কবি বিন্ধ্যবাসিনী দেবীর কবিতা
কবি
বিন্ধ্যবাসিনী
দেবীর পরিচিতির পাতায় . . .
*
বঙ্গবাসিনী ভগ্নীদিগের প্রতি উপদেশ
শ্রীমতী বিন্ধ্যবাসিনী দেবী
নিদ্রাভঙ্গে বামাগণ, হও সচেতন,
দেখ সবে জ্ঞান-চক্ষু করি উন্মীলন।
বামাদের বোধনেত্র করিতে বিস্তার,
বামাহিতৈষীরা চেষ্টা করেন অপার।
দেখিয়া বামার দুঃখ দয়াশীল গণ,
নিজ ব্যয়ে করিছেন বিদ্যা বিতরণ।
করিবারে বামাদের পাপ বিমোচন,
করিছেন ধর্ম্মালয় স্বগৃহে স্থাপন।
বামার হৃদয়ক্ষেত্রে হলে বিদ্যাঙ্কুর,
সুফল সংসার-বৃক্ষে ফলিবে প্রচুর।
আর কেন বামাগণ, সময় কাটাও,
সংসারের প্রতি সবে, জ্ঞানচক্ষো চাও।
ক্রমশঃ উন্নতি দেখ হতেছে সবার,
বামাদের দুঃখ শ্রোত হইবে সংহার।
বিদ্যারত্নে অলঙ্কৃত, হবে বামাগণ,
পরিবে অঙ্গেতে সদা ধর্ম্মের ভূষণ।
বামাদের দুঃখ-নিশা হয়েছে প্রভাত,
ঈশ্বরচরণে সবে কর প্রণিপাত।
যিনি দিয়াছেন এই পরিবারগণ,
যাঁহার আদেশে মাতা করেন পালন।
যাঁহা হতে পেয়ে চক্ষু, করি দরশন,
যিনি দিয়াছেন বিদ্যা, মনের ভূষণ।
এস সবে বঙ্গবাসী, সব ভগ্নীগণ,
করিতে চেষ্টিত হই বিদ্যা উপার্জ্জন।
বিদ্যা বিনা বুদ্ধি-বৃত্তি মার্জ্জিত না হয়,
বিদ্যা বিনা নাহি হয় ভক্তি ভাবোদয়।
ভগ্নীগণ আর কেন, হারাও সময়,
বামাদের সুখসূর্য্য, হয়েছে উদয়।
অঙ্গনার মন হলে, বিদ্যালোকময়,
না রহিবে অন্তঃপুরে কুসংস্কারচয়।
সুখের সোপান বিদ্যা অমূল্য রতন,
মনোযগ সহ সবে কর উপার্জ্জন।
বিদ্যাবলে পর বামা ধর্ম্মের ভূষণ,
ধর্ম্মের সমান বন্ধু নহে কোন জন।
ধার্ম্মিক না হলে বিদ্যা শিক্ষায় কি ফল?
অন্তিমকালের বন্ধু ধর্ম্মই কেবল।
ঈশ্বর প্রসাদে পেয়ে, বুদ্ধিশক্তি মন,
তাঁহাকে ভুলনা কেহ, যাবত জীবন।
আমাদের যত হবে, জ্ঞান উপচয়,
বুঝিতে সহজ হবে, এই সমুদয়।
কোথা হতে এসে মেঘ, বারি বরষিতে,
কে দিল উর্ব্বর শক্তি ধরণী গর্ভেতে?
এই যে পৃথিবী ইহা, চন্দ্র তারাসহ,
কাহার নিয়ম ক্রমে ভ্রমে অহরহ?
প্রতিদিন উষারম্ভে, অরুণ উদয়,
অপরাহ্নে পশ্চিমেতে, অস্তাচলে যায়,
এই যে বিবিধ-রঙ্গ মেঘেতে আকাশ,
শোভিত করিয়া করে, কৌশল প্রকাশ,
নিরখিয়া স্বভাবের, এ ভাব নিচয়,
স্বভাবতঃ মনে হয়, ভক্তির উদয়।
দিবানিশি রবিশশী, আর ঋতুছয়,
বারমাস সাতবার, আসে আর যায়।
সুশৃঙ্খল এ জগত, করি দরশন,
উথলয় ভক্তিরস, আর্দ্র হয় মন।
‘কোন্ জন অদ্বিতীয় পুরুষ প্রধান,’
আশ্চর্য্য কৌশলে বিশ্ব করেছে নির্ম্মাণ?
বায়ু অগ্নি ক্ষিতি জল, প্রত্যেক উপর,
অখণ্ড নিয়ম দিল অতি মনোহর?
অপার করুণা তাঁর হের্ চার দিকে,
না জানি কি কাজে তুষ্ট করিব পিতাকে।
এস তবে ভক্তিভরে সব ভগ্নীগণ,
কায়মনোবাক্যে পূজি পিতার চরণ।
. *************************
.
সূচিতে . . .
মিলনসাগর