আমরা মিলনসাগরে  কবি বাসুদেব ঘোষ এর বৈষ্ণব পদাবলী আগামী প্রজন্মের কাছে, এই আধুনিক প্রযুক্তির
মাধ্যমে (ইনটারনেট), পৌঁছে দিতে পারলে এই প্রচেষ্টাকে সফল মনে করবো।


কবি বাসুদেব ঘোষ-এর মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করুন


আমাদের ই-মেল -
srimilansengupta@yahoo.co.in     


৫টি পদ নিয়ে এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২৮.৬.২০১৪।
১৫টি নতুন পদ এবং অমিত মণ্ডলের পাঠানো কবির মূর্তির ছবি সহ পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১২.৩.২০১৮।
ডঃ চিত্রা রায়ের পি.এইচডি গবেষণা পত্রে প্রাপ্ত প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ৪৪টি পদ সহ ২৬৪টি পদের সংযোজন - ২.১২.২০২০।
...
ডঃ চিত্রা রায়ের গবেষণার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন    
শ্রী অমিত মণ্ডলের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন   
রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেনের উদ্ধৃতি    
জগদ্বন্ধু ভদ্রর উদ্ধৃতিতে বাসু ঘোষের একটি পদ    
সতীশচন্দ্র রায়ের উদ্ধৃতি    
দুর্গাদাস লাহিড়ীর উদ্ধৃতি    
নীলরতন সেনের উদ্ধৃতি   
রায়বাহাদুর খগেন্দ্রনাথ মিত্রের উদ্ধৃতি    
সুকুমার সেনের উদ্ধৃতি    
দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্ধৃতি    
বৈষ্ণব পদাবলী নিয়ে মিলনসাগরের ভূমিকা     
বৈষ্ণব পদাবলীর "রাগ"      
কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও উত্স গ্রন্থাবলী     
মিলনসাগরে কেন বৈষ্ণব পদাবলী ?     
*

এই পাতার উপরে . . .
*

এই পাতার উপরে . . .
*

এই পাতার উপরে . . .
*

এই পাতার উপরে . . .
বাসুদেব ঘোষ চৈতন্য সমসাময়িক এবং চৈতন্যদেবের অনুচর ও ভক্ত এবং বড় পদকর্তা ছিলেন। তিনি
গৌড় নাগরিয়া ভাবের কবি। চৈতন্য জীবনের প্রত্যক্ষ পরিচয় তাঁর গৌরবিষয়ক কবিতাগুলির উত্স।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মের সময় যে চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল বাসু ঘোষের একটি পদে তার উল্লেখ রয়েছে।
নদীয়া-আকাশে আসি                উদিল গৌরাঙ্গশশী
.                ভাসিল সকলে কুতূহলে।
লাজেতে গগনশশী                    মাখিল বদনে মসি
.                কাল পেয়ে গ্রহণের ছলে॥
*
সতীশচন্দ্র রায়ের উদ্ধৃতি -                                                              পাতার উপরে . . .   
সতীশচন্দ্র রায় তাঁর সম্পাদিত পদকল্পতরুর ৫ম খণ্ডের ভূমিকার ১৫৮-পৃষ্ঠায়, বাসুদেব ঘোষের জীবন ও
রচনা সম্বন্ধে লিখেছেন . . .
“বাসুদেব ঘোষের ৯৫টী পদ পদকল্পতরুতে সংগৃহীত হইয়াছে। বাসুদেব তাঁহার কোনো পদেই ঘোষ ব্যতীত
দাস উপাধি ব্যবহার করেন নাই ; কোথাও বাসুদেব ঘোষ কোথাও বাসুঘোষ ভণিতা দিয়া পদ রচনা
করিয়াছেন। বাসুদেব ঘোষ নামে একাধিক পদকর্ত্তার বিষয়ও এ পর্য্যন্ত জানা যায় নাই ; সুতরাং তাঁহার
পদাবলীর কৃতীত্ব লইয়া কোনও গোলযোগ নাই। ইগার অপর দুই সহোদরের নাম মাধব ঘোষ ও গোবিন্দ
ঘোষ। ইহাঁরাও পদকর্ত্তা ছিলেন ; মাধব ঘোষের রচিত ৭টী পদ ও গোবিন্দ ঘোষের রচিত ৬টী পদ  
পদকল্পতরুতে উদ্ধৃত হইয়াছে। . . . .  বাসুদেবের পদাবলীর সম্বন্ধে কয়েকটী কথা বলা আবশ্যক ।  
বাসুদেবের যে সকল পদ পদকল্পতরুতে উদ্ধৃত হইয়াছে, উহার সমস্তই শ্রীগৌরাঙ্গ বিষয়ক। এ যাবৎ
বাসুদেবের ব্রজ-লীলাবিষয়ক কোন পদ আবিষ্কৃত হয় নাই ; ইহা হইতে অনুমান হয় যে, তিনি অন্য বিষয়ে
পদ রচনা করেন নাই ; করিলেও সে সকল পদ অধুনা বিলুপ্ত হইয়াছে। বাসুদেবের গৌরচন্দ্র-পদাবলীর যথেষ্ট
ঐতিহাসিক মূল্য আছে ; কেন না, তিনি মহাপ্রভুর লীলা নিজে দেখিয়া বর্ণনা করিয়া গিয়াছিলেন।  
গৌরভক্তদিগের নিকট এ সকল পদের মাধুর্য্যও অল্প নহে। সবয়ং কবিরাজ গোস্বামী (কৃষ্ণদাস কবিরাজ)
বাসুদেবের পদ সম্বন্ধে লিখিয়াছেন,---
বাসুদেব গীতে করে প্রভুর বর্ণনে।
কাষ্ঠ পাষাণ দ্রবে যাহার শ্রবণে॥

দেবকীনন্দন দাস তাঁহার বৈষ্ণব বন্দনায় লিখিয়াছেন,--
শ্রীবাসুদেব ঘোষ বন্দিব সাবধানে।
গৌরগুণ বিনা যেই অন্য নাহি জানে॥

দেবকীনন্দনের এই উক্তি দ্বারা বুঝা যায় যে, বাসুদেব ঘোষ গৌরলীলা ব্যতীত অন্য বিষয়ের বর্ণনা করেন
নাই। তিনি গৌরাঙ্গকে শ্রীকৃষ্ণ হইতে অভিন্ন জানিতেন ; তাই, গৌর-লীলার বর্ণনা করিতে যাইয়াও প্রায়
সর্ব্বত্রই তিনি পূর্ব্ব-যুগের কৃষ্ণ-লীলার সহিত তাঁহার বর্ণিত গৌর-লীলার বিষয়গত ও ভাবগত
সাদৃশ্য দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছেন। নবদ্বীপ লীলায় যে ব্রজ-গোপীদিগের অভাব ছিল, নরহরি সরকার ঠাকুর
ও তাঁহার অনুকরণে বাসুদেব নিজকে ও অন্যান্য গৌর-ভক্তগণকে সেই নদীয়ানাগরী কল্পনা করিয়া ‘নাগরী’-
ভাবের পদ নামক এক স্বতন্ত্র শ্রেণীর পদেরও সূত্র-পাত করিয়া গিয়াছেন
।”
*
দুর্গাদাস লাহিড়ীর উদ্ধৃতি -                                                              পাতার উপরে . . .   
১৯০৫ সালে প্রকাশিত বৈষ্ণব পদলহরী সংকলনের সম্পাদক দুর্গাদাস লাহিড়ী তাঁর গ্রন্থে বাসুদেব ঘোষ সম্বন্ধে
লিখেছেন . . .
শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত বুড়ন বা বুরুঙ্গী গ্রামে মাতুলালয়ে ইনি জন্মগ্রহণ করেন। ইহাঁর পিতা কুমারহট্ট
গ্রামবাসী ছিলেন। ইহাঁরা তিন সহোদর ; অপর দুই ভ্রাতার নাম মাধব ঘোষ ও গোবিন্দ ঘোষ। তিন ভ্রাতাই
গৌরাঙ্গ ভক্ত এবং মহাপ্রভুর সমসাময়িক। গৌরাঙ্গপ্রেমে মাতিয়া তিন জনে নবদ্বীপে আসিয়া অবস্থিতি
করেন। তিন জনেই পদকর্ত্তা ও সুগায়ক ছিলেন। নবদ্বীপে অবস্থিতি, কালে তিন ভ্রাতায় তিনটী সংকীর্ত্তন
দলের নেতা হন। বাসুদেব অধিকাংশ সময় মহাপ্রভুর সঙ্গে থাকিতেন, সেই কারণ গৌরাঙ্গলীলার ইনি
একজন প্রধান পদকর্ত্তা বলিয়া গণ্য হইয়াছেন। ইহাঁর পদাবলী বড়ই হৃদয়গ্রাহী ও মনোমদ
।”
*
রায়বাহাদুর খগেন্দ্রনাথ মিত্রের উদ্ধৃতি -                                              পাতার উপরে . . .   
বাসুদেব ঘোষ সম্বন্ধে রায়বাহাদুর খগেন্দ্রনাথ মিত্র, নবদ্বীপচন্দ্র ব্রজবাসীর সঙ্গে ১৯৫৫ সালে সহসম্পাদিত গ্রন্থ
"পদামৃতমাধুরী", ৪র্থ খণ্ডের ভূমিকায় লিখেছেন . . .
বাসুদেব ঘোষ, মাধব ঘোষ এবং গোবিন্দ ঘোষ - ইঁহারা তিন ভ্রাতা এবং তিন জনই পদকর্ত্তা ছিলেন।
ইঁহাদের পৈতৃক বাস ছিল কুমারহট্ট গ্রামে। ইঁহারা তিন ভ্রাতা শ্রীগৌরাঙ্গের সমসাময়িক এবং ভক্ত ছিলেন।
বাসুদেব এবং নরহরি সরকার ঠাকুর নদীয়ানাগরী-ভাবের পদাবলী রচনার সূত্রপাত করিয়া গিয়াছেন। ইঁহারা
