বিদ্যাসাগরকে উত্সর্গিত কবিতা ও ছড়া
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
অভয়মন্ত্রের বিদ্যাসাগর
দেবী রায়     
বি দেবী রায়ের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .     

তোমার বাহ্যিক-রুখুসুখু চেহারাটাই যতোবেশি
আকৃষ্ট করেছিলো, সমকালীন মানুষদের ;
ঠিক ততোটাই , আজো-----
সেই আমরা নির্বোধ, রোমাঞ্চবিহীন অন্ধকারে-----

এমন কি সেই আমরা, এখনো তোমার
ভিতরটা একবার
তাকিয়ে দেখার

ফুরসৎ পাই নি |
না,  ও পথে যাই নি !
আমাদের আধুনিকতা শুধু খোলে
.                     শুধু বহিরঙ্গে


.      মুরোদ কোথায় বাবা--আ ! কে যায় অ-তোদূর----
.                  কে যাবে তোমার সঙ্গে
আমাদের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত হিসেব নিকেশ, কালাপাহাড়ি--
.       জন্ম ও জন্মান্তরের সংস্কার
.       দু’পাতা ইংরাজি পড়ে, সব সংকীর্ণতার উর্দ্ধে --- ?


আমাদের জাতি-মান-কুলের বিচার, সে কি নয়--- হারাকিরি ?
তদোপরি, আছে হাঁচি-টিকটিকির বাধা
.          প্রতি পদে পদে !

মাত্র ঊনপঞ্চাশে----
তুমি সেই মানুষ-রক্তমাংসের
কেন যে বৈরাগ্যের পথে, সাঁওতাল পাড়ায়
হেঁটে গেলে  !

অথচ নও, সে অর্থে ----
তথাকথিত ধার্মিক কি পরলোক-পিয়াসী ধ্যানী !

চাষাভূষো-শ্রমিক-দারোগা কি স্কুল-মাষ্টারের ছেলে
সব আমরা সেই, দুষ্টুচক্রের খপ্পরে-----
.                    ঐ সে লোভের হাতছানি  !


হায় !
এমন কি, তথাকথিত বীরসিংহ-- গ্রাম,
আমি অদ্যাবধি, চর্মচক্ষেও দেখি নি  !
.                                 -------  দেখা যায় ?

.        *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
পিতৃপুরুষ
সুশান্ত বসু     

নারী তুমি মানুষ, তুমি মানুষ
এই কথাটি জোর গলাতে যিনি
গেঁথে দিলেন তোমার মুখে, বুকে
পিছুটানের হাজার বিকিকিনির
মুখোশ-আঁটা মিথ্যে-যদির ফানুস
ফাটিয়ে যিনি ছিন্নবাধা সুখে
ডাক পাঠালেন মানুষ, তুমি মানুষ
চেনো তোমার সত্য স্বরূপটিকে !

ভালোবাসার প্রদীপখানি হাতে
পিতৃপুরুষ বিদ্যাসাগর বীর
আকীর্ণ এই অন্ধ তমিস্রাতে
আজও বেঁচে সমুন্নত শির
শিকল-ছেঁড়ার স্বপ্ন-শপথ জ্বালা
বুকে গাঁথেন বাঁচার বর্ণমালা |

.      *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঈশ্বর দ্বাদশী
বাসুদেব দেব    
কবি বাসুদেব দেব-এর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .     

ভালোবাসা শেখালে না তুমি
শেখালে না বর্ণপরিচয়
অশুদ্ধ বানানে জন্মভূমি
কৃপাণে মরিচা ধরে রয়

আপোসে অভ্যাসী রাতদিন
কোথায় তোমার সেই চটি
নিরক্ষর দরিদ্র গ্রামীন
মা-কে নয় পূজা করি নটী

আজো ঝড় আজো দামোদর
উথাল তেমনি কাঁদো মাগো
ঈশ্বরবিহীন বুকে বুকে
আরো একবার তাঁকে ডাকো

.    *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তিনি ছিলেন
শুভ বসু    

তিনি ছিলেন বজ্র,  সারা দেশের
নির্বিবেক করুণ ভীরুতায়

তিনি ছিলেন মেরুদন্ড কঠিন ইস্পাতের
সরীসৃপে শাসন-করা কালে
পিপুল, তাঁর শাখায় ছিল দশ দিগন্তের
জন্য ছায়ার গভীর মায়ার স্বস্তি এনে দেয়

ছিলেন প্রাজ্ঞ কৃষক, এমন মানবজমিনটিতে
আবাদ-করে ফসল তোলার কৌশল যিনি জানতেন
তিনি ছিলেন মা
কোলে যে আশ্রয়ের জন্য আসত ফিরত না |

.           *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঈশ্বর ও নারী
প্রমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকৃতির খেয়ালে বিধাতা পুরুষ
সৃষ্টি করলেন নারী
সমান পাল্লা আর অসমান বাটখারায়
ওদিকের বোঝাটা রাখলেন ভারী |

চোখের জলে রমনীয় হলো নারী
চললো এই নিয়ম
কেবল একজন মানলো না সেসব
ব্যকরণ ভেঙে তৈরি করলো ব্যতিক্রম |

ঈশ্বরের সৃষ্টিকে সে মানলো না
অহল্যাকে করলো জীবনময়ী
প্রকৃতির বাটখারাটা পালটে দিয়ে
অন্য এক ঈশ্বর হলো জগত্জয়ী |

.     *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঘোষপাড়ার বিদ্যাসাগর
ব্রত চক্রবর্তী

