাতে নাহি রয়
স্বার্থ আছে মূলে যার, স্নেহ নাম দিলে তার,
সংহারক হলাহলে সুধা খ্যাতি দেয়া হয় |
প্রেম ত্রিদিবের ধন, পেতে তার আস্বাদন,
করেন সদা যতন, পূতচেতা সাধুচয় ||
ভক্তি-কল্পকরু-মূলে, এ ফল সতত মেলে,
ভবে দু একটি স্থলে ; পাবে কিছু পরিচয় |
পিতা মাতা হৃদিপটে, সে মুরতি স্বল্প ফুটে,
সুন্দর বিকাশ তথা যথা ঘটে চিত্তজয় ||
পিতৃ মাতৃ মনোভূমে, অঙ্কুরিয়া ধরাধামে,
উঠি স্বর্গে ক্রমে ক্রমে, বিভুপদে পায় লয় |
পর প্রতি স্বার্থ লাগি, হলো পরে অনুরাগী,
সে লোভ বিষমভ্রমে লোকে ভালোবাসা কয় |
হরি হে করুণা-গুণে, প্রেমকণা দাও মনে,
যাতে পায় শ্রীচরণে, সে ভিক্ষা মাগে বিজয় ||


.            ******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর      
*
.     ইমনকল্যাণ --- চৌতাল


ভারতে ভীরুতা কেন, যথা ভারত আখ্যান |
কী দোষে পাপ প্রবেশে, যথা রাম-গুণ-গান ||
রাশি রাশি পাপ-নাশি, সুচরিত দিবানিশি,
পশি দেশবাসী কর্ণে, সাদা করে জ্ঞান দান ||
যথা পারথ ভীষ্ম ধীর, বলি, কর্ণ, যুধিষ্ঠির,
শত রবি ম্লান করি, ইতিহাসে দ্যুতিমান |
সতী বীর-প্রসবিনী, পূত-চরিত-শালিনী,
ভার-রমণী-নামে, ভক্তি-পূর্ণ হয় প্রাণ ||
যথা সীতা, উমা, রমা, ত্রিজগতে নিরুপমা,
জননী-রূপিণী নারী, সবে দেন এই জ্ঞান |
যাহার উন্নতি লাগি, দেবগণ অনুরাগী,
যথা বুদ্ধ, কৃষ্ণ রূপে, উপদেষ্টা ভগবান ||
তথা কেন হেন দশা, কাহারে করি জিজ্ঞাসা,
কে পুরাবে মম আশা, সবে করে জ্ঞান ভান |
শৃগাল-সিংহ ঔরসে, জন্মিল কি পাপ বশে,
দেববংশধরগণ, কেন পিশাচ সমান ||
যাহাতে সুধা সম্ভবে, তাহাই বিষ প্রসবে,
ভারতে সে দশা এবে, বিজয়ের অনুমান ||


.            ******************

.                                                   উপরে    


মিলনসাগর