শ্রীগৌরাঙ্গকে শ্রীকৃষ্ণ হইতে অভিন্ন জানিতেন
।”
*
সুকুমার সেনের উদ্ধৃতি -                                                                 পাতার উপরে . . .   
১৯৫৭ সালে সাহিত্য অকাদেমি থেকে প্রকাশিত সুকুমার সেন তাঁর সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী গ্রন্থের
পরিচায়িকা তে বাসুদেব ঘোষ সম্বন্ধে লিখেছেন . . .
বাসুদেব ঘোষ এবং তাঁর দুই ভাই গোবিন্দ ও মাধব চৈতন্যের নিষ্ঠাবান্ ভক্ত ছিলেন। বাসুদেব গান রচনায়
দক্ষ ছিলেন, আর দুই ভাই নাচে ও গানে। বাসুদেবের চৈতন্য লীলাঘটিত পদগুলি উজ্জ্বল রচনা
।”
*
দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্ধৃতি -                                                    পাতার উপরে . . .   
১৯৭৭ সালে প্রকাশিত বৈষ্ণব পদসংকলনের সম্পাদক দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গ্রন্থে বাসুদেব ঘোষ
সম্বন্ধে লিখেছেন . . .
"
বল্লভ ঘোষের পুত্র বাসুদেব অপর দুই ভ্রাতা মাধব ও গোবিন্দ অপেক্ষা পদ রচনায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
চৈতন্যাশ্রিত কবি বাসুদেব নিমাই সন্ন্যাস পালাগান রচনা করে অত্যন্ত খ্যাতিলাভ করেছিলেন
।"
এই পাতার ভণিতা
বাসু, বাসুঘোষ, বাসুদেব ঘোষ,
বাসুদেব
বাসুদেব ঘোষ - বাসু ঘোষ নামেও খ্যাত।
তিনি জন্মগ্রহণ করেন তাঁর মাতুলালয়ে, শ্রীহট্ট  
জেলার  বুড়ন বা বুরুঙ্গী  গ্রামে।  পিতার নাম
বল্লভ ঘোষ। তাঁদের নিবাস ছিল কুমারহট্টে।

তাঁর এক ভাই
মাধব ঘোষ ছিলেন সুগায়ক  
এবং অপর ভাই
গোবিন্দ ঘোষ ছিলেন সুনর্তক।
তাঁরা দুজনেই বৈষ্ণব ভাবাপন্ন পদ রচনা করে
গিয়েছেন। তাঁরা চৈতন্য মহাপ্রভুর সমকালীন  
কবি ছিলেন।
*
জগদ্বন্ধু ভদ্রর উদ্ধৃতিতে বাসু ঘোষের একটি পদ -                                  পাতার উপরে . . .   
১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত, মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-
তরঙ্গিণী” ২য় সংস্করণ (১ম সংস্করণ ১৯০২), পদকর্ত্তৃগণের পরিচয়ের ১৮৮-পৃষ্ঠায় নরহরি সরকার ঠাকুরের
পরিচয় লেখার সময় বাসু ঘোষের একটি পদের উল্লেখ করেছেন যা কিনা আমরা কোনো পদসংকলনে খুঁজে
পাইনি। এখানে সেই পদের মাত্র ৪টি কলি দেওয়া রয়েছে। পূর্ণ পদটি আমরা তুলে দিতে না পারলেও এখানে
যতটা পাওয়া গিয়েছে তা তুলে দিচ্ছি নরহরি সরকার ঠাকুরের পরিচয়ের অংশ থেকে . . .

