কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ-এর কবিতা ও গান
*
অকুন্ঠ ভারত
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

হে ভারত,
আমি তোমার যুগোত্তীর্ণ কন্ঠস্বর,
আমি তোমার যুগযুগান্তরিত রক্ত-সমুদ্রের সৃজনোল্লাস !
.          তোমার কাঞ্চনজঙ্ঘার অতিকায় তুষার-পদ্মে
.          অগ্নিপক্ষ ভ্রমরের মত আমি গান গেয়েছি
.               প্রথম সূর্যরশ্মির বীণা বাজিয়ে
.               শত-শতাব্দীর অমিতাভ উদ্দিপনায়
আমি তোমার পার্বতী-পরমেশ্বর-আত্মার মহাসংগীত !
আমি তোমার সারস্বত-চেতনার প্রবাহনিত্য প্রাণ-ঝংকার ||

.       অণু থেকে অণীয়ান মহৎ থেকে মহীয়ান
.       ঔপনিষদিক উচ্চাভিলাষের গান
আমার চেতনার আকাশ আচ্ছন্ন ক’রে রেখেছিল
রহস্যময় আত্মানুসন্ধানের অন্তর্মুখিতায়
ঐশী করুণালাভের মন্ত্র-গাম্ভীর্যে !
.           জরা মৃত্যু শোক ভোলবার সেই গৈরিক তমসায়
.           আমি দেখতে পাইনি তোমার স্বর্গাদপি গরীয়সী রূপ,
.           শুনতে পাইনি তোমার বিশাল মাটির স্পন্দন,
.                 অরণ্যের মর্মর ধ্বনি,
.                 উদ্বেলিত নদনদীর কান্না ;
.           শুনতে পাইনি দক্ষিণসমুদ্রনম্থিত মৌসুমী বাতাসের দীর্ঘশ্বাস !
সেদিন সুর ছিলনা তোমার কন্ঠে
বাণী ছিলনা তোমার ভাষায়
প্রাণ ছিলনা তোমার আসমুদ্র-হিমালয় প্রসারিত অবয়বে ||

সেদিন আমি খুঁজেছি দিক্ দিগন্ত উদ্ভাসিত-করা তোমার সেই রূপ,
.          মুখে যার আগুনের আভা !
.          পায়ে যার পাহাড়-গুঁড়িয়ে-ফেলা আঘাতের প্রচন্ডতা !
.          দুই বাহুতে যা’র সমস্ত পৃথিবীটাকে বুকে জড়িয়ে ধরার বিরাটত্ব
.              শান্তি সুখ স্বাধীনতার সুনিবিড় বন্ধনে |
তাকে আমি খুঁজছি আমার বিনিদ্র চিন্তার চতুঃসীমায়
আমার সম্ভ্রমদীপ্ত চেতনার আন্তর্জাতিক শালীনতায়
.            কাব্য-সাহিত্য-শিল্প-ললিতকলার মৃত্যুঞ্জয়ী সামঞ্জস্যে |
.            হে ভারত,
.            তুমি আমার, নবজাগ্রত বস্তু-জিজ্ঞাসার উদয়াচল ||
আমি তোমার সেই রূপ দেখেছি হে আমার জননী জন্মভূমি,
.             কারাগারের দেয়াল যাকে ঘিরে রাখতে পারেনা
.             শেকল হাতকড়া দিয়ে যাকে বেঁধে রাখা যায়না
.             ফাঁসিকাঠ ভেঙে পড়ে যায় পায়ের তলায় !
দেখেছি তোমার সেই মহিমান্বিত রূপ
‘পাঞ্জাব সিন্ধু গুর্জর মারাঠা দ্রাবিড় উত্কল বঙ্গে’,
দেখেছি তোমার জ্যোতির্ময়ী ভবিষ্যত,
.             অনন্তবীর্যরূপিনী আত্মপ্রতিষ্ঠার মহাস্বপ্নে !
হে ভারত
আজ তুমি জেগে উঠেছ আমার যুগোত্তীর্ণ কন্ঠস্বরের উদাত্ত গভীরতায়,
আমার রক্ত-সমুদ্রের সৃজনোল্লাসে ||

.                     ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
বসন্ত এল
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

