রোদে পোড়া মাঠ পেরিয়ে চলেছেন ঈশ্বরচন্দ্র আরো এগারো বছর পরে জুটবে তাঁর বিদ্যাসগর উপাধনটি কিন্তু তার আগে এই দীর্ঘ পথ, এই মাঠ
সঙ্গে ছিলেন ঠাকুরদাস কিংবা আরো কেউ কেউ মাইলস্টোন দেখে দেখে ইংরেজি সংখ্যাগুলি শিখে নেওয়ার অপরূপ কাহিনীটিও রচিত হতে শুরু করল কনিতু সেই পথটিও ছিল দীর্ঘ তৃষ্ণায় অস্থির আটবছর বয়সের একটি বালক
হটাৎ কোন্ এক আশ্চর্য উদ্ভাস নিয়ে এল এক তরমুজওয়ালা কী শান্তি সেই তৃষ্ণাজুড়ানো সুঠাম ফলের গভীরে যার কথা ঈশ্বরচন্দ্র ভুলতে পারেননি, হয়তো কার্মাটারে তাঁর সেই পিপাসাময় শেষ জীবনেও
ছেলেবেলায় বড়ো বড়ো আখরে বিদ্যেসাগরের বইতে পড়েছিলেম, গোপাল বড়ো ভালো ছেলে। গোপাল রোজ ইস্কুলে যায়। বাবা-মা’র কথা শোনে, অবাধ্য হয় না কখনো কারোর।
বর্ণপরিচয়ের গোপাল আজ বড়ো হয়েছে। গোপাল এখন আর ভালো নেই। গোপালের হাতে বইখাতার বদলে তাজা কার্তুজ ভরা রিভলভার। গোপাল এখন আর বাধ্য নেই, বাবার কথা শোনে না মায়ের কথা শোনে না সমাজের কারোরই না, গোপালেরও না।
গোপাল আজ পড়তে যায় না। রাতের অন্ধকারে শ্বাপদের মতো গোপন আস্তানায় আনাগোনা। গোপাল আজ ঝগড়া করে বাবার সাথে মায়ের সাথে সমাজের সকলের সাথে, গোপালের সাথেও ঝগড়া করে।
বিদ্যেসাগর তোমার গোপাল আর ভালো নেই। গোপাল আর ভালো ছেলে নয়।
যে বর্ণে লিখেছি দেড়শ বছর ধরে হঠাৎ কেন সে বর্ণ আজ রক্ত শিশির ঝরে ? যিনি ছিলেন ভাষার জনক জ্ঞান-বিদ্যার সাগর হঠাৎ কেন তাঁর সাগরে ভাসছে শূন্য গাগর ?
দীনের সাগর দয়ার সাগর বিদ্যার সাগর যিনি আমরা জানি সেই সাগরের গভীরতা কতখানি ? যাঁর দয়াতে বাঙালি পেয়েছে বর্ণের পরিচয় তাঁর প্রতি এই অবমাননা, বাংলার ক্ষতি নয় ?
তিনিই আমাদের শিখিয়ে গেছেন বাক্য কাহাকে বলে তবে কেন তাঁর শিক্ষাকে আজ ফেলা হল রসাতলে ? তাঁর দ্বারইতো শিখেছি আমরা বর্ণমালার বোধ তাঁর ঋণ কি কখনও আমরা করতে পারিব শোধ ?
শিক্ষা নিয়েই তিনি কেবল ছিলেন নাকো ব্যস্ত দেশ ও দশের জনকল্যাণে থেকেছেন সদা ত্রস্ত দু-হাত ভরে লিখেছেন যিনি বাংলা বর্ণমালা যাঁর দয়াতে আমরা বাঙালি পেয়েছি জ্ঞানের ডালা
স্বরবর্ণ কাকে বলে ব্যাঞ্জণবর্ণ কি তাঁরই রচিত জ্ঞানডালা থেকে আমরা পেয়েছি তিনি হলেন শিক্ষাগুরু জনক বাংলা ভাষার তিনি বাংলার জ্ঞানের প্রদীপ বাঙালির ভালোবাসার |
এক ডাকেতেই সবাই চেনেন বীরসিংহ গ্রাম– সেই মাটিতে জন্ম নিলেন বিদ্যাসাগর নাম। বিদ্যাসাগর দয়ারসাগর নেই তো আর কেউ, দেশজুড়ে আনেন আলো অ আ ক খ-র ঢেউ।
বর্ণমালার কর্ণ তিনি, নারীর মুখের ভাষা গরীব দুখীর ঈশ্বর হয়ে জোগান অন্ন আশা। গ্রামে গ্রামে ইসকুল কি, আর গড়েছেন কেউ? দেশজুড়ে আনেন আলো অ আ ক খ- র ঢেউ।
অনেক বাধা অনেক বিরোধ আঁধারঘন দেশে ঝড় সয়েছেন বুক পেতেছেন বীরের ছদ্মবেশে। কুলীন বুড়োর বহুবিবাহে বাধা দিয়েছেন কেউ? দেশজুড়ে তিনিই প্রথম দিনবদলের ঢেউ।
বিধবার বিয়ে দিয়ে জ্বালেন প্রাণের আলো... এমন সাগর ঢেউ এর ভয়ে ভীরু-গোঁড়া চমকালো। মায়ের আলো মায়ের ভাষা ভুলছো বুঝি কেউ? জীবনসাগরে বিদ্যাসাগর নবজীবনের ঢেউ...