বিদ্যাসাগরকে উত্সর্গিত কবিতা ও ছড়া
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
আদিতেই আছো তুমি
শুদ্ধসত্ত্ব বসু     
কবি শুদ্ধসত্ত্ব বসুর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .     

আদিতেই আছো তুমি, আছো তুমি অন্তিমে অপার
ধরতে গেলে জীবনের প্রতিপর্বে , হাতে খড়ি থেকে
অ, আ, ক, খ, কর, খল, ঘট, পট, ----এক পাশে রেখে
জল পড়ে, পাতা নড়ে----- মন্ত্রগুলি কানে এলে আর
কি এক রহস্য বাজে প্রকৃতিকে দেখা ও শোনার !
আমরা মুখোশ পরে সারাক্ষণ থাকি মুখ ঢেকে
শুষ্ক কন্ঠে নিজেদের প্রতাপ জানাতে ডেকে হেঁকে
গলাবাজি করতেই ধরা পড়ে কি ধাতু আমার  !
একান্ড ঘটতে থাকে যখনই তোমার কাছে আসি
বিশ্বের দর্পণ তুমি, তোমার ও চোখের দৃষ্টিতে
তাবৎ মানুষ দেখি ধরা পড়ে মুহূর্তে চকিতে
প্রতিফলিতেরা শুধু নত মুখে প্রচন্ড বিশ্বাসী-----
আমরা যে কত ছোট ---- সাগরের দরাজ আর্শিতে
বুঝে নিই | অন্ততঃ এ জন্যে তাই জানাই প্রণাম !

.              *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
জল পড়ে পাতা নড়ে
সিদ্ধেশ্বর সেন     

শৈশবের গান শুনি যৌবনের জরারও গান
অ-শোক কালের স্পর্শ বর্ণমালা আকাশের গা’য়
শব্দের বিদ্যুত্ছটা শূন্যের প্রান্তর ভেঙে গায়

এ কোন্ শিশুর খেলা কী খেলা তব বৈভবগান

স্থবির সমুদ্রে ঢেউ হৃদয়ের সমুদ্র সত্কার
বালুতপ্তকণা দিন তৃষ্ণার গোষপদে সারে স্নান
অবগাহনের পুণ্য স্মৃতিভ্রংশে করেছে প্রস্থান

শিশুরা গড়েছে আজ ধূলিপঙ্ক অমৃতসমান

ভ্রান্তির দুর্লগ্নে যাত্রা বিড়ম্বিত বৃত্তে ঘুরে ম্লান
একবিন্দু অতিক্রম শুরু কিংবা শেষ একাধারে
নিতান্ত জন্মের দেনা মৃত্যুতে কী শোধ গ্রহ-ফেরে

শিশুরা নির্ঝর স্বর গেয়ে ওঠে ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’  গান |

.                *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
তুমিই গ্রাহ্য খাঁটি
কৃষ্ণ ধর     
কবি কৃষ্ণ ধর-এর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        

কাছে গিয়ে দেখি মিলেছো মেলার ভিড়ে
বীরসিঙ্গার পুতুলে মাটিতে মিশে
শ্রাবণে ভিজেছো সবাকার সাথে সাথে
দামোদরে ঝাঁপ, সেতো আছে ইতিহাসে |

.          বর্ণমালার দুঃখ ঘোচাতে একা
.          তুমি রাত জেগে পরিচয়লিপি আঁকো
.          আকারে ইকারে ঐক্যবাক্যে  মিশে
.          কী যে ঘটে গেলসে তো জানে জোড়াসাঁকো |

.                    ধুতি ও চাদরে তুমিই গ্রাহ্য খাঁটি
.                    শাস্ত্র শিলাকে ভেঙ্গে করো  খান খান
.                    দুর্বিনীতে দেখাতে পারো যে চটি
.                    তুমিই দেখাও   রেনেসাঁসে সমাধান |

.                    *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বাংলার ঈশ্বর
গৌরাঙ্গ ভৌমিক     

বীরসিংহ গাঁয়ে নাকি ঈশ্বরের বাড়ি ?
তবু লোকে তাঁর খোঁজে দূরে দেয় পাড়ি |
একটা গাঁয়ের সীমা নিজেই ছাড়িয়ে
যেন তিনি আলো হয়ে আছেন দাঁড়িয়ে

বাংলাকে ভালোবেসে বাংলার ঈশ্বর
সাজালেন বাংলার বর্ণ ও অক্ষর |
বাংলার কুয়াশা ও বাংলার সংশয়
কাটিয়ে দিয়েছে তাঁর বর্ণপরিচয় |

বাংলা করেনি শোধ তাঁর কোনো ঋণ,
ঈশ্বরের আয়ু বাড়ে ঈশ্বরের দিন
অন্ধকারে আলোকিত তাঁর কন্ঠস্বর
আজও যেন শোনা যায়, দূরে বাতিঘর |

.         *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিদ্যাসাগর
বিমলচন্দ্র ঘোষ    
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        

ঝর ঝর জল পড়ে পাতা নড়ে
সেই সব দিন যেই মনে পড়ে
হৃদয়ে জাগেন বিদ্যাসাগর
স্মরণে বর্ণ-পরিচয় পড়ে |

শৈশব স্মৃতি যেই মনে পড়ে
যারা জাতি গড়ে যারা দেশ গড়ে
তাদেরি স্মরণে যামিনী জাগর
জ্বেলে রাখে দীপ দুরন্ত ঝড়ে |

জল পড়ে পাতা নড়ে চিরকাল
মনন-শস্য জীবনের চাষে,
উনিশ শতকে শাওন সকাল
সোনার লাঙল হাতে নিয়ে আসে----
কৃষি ভারতের ঋষি বলরাম
বিদ্যাসাগর একটাই নাম |

.      *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
বর্ণমালার কর্মশালা
হরপ্রসাদ মিত্র
কবি হরপ্রসাদ মিত্রর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        

বর্ণমালার কর্মশালার অন্য ঘরে
কিমাশ্চর্য সাজিয়েছিলে হরফগুলো----
অ-য়ে অজগর ইত্যাদি সব ছবির পরে
ধন্য তোমার অনন্য সেই শব্দগুলো  !
শিশুর কন্ঠে মায়ের গন্ধে সন্ধেবেলা
জল পড়ে আর পাতা নড়ে,---পাতা নড়ে !
মেদ্ নিপুরের বীরসিংহের সিংহশিশু ,
পরাক্রমের গল্প তোমার শত শত,
শুনতে -শুনতে মনে হতো বুদ্ধ-যিশু
ছিলেন তাঁরা অনেকটা ঠিক তোমার মতো  |
ভবিষ্যতের জন্যে তোমার হৃদয় ছিল  |
বর্তমানের বাধা--বিজয়--শক্তি ছিল  |
তার তুলনায় উন্নতি না অধঃপতন ----
কী জানি কী ঘটছে, ----সেটা অন্য কথন  |
তোমার কথা লিখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ---
বিনয়বাবু, বিহারীলাল, চন্ডীচরণ,
ইন্দ্র মিত্র এবং আরো জীবনীকার
দিলেন, দেবেন, প্রশ্ন অনেক মনের ঘরে-----
যেখানে মন শুনেছে আপন অবসরে
জল পড়ে আর পাতা নড়ে, ---পাতা নড়ে !

.            *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়   
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        

মুখোশ ছিল না তাঁর
তাই তাঁর মুখের ওপর
দৃশ্যগুলি কুয়াশার
কান্না ছুঁয়ে অবশেষে ঝড় ;
যেন রুদ্র প্রলয়ের
রক্তস্নানে ক্রুদ্ধ দ্বিপ্রহর ----
পোশাক ছিল না তাঁর
তাই যুদ্ধ বুকের ভিতর |

অথচ গভীরে তাঁর
শান্ত স্থির করুণাসাগর |

.    *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
তবে কেন
মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়    
কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        

“শেষাশেষি বিদ্যাসাগর কতকটা misanthrope নবজাতিদ্বেষী হইয়াছিলেন  | --- তাঁহার বিশ্বাস ছিল যে ,  অধিকাংশ
ব্রাহ্মণপন্ডিত এরূপ অসার যে অর্থলোভে তাহারা না পারে এমন কাজ নাই | আবার ইংরাজী শিক্ষিতাভিমানীকেও তিনি যেন
ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখিতে লাগিলেন  |”---  আচার্য কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য “এমন মহান মানবপ্রেমিক শেষজীবনে কেন, কোন্ কোন্
কারণে মানববিদ্বেষী হইয়া উঠিলেন--  বিদ্যাসাগর -- মনমরা হইয়া শেষজীবনে সরল সাঁওতাল ও শিশুগণের সাহচর্যে শান্তিলাভ
করিতে চেষ্টা করিলেন  |”    . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . শ্রী প্রমথনাথ বিশী
                                                                     
(কবি প্রমথনাথ বিশীর কবিতার মূল পাতায় . . .  )
তবে কেন
মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়

আজন্মবিখ্যাত ওই আবক্ষ আলোকচিত্র ধাঁধা  :
ও কি মুখ -- মমতা -মনীষা -দয়া -বিদ্যা পারাবার ?
ও কি মুখ---বিরক্ত বিতৃষ্ণ তিক্ত কূপ ছাড়াবার  ?
তবে কেন চোখে ঠোঁটে উর্ণার রহস্য ছিলা- বাঁধা  !
ও গোপন রক্তস্রাব, উৎক্ষিপ্ত ছুরির মুখ আধা
অর্ধেক চোখের নুন, বাকি অর্ধ জালা আর ক্ষার,
কলকাতায় কুরুক্ষেত্র , বিষণ্ণ প্রস্থানে কর্মাটাড়,
প্রত্যয় বিদ্যুৎ হতে গিয়ে চ্যুত-বিশ্বাসে পা-বাঁধা |

আবক্ষ আলেখ্য বিদ্যাসাগরের আমরাও কেউ কেউ :
সংকল্প অপাপবিদ্ধ, শুদ্ধ দৃষ্টি, ইচ্ছা খড়্গনাসা---
স্বপ্ন ও স্বদেশ প্রতিদ্বন্দ্বী কেন, পরিপার্শ্ব ফেউ,
তৃষ্ণার ওষ্ঠ ও জল ---- স-চিত্কার মধ্যে কর্মনাশা
অন্তর্ঘাত অন্তর্দ্বন্দ্ব পরিণামনিরাশা নিরাশা  |
গর্জিত ছোবল তুলে ছবি হয়ে যাই ক্ষিপ্ত ঢেউ |

.    *************************  

.                                                                                        
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
লাগসই
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়   
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        
এখানে আমাদের এই কবিতার ভুল সংশোধন করে দিয়েছেন শ্রী অলক বাসুচৌধুরী। এজন্য
আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর ফেসবুক -
https://www.facebook.com/alak.basuchoudhury  


যেহেতু ঈশ্বরচন্দ্র ঈশ্বর ছিলেন না বাস্তবিক,
তাঁকে ধরা যেত
মানুষের দুঃখ দেখলে হতেন কাতর
অতএব লোকে করত তাঁকেই পাকড়াও,
এবং কিছু না কিছু প্রত্যেকেই পেত
যে যেমন জানাত প্রার্থনা!
তাও
কিছু দিলে ভুলে যাবে মানুষ সে পাত্র না –
প্রতিদানে ঢিল
ছুঁড়েছে সে সহসা পাঁজরে,
মুখটা ব্যথায় নীল!
অতএব লেগেছিল ঠিক –
যেহেতু ঈশ্বরচন্দ্র ঈশ্বর ছিলেন না বাস্তবিক।

.            *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
*
এ কেমন বিদ্যাসাগর
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী   
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .        

আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলি আজ
হাজার টুকরো হয়ে
হাজার জায়গায় ছড়িয়ে আছে  |
আমার বালিকাবয়সী কন্যা যেমন
নতজানু হয়ে
তার ছিন্ন মালার ভ্রষ্ট পুঁতিগুলিকে  
একটি-একটি করে কুড়িয়ে নেয়,
আমিও তেমনি
আমার ছত্রখান সেই বিগত-জীবনের হৃত্প্রদেশে
নতজানু হয়ে বসি,
এবং নতুন করে আবার মালা গাঁথবার জন্যে
তার টুকরোগুলিকে
যত্ন করে কুড়িয়ে তুলতে চাই  |

কিন্তু পারি না  |
আমারই জীবনের কয়েকটি অংশ আমার
হঠাৎ কেমন অচেনা ঠেকতে থাকে,

এবং কয়েকটি অংশ আমাকে চোখ মেরে আরও
দূরে গড়িয়ে যায়  |
আমি বুঝতে পারি,
গঙ্গাতীরের তীর্থের দিকে পা বাড়ালেই এখন
বৃত্রাসুর আমার সামনে এসে দাঁড়াবে | এবং
মাসির-কান-কামড়ানো সেই ছেলেটা আর কিছুতেই
বাদুড়বাগানে পৌঁছতে দেবে না  |

স্তব্ধ হয়ে আমি বসে থাকি |
উইয়ে-খাওয়া বইয়ের পাতা হাওয়ায় উড়তে থাকে |
আমি চিনে উঠতে পারি না যে,
এ কেমন হেমচন্দ্র, আর
এ কেমন বিদ্যাসাগর  |

তখন পিছন থেকে আমি আবার
সামনের দিকে চোখ ফেরাই  |
এবং আমি নিশ্চিত হয়ে যাই যে,
অতীতের সঙ্গে সম্পর্কহীন
বর্তমানের এই কবন্ধ কলকাতাই আমার নিয়তি ;
যেখানে
‘কবিতীর্থ’ বলতে কোনো কবির কথা কারও মনে পড়ে না,
এবং ‘বিদ্যাসাগর’ বলতে-----
তেজস্বী কোনো মানুষের মুখচ্ছবির বদলে-----
ইশকুল, কলেজ, থানা, বস্তি,
অট্টালিকা, খাটাল, পোস্ টার, ও পয়ঃপ্রণালী-সহ
আস্ত একটা নির্বাচনকেন্দ্র
আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে |

.            *************************  

.                                                                               
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর