সারা দুপুর ব'সে ছিলুম বকুলগাছের তলায় | আশেপাশে কত গাছপালা কত ফল-ফুল, কত লতা-পাতা, বর্ষা তখন শেষ হয়েছে আকাশ তখন স্বচ্ছ মেঘেরা সব হারিয়ে গেছে নিরুদ্দেশের পথে |
কিসের যেন গন্ধ পাচ্ছি বলতে-না-পারা বনের মিঠে গন্ধ, সামনে খানিকটা জল জ'মে আছে অনেক দিনের আকাশ-ঝরা জল |
সে জল তখনো শুকোয় নি বেরুবারও পায় নি পথ ভিজে মাটির আলিঙ্গনে নববধূর মতো কাঁপছে | তার বুকের তলায় থিতিয়ে আছে অনেক মাটি, অনেক কাঁকড়--- অনেক ছিন্ন মুকুল অনেক জীর্ণ ঝরা পাতা |
তার সেই বাতাস লেগে শিউরে-ওঠা বুকের ওপর, লুটিয়ে পড়েছে দুপুরবেলার সূর্য, পতির অনুপস্থিতিতে গোপচারী উপপতির মতো ভয়ে-ভয়ে সন্তর্পণে, দুপুরবেলার বিজন অবকাশে |
হঠাৎ একটু দূরেই দেখি একটা বাতাবি গাছ আর বাবলা গাছের ফাঁকে অপূর্ব অদ্ভুত এক ছবি, হার মানে তার রং ধরাকে মানুষ-শিল্পীর তুলি, কল্পনাও থমকে দাঁড়ায় কিছুক্ষণের শোভায় মুগ্ধ হ'য়ে অবাক হ'য়ে দেখি ;
ঐ দিগন্ত জুড়ে দেখা যায় নব রক্ত-বহ্নিশিখা . ওকি মহাবিপ্লবে প্রলয়ের মরীচিকা? ঐ গুরু গুরু গুরু মৃত্তিকা---বুকে বিস্ফোরণের শব্দ . সারা আকাশ বাতাস স্তব্ধ! আসে, দুর্ভিক্ষের ধূমল আঁধারে শান্তির বিভীষিকা . ওকি, ধৈর্যের শেষ মুক্তির মরীচিকা?
ঐ অগ্নি-সাগর সন্তরি চলে কোটি কোটি নরনারী . ডাকে মুক্তি-মাতাল কারাগারে কাণ্ডারী ; বাজে, প্রাণে প্রাণে ঐ রুদ্র-ডমরু স্তোত্র রচিছে স্বর্গ, . আজ জেগেছে দেবতাবর্গ, আজ প্রভাতসূর্য আলোয়জ্বলিছে মুক্তির তরবারি, . ডাকে হুংকার ছাড়ি কারাগারে কাণ্ডারী |
ঐ ভুখা ভগবান মুক্তির গান গাহে গুরুগর্জনে . শুভ লগ্নে জাতির স্বাধীনতা অর্জনে ; ঐ যে বেজেছে বিষাণ, জেগেছে কিষাণ, জেগেছে শ্রমিক সংঘ . জাগে সজ্জিত চতুরংগ ; ঐ মানবে দানবে মত্ত যুগের সমুদ্র-মন্থনে . আজ, বিজয়োল্লাস দুঃসাহসিক মনে |