সমুদ্র তোমায় আমি বলিষ্ঠ মনের সীমা দিয়ে গর্বিত-বিশাল দৃপ্ত বাসনার রেখায় রেখায় সত্তার দিগন্ত জোড়া গাম্ভীর্যের রঙ দিয়ে আঁকি | শিল্পী আমি স্রষ্ঠা আমি বস্তুবাদী কবি বহুর একক প্রতিচ্ছবি, সংহত উদার আমি স়ৃষ্টির পরম অহংকার আমি গান বিশ্বচেতনার | সহস্রাপক্ষপদবাহু প্রকৃতির আমি নিয়ামক দেবদত্ত মই, স্বতঃস্ফুর্ত মানবক, কী চঞ্চল ! কী জাগ্রত আমার বেদনা ! কত যুগযুগান্তের আবর্তসংকুল উন্মাদনা |
দেশকালপাত্রজোড়া আমার উদ্দাম কল্পনার বিন্দু তুমি মহাসিন্ধু অশ্রুসিক্ত সৃষ্টির যন্ত্রণা অন্তহীন শান্তিহীন ঊষার প্রভাতে, আমার অশান্ত মনোবিপ্লবের আঘাতে আঘাতে জন্ম হ’ল ধরিত্রীর ইতিহাস শত-শতাব্দীর আমারি সৃষ্টির রঙে যুগ যুগ রঞ্জিত অধীর | যে আকাশ আমারি সৃজন
সমুদ্র তুমি তো সেই আকাশের বুকে নিয়ে রঙ্ সভ্যতার আদিম ঊষায় স্পর্ধাভরে ভেবেছিল তরঙ্গিত নীল-উপেক্ষায় বাহুবলে মুছে দেবে আমার উদ্দাম রক্তধারা | ভেবেছিলে মৃত্তিকার অস্তিত্ব আমার নিঃশেষে বিলীন করে দেবে ?
আমি জানি সমুদ্র তোমায় বৃথা দর্পে গর্জমান কত অসহায় কল্লোল তরঙ্গ আর জলস্তম্ভ জল শুধু জল নিষ্ঠুর নির্বোধ মূঢ় বিহ্বল চঞ্চল ! পৃথ্বীর আদিম উষ্ণ অঙ্গের গলিত ঘর্মধারা তোমার নীলাম্বুরাশি ; যে পৃথ্বী আমারি কন্যা আমারি দুহিতা তুমি তারি স্বেদসিন্ধু হে সমুদ্র আমি যার পিতা |
আমি বিশ্ববিজেতার অজেয় কার্মুক হাতে নিয়ে অগ্নিবাণে অন্ধকার দিগন্ত-পশুর বক্ষ ভেদি, সূর্যের দিয়েছি জন্ম স্বাধিকারপ্রমত্ত যৌবনে | মাতরিশ্বা বহমান আমার নিঃশ্বাসে কটাক্ষে বিদ্যুৎ জ্বলে যমদন্ড চূর্ণ পদতলে আতঙ্কে স্তম্ভিত সৌরাকাশ ! আমার যাত্রার লবণাক্ত ঘর্মধারা সহস্রবর্ষের রণোল্লাসে পরাজিত পঞ্চভূত আমারি শ্রমের অঙ্গীকার | আমারি শ্রমের রত্মে ঐশ্বর্যশালিনী ধরিত্রীর জঠরে তোমার জন্ম, তাই আজ হে সমুদ্র রত্মাকর উপাধি তোমার |
আমার মানসপুত্র তুমি উত্তরাধিকারে তাই পেয়েছ চিম্তার চঞ্চলতা উর্মিল অজস্রনীল গগনের চন্দ্রাতপতলে | আমার অর্নলবর্ষী শায়কের ক্ষতচিহ্ন জ্বলে তারায় তারায় | মাঝে মাঝে আসে তাই করুণ উদ্বেগ তোমার আমার নীল আকাশের গাঢ়কম্প্রমেঘ |
সমুদ্র আমায় তুমি স্রষ্টা ব’লে জানো মনে মনে অবিচ্ছেদ্য অশান্ত স্মরণে | আমি যে মানুষ আমি পিতা জীবনের অগ্রগামী সংঘাতের জান্তব সংহিতা | অসংখ্য সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ে আলোকের লিপি লিখেছি সৃষ্টির ইতিহাসে সর্বজয়ী বিপ্লবের জ্বলন্ত বিশ্বাসে |