ব্রহ্মাবর্তের পাথুরে হাওয়ায় লাল ধূলো উড়িয়ে
বসন্ত এল |
কুরুক্ষেত্রের সারথিরা পেট্রলগন্ধী বাতাস কেটে লরী চালায় |
দ-স্বপ্নের বিষে মরে গেছে ইতিহাস
দুচোখ-কানা ধৃতরাষ্ট্রের পৃথিবী |
বিশ্বরূপের বিরাট হাঁ-করা মুখের গর্তে
চন্দ্র আর সৃর্যবংশের মাহাত্য আজ বায়বীয় |
ভারতভুক্তির বেনামদারীতে নেটিভ-ক্ষত্রিয়দের উল্লাস
পদ্মপাতায় শিশির ছড়ানোর মতো |
ইন্দ্র---অগ্নি---বায়ু---বরুণ---
রাঠোর--- চৌহান –ঘোরী—খিলজী---লোদী বংশাবতংসেরা কলম পিষছে
বাত্সায়ন কল্যাণমল্লের কামোদ্রিক্ত পৌরুষের নির্বীযতায় |

সুভদ্রা রিজিয়া পাইলটের পোষাকে কফি খাচ্ছে কফি-হাউসে !
পার্কে পার্কে মিটিং
সমানাধিকারের আওয়াজ !
জীবন-চেতনার প্রবল উদ্দীপনার ফুটপাত লোকারণ্য !

লাল ধূলো উড়ছে আকাশে বাতাসে রাজপথে
হোলীর আবীরমাখা বসন্ত এল !
কলের বাঁশিতে নবযুগের পাঞ্চজন্য |
মাঠে মাঠে ঝলসে ওঠে সোনার লাঙল
যান্ত্রিক রূপান্তরের অবশ্যম্ভাবিতায়|
লাল ধূলো উড়ছে কুলি ব্যারাকের শুকনো রক্তে !
মিছিলের ঘূর্ণিশ্বাসে !

বসন্ত এল
ব্রহ্মাবর্তে--- আর্যাবর্তে---দাক্ষিণাত্যে
অঙ্গে --- বঙ্গে --- কলিঙ্গে

.               ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
তাম্রলিপ্ত
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

স্বপ্ন দেখি তাম্রলিপ্ত অবারিত সমুদ্রের কূলে
অসংখ্য বাণিজ্যপোতে সমাকীর্ণ বিরাট বন্দর
শ্বেত পীত কৃষ্ণকায় দূরদেশাগত
পণ্যজীবি সুচতুর মেধাবী বণিক শত শত
মহাজন শ্রেষ্ঠি সদাগর
লুব্ধ আত্মপ্রতিষ্ঠার পতাকা উড়ায়
পণ্যশুল্ক-মন্দিরের সুবর্ণচৃড়ায় |
স্বপ্ন দেখি তাম্রবর্ণ বলিষ্ঠ বাঙালী
বাংলার মৃত্তিকাছন্দে রূপায়িত বলিষ্ঠ সন্তান
সংগ্রামে অপরাজেয় সাহসে দুর্জয়
শ্রমনিষ্ঠ মুক্তগতি দেশ দেশান্তরে |
স্বপ্ন দেখি স্বদেশের বিগত সমাজ
অত্যদ্ভুত স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র নীতি
মনীষী পন্ডিতবর্গ নিত্য দেয় শাস্ত্রের বিধান
অতিসূক্ষ্ম চুলচেরা বর্ণাশ্রমী প্রজার শাসনে |
পল্লীতে নগরে জনপদে
যুক্তপাণি নতদৃষ্টি হতভাগ্য অন্ত্যজের
নিঃশব্দ সঞ্চার ;
সমস্ত আকাশ জুড়ে বর্ণাশ্রম ধর্ম-বিভীষিকা !

স্বপ্ন দেখি ব্রাহ্মণের ত্রিপুন্ড্রক চর্চিত ললাট
শুচিবায়ুগ্রস্ত কূট আত্মার প্রকাশে |
স্বপ্ন দেখি স্মৃতিকর্তা রঘুনন্দনের
স্বদেশের ভাগ্যাকাশে একচক্ষু অশ্লেষার মতো
দ্বিজোত্তম মহাশাস্ত্রী ,
অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গের সুদৃঢ় নৈতিক দায়ভাগে ;
স্বপ্ন দোখি দম্ভদৃপ্ত যৌবনের রুক্ষ ইতিহাস |
সহসা মিলায় স্বপ্ন !
বিস্মৃতি-কুয়াশা ঢাকা জেগে ওঠে ধ্বংসের শ্মশান ;
আজ নেই তাম্রলিপ্ত, শুধু তা’র রুগ্ন প্রেত কাঁদে
বন্যায় বিধ্বস্ত গ্রাম অখ্যাত তমলুক !
ময়ূরালাঞ্ছিত ধ্বজা ছিন্নভিন্ন দেউলচৃড়ায় !
দেউলের চিহ্ন নেই
অন্ধকার বেদিগর্ভে বর্গভীমা কঙ্কালমালিনী
প্রাণহীনা শৃঙ্খলিতা বৈদেশিক বাণিজ্য-শৃঙ্খলে |

