কবি ঘনরাম চক্রবর্তী - ঘনরাম দাস, ঘনরাম কবিরত্ন – একই কবির ভিন্ন নাম বলে মনে করা হয়। তাঁর জীবনকাল সপ্তদশ শতকের শেষার্ধ থেকে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধ। তিনি অষ্টাদশ শতকের এক বিশিষ্ট কবি ছিলেন। তাঁর নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। পিতা গৌরীকান্ত চক্রবর্তী ও মাতা সীতা দেবী।
ঘনরাম চক্রবর্তী রচিত ধর্ম্মমঙ্গল কাব্য ( ডঃ নন্দিতা বসুর লেখা পড়ুন ) যথেষ্ট প্রসিদ্ধি লাভ করে। এই কাব্য রচনা শেষ হয় ৮ই অগ্রহায়ণ ১৬৩৩ শকাব্দ অর্থাৎ ১৭১১ সালে। তাঁর রচিত ধর্ম্মমঙ্গল প্রকাশিত করেন মহেন্দ্রনাথ ঘোষ ১৮৮১ থেকে ১৮৮৩ সালের মধ্যে। তিনি সত্যনারায়ণ রসসিন্ধু নামে একটি সত্যনারায়ণ পাঁচালীও লিখেছিলেন।
সুকুমার সেনের উদ্ধৃতি -পাতার উপরে . . . ঘনরাম চক্রবর্তী রচিত “ঘনরাম দাস” ও “ঘনরাম কবিরত্ন” ভণিতাযুক্ত কিছু পদও পাওয়া গেছে। সুকুমার সেন তাঁর “বাংলা কবিতা সমুচ্চয়” (প্রথম খণ্ড) সংকলনের কবি-পরিচিতি তে জানিয়েছেন যে “বাংলা সাহিত্যে ধর্মমঙ্গল-রচয়িতা ঘনরাম চক্রবর্তী ছাড়া আর কেহ এ নামে জানা নাই। পদটি ইহার রচনা বলিতে বাধা নাই। ঘনরাম শপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বিদ্যমান ছিলেন।”
সতীশচন্দ্র রায়ের উদ্ধৃতি -পাতার উপরে . . . সতীশচন্দ্র রায় তাঁর শ্রীশ্রীপদকল্পতরুর ৫ম খণ্ডের ভূমিকায়, ঘনরাম সম্বন্ধে লিখেছেন . . . “বাঙ্গালা সাহিত্যে একজন ঘনরাম সুবিখ্যাত। ইনি ‘শ্রীধর্ম্মমঙ্গল’ নামক বৃহৎ কাব্যের প্রণেতা ঘণরাম চক্রবর্ত্তী।
বর্ধমান জেলার অন্তর্গত কৃষ্ণপুর গ্রামে গৌরীকান্ত চক্রবর্ত্তীর ঔরসে সীতা দেবীর গর্ভে ইহাঁর জন্ম। জন্মের শক নিশ্চিত জানা যায় নাই ; তবে ১৬৩৩ শকের অগ্রহায়ণ মাসে ‘ধর্ম্মমঙ্গল’ কাব্যের রচনা শেষ হইয়াছিল বলিয়া গ্রন্থে উল্লিখিত হইয়াছে। বহুকাল পূর্ব্বে, বঙ্গবাসী-যন্ত্রালয় হইতে ‘ধর্ম্মমঙ্গল’ কাব্যখানা মুদ্রিত হইয়াছিল বলিয়া গ্রন্থে উল্লিখিত হইয়াছে। ঘনরাম এই কাব্যে বিশেষ বিশেষ প্রশংসনীয় কবিত্বের পরিচয় দিয়াছেন।
বোধ হয় তিনি প্রৌঢ় বয়সেই এই কাব্যের রচনা করেন। সুতরাং আন্দাজ ১৬০০ শাক অর্থাৎ ১৬৭৮ খৃষ্টাব্দের কিছুকাল পূর্ব্বেই তাঁহার জন্ম হইয়াছিল, এরূপ অনুমান করা যাইতে পারে।
বাঙ্গালা সাহিত্যে আর কোন ঘনরামের উল্লেখ পাওয়া যায় না। সুতরাং পদকল্পতরুর উদ্ধৃত পদগুলি এই ধর্ম্মমঙ্গলের কবি ঘনরাম চক্রবর্ত্তীর রচিত বলিয়াই অনুমান হয়। ঘনরাম দাসের ভণিতাযুক্ত পদগুলির সমস্তই বাত্সল্য-রস ও গোষ্ঠ-লীলার সখ্য-রসের পদ বটে। উহার প্রায় কুত্রাপি ব্রজ-বুলী ব্যবহৃত হয় নাই ; কিন্তু ১১৫২ সংখ্যক পদটি ( পঞ্চ-বরিখ-বয়সাকৃত-মোহন ) একটু বিচিত্র রকমের। ঐ পদের আগের দিকের কলিগুলি ব্রজ-বুলী মাত্রা-ত্রিপদী ছন্দে, কিন্তু শেষের চারি ছত্র খাঁটি বাঙ্গালা পয়ার ছন্দে রচিত। একই পদে এরূপ ভাষা ও ছন্দের প্রভেদ পদাবলী-সাহিত্যে খুব বিরল। সম্বভতঃ লিপিকরের ভ্রমে দুইটি বিভিন্ন পদ মিশিয়া যাইয়া এইরূপ একটা অদ্ভূত মিশ্র-পদের উত্পত্তি হইয়াছে।
ঘনরামের আলোচ্য পদগুলির সম্বন্ধে বক্তব্য এই যে, সেগুলির মধ্যে পদকর্ত্তার সরল ভাষায় মা যশোদার বাত্সল্য ও সখা-গণের সখ্য-ভাবের অতি সুন্দর ও স্বাভাবিক চিত্র পরিস্ফুট করিয়াছেন। এই পদগুলি প্রাঞ্জলতা ও স্বাভাবিকতায় সকল পাঠকেরই মনোরঞ্জন করিয়া থাকে। আমরা কৌতূহলী পাঠকদিগকে ঘনরামের ১১৬৪ ( দুবাহু পসারি আগে যায় নন্দরাণী ) ও ১১৬৫ ( আমি কিছু নাহি জানি ভাঙ্গিয়াছে ক্ষীর ননী ) সংখ্যক পদ দুইটী পাঠ করিতে অনুরোধ করি। স্বভাবতঃ মধুর-রসপ্রিয় বৈষ্ণব পদ-কর্ত্তাদিগের অন্য রসের রচনা কম পাওয়া যায়। সুতরাং ঘনরামের এই বাত্সল্য ও সখ্য-রসের সুন্দর পদগুলির দ্বারা পদকল্পতরুর যে বিশেষ রস-বৈচিত্র্য সাধিত হইয়াছে, ইহা স্বীকার করিতেই হইবে।”
আমরা মিলনসাগরে কবি ঘনরাম এর কাব্য আগামী প্রজন্মের কাছে, এই আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে (ইনটারনেট), পৌঁছে দিতে পারলে এই প্রচেষ্টাকে সফল মনে করবো।
ঘনরাম চক্রবর্তী, ঘনরাম দাস, ঘনরাম কবিরত্ন ধর্ম্মমঙ্গল কাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী সপ্তদশ শতকের শেষার্ধ থেকে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধ
আমাদের কাছে কবির কোনো ছবি নেই | একটি ছবি এবং আরও তথ্য আমাদের কাছে পাঠালে আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে প্রেরকের নাম এই পাতায় উল্লেখ করবো | আমাদের ঠিকানা- srimilansengupta@yahoo.co.in