ঠিক ঘোষপাড়ার যেখানে
বাসগুলোর বাঁধা স্টপেজ,
সেখানে কারা শ্বেত পাথরের ছাউনিতে
শ্বেতপাথরের বিদ্যাসাগরকে বসিয়ে দিয়ে গেছে  |
তিনি বসে আছেন |

এই বিদ্যাসাগর আশ্চর্যরকমের স্থির ;
আশ্চর্যরকমের নির্বিকার ;
আশ্চর্যরকমের উদাসীন  |

এই বিদ্যাসাগরের গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
ডিগ্রির কাগজ পকেটে নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় য়ুবক
শহরের কোন্ দিকে যাবে ভাবে ;
তিনি সহনুভূতির হাত বাড়িয়ে দেন না |
এই বিদ্যাসাগরের সামনে দিয়ে
কত শোকাতুরা সদ্যবিধবা ম্লানমুখে হেঁটে যায় ;
তিনি তাঁদের পুনর্বিবাহের উদ্যোগ নেন না  |
এই বিদ্যাসাগরের কাছ দিয়ে যেতে যেতে
একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে ভুল ব্যাকরণ শেখায় ;
তিনি বিচলিত হন না |

দেখে মনে হয়---- এই উনিশশ’ সাতাশি পর্যন্ত বেঁচে থাকলে,
নিজের শ্রম ও উদ্যোগগুলির পরিণতি দেখে
ক্ষোভে-দুঃখে, কষ্টে ও লজ্জায়,
তিনি,  বিদ্যাসাগর, বোধ হয় এরকমই হয়ে যেতেন !

.                *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঈশ্বরের খোঁজে
সন্তোষ দত্ত

সহমরণের চিতার ওপরে দাঁড়িয়ে বলছি শোনো
সেই আগুনেই, যে -আগুন তুমি ভেবেছিলে নিভে গেছে
মাটির কলসি ভেঙে দিয়ে আর পিছু ফিরে চেয়ে দেখেনি
অস্থি মজ্জা ভষ্মের স্তুপে অঙ্গার ছিলো বেঁচে !

আর জমেছিলো চারপাশে তার কালো রক্তের চাপ
শতাব্দী ধরে রক্ত মাড়িয়ে ক্লান্ত, দু’চোখে ভয়
ভষ্মে লুকানো সেই অঙ্গার হৃদয়ে মারছে ছাপ
দু’পায়ে রক্ত, আমাদের দেহে বিবর্ণ পরিচয়  !

ফুটো চাল বেয়ে কেন জল পড়ে পাতা নড়ে ওঠে কীসে  ?
আমাদের বউ অবোধ মায়েরা এখনো পায়না থই
সর্বংসহা ধরিত্রী হ’য়ে ডুবে থাকে নীল বিষে
টাকা গুনে নেয় সাদা কাগজেই এঁকে দিয়ে টিপসই  |

তুমি ঈশ্বর, তোমাকেই খুঁজি তোমার উপস্থিতি
আর একবার বেত্রাঘাতে নুব্জ সমাজ শরীর
ঋজু পৌরুষে সোজা করে দিক, নিষ্ফলা বিংশতি
সিঁথির সিঁদুর এঁকে দিক ফের, যৌবনবতী বিধবা এ পৃথিবীর !

.                  *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*

প্রমোদ বসু

আমার ভাষার তুমি প্রথম অক্ষর,
বাঙালির বর্ণপরিচয় |
আমার দেশের তুমি প্রতিরোধ-স্বর,
স্পষ্ট মনে হয়  |

তুমি মানে দৃপ্ত প্রাণ, তুমি মানে আলো,
তুমি এক ঐক্যের জয় |
তবু আজ দুঃখতাপ, তবু এই কালো
অন্ধকার সময়  !

ঐক্য নেই, বাক্য নয়, মাণিক্য বিরল----
কত মুর্তি ভাঙা হয় আজ !
এ মূর্খ দেশের মুখ আজও অবিচল----
তার মুখ ভাঙে না সমাজ !

.       *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
সুবাদ
সুদেব বকসী

সন্ততি --- এই বঙ্গমাতার
সেই সুবাদে হই যেন তাঁর
আপন-টাপন | তাঁর আখর-ই
সাজাই-গোছাই | চর্চা করি
অধিকারের | এবং তাঁরই
জন্য লিখি ; জাহির ভারী
“অ্যাই দেখে যাও, লিখছি হুঁ-হুঁ,
তাঁকেই নিয়ে !” অমনি হু-হু
তপ্ত খরায় জ্বলছে এ-বুক,
চোখ ভিজে যায়, নোয়াই চিবুক---

আখরগুলো কোথায়, মাগো,
দু’চোখ জুড়ে বিদ্যাসাগর !

.    *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
হাত ধরো বর্ণমালা
অজিত ত্রিবেদী

সকাল থেকে গরুর মাঠে
দুপুর চটের কলে
শুনি সবাই বলে
কোলিয়ারির গলির কোনে
.      এই যে পাপের বলি’র
পুণ্যে সে কোন্ ছিটকে আসা
এই না আলোর ঘাটে  !
আলোয় এসেও অন্ধকারে
.          সকাল
.          দুপুর
.          বিকেল
ছুট্ ছি যতই শেষ নেই তার----
পাই না খুঁজে সেই আলো আর
চোখ-ফোটা এই মনে
ক্যামন কোরে হারিয়ে যাবো
অন্ধকারের কোণে !

যদিও বিকেল বেলা
তবুও এখন ভোর
এবং যখন বোধের ঘরে
সিঁদ কেটেছে চোর ;

খুলতে দুয়ার সাগর তোমার
.              দাও হে স্বর্ণ-তালা ----
পেরোতে বন হাতটি ধরো
.              আজকে বর্ণমালা  !

.    *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর