বিদ্যাসাগরকে উত্সর্গিত কবিতা ও ছড়া
যে কোন কবিতার উপর ক্লিক করলেই সেই কবিতাটি আপনার সামনে চলে আসবে।
*
ঈশ্বরচন্দ্র
কবি তারকনাথ সরকার
কবি তারকনাথ সরকারের কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .     

বীরসিংহের বিদ্যাসাগর, করুণা অপার,
দয়ার সাগর তুমি, তুলনা নেই তার |
বিদ্যার্জনে করেছিলে কঠোর তপস্যা,
সর্বদা আগুয়ান-- ঘোচাতে সামাজিক সমস্যা |
প্রতিকূলে ছিল অদম্য জেদ,
বিধবা-বাল্য বিবাহ রদ, নারী শিক্ষায় ছিল নাকো ছেদ |
বর্ণপরিচয়, কথামালা বা নীতিবোধ,
তোমার ঋণ কভু হবে নাকো শোধ |

.        *************************  

.                                                                                  
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
তরমুজ
কবি অমিতাভ গুপ্ত         
কবি অমিতাভ গুপ্তর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .     


রোদে পোড়া মাঠ পেরিয়ে চলেছেন ঈশ্বরচন্দ্র
আরো এগারো বছর পরে জুটবে
তাঁর বিদ্যাসগর উপাধনটি
কিন্তু তার আগে এই দীর্ঘ পথ, এই মাঠ

সঙ্গে ছিলেন ঠাকুরদাস কিংবা আরো কেউ কেউ
মাইলস্টোন দেখে দেখে ইংরেজি সংখ্যাগুলি শিখে নেওয়ার
অপরূপ কাহিনীটিও রচিত হতে শুরু করল
কনিতু সেই পথটিও ছিল দীর্ঘ তৃষ্ণায় অস্থির
আটবছর বয়সের একটি বালক

হটাৎ কোন্ এক আশ্চর্য উদ্ভাস নিয়ে
এল এক তরমুজওয়ালা
কী শান্তি সেই তৃষ্ণাজুড়ানো সুঠাম ফলের গভীরে
যার কথা
ঈশ্বরচন্দ্র ভুলতে পারেননি, হয়তো কার্মাটারে তাঁর
সেই পিপাসাময় শেষ জীবনেও


.        *************************  

.                                                                                  
সূচিতে . . .   


মিলনসাগর
*
গোপাল ভালো ছেলে নয়
কবি রাজেশ দত্ত
কবিতাটি লেখা হয় ২২.০৬.১৯৮৭ তারিখে, কবির ষোলো বছর বয়সে।     
কবি রাজেশ দত্তর কবিতার পাতা যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .      

ছেলেবেলায় বড়ো বড়ো আখরে
বিদ্যেসাগরের বইতে পড়েছিলেম,
গোপাল বড়ো ভালো ছেলে।
গোপাল রোজ ইস্কুলে যায়।
বাবা-মা’র কথা শোনে,
অবাধ্য হয় না কখনো কারোর।

বর্ণপরিচয়ের গোপাল আজ বড়ো হয়েছে।
গোপাল এখন আর ভালো নেই।
গোপালের হাতে বইখাতার বদলে
তাজা কার্তুজ ভরা রিভলভার।
গোপাল এখন আর বাধ্য নেই,
বাবার কথা শোনে না
মায়ের কথা শোনে না
সমাজের কারোরই না,
গোপালেরও না।

গোপাল আজ পড়তে যায় না।
রাতের অন্ধকারে শ্বাপদের মতো
গোপন আস্তানায় আনাগোনা।
গোপাল আজ ঝগড়া করে
বাবার সাথে
মায়ের সাথে
সমাজের সকলের সাথে,
গোপালের সাথেও ঝগড়া করে।

বিদ্যেসাগর তোমার গোপাল
আর ভালো নেই।
গোপাল আর ভালো ছেলে নয়।

.        *************************  

.                                                                                  
সূচীতে . . .   


মিলনসাগর
বিদ্যাসাগর
কবি লায়েক মইনুল হক
মেঘের দেশে ছড়াগ্রন্থ থেকে নেওয়া।   
কবি লায়েক মইনুল হক-এর কবিতার পাতায় যেতে এখানে ক্লিক্ করুন . . .     


বিদ্যাসাগর                  মাথা ডাগর
পড়ার বই                   জ্ঞানের মই
.            সবাই তা মানে
সাহসী ছেলে                ডানা মেলে
পার যে হলে               নদীর জলে
.           বিশ্ববাসী জানে |
বর্ণপরিচয়                 দেড়শো পার হয়
খোকা খুকু পড়ে          সবার ঘরে ঘরে
.         খুলল চোখের দ্বার
করতে নাকো ভয়       তাইতো তোমার জয়
ফুলে ওঠে বুক           মনে পাই সুখ
.         এ কথা বলি বারবার |
বীরসিংহের বীর         উচ্চ তোমার শির
শিক্ষায় দিলে আলো    দেশের হলো ভালো
.         আমরা মেনেছি হার |
বিদ্যাসাগর               জ্ঞানের সাগর
দয়ার সাগর              সেবার সাগর
.         বলছি শতবার
.         ফিরে এসো একবার |

.            ****************  
.                                                                             
সূচীতে . . .    



মিলনসাগর
*
সাগরে গাগর
কবি দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়

যে বর্ণে লিখেছি দেড়শ বছর ধরে
হঠাৎ কেন সে বর্ণ আজ রক্ত শিশির ঝরে ?
যিনি ছিলেন ভাষার জনক জ্ঞান-বিদ্যার সাগর
হঠাৎ কেন তাঁর সাগরে ভাসছে শূন্য গাগর ?

দীনের সাগর দয়ার সাগর বিদ্যার সাগর যিনি
আমরা জানি সেই সাগরের গভীরতা কতখানি ?
যাঁর দয়াতে বাঙালি পেয়েছে বর্ণের পরিচয়
তাঁর প্রতি এই অবমাননা, বাংলার ক্ষতি নয় ?

তিনিই আমাদের শিখিয়ে গেছেন বাক্য কাহাকে বলে
তবে কেন তাঁর শিক্ষাকে আজ ফেলা হল রসাতলে ?
তাঁর দ্বারইতো শিখেছি আমরা বর্ণমালার বোধ
তাঁর ঋণ কি কখনও আমরা করতে পারিব শোধ ?

শিক্ষা নিয়েই তিনি কেবল ছিলেন নাকো ব্যস্ত
দেশ ও দশের জনকল্যাণে থেকেছেন সদা ত্রস্ত
দু-হাত ভরে লিখেছেন যিনি বাংলা বর্ণমালা
যাঁর দয়াতে  আমরা বাঙালি পেয়েছি জ্ঞানের ডালা

স্বরবর্ণ কাকে বলে ব্যাঞ্জণবর্ণ কি
তাঁরই রচিত জ্ঞানডালা থেকে আমরা পেয়েছি
তিনি হলেন শিক্ষাগুরু জনক বাংলা ভাষার
তিনি বাংলার জ্ঞানের প্রদীপ বাঙালির ভালোবাসার |

.                      ****************  
.                                                                             
সূচীতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিদ্যাসাগর
কবি কেশব মেট্যা
বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষে ২৬,৯. ২০১৯-এ প্রকাশিত।
ইমেল -
keshabmetya1985@gmail.com  


এক ডাকেতেই  সবাই চেনেন বীরসিংহ গ্রাম–
সেই মাটিতে জন্ম নিলেন বিদ্যাসাগর নাম।
বিদ্যাসাগর দয়ারসাগর নেই তো আর কেউ,
দেশজুড়ে আনেন আলো অ আ ক খ-র  ঢেউ।

বর্ণমালার কর্ণ তিনি,  নারীর মুখের ভাষা
গরীব দুখীর ঈশ্বর হয়ে জোগান অন্ন আশা।
গ্রামে গ্রামে ইসকুল কি, আর গড়েছেন কেউ?
দেশজুড়ে আনেন আলো অ আ ক খ- র ঢেউ।

অনেক বাধা অনেক বিরোধ আঁধারঘন দেশে
ঝড় সয়েছেন বুক পেতেছেন বীরের ছদ্মবেশে।
কুলীন বুড়োর বহুবিবাহে বাধা দিয়েছেন কেউ?
দেশজুড়ে তিনিই প্রথম দিনবদলের ঢেউ।

বিধবার বিয়ে দিয়ে জ্বালেন প্রাণের আলো...
এমন সাগর ঢেউ এর ভয়ে ভীরু-গোঁড়া চমকালো।
মায়ের আলো মায়ের ভাষা ভুলছো বুঝি কেউ?
জীবনসাগরে বিদ্যাসাগর নবজীবনের ঢেউ...

.                      ****************  
.                                                                             
সূচীতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিদ্যাসাগর স্মরণে
কবি রাজেশ দত্ত
বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষে ২৭ জুলাই, ২০১৯-এ রচিত।
মিলনসাগরে
কবির পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন . . .        

বিদ্যাসাগর আছেন বেঁচে
শহর, গঞ্জ-গাঁয়ে।
বিদ্যাসাগর সুচেতনার
বর্ণ পরিচয়ে।

বিদ্যাসাগর হেঁশেল ঘরে
বঙ্গনারীর প্রাণে
নিভন্ত এই চুল্লিতে
দারুণ অগ্নিবাণে।

বিদ্যাসাগর কারমাটারে
আদিবাসীদের পাশে
ধামসা-মাদল ছন্দে আছেন
শাল, মহুল, পলাশে।

বিদ্যাসাগর স্বপ্ন দেখেন
মুক্তমনার চোখে,
শ্রাবণ মেঘের ঘনঘটায়
নতুন সূর্যালোকে।

বিদ্যাসাগর আঁধার রাতে
দীপ্ত মশাল শিখা,
আজও হাঁটেন দৃপ্ত, সটান
অনন্ত পথ একা॥

.            ****************  
.                                                                             
সূচিতে . . .    



মিলনসাগর
*
যশুরে কৈ, কশুরে যৈ  
কবি অমিতাভ ভট্টাচার্য
কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন
কবি রাজেশ দত্ত

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, ভয়ানক বদরাগী
বিধবাদের বিয়ে দিয়ে হলেন পাপের ভাগী,
সমাজ গেল উৎসন্নে, মেয়েরা ইস্কুলে
সায়েবসুবোর সামনেতে দ্যান টেবিলে পা তুলে ।

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, নাস্তিক এক লোক
সাংখ্য এবং বেদান্ততে বসিয়ে দিলেন কোপ,
ম্লেচ্ছ যত তত্ত্বকথা, জ্ঞান ও বিজ্ঞান
আধ্যাত্মিক এই দেশেতে পাঠ্য তিনি চান ।

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, খুব দাম্ভিক ভাব
পাত না পেয়ে পরমহংস কষে দিলেন শাপ,
যুগপুরুষ, হঠযোগী, স্বয়ং ব্রহ্মজ্ঞানী
ফাঁকি মারায় খেয়ে নিলেন তাঁর চাকরিখানি।

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, ভীষণই ঠোঁটকাটা
শিষ্ট অতি, খ্রিস্টে মতি—তাঁরাও হাড়ে চটা,
ভগবানে পাপ দেবে না, এসব কথা ছাড়া
শিশুপাঠ্য বই লিখলেন, এমন সৃষ্টিছাড়া ।

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, একগুঁইয়ে আর জেদি
চাকরি ছাড়েন স্বাধীনতায় হাত পড়ে যায় যদি,
একার হাতেই গড়ে তোলেন বিরাট প্রতিষ্ঠান
সেই জেদেরই সাক্ষী দেবে মেট্রোপলিটান ।

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, সস্তা বাহাদুরি
রাস্তা থেকে রুগী তুলে আনেন নিজের বাড়ি,
রোগের ভয়ে মানুষ যখন বন্দী নিজের ঘরে
তখন কিনা নিজের হাতে রুগীর সেবা করে!

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, কামান ভালোই টাকা
সেসব তো যায় দানের ঘরে, জমার ঘরে ফাঁকা,
হাড়হাভাতে মেয়ের মাথায় যত্নে মাখান তেল
জাতধর্ম তুলল চুলোয় এমনই আক্কেল ।

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, সঙ্গ করেন বদ
চিনেছিলেন কে লিখবেন এক মেঘনাদবধ,
বিদ্যেবোঝাই বেঁটেবামুন জানেন অনেক ছল,
দুঃস্থ আঁতুর দেখলে তো তাই দুচোখ ভরে জল ।

যশুরে কৈ, কশুরে যৈ, খাপছাড়া অদ্ভুত
ভগবানের এই দেশেতে নিতান্ত এক ভূত,
বিদ্যাসাগর এই সমাজে অনেক বদল চান
সত্যি তিনি এই দেশেতে বড্ড বেমানান ।

.            ****************  
.                                                                             
সূচীতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিদ্যাসাগর  
কবি
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন কবি রাজেশ দত্ত

সঙ্গীত

তারকা নিবিয়া যায় ; তথাপি অসীম ব্যোমে
অযুত বরষ বাহি' তাহার কিরণ ভ্রমে !
সঙ্গীত থামিয়া যয় ; তথাপি স্মৃতির মাঝে
মানব-জীবন ব্যাপি' তাহার ঝঙ্কার বাজে !
কুসুম শুকায়ে যায় ; তাহার সৌরভরাশি
প্রভাত-পবন সনে কাননে বেড়ায় ভাসি' !
প্রতিভা চলিয়া যায় ; তাহার মহিমা জাগে---
ভকতি করুণা স্নেহে ক্ষমা
সেবায় ত্যাগে।

.            ****************  
.                                                                             
সূচীতে . . .    



মিলনসাগর
*
বিদ্যাসাগর করুণাসাগর  
কবি
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছেন কবি রাজেশ দত্ত

বিদ্যাসাগর করুণাসাগর
.                        শৌর্য্যসাগর তুমি,
তোমারে পাইয়া আমরা ধন্য,
.                        ধন্য ভারতভূমি।
জলধির মত গভীর উদার,
শ্যামল কোমল সম বসুধার,
পর্ব্বতসম দৃঢ় ও সমুচ্চ,
.                        নীল অন্বর চুমি।
প্রচার করেছ জীবনে যে কাজ,
.                        সাধিয়াছ সেই কাজে,
করেছ তুচ্ছ অরির ভ্রুকুটী,
.                        জীবন-সমর মাঝে।
কাঁ
দিয়াছ তুমি পরের জন্য,
মাথায় করিয়া নিয়েছ দৈন্য,
তোমারে পাইয়া আমরা ধন্য,
.                        ধন্য ভারতভুমি।

.            ****************  
.                                                                             
সূচীতে . . .    



মিলনসাগর
*