অতীতের প্রতিক্রিয়া ভবিতব্য নয় ;
আত্মপাপে দ্বেষদুষ্ট অঙ্গার মৃত্তিকা,
জননী ডাকিনী আজ !
বর্গভীমা ক্রুর ভয়ঙ্করী
প্রেতায়িত দুর্ভিক্ষের ধূমল আঁধারে |
স্বপ্ন দেখি তাম্রলিপ্ত বিগতযৌবন !
মাংসাশী শকুন ওড়ে সন্ধ্যার আকাশে.
অসীম নীরব দীর্ঘ প্রসারিতবন্দরের
মৃত বালুচর,
লবণাক্ত তরঙ্গ জর্জর
জাহাজের প্রেতচ্ছায়া মসীকৃষ্ণ বঙ্গোপসাগরে
ধনলুব্ধ বণিকের বিষণ্ণ নরক !
স্বপ্ন দেখি তাম্রলিপ্ত  অবলুপ্ত কীর্তির শ্মশান

আবার বলিষ্ঠ স্বপ্ন দেখি ,
জাগে নব তাম্রলিপ্ত দুর্যোগের অন্ধকার ফুঁড়ে
জ্যোতির্ময় জীবনের পটভুমিকায়
মুক্তির রক্তাক্ত লিপি ভেসে ওঠে আগ্নেয় অক্ষরে
শ্রেণীশূন্য দ্বেষশূন্য সুসংবদ্ধ বিশাল ভারত
জগতের নূতন বিস্ময় |

.               ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
পলাশী
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

সোনার গোধূলি গভীর সবুজ বনান্তরালে সূর্য ডোবে
ছায়া-গভীর আম্রকানন, রুক্ষ আলোয় গঙ্গাজল
বিষাদমগ্ন সপ্তকোটির ব্যথিত আত্মা তীব্র ক্ষোভে
ধূ ধূ পলাশীর প্রাঙ্গনে জাগে মুক্তির পণে অচঞ্চল |
.          আকাশ এখনো রক্তে লাল
প্রতিহিংসার ক্রুর হাসি হাসে দুর্ভাগা বীর মোহনলাল |

হামাগুড়ি দিয়ে এসেছিল যারা কটা চোখ রাঙা চামড়া গায়ে
আতঙ্কে মেশা আম্রকাননে লুব্ধ বিদেশী বণিকদল,
নবাবী স্বপ্নে বৃদ্ধ শকুন মীরজাফরের পক্ষ ছায়ে
ঘোলাটে ঘরোয়া পাৎকোর বুকে বিদেশের কালো বন্যাজল |
.           বন্যার মুখে লাগাও বাঁধ,
শূন্যে শূন্যে প্রতিধ্বনি সিরাজ-কন্ঠে সিংহনাদ |

ষড়যন্ত্রের সুড়ঙ্গ পথে পাপযোনী যত অবিশ্বাসী
লোভের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরা ভাগাড়ে মাটির অংশীদার,
জন্মভূমিকে করে গেছে যারা বিদেশী বেনের নবীনা দাসী
যাদের ঘৃণ্য নামোচ্চারণে অযুত রসনা আজো অসাড় |
.          আজো কোটি কোটি মীরমদন
শাস্তিদানের অস্ত্র শানায় অরণ্যবাসে কঠোর পণ |

পলাশীর মাঠে তুমুল ব্যঙ্গ ব্রিটিশের রণ-দামামাতে
ক্লাইভের জয় আজো সতের’শ সাতান্ন খৃষ্টাব্দকাল
কলুষ আখরে ইতিহাসে লেখা, কাব্যে নীরব বেদনাতে
স্তব্ধ করেছে নবাবের ঢোল বিজয়ী প্রাণের স্বপ্নজাল |
.         বাংলার সাথে গোটা ভারত
দেড়শ’বছর ভেঙেছে পাঁজর ছুটেও ছোটেনা মুক্তিরথ |

.                    ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
সমুদ্র
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

সমুদ্র তোমায় আমি বলিষ্ঠ মনের সীমা দিয়ে
গর্বিত-বিশাল দৃপ্ত বাসনার রেখায় রেখায়
সত্তার দিগন্ত জোড়া গাম্ভীর্যের রঙ দিয়ে আঁকি |
শিল্পী আমি স্রষ্ঠা আমি বস্তুবাদী কবি
বহুর একক প্রতিচ্ছবি,
সংহত উদার আমি স়ৃষ্টির পরম অহংকার
আমি গান বিশ্বচেতনার |
সহস্রাপক্ষপদবাহু প্রকৃতির আমি নিয়ামক
দেবদত্ত মই, স্বতঃস্ফুর্ত মানবক,
কী চঞ্চল !  কী জাগ্রত আমার বেদনা !
কত যুগযুগান্তের আবর্তসংকুল উন্মাদনা |

দেশকালপাত্রজোড়া আমার উদ্দাম কল্পনার
বিন্দু তুমি মহাসিন্ধু অশ্রুসিক্ত সৃষ্টির যন্ত্রণা
অন্তহীন শান্তিহীন ঊষার প্রভাতে,
আমার অশান্ত মনোবিপ্লবের আঘাতে আঘাতে
জন্ম হ’ল ধরিত্রীর ইতিহাস শত-শতাব্দীর
আমারি সৃষ্টির রঙে যুগ যুগ রঞ্জিত অধীর |
যে আকাশ আমারি সৃজন

সমুদ্র তুমি তো সেই আকাশের বুকে নিয়ে রঙ্
সভ্যতার আদিম ঊষায়
স্পর্ধাভরে ভেবেছিল তরঙ্গিত নীল-উপেক্ষায়
বাহুবলে মুছে দেবে আমার উদ্দাম রক্তধারা |
ভেবেছিলে মৃত্তিকার অস্তিত্ব আমার
নিঃশেষে বিলীন করে দেবে ?

আমি জানি সমুদ্র তোমায়
বৃথা দর্পে গর্জমান কত অসহায়
কল্লোল তরঙ্গ আর জলস্তম্ভ জল শুধু জল
নিষ্ঠুর নির্বোধ মূঢ় বিহ্বল চঞ্চল !
পৃথ্বীর আদিম উষ্ণ অঙ্গের গলিত ঘর্মধারা
তোমার নীলাম্বুরাশি ;
যে পৃথ্বী আমারি কন্যা আমারি দুহিতা
তুমি তারি স্বেদসিন্ধু হে সমুদ্র আমি যার পিতা |

আমি বিশ্ববিজেতার অজেয় কার্মুক হাতে নিয়ে
অগ্নিবাণে অন্ধকার দিগন্ত-পশুর বক্ষ ভেদি,
সূর্যের দিয়েছি জন্ম স্বাধিকারপ্রমত্ত যৌবনে |
মাতরিশ্বা বহমান আমার নিঃশ্বাসে
কটাক্ষে বিদ্যুৎ জ্বলে
যমদন্ড চূর্ণ পদতলে
আতঙ্কে স্তম্ভিত সৌরাকাশ !
আমার যাত্রার
লবণাক্ত ঘর্মধারা সহস্রবর্ষের রণোল্লাসে
পরাজিত পঞ্চভূত আমারি শ্রমের অঙ্গীকার |
আমারি শ্রমের রত্মে ঐশ্বর্যশালিনী ধরিত্রীর
জঠরে তোমার জন্ম,
তাই আজ হে সমুদ্র রত্মাকর উপাধি তোমার |

আমার মানসপুত্র তুমি
উত্তরাধিকারে তাই পেয়েছ চিম্তার চঞ্চলতা
উর্মিল অজস্রনীল গগনের চন্দ্রাতপতলে |
আমার অর্নলবর্ষী শায়কের ক্ষতচিহ্ন জ্বলে
তারায় তারায় |
মাঝে মাঝে আসে তাই করুণ উদ্বেগ
তোমার আমার নীল আকাশের গাঢ়কম্প্রমেঘ |

সমুদ্র আমায় তুমি স্রষ্টা ব’লে জানো মনে মনে
অবিচ্ছেদ্য অশান্ত স্মরণে |
আমি যে মানুষ আমি পিতা
জীবনের অগ্রগামী সংঘাতের জান্তব সংহিতা |
অসংখ্য সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ে আলোকের লিপি
লিখেছি সৃষ্টির ইতিহাসে
সর্বজয়ী বিপ্লবের জ্বলন্ত বিশ্বাসে |

সমুদ্র স্মরণ করো আদিম প্রাণের অন্ধকারে
কর্দমাক্ত মৃত্তিকার কূলহীন কূলে উপকূলে
তোমার ক্রন্দন রোল
সকরুণ অবিশ্রান্ত শব্দের কল্লোল,
বজ্রের আওয়াজে মেশা নিত্য ভূকম্পনে
অতিকায় শ্বাপদের মুহূমুর্হুঃ অকাল মরণে |

সমুদ্র, সেদিন আমি কালজয়ী আমি
আদিমকাব্যের মহাসঙ্গীতের জীবন্ত ভাষায়
ছন্দসূত্রে গেঁথেছি এ জড়ের অমূল্য মণিহার |
আতঙ্কের মেরুদন্ড পায়ে চেপে করেছি সংহার
আদিম পশুর অসংযম |
পিতা আমি মহাপৃথিবীর
আমারি মুক্তির স্বপ্নে জন্ম হ’ল বিংশশতাব্দীর |

সমুদ্র তোমার নীল বিশালত্ব মানে পরাজয়
আমার ছন্দের সূত্রে স্বপ্নের বন্ধনে |
সৃষ্টি স্থিতি ব্যাপ্ত ক’রে মহাভূজ আমি
বিশ্বজয়ী কালজয়ী মৃত্যুজয়ী উদ্ধত উদার
মানব সভ্যতা তাই আমার জ্বলন্ত অহংকার |
প্রতিভার আভিজাত্যে আমি বলবান
সদম্ভে দন্ডায়মান
ঊর্ধ্বশীর্ষ দৃঢ়পদ অচল অটল
মেধায় তোমার নীল ঘননীল তরঙ্গে আমার
স্বপ্নের তরণী দোলে কূলে উপকূলে
তোমার তরঙ্গ কাঁপে ফেনশীর্ষ বন্দনার ফুলে |

.                 ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
পারমাণবিক
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

শান্তি কোথায় ? তারায় তারায় জ্বলম্ত
উল্কার হাড় স্মৃতির পাহাড় চলন্ত
ইন্দ্রের ভয়ে দ্রুত ধাবমান ব্যর্থ-বাসনা দিগ্ বিদিক্
অন্ধ অপার অমেয় আশার দৌবারিক,
মর্তবাসীর বাসনা-বাঁশীর কম্পন ঘন মৃত্যুদূত
ব্যোম-সমুদ্রে শরীরী ব্যথার হে বুদ্ধুদ,
নিত্যম্ পরিমন্ডলম্
চিরঅবিনাশ সৃজনোল্লাস  অনাদ্যন্ত বিঘূর্ণন !

হায় কী বিষাদ অযুত কণাদ শূন্যে লীন
কালজয়ী কাল স্তম্ভিত কাঁপে বিদ্যুতীন
বিশ্বজ্যোতির উত্সমুখ
বিদীর্ণ শতশতাব্দী তাই মৌন মূক |
অণোরণীয়ান প্রলয়ের গান ক্ষম-বিনাশ
দ্রুত কম্পিত বিচ্ছুরণের চিদ্বিলাস
নিমেষে বিপুল জড়ের বাঁধন
বহ্নি-বলয়ে রুদ্র-সাধন
চূর্ণ ধূমল ক্ষিতিমন্ডল ক্রুদ্ধ প্রবল অণু-বিদার
নবযন্ত্রের তন্ত্রধার |

হে অদ্ভুত !
হে বুদ্বুদ   !
উচ্চাভিলাষী স্বপ্নদূত---
চোখ খুলে চাও একটু দাঁড়াও হে চঞ্চল,
তীব্র-দ্যুতির ক্ষম-তৃপ্তির ক্ষুধিত অধীর যে সম্বল
বক্ষে তোমার ঘুচিয়োনা তা’র মহাভবিষ্য হে সৈনিক,
করো প্রবুদ্ধ জীবনযুদ্ধ এ দৈনিক |
অমিত-প্রতাপ দুঃসহতাপ গ্রহ-মন্ডলে অহস্কর
সৌর-নায়ক শোনায় আদেশ শ্রেয়স্করঃ
দানবিক পারমাণবিক মোহ সংহর
মোধাবী মানব-চেতনার চিরকল্যাণময় রূপ ধরো |

এসেছে এবার প্রাজ্ঞযুগের সন্ধিক্ষণ
জেগেছে প্রাচীন অঙ্গের ঘেরে বন্দীমন
গণমানবের প্রাণ-বৈভব
এনেছে বিশ্বে সৃজনোত্সব
জেগেছে শান্তি মৈত্রী মুক্তি সাম্যসাধক বিশ্বজন
থামাও তোমার সূক্ষ্ম-প্রাণের রক্তচক্ষু ভ্রুকূ্ঞ্চন |

.               ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
বাউল
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

প্রেমের বাউল আমি পথে পথে যুগ যুগান্তর
শূন্যমনে ঘুরে মরি তোমার পাইনি আজো দেখা,
সূর্যের সোণালী রঙে বিশ্বপটে অনন্ত এক্ষর
গেঁথে চলি ছন্দে গানে বিশ্বপটে অনন্ত অক্ষর
গেঁথে চলি ছন্দে গানে সুরে সুরে অসহায় একা !
তুমি শুধু ‘তুমি’ আজো দু’টি শব্দ অ-ধরা ভাস্বর,
স্বপ্নের আকাশে আঁকা কল্পিত স্বর্ণিল স্মৃতিরেখা,
পদতলে মাটি নেই কোথা রচি পুষ্পিত বাসর ?
পৃথিবীর ভাষা দিয়ে কাব্য তাই হ’লনাকো লেখা !

তুমি-শূন্য আমি নেই, আমি-শূন্য তুমি আছো কিনা
কে দেবে সন্ধান তা’র ?  অশরীরী প্রেম-বিহঙ্গম
মহাশূন্যে উড়ে যায় ডানার ঝাপটে মনোবীণা
তীব্র মূর্চ্ছনায় কাঁপে সুরে সুরে স্থাবর জঙ্গম |
জ্যোত্স্নায় রজতশুভ্র উধাও পথের প্রান্তদেশে
জানিনা কোথায় পাবো, যাত্রায় অথবা যাত্রাশেষে ?

.                 ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
প্রেম
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

যৌবন তুমি পাহাড়ে চড়ো
ঘামঝরা রোদে ভাঙো পাথর!
প্রেমের বেলাতে লাজুক বড়
চোখে চোখ দিতে কেন কাতর ?

তুমি কেন চুপ্ বলো হে জ্ঞানী
বিদ্যে তো আছে ঠাসা মাথায়!
মুখে তবু কেন ফোটে না বাণী
জানোনা কি প্রেম মন মাতায় ?

প্রেম প্রেম আহা প্রেম যে কি
দুনিয়াটা মিছে প্রেম ছাড়া |
হে প্রবীণ তুমি বুঝবে কি ?
প্রেমের ডাকাতী ঘুম-কাড়া |

কাঁটা দিয়ে উঠে কাঁপে শরীর
আহা প্রেম সে কী দাও পরশ!
পালখ বুলানো মায়া-পরীর
ছোঁওয়া দিয়ে কর অবশ |

নীতির শুচিতা নরকে যাক্
ঠোঁটে ঠোঁট, বুকে বুক-রাখা
ফাগুনের আমি শুনেছি ডাক
কপালে সোনালী চাঁদ আঁকা |

.        ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
অ-ধরা
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

ঘুমুলে তোমায় কী যে সুন্দর দেখায় |
সোনার অঙ্গে কাঁপে যৌবন প্রতিটি রেখায় রেখায় |
আগোছালো শাড়ী মাথায় বিনুনী ভাঙা
বাসনার রঙে রাঙা
বালিশে ছড়ানো কালোচুলে ঘেরা ঘুমন্ত মুখখানি |

সারা আকাশের গায়ে তারা পড়ে নুয়ে
ব্যাকুল বাতাস তনু যায় ছুঁয়ে
মদির আবেশে বিহ্বল চাঁদ সারারাত জেগে থাকে,
অল ফাগুন হাওয়ায়
বৌ-কথা-কও পাখিটি হঠাৎ ডাকে ||

শাল মহুয়ার মধুঝরা বায়ু
নবফাগুনের চঞ্চল আয়ু
তোমার মদির নিঃশ্বাসে বহে যায় |
রাঙা-বাসনায় চাঁদের চুমায়
স্বপ্ন-বিভোরা তনুটি ঘুমায়, অপলকে চেয়ে থাকি
সময়ের ঢেউ দোলা দিয়ে যায়, ডাকে রাতজাগা পাখি |

চোখের পাতায় মৃদুকম্পিত রক্তিম আকুলতা,
ভীরু-পাপড়ির আড়ালে যুগল-ভ্রমর
বেঁধেছে স্বপ্ন-পদ্মে আপন ঘর |
ঘরে জ্বলে নীল আলো
সোনার অঙ্গ কেঁপে কেঁপে ওঠে অপরূপ শিহরণে,
তবু কাছে যেতে কী গভীর মায়া
পাছে ও-তনুতে পড়ে কালোছায়া
বাঁধভাঙা রাঙা-অধরের পরশনে |
যৌবন-মায়া-মৃণালে তোমার ঘুমের পদ্ম ফোটে,
এলোমেলো সুর অলস ছন্দ
কোমল পাপড়ি অমল গন্ধ
তুমি কাছে তবু কাব্য-কাননে কস্তুরীমৃগ ছোটে |

হৃদয়ে আমার শুভ্র নিথর জ্বলে কামনার শিখা
ছন্দায়মান সৃষ্টির নীহারিকা !
নিভৃত নীরব প্রেম ওঠে জেগে
মর্ম-ফুলের সৌরভ লেগে
ছোটঘরখানি অধীর আবেগে কাঁপে !
ঘুমাও ঘুমাও জাগাবো না মিছে সৃষ্টির উত্তাপে |

রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিঁঝি-ডাকা রাত সম্ভ্রম জাগে মনে,
তোমার শয়ন এলোমেলো তবু স্বপ্নের উপবনে
উরসে বিবশ ভুজবল্লরী সুপ্তির বেদনায়
ঈষৎ চমকে বিধুর পুলকে সব্ধানী বাসনায় |
অন্তরে অধীর প্রতীক্ষা নিয়ে উন্মুখ কামনায় |

শিয়রে তোমার জেগে থাকি একা সুখের লাল-কমল,
বিবশ অঙ্গে শিহরায় তব অঙ্গের পরিমল !
জ্যোত্স্না-জড়ানো ফাল্গুনে জাগে আমার কাব্য ঘিরে
ঘুমাও ঘুমাও অধরা স্বপ্নে
বাসন্তিকার বাসরলগ্নে
যৌবন-নদীতীরে ||

.        ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর
*
প্রাসাদ-নগরীর আনাচে কানাচে
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

মাকড়শা
আত্মলালায় জাল বোনে আজো অমর মীর্ জাফর
কায়েমী-সুখের প্রাসাদে প্রাসাদে ঈর্ষায় জর্জর
ব্যারাক-বস্তি-দোতলা-তেতলা-কুটিরের দ্যালে দ্যালে
রসনার রসে চতুর মাক’শা শীকারের জাল ফ্যালে
নর-নারী-শিশুচর্মে কুটিল গরল-চিহ্ন আঁকে
সভ্যনামিক সহরের বুকে আবর্জনার পাঁকে ||

মশক
নর্দমা ড্রেন ডস্টবিন আর ভুতুড়ে ঘরের কোণে
লর্ড ক্লাইভের মুত্সুদ্দীরা অস্ফুট গুঞ্জনে
তাজারক্তের সোঁদালো গন্ধে আনন্দে ভরপুর
দংশনে  তেড়ে জ্বর এসে যায় দ্বার খোলে যমপুর
গুন গুন গুন গুঞ্জরণের হি হি হি রাগিনী গায়
মৃত্যুর দূত ম্যালেরিয়া মাতে মশক-বন্দনায় ||

ছারপোকা
জগৎশেঠের রক্তবীজেরা বেঞ্চি চেয়ারে খাটে
গদি-তোষকের তক্ত-তাউসে মশ্ গুল রাজপাটে
কম্বল কাঁথা মশারীর কোণে অনাদিকালের পোষা
ট্রাম-বাস জুড়ে মহাজনী করে চতুর রক্তচোষা
জৈনদেবতা পার্শ্বনাথের খাটমল-দেবতারা,
কানাকড়ি দিয়ে খুনে কিনে খায় বেকুব সর্বহারা ||

ইঁদুর
হেস্টিংস আজো মরেও মরেনি কবরের মাটি ফুঁড়ে
ভুঁড়ো গনেশের বাহনের বেশে সারাটা সহর জুড়ে
বণিকরাজের গদিতে গদিতে দোকানে-বাজারে-হাটে
কালোবাজারের মুনাফার লোভে সুরঙ্গপথ কাটে ||
অশন-বসন-খাটিয়া-পালঙ্ কেটে কুটে বিলকুল
প্লেগ মহামারী ছড়ায় সহরে বৈতরণীর কূল ||

মাছি
ধূর্ত বিদেশী বণিকদলের রাজ্যলাভের মতো
সহরে নগরে গ্রাম-জনপদে মক্ষিকা শত শত
কুষ্ঠের ক্ষত কলেরার বিষ যক্ষ্মার থুতু চেটে
ক্ষুধার অন্নে বীজাণু ছড়ায় জনতার ভুখাপেটে
ভন্ ভন্ ভন্ ভনিতায় ভাঁজে ঘ্যানঘেনে রামধূন
মড়কের ঘোড়া দাপাদাপি করে দেশজুড়ে চৌদূন ||

ষাঁড়
অলিতে গলিতে ধর্মের ষাঁড় বেপরোয়া পথ জুড়ে
দু’চোখ বুজিয়ে শুয়ে থাকে যেন অকর্মা যত কুঁড়ে
শিং আছে তবু শত অপমানে ভুলে গেছে শিং-নাড়া
ক্ষিধের জ্বালায় এঁটোপাতা খায় ঘুরে ঘুরে সাতপাড়া
মৃত মানুষের বৃষোত্সর্গ-শ্রাদ্ধের দাগা ষাঁড়
ক্ষেপে গেলে বৃথা মাথা খুঁড়ে করে পথঘাট তোলপাড় ||

ফাটকা বাজার
ক্ষেত্র-খামার-খনি-কারখানা সহরের বহুদূরে !
উত্পাদনের দাম ওঠে নামে নানা বিচিত্র সুরে
পুঁজিপতিদের ফাট্ কা-বাজারে নরশৃগালেরা ডাকে
দেশের ভাগ্য হাবুডুবু খায় শোষণের ভরা পাঁকে
একচেটে যত ব্যবসাদারের শেয়ারের ছলনায়
হাসি ও কান্না ব্যাঘ্র ও গরু একঘাটে জল খায় ||