“শ্রীগৌরাঙ্গকে প্রাণনাথ ভাবিয়া, মধুর ভাবে ভজনা করিবার প্রবর্ত্তক শ্রীনরহরি ঠাকুর। তিনি দেখিলেন যে
বৈষ্ণবধর্ম্ম জগতে প্রচার করিবার জন্য শ্রীগৌরাঙ্গ বৃন্দাবনের গোস্বামিপাদদিগের দ্বারা যে সকল ব্যবস্থা
করিতেছেন, তাহাতে, এই ধর্ম্ম দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হইবে সত্য, কিন্তু যিনি মলিন জীবের দুঃখ দূর
করিবার জন্য এই ধরাধামে অবতীর্ণ হইয়া, তাহাদের কল্যাণার্থে শ্রেঠতম ধর্ম রাখিয়া যাইতেছেন,
তাঁহার মধুর মূরতি ক্রমে ভুলিয়া যাইয়া জীব ধর্ম্মশাস্ত্র পাঠে মনোনিবেশ করিবে। কাজেই এরূপ কিছু করা
আবশ্যক, যাহাতে তাঁহার বিমল-মধুর লীলা-কাহিনী স্মরণ, মনন ও আস্বাদন করিয়া এই জ্বালাময় জগতের
দগ্ধ-জীব শান্তিলাভ করিতে পারিবে। অনেক সাধন-ভজনের পর নরহরির মনে দুইটী উপায় উদ্ভাবিত হয়।

প্রথমতঃ গৌরাঙ্গের মধুর লীলা সাধারণের মধ্যে বহুল-প্রচার করিতে হইলে, ইহা সরল ও চিত্তাকর্ষক ভাষায়
কবিতা-ছন্দে রচিত হওয়া আবশ্যক। তাহা হইলে সকলেই ইহা পড়িবে ও শুনিবে ; এবং তাহার ফলে পাঠক
ও শ্রোতার মন নির্ম্মল ও এই দিকে আকৃষ্ট হইবে। কিস্তু সেরূপ ভাবে ইহা লিখিবার লোক কোথায়? তাঁহার
নিজের সময় সংক্ষেপ। ইহাই ভাবিয়া তাঁহার মন ব্যাকুল ও চঞ্চল হইয়া উঠিল। তখন তিনি হতাশভাবে
দুঃখ করিয়া বলিতে লাগিলেন ---

গৌরলীলা গুণ-গানে, বাঞ্ছা বড় হয় মনে, ভাষায় লিখিয়া কিছু রাখি।
মুঞি অতি অধম, লিখিতে না জানি ক্রম, কেমন করিয়া তাহা লিখি
॥”

অন্যত্র ---
কিছু কিছু পদ লিখি, যদি ইহা কেহ দেখি, প্রকাশ করয়ে এই লীলা।
নরহরি পাবে সুখ, ঘুচিবে মনের দুখ, গ্রন্থ-গানে দরবিবে শিলা
॥”

নরহরির এই সাধ বাসুদেব ঘোষ কতক পরিমাণে পূর্ণ করিয়াছিলেন। যথা বাসু ঘোষের পদ---

“শ্রীসরকার ঠাকুরের পদামৃত-পানে।
পদ্য প্রকাশিব বলি ইচ্ছা কৈল মনে॥
সরকার ঠাকুরের অদভুত মহিমা।
ব্রজে মধুমতী যে---গুণের নাহি সীমা॥”

এই পদটিই পূর্ণরূপে আমরা আমাদের সংগ্রহের কোনো গ্রন্থে খুঁজে পাইনি।
রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেনের উদ্ধৃতি -                                              পাতার উপরে . . .   
রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর ১৯০৮সালে প্রকাশিত, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য ৩য় খণ্ডের ৩১০-পৃষ্ঠায়,  
বাসুদেব, মাধব ও গোবিন্দ ঘোষ সম্বন্ধে লিখেথেন . . .

