বিদ্যাসাগরকে উত্সর্গিত কবিতা ও ছড়া |
বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ কবি মানকুমারী বসু কবি মানকুমারী বসুর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . . "বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ" বালাই! হৃদয় চমকি ওঠে শোণিতে আগুন ছোটে, ছয় কোটি প্রাণ পুড়ে হয়ে যায় ছাই! এ দীন পতিত দেশে পতিতপাবন-বেশে--- দয়ার দেবতা আহা আজ আর নাই! বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধে বুক ফাটে তাই আজ যদি "পিতৃশ্রাদ্ধ" সারা বঙ্গময়--- "পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম," দেখিব তাহারি কর্ম, হৃদিপিণ্ডে পিণ্ডদান কর সমুদয় ; পদধূলি রাখি শিরে, চল যাই গঙ্গা-তীরে, ঘরে ঘরে হবে সেই দেব-অভ্যুদয়--- এ যে গো প্রতিষ্ঠা---এতো বিসর্জন নয় || বিষাদের দিনে এই নব মহোত্সব, দিয়া ভক্তি উপহার--- "ষোড়শ" সাজাও তাঁর কোটি ভাই বোন কেউ থেকো না নীরবে ; কি করিবে "বৃষোত্সর্গ" এ বিধি যে "আত্মোত্সর্গ" ফিরে যাহে প্রাণ পাবে কুড়ি কোটি শব | খুলিয়া বুকের পাতা দেখ সঞ্জীবনী গাথা, পড় সে "বিরাট পুঁথি" বীরত্বের স্তব | আজি পিতৃপ্রীতি লাগি হও সবে স্বার্থত্যাগী, উঠুক দিগন্ত ভেদি কোটি কণ্ঠ-রব, বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ---নব মহোত্সব || বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধে আত্মা দাও ডালি--- কাঙালী "বিদায়" যাচে দুয়ারে দাঁড়ায়ে আছে--- বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধে ভারত কাঙালী ! টাকা পয়সার তরে আসেনি মা শোক ভরে--- কাঁদিছে সে, কোল তার হয়ে গেছে খালি, দাও মা'রে দাও ভিক্ষা, মহামন্ত্রে লও দীক্ষা, "ঈশ্বরের" ভাই হও ছ'কোটি বাঙালী ! জননী হয়েছে আজি "ঈশ্বর-কাঙালী" || "বিদ্যাসাগরের শ্রাদ্ধ" বড় গালাগালি--- ক'স্ নে ও কথা ফিরে কোটি বুক যায় চিরে, ছয় কোটি প্রাণ পুড়ে হয়ে যায় কালি! এ জাতীয় পিতৃকৃত্য তবেই হিবে "নিত্য", হীনতা নীচতা দাও গঙ্গাজলে ঢালি! শেখ সে উদ্যম-আশা বুকভরা ভালবাসা, পূরাও পরাণ দিয়ে মার কোল খালি! মহাশ্রাদ্ধ হোক্ শেষ, "ঈশ্বরে" ভরুক দেশ, পূজিব সে পিতৃমূর্তি হৃদয়ে উজালি, নিতি দিব---প্রাণগলা আঁখিজল ঢালি || . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
বিদ্যাসাগর স্মৃতি কামিনী রায় কবি কামিনী রায়ের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . . ঘন আঁধারের মত বঙ্গদেশ ছেয়েছে গভীর শোক, করি উদ্ যাপন জীবনের ব্রত, এথাকার রবি আজি অস্তগত, কোথায় উদিছে নূতন দিনেশ উজলিতে নবলোক | সেই দানশীল বিধাতার দান জ্ঞান পুণ্য তেজোময়, কাঙাল ভারতে দিয়াছিলা বিধি কি তপস্যা ফলে সে অমূল্য নিধি ? . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
কে বলে ঈশ্বর নাই ভূপেন্দ্রবালা দেবী কে বলে ঈশ্বর নাই ? ঈশ্বর জীবনে ঈশ্বরের কার্য জ্বলিছে দেখিতে পাই | মৃত লোকে ভরা, স্বার্থপর ধরা ঈশ্বরে হারায়ে আজ, মৃত শোক ভরে, কাঁদিতেছে সবে ধরিয়া শোকের সাজ | বুঝে না তাহারা, অমর ঈশ্বর -- মরণ তাঁহার নাই ; নিঃস্বার্থ প্রেমের, অমৃতের ছবি সংসারে রহিল তাই | এ ছবি দেখিয়া কত মৃত প্রাণ নূতন জীবন পাবে | পরবর্তী কত নূতন জীবন আদর্শে গঠিত হবে | অমৃতের পুত্র অমর ঈশ্বর অমর-ভবন-বাসী, প্রেম বিলাইয়া, অনন্ত প্রেমেতে গিয়াছেন শেষে মিশি | অমৃতের পুত্র, অমর ঈশ্বর তাঁহার বিরহে আজ--- কাঁদিতেছে লোক, অমৃত ভাষায় দেখে হৃদে পাই লাজ ! অমর বিরহে, কাঁদিবার তরে চাই গো অমর ভাষা | মৃত লোক তোরা, তুলেছিস্ কেন তোদের এ মৃত ভাষা ? অমৃতের পুত্র অমর যাহারা এসো অগ্রসর হয়ে----- অমর ভাষায় বিরহ সঙ্গীত উঠ গো তোমরা গেয়ে সে সঙ্গীত গিয়ে প্রতি মৃতপ্রাণে ঢালুক অমৃতধারা, মুহূর্তের তরে সজীব হইয়া হউক আপন হারা | . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
সাগর তর্পণ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . . বীরসিংহের সিংহশিশু ! বিদ্যাসাগর ! বীর ! উদ্বেলিত দয়ার সাগর, ----বীর্য্যে সুগম্ভীর ! সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয় ; তোমায় দেখে অবিশ্বাসীর হ’য়েছে প্রত্যয় | নিঃস্ব হ’য়ে বিশ্বে এলে দয়ার অবতার | কোথাও তবু নোয়াওনি শির জীবনে একবার সৌম্য মূর্ত্তি তেজের স্ফুর্তি চিত্ত-চমত্কার ! নামলে একা মাথায় নিয়ে মায়ের আশীর্বাদ, করলে পূরণ অনাথ আতুর অকিঞ্চনের সাধ ; অভাজনে অন্ন দিয়ে ---- বিদ্যা দিয়ে আর----- অদৃষ্টেরে ব্যর্থ তুমি করলে বারম্বার | বিশ বছরে তোমার অভাব পূরল নাকো , হায়, বিশ বছরের পুরানো শোক নূতন আজো প্রায় ; তাই তো আজি অশ্রুধারা ঝরে নিরন্তর ! কীর্ত্তিঘন মূর্ত্তি তোমার জাগে প্রাণের’ পর | স্মরণ-চিহ্ন রাখতে পারি শক্তি তেমন নাই, প্রাণ প্রতিষ্ঠা নাই যাতে সে, মূরৎ নাহি চাই ; মানুষ খুঁজি তোমার মত,--- একটি তেমন লোক,--- স্মরণ-চিহ্ন মূর্ত্ত ! --- যে জন ভুলিয়ে দেবে শোক | রিক্ত হাতে করবে যে জন যজ্ঞ বিশ্বজিৎ--- রাত্রে স্বপন চিন্তা দিনে দেশের দশের হিত,--- বিঘ্ন বাধা তুচ্ছ করে লক্ষ্য রেখে স্থির তোমার মতন ধন্য হ’বে, --- চাই সে এমন বীর তেমন মানুষ না পাই যদি খুঁজব তবে, হায়, ধূলায় ধূসর বাঁকা চটি ছিল যা’ ওই পায় ; সেই যে চটি উচ্চে যাহা উঠত এক একবার শিক্ষা দিতে অহঙ্কৃতে শিষ্ট ব্যবহার | সেই যে চটি দেশী চটি----বুটের বাড়া ধন, খুঁজব তারে, আনব তারে, এই আমাদের পণ সোনার পিঁড়েয় রাখব তারে, থাকব প্রতীক্ষায় আনন্দহীন বঙ্গভূমির বিপুল নন্দিগাঁয় | রাখব তারে স্বদেশ-প্রীতির নূতন ভিতের প’র নজর কারো লাগবে নাকো, অটুট হবে ঘর | উঁচিয়ে মোরা রাখব তারে উচ্চে সবাকার,---- বিদ্যাসাগর বিমূখ হ’ত ---- অমর্য্যাদায় যার | শাস্ত্রে যারা শস্ত্র গড়ে হৃদয়-বিদারণ, তর্ক যাদের অর্কফলার তুমুল আন্দোলন ; বিচার যাদের যুক্তিবিহীন অক্ষরে নির্ভর,---- সাগরের এই চটি তারা দেখুক নিরন্তর | দেখুক. এবং স্মরণ করুক সব্যসাচীর রণ,--- স্মরণ করুক বিধবাদের দুঃখ-মোচন পণ | স্মরণ করুক পান্ডারূপী গুন্ডাদিগের হার, ‘বাপ, মা, বিনা দেব্ তা সাগর মানেই নাকো আর |’ অদ্বিতীয় বিদ্যাসাগর ! মৃত্যু-বিজয় নাম, ঐ নামে হায় লোভ করেছে অনেক ব্যর্থকাম ; নামের সঙ্গে যুক্ত আছে জীবন-ব্যাপী কাজ, কাজ দেবে না ? নামটি নেবে ?-----একি বিষম লাজ ! বাংলা দেশের দেশী মানুষ ! বিদ্যাসাগর ! বীর ! বীরসিংহের সিংহশিশু ! বীর্য্যে সুগম্ভীর ! সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়, চক্ষে দেখে অবিশ্বাসীর হ’য়েছে প্রত্যয় | . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |
দয়ার পুরীধাম কুমুদরঞ্জন মল্লিক কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক-এর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . . বিদ্যা তোমার সাগর, তুমি দয়ার পুরীধাম উচ্চারণে পুণ্য দেহ, ধন্য তোমার নাম | সকল জাতির জ্ঞাতি তুমি মুক্ত চিরদিন, আপন তোমার পথের কাঙাল আতুর দীনহীন’ তোমার বুকে মঠ বেঁধেছে, এক সাথেতে সব, হিন্দু তুমি, বৌদ্ধ তুমি, শাক্ত ও বৈষ্ণব | বঙ্গভাষা শকুন্তলা কোথায় ছিল পড়ি’ হে মহর্ষি ব্রহ্মচারী আনলে বুকে করি, কন্যা করি ধন্যা করি অরণ্যেতে তায় শিক্ষা দিলে, দীক্ষা দিলে, কুটীর আঙিনায়, বনের বনজ্যোত্স্না সে গৌরব অতুল পরাজিত পারিজাত ও রাজোদ্যানের ফুল | মায়ের মতো স্নেহ তোমার ; দেবের মত দয়া পতিত তাপিত উদ্ধারিতে সর্বজয়া গয়া পরের দুখে অমনি গল কঠিন হিমাচল হৃষীকেশের গঙ্গা তুমি শান্ত সুশীতল | উচ্চারণে পুণ্য দেহ, ধন্য তব নাম . ************************* . সূচিতে . . . মিলনসাগর |