পানের পিক
পাঞ্জাবী-ধুতি-শার্ট-কোট-প্যান্ট-লুঙ্গী-পিরাণ-শাড়ী
কখন যে কার দফা রফা করে দু’পাশের কোঠাবাড়ী
জান্ লা-দরোজা-বারান্দা থেকে পিকের পিচকারিতে
হাড়ে হাড়ে বোঝে ভূক্তভোগীরা ধিক্কার দিতে দিতে
শুভ্র-দেয়ালে তাম্বুলরাগরঞ্জিত-সভ্যতা
ঘোষণা-মুখর মধ্যযুগের চরম বর্বরতা ||

মহাব্যধিগ্রস্ত
লাটের প্রাসাদ-তোরণের মুখে পথিকের সহযোগী
হামেসাই ঘোরে নাক-কানখসা গলিতকুষ্ঠরোগী
কন্ঠের স্বর যাতনায় কাঁপে দু’টি দাঁতের ফাঁকে
গলিত-জিহ্বা ঘড় ঘড় করে ব্যাধির কুম্ভীপাকে
নারকীয় ক্ষুধা ডাঙস্ চালায়, শহর নির্বিকার
উপনিবেশের ক্রূর-পরিহাস অসাড় কোলকাতার ||

জুতা পালিশ
বেওয়ারিশ যত কিশোর ছেলেরা অর্ধনগ্ন দেহে
পথিকের পদধূলায় মলিন তাকায় না কেউ স্নেহে
জুতা ঝেড়ে মুছে পালিশ লাগায় দুর্বল কচিহাতে
মুখে তবু এক অদ্ভুত হাসি অসীম অজ্ঞতাতে
মহানাগরিক পাদুকাপিষ্ট দুর্ভাগ্য শিশুদল
পালিশের প্রতিযোগিতায় করে কী করুণ কোলাহল ||

মা ও ছেলে
গগনচুম্বী গণ-পরিষদ-প্রাসাদের পদতলে
গাম্ ছায় পেতে ছ’মাসের শিশু অবগুন্ঠনতলে                  
দু’চোখে নীরব প্রার্থনা জ্বলে অজ্ঞাতকুলশীলা
ভিখারিণী বধূ ভিখ মেগে খায় রামরাজ্যের লীলা
দামী-মোটরের রামশিঙা বাজে কেঁদে উঠে ভুখাশিশু
বৈষম্যের ক্রুশের কাঁটায় বিদ্ধ কত না যীশু ||

গণত্কার
নামাবলী গায়ে কপালে সিঁদুর ভৃগু আর পাঁজী খুলে
গোটা সহরের ভাগ্যের নাড়ী হাতড়ায় মুখ তুলে
খঁড়ি পেতে ব’সে ফুটপাত ঘেঁষে অভাগা গণত্কার
জঠর জ্বালায় দিবস কাটায় বিফল বঞ্চনার
জুয়ারী-দালাল-ভাগ্যান্বেষী-দুঃস্থ বেকারদল
উবু হয়ে বসে দু’হাত বাড়ায় দুরাশায় চঞ্চল ||


ওঝা
এঁদো পচাগলি হুজুগে মুখের তুকতাক্ ঝাড়ফুঁকে
হিষ্টিরিয়ায় মৃতবত্সার পাষাণ চাপায় বুকে
ভূত-প্রেত-দানো-মাম্ দো-পিশাচ-শাঁকচুন্নীর হাসি
সুস্থবুকের পাঁজরা খসায় যক্ষ্মার ঘেয়ো কাশি
খক্ খক্ খক্ বিয়োগান্তক ভাঙাঘরে ছায়া নড়ে
অন্ধগলিতে বিকটোল্লাসে ওঝায় মন্ত্র পড়ে ||

শ্মশানে
মহানগরীর প্রান্তশায়িনী গঙ্গার পূবতটে
চিতার ধোঁয়ায় অপমৃত্যুর ঘোষণা আকাশপটে
লাঞ্ছিত গণজীবনের ব্যথা আঁকে শঙ্কিত ছবি
রাতের চন্দ্র ভয়ে মুখ ঢাকে দিনের দীপ্ত রবি
কোওড়াতলায় নিমতলা আর কাশীমিত্তির ঘাটে
“বলো হরিবল |”  অকাল -মৃত্যু আসে চারপায়া খাটে ||

.                 ****************      
.                                                                         
সূচিতে . . .     



মিলনসাগর