মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ মহাতব  --  ১৮৮৫ সালে বর্ধমানের মহারাজা আফতাবচাঁদ
মহাতব মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা জান | মৃত্যকালে তিনি তাঁর মহারাণি বনদেয়ী দেবীকে
দত্তক নেবার অনুমতি দিয়ে গিয়েছিলেন | সেই অনুমতির বলে ১৮৮৭ সালে মহারাণি, তাঁর এস্টেটের
দেওয়ান রাজা বনবিহারী কাপুরের পুত্র বিজনবিহারী কাপুরকে দত্তক নেন | দত্তক নেবার পর এই পুত্রের
নতুন নামকরণ করেন --- বিজয়চাঁদ মহাতব |

মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতবের রাজ অভিষেক হয় ১৮৮৭ সালে মাত্র ৬ বছর বয়সে | ১৯০২ সালে তিনি প্রাপ্ত
বয়স্ক হলে, তাঁর এসেটেটের শাসনভান তাঁর হাতে চলে আসে |  ততদিন তাঁর হয়ে রাজকার্য পরিচালনা
করেন এস্টেটের দেওয়ান রাজা বনবিহারী কাপুর | ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ সরকার রাজা বনবিহারী কাপুরকে
"রাজা" উপাধিতে ভূষিত করেন | ১৮৯৭ সালে সরকার বর্ধমানের মহারাজাকে ৬০০ জনের একটি সৈন্যদল
এবং ৪১টি কামান রাখার অনুমতি দেন |  

১৮৯৮ সালে তাঁর বিবাহ হয় রাধারাণি দেবীর সঙ্গে |  ১৮৯৯ সালে মহারাজ বিজয়চাঁদ এনট্রান্স পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হন | রাজপরিবারের ইতিহাসে তিনিই প্রথম রাজা যিনি আধুনিক শিক্ষায় দিক্ষিত হয়েছিলেন | ১৯০৩
সালে দিল্লীর দরবারে তাঁকে "মহারাজাধিরাজ" উপাধি প্রদান করা হয় | ১৯০৮ সালে তত্কালিন বড়লাট লর্ড
মিন্টো তাঁর "মহারাজাধিরাজ" খেতাবকে পুরুষানুক্রমিক করে দেন | ১৯০৭ থেকে ১৯১৮ সাল পর্ঝন্ত তিনি
Bengal Legislative Council এবং ১৯০৯ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত Imperial Legislative Council এর সদস্য
ছিলেন |

সেই সময়ের ইতিহাসে চোখ রাখলেই দেখা যাবে যে ভারতের  স্বাধিনতা আন্দোলন সারা দেশে কি ভাবে
দানা বেঁধেছিল | তখন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর "ভারত সভার" তিনটি শাখা বর্ধমানে খোলা হয়েছে |  
খণ্ডঘোষের রাসবিহারী বসু তখন নাম করা বিপ্লবী নেতা |  এই পরিস্থিতিতে বিজয়চাঁদ, বড়লাট লর্ড
কার্জনকে বর্ধমানে আমন্ত্রিত করে নিয়ে গিয়ে বিজয়চাঁদ রোড এবং গ্র্যণ্ডট্রাঙ্ক রোডের সংযোগস্থলে বিশাল
কার্জন গেটের উদ্বোধন করিয়েছিলেন | ১৯০৩ সালে ছোটলাট স্যার এণ্ড্রিউ ফ্রেজারের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন |
তারই স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ করকার তাঁকে
KCIE (Knight Commander of the Indian Empire) এবং Order of
Merit (Class III)
প্রভৃতি সম্মানে ভূষিত করেন |

১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ (হুল বিদ্রোহ) এবং ১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম (সিপাই
বিদ্রোহ) কালে বর্ধমানের মহারাজা মহাতবচাঁদ বাহাদুর ব্রিটিশদের সর্বতোভাবে সাহায্য করেছিলেন | তাই
বর্ধমানের রাজপরিবার বরাবরই ব্রিটিশ সরকারের অনুগত এবং সুনজরে ছিলেন | তাহলেও, বিজয়চন্দ্র
ভারতের স্বাধিনতাকামী মানুষের প্রতিও সহানুভূতিশীল ছিলেন | ১৯২৫ সালে মহাত্মা গান্ধীর বর্ধমান
সফরকালে তিনি তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন | ১৯২৮ সালে বর্ধমানের একটি পুর-নির্বাচনে সেখানে
সফরে গিয়েছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু | তাঁকেও বিজয়চন্দ্র সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন | ভারতের
স্বাধিনতা ও জমিদারী প্রথার বিলুপ্তিকরণ অবশ্যম্ভাবী জেনেই তিনি সম্ভবত কংগ্রেস দলকে পরোক্ষভাবে
সমর্থন জানিয়েছিলেন |

বাংলা সাহিত্যে মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ মহাতবের অবদান অনস্বীকার্য | ১৯১৪ সালের বর্ধমানে অনুষ্ঠিত
বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের অভ্যর্থনা মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন |  তিনি বাংলা, ইংরেজী দুটি ভাষাতেই
লিখেছিলেন | হিন্দী ভাষাতেও তাঁর কিছু গান ও কবিতা লেখা আছে | তাঁর লেখা প্রায় ২০টি গ্রন্থের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হল  
"Impression", "The Indian Horizon", "Meditation", "Studies", "বিজয়-গীতিকা" (দুই খণ্ডে
কাব্যগ্রন্থ), "ত্রয়োদশী" (কাব্যগ্রন্থ), "রণজিত" (নাটক), "মনশীলা" (বিজ্ঞান-নাটক) প্রভৃতি |

তাঁর গান বা কবিতার বিষয়বস্তু আধ্যাত্মিক, প্রকৃতি, প্রেম | ভারত-চিন্তাও তাঁর কাব্যে লক্ষ্য করা যায় |


উত্স:    দুর্গাদাস লাহিড়ি সম্পাদিত বাঙালীর গান, ১৯০৫
.           
উইকিপেডিয়া ওয়েবসাইট


আমাদের যোগাযোগের ঠিকানা :-   
মিলনসাগর       
srimilansengupta@yahoo.co.in      



.