“বাসুদেব, মাধব ও গোবিন্দানন্দ --- ইঁহারা তিন সহোদর, পূর্ব্ব নিবাস কুমারহট্ট। কেহ কেহ বলেন শ্রীহট্টের
বুড়ন গ্রামে মাতুলালয়ে বাসুঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। এই তিন ভ্রাতা শেষে নবদ্বীপে আসিয়া বাস করেন।
গৌরাঙ্গ সম্বন্ধীয় পদাবলী-রচকগণের মধ্যে বাসুঘোষ শীর্ষস্থানীয়। তিন ভ্রাতাই বিখ্যাত কীর্ত্তনিয়া ও মহাপ্রভুর
অনুরক্ত অনুচর ছিলেন।”
*
*
নীলরতন সেনের উদ্ধৃতি -                                                               পাতার উপরে . . .   
১৯৫০ সালে প্রকাশিত, নীলরতন সেনের "বৈষ্ণব পদাবলী পরিচয়" গ্রন্থের ২৬৬-পৃষ্ঠায় বাসুঘোষ সম্বন্ধে  
লিখেছেন . . .

গোবিন্দ, মাধব এবং বাসুদেব তিন ভাইই নবদ্বীপে চৈতন্যের সহচর ছিলেন এবং কীর্তন গানে পারদর্শী
ছিলেন। ---এঁদের মধ্যে পদকার হিসাবে বাসুঘোষই সমধিক খ্যাতি লাভ করেন। বাসুঘোষ মুখ্যতঃ গৌরাঙ্গ
লীলার পদই রচনা করেছেন এবং প্রত্যক্ষদর্শী কবির এই পদগুলির ঐতিহাসিক গুরুত্ত্ব অনস্বীকার্য।
শ্রীহরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বৈষব-পদাবলীতে তাঁর ১১৮টি পদ সংকলিত করেছেন।

বাসুঘোষ বিশুদ্ধ বাংলা এবং মিশ্র ব্রজবুলি উভয় ভাষা-রীতিতেই পদ লিখেছেন। বাংলা পদগুলি উৎকৃষ্ট।
ব্রজবলি পদে দুর্বল শব্দ প্রয়োগ লক্ষিত হয়। তিনি বাল্যলীলা, পূর্বরাগ, রূপানুরাগ, অভিসার, রসোদ্গার,
নৌকা ও দান-লীলা, রাসলীলা, আক্ষেপানুরাগ প্রভৃতি রাধাকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলার আলেখ্যে গৌরাঙ্গলীলা বর্ণনা
করেছেন। তাছাড়া সন্ন্যাসজীবন-অবলম্বনে কয়েকটি সার্থক পদ রচনা করেছেন। চৈতন্য-লীলার অনেক পদে
কবিব প্রত্যক্ষ দর্শনেব আভাস ফুটে উঠেছে।

. . . নাগরীভাবেব গৌবাঙ্গ-লীলার বর্ণনায়  বাসুঘোষ কিছুটা  অন্যান্য  পদকারদের মতোই অলৌকিকতার
প্রাধান্য দিলেও সন্ন্যাস  বর্ণনায় বা মাতা শচীদেবীর  বাৎসল্য  বেদনার  বর্ণনায় সহজ  হৃদয়  নিঙড়ানো
প্রেমবেদনার ছবিই বিশেষ আন্তরিক ভাবে চিত্রিত করেছেন।  তাছাডা কবি চৈতন্যদেবকে  সাক্ষাৎভাবে  
পেয়েছিলেন বলেই বর্ণনাগুলির মধ্যে তথ্যগত সজীবতার উষ্ণস্পর্শ লাভ করা যায়।

. . . বাংলা পদগুলি কবি অক্ষরবৃত্ত রীতির পয়ার, ত্রিপদী (লঘু ও দীর্ঘ) ও দশমাত্রিক একপদী  ছন্দোবন্ধে  
রচনা করেছেন। মিশ্র-ব্রজবুলি ভাষায় লিখিত পদগুলির শব্দ-ব্যবহার দুর্বল লঘু-গুরু মাত্রাবৃত্ত রীতির  
প্রয়োগও সুষ্ঠ হয়নি
।”
শ্রী অমিত মণ্ডলের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন -                              পাতার উপরে . . .   
আমরা কৃতজ্ঞ শ্রী অমিত মণ্ডলের কাছে যিনি আমাদের এই ছবি ও তথ্য পাঠিয়েছেন।
তাঁর ইমেল -
mailmeamitmondal95@gmail.com । একজন ভক্ত হিসেবে তিনি জানিয়েছেন . . .

"
কবি বাসুদেব ঘোষ এর একটি দুর্লভ ছবি। আমি পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার কুলাই গ্রাম এর
একজন নাগরিক। তিনি কুলাই গ্রামে জন্মেছিলেন বলে অনেকে মনে করে। তাঁর জন্ম না হলেও কর্মজীবনের
বেশকিছু সময় তিনি এই গ্রামে কাটিয়েছেন বলে অনেকের মত। তাঁর তিরোধান তিথি উপলক্ষে এখানে
আজও নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। তাঁর সম্পর্কে আলোচনা সভা হয়। তাঁর এই ছবি টি তমলুক থেকে পাওয়া
গেছে। তাঁর চরণে শতকোটি প্রণাম এবং তাঁকে প্রচারের আলোতে নিয়ে এসে যোগ্য সম্মান দেবার জন্য
যারা সর্বদা চেষ্টা করছেন তাদের কেউ আমার প্রণাম ও ধন্যবাদ জানাই
।"

শ্রী অমিত মণ্ডলের কাছে আবার অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জানাই যে, কবি বাসুদেব ঘোষ কে প্রচারের
আলোয় আনার চেষ্টা করার ধৃষ্টতা আমাদের নেই। তিনি এবং তাঁর সমসাময়িক ধর্মীয় আন্দোলনের
পুরোধাগণ ইতিহাসের  পাতায় ভাস্বর হয়ে আছেন নিজ কর্মগুণেই। আজ আমাদের অস্তিত্বের জন্য আমরা
তাঁর এবং তাঁর অহিংস সহযোদ্ধাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এঁদের অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সময়কালই ছিল
বাংলার প্রথম নবজাগরণের কাল বা
The First Renaissance of Bengal  ॥
ডঃ চিত্রা রায়ের গবেষণার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন -                     পাতার উপরে . . .   
শোধগঙ্গা ওয়েবসাইটে আমরা ডঃ চিত্রা রায়ের ১৯৯২ সালের,  অসীম ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় সহকারে ডঃ
মিহির চৌধুরী কামিল্যার অধীনে করা, জ্ঞানগর্ভ “বৈষ্ণব সংস্কৃতি ও সাহিত্যে গোবিন্দ, মাধব ও বাসুদেব
ঘোষ” নামক পি.এইচডি গবেষণা পত্রটি হাতে পাই। এই গবেষণায় প্রদত্ত ডঃ চিত্রা রায়ের, উপরোক্ত তিন
পদকর্তার জীবন ও সাহিত্য সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা, আগামী দিনের বৈষ্ণব সাহিত্যের ছাত্র-শিক্ষক ও
গবেষকদের অসামান্য সাহায্য করবে তাতে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। এই গবেষণা পত্রে আমাদের প্রাপ্তি
বিভিন্ন বৈষ্ণব পদাবলীর সংকলন, গ্রন্থাগার ও পাঠবাড়ী থেকে ডঃ চিত্রা রায় দ্বারা সংগৃহীত উপরোক্ত তিন
ভ্রাতার পদাবলী। এর মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাস্য ৪৪টি নবাবিষ্কৃত বাসুদেব ঘোষের পদ যা এর পূর্বে কোথাও
প্রকাশিত হয়নি।

ভেবে অবাক হতে হয় যে উনবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে, বিভিন্ন পুথি থেকে পদাবলী সংগ্রহ ও
পুস্তকাকারে মুদ্রিত সংকলনের প্রচলন শুরু হবার পর থেকে বিংশ শতকের ৫০এর দশক পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায়
১০০বছর, বৈষ্ণব পদাবলীর নব জনপ্রিয় সময়কাল যদি ধরা হয়, তারও ৪০ বছর পরে এই গবেষক সম্পূর্ণ
অপ্রকাশিত চল্লিশটিরও বেশী বাসুঘোষের নতুন পদ আবিস্কার করছেন! দুর্ভাগ্যবশত তাঁর গবেষণা পত্রটি
ছাড়া তাঁর প্রকাশিত কোনো পদ-সংকলন আমরা এখনও হাতে পাইনি। আমাদের আরও দুর্ভাগ্য যে এই
সোসিয়াল মিডিয়ার যুগেও, তাঁর সঙ্গে আমরা এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি।

শোধগঙ্গা ওয়েবসাইটে, ডঃ মিহির চৌধুরী কামিল্যার অধীনে করা ডঃ চিত্রা রায়ের “বৈষ্ণব সংস্কৃতি ও
সাহিত্যে গোবিন্দ, মাধব ও বাসুদেব ঘোষ” নামক পি.এইচডি গবেষণা পত্রটি পড়তে
এখানে ক্লিক করুন . . .
*
*