বিদ্যাসাগরকে উত্সর্গিত কবিতা ও ছড়া
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
আর এক সাগর
বরেণ গঙ্গোপাধ্যায়

আগ বাড়িয়ে আগর
জাগতে জাগতে জাগর
বাংলাদেশের ডাগর ছেলে
হলেন বিদ্যাসাগর |

কেমন সাগর সে
ডুব দিয়ে যাঁর বাঁও মেলে না
জ্ঞানের আকর যে  |

একশ’ বছর পার
আমরা দেখি তার
মূর্ত্তিখানা সোনায় মোড়া
দয়ার অবতার |

কেমন সাগর সে
বুকের ভেতর অথই জলে
ঢেউ তুলেছে যে |

.     *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
পূর্ণেন্দু পত্রী
কবি পূর্ণেন্দু পর্ত্রীর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .     

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
ভীষণ বাজে লোক
বলতো কিনা বিধবাদের
আবার বিয়ে হোক ?

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
দেখতে এলে বেলে
চাইতো কিনা লেখাপড়া
শিখুক মেয়ে, ছেলে ?

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
দেমাকধারী ধাত্
সাহেব যদি জুতো দেখায়
বদলা তত্ক্ষনাৎ  |

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
বুদ্ধিশুদ্ধি কই ?
লিখেই চলে লিখেই চলে
শিশুপাঠ্য বই  !

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
কপালে তার গেরো
ওষুধ দিয়ে বাঁচায় কিনা
গরীব-গুর্বোদেরও ?

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
মগজটা কি ফাঁকা ?
যে-যেখানে বিপন্ন তাঁর
জোগানো চাই টাকা ?

.     *************************  

.                                                                               
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ঈশ্বরকে
পবিত্র সরকার

তোমাকে করব পুজো মুর্তি গড়ে ?
বাজাব ঘন্টাকাঁসর ফূর্তি করে ?
কোথাও কাজের কথা নাই হল-বা,
চালাব বক্তৃতা খুব, জমবে সভা ?

.                               সকলে  নিজের মতো গুছোচ্ছি বেশ |
.                               রয়েছে অন্ধকারে সমস্ত দেশ |
.                               বাকি তো অনেক ঘরে প্রদীপ জ্বালা ;
.                               সেখানে নির্বাসিত বর্ণমালা |

তুমি তো করতে লড়াই নিজের মতন,
দ্যাখনি মুক্ত দেশের এই প্রহসন |
তবুও তোমার নামে এখন জাগি,
দুখিনি বর্ণমালা পড়তে লাগি |

.                              লিখে দিই সব দেয়ালে স্পষ্ট হাতে,
.                              এঁকে দিই বর্ণমালা চোখের পাতে |
.                              বসো গো বর্ণমালা সবার বুকে,
.                              দ্যাখো দিক বিদ্যাসাগর শিশুর মুখে |

.                      *************************  

.                                                                                         
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিদ্যেসাগর               
দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়

লোকে বলে, নাকি সাগরের মতো ছিলে তুমি দেশ ভ’রে |
কেমন সে থাকা ? বলতে পারে না কেউ তো সে ঠিক ক’রে |
বোধহয় সে খুব বড়ো হয়ে থাকা, সাগরের মতো বড়ো---
সে কথা বলতে কত শত লোক সভা ক’রে হল জড়ো |
বলে, নাকি তুমি দয়ার সাগর! দয়া সে কেমন ধারা ?
বলতে, তোমারই যত দান, যত কষ্ট, সে বলে তারা |
কিসের কষ্ট ? সে নাকি লোকের দেখে শুধু চোখে জল
স্নেহে পুড়ে যাওয়া মা-র মতো অবিকল |
দিন -খাটা ধন লুট দিয়ে, দীপ পুড়িয়ে বাকিটা রাতে
কী করে সে ? কার মাথার দিব্যি পালে ব’সে কী কথাতে---
আমি কী বা জানি! কার কথা সে শত কাজ ফেলে খালি
পাশে গিয়ে পড়ে সেই যারা লোক রোগ আর উপোস কালি ?
বান-ডাকা নদী কেন হল পার মা-র ডাকে ঘোর রাতে---
আমি কী তা জানি! মা মোলো আমার ডাকতে না হয় যাতে |
আমি কী বা জানি--- কী মায়া, কী তেজ, কী গ্লানিতে শেষটায়
হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে গেল সে দূর সাঁওতালি গাঁয়!
বিদ্যে সাগর ? কী জানব আমি, কী হয় সে পড়া দিয়ে!
যে আমি ঘুরেছি রাখালের মতো পাঠশালা ফাঁকি দিয়ে |
কী ক’রে জানব, একটা লোকের মধ্যে কতটা ধরে---
যে আমি ফিরেছি বেঘুম পোয়াতে কানা গলি কালা ঘরে!
শুধু মনে পড়ে খুব ছোটোবেলা  “অ -- আ -” পরবার দিনে
কালো ছবিওলা এতটুকু বই বাবা দিয়েছিল কিনে |

.                   *************************  

.                                                                                         
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
একই লোকের নাম
জ্যোতির্ময় গঙ্গোপাধ্যায়

দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর একই লোকের নাম
নামের মধ্যে ঢাকা আছে জীবন সংগ্রাম  |
জল পড়ে পাতা নড়ে ------ বর্ণপরিচয়
কথামালা পড় আর পড় বোধোদয় |
গ্যাসের আলোয় পড় দিয়ে প্রাণমন
মানুষ হতেই হবে----- এ কঠিন পণ  |
সোনা দিয়ে মানুষকে দয়া করা যায়
ভালোবাসা----- করুণায় প্রাণ ভরা যায় |
দুঃখ পেয়ে দুঃখবাদী মোটে তিনি নন
দুপায়ে মাড়িয়ে ক্লেশ আশাবাদী হন |
যাঁর কাছে বিদ্যা দয়া সমভাবে প্রিয়
তিনিই তো চিরকাল প্রাতঃস্মরণীয়  |
বিদ্যাসাগর কথা অমৃত সমান
ছেলে বুড়ো কহে সবে, শুন পুণ্যবান  ||

.         *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
খোকা খোকা ডাক পাড়ে
সরল দে

খোকা খোকা ডার পাড়ে কে
.     খোকার তো নেই মা!
হাতে খোকার আমলকিফল
.     পথে খোকার পা |

খোকার চোখে আখর ফোটে
.      কাঁকর ফোটে পায়.,
একটা আখর চিনলে খোকা
.      একমুঠো রোদ পায় |

ঢং ঢং ঢং ঘন্টা বাজে
.    কই রে খোকা কই ?
খোকার জন্যে এই এনেছি
.    শেলেট খাতা বই |

আকাশতলির ইস্ কুলে ঐ
.    ঘন্টা বাজায় কে ?
ও মালি ও জীবনমালি
.    ফটক খুলে দে |

খোকা খোকা ডাক পাড়ে কে ?
.   কে ডাকে ? মা নয় ?
উথ্ লে ওঠে বিদ্যেসাগর
.   ও খোকা নেই ভয় |

.     *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
ধন্য দাদু
নবনীতা দেবসেন
কবি নবনীতা দেবসেনের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .    

আহা, বিধবা বিবাহ যদি
থাকতো বারণ
হায়, আমার তাহলে আর
হতো না জনম !

ভাগ্যে আইন বানিয়েছিলে
বালবিধবার বিয়ে দিলে
তাই তো আমার মা জননীর
মা হবার কারণ |

নইলে হয়ে “কড়ে-রাঁড়ী”
থাকতো পড়ে বাপের বাড়ি
বদলে যেত স্বপ্ন, স্মৃতি
জীবন ধারণ |

আহা, বিধবার বিয়ে যদি
না হতো চারণ!

ধন্য দাদু, আমার তুমিই
জন্মের কারণ ||

.     *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তাদের জন্যে
কার্তিক ঘোষ

রাতটা ছিল ভুষোকালির
আকাশ ছিল কালো,
সেই আকাশের শেলেটখানায়
উঠল ফুটে আলো  |

সূয্যি হলো অ---
তারায় তারায় কথা ফুটলো
সবাই বড় হ |
সবাই বলতে কারা ?
দেখতে যারা এইটুকুনি
ঝিলমিলে নীল তারা |
তাদের জন্যে সকাল হলো
ফুল কুড়লো কেউ---
একটা সাগর একাই দিল
সোনা আলোর ঢেউ !

.     *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বর্ণমালার ছবি
অপূর্ব দত্ত

সেই ছেলেটা, প্যান্টে তালি, হাঁটু অব্দি কাদা
বই খাতা নেই, ইস্কুলও নেই চালচুলো বনবাদাড় |
সেই ছেলেটার বন্ধু পাখি গাছগাছালি আকাশ
দুঃখবিহীন দু’চোখ যেন কাজল দিয়ে আঁকা |
সেই ছেলে রোজ দাঁড়িয়ে দ্যাখে হাপুসহুপুস রোদে
ওর বয়সী বাচ্চারা সব ইস্কুলে যায়, ওদের
ফুটফুটে সাজ, পিঠের ব্যাগে  বইখাতা আর খাবার
দেখতে দেখতে সকাল বিকেল সারা দুপুর কাবার |
কাঠকুড়ানি রুগ্ন মায়ের শীর্ণ দু-হাত ধরে
সেই ছেলেটা ঘুমোয়, স্বপ্ন দ্যাখে ঘুমের ঘোরে--
আস্তে আস্তে কালো শ্লেটে ফুটে উঠল রেখা
আজ আম কর খল আ-কার ই-কার এ-কার |
দেখতে দেখতে বর্ণমালা রূপ নিল এক ছবির
ছবির থেকে মাধুর্য এবং মানুষ থেকে কবি |
সেই ছেলেটার মনে তখন সাগর দেখার খুশি ছলাৎ ছল্
জল পড়ে --- পাতা নড়ে--- জল পড়ে--- জল--

.     *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
বিদ্যাসাগরের চটি
দেবব্রত ঘোষ

চটির সাথে পাল্লা দেবে বুটের এত সাহস ?
ওই চটি যে অহঙ্কারীর নাকের কাছে ঘোরে ,
সাহেব-সুবো বাদসা-উজির কেউকেটা তুই যা হোস
তেমন কিছু দেখলে চটি দেয় না ছেড়ে ওরে |

ঠিক-বেঠিকের দোহাই তুলে সমাজ ফাটায় কারা ?
বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই রাখুন তুলে পুঁথি ||
দুইবেলা যে পায় না খেতে, ঘর থেকে ঘর ছাড়া,
তার কানে কি পৌঁছাবে এই অসার জ্ঞানের দ্যুতি ?

টিকির ফাঁসে ধম্মো এঁটে ফিকির মারে উঁকি  ;
হায় দেশাচার, এই না হলে আমরা পিছু হটি!
স্মরণ রেখো আর বেশিদিন টিকবে না বুজরুকি,
যায় না বলা হঠাৎ কখন উঠবে ফুঁসে চটি |

.     *************************  

.                                                                              
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর