কবি জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি | দ্বাদশ শতাব্দীতে  রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায়
তিনি সভাকবি ছিলেন | তিনি বাঙালী না ওড়িশাবাসী এ নিয়ে বহুদিন ধরে বিতর্ক চালু আছে | তাঁর
গীতগোবিন্দ কাব্যের দ্বাদশ তথা অন্তিম সর্গের শেষ পদ-এ তিনি তাঁর পরিচয় জানিয়ে বলেছেন যে তাঁর
পিতার নাম ভোজদেব এবং মাতার নাম বামাদেবী |

তাঁর সংস্কৃত কাব্য গীতগোবিন্দের প্রভাব বাংলা সাহিত্যে অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর | বাংলায় বৈষ্ণব
পদাবলীর জন্ম জয়দেবের গীতগোবিন্দের পদাবলী থেকেই | তবে জয়দেবের পরে বাংলা দেশে লেখা কোনো
পদ বা পদাবলীর সন্ধান চতুর্দশ শতাব্দীর আগে নিশ্চিতভাবে মেলে না | কিন্তু তার পর থেকে পদাবলী রচনা
চলেছে আধুনিক কাল পর্যন্ত | উনিশ শতকের সত্তরের দশকের বাংলাতেও একজন কিশোরকে পদাবলী
রচনা করতে দেখা যায় | ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী নামে  এই পদাবলীর রচয়িতা ছিলেন
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
|

জনশ্রুতিতে প্রকাশ, গীতগোবিন্দ রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভায় অভিনীত হয়েছিল  | গীতগোবিন্দ সংস্কৃত রচনা
হলেও বাংলা সাহিত্য সমাজে অন্যতম জনপ্রিয় গ্রন্থ | কবি জয়দেব গীতগোবিন্দের মধ্য দিয়ে অপরূপ প্রেম
সাধনায় পরবর্তী যুগের পরমপুরুষ শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব-পথকে তৈরী করে গিয়েছিলেন |
গীতগোবিন্দে তিনি যে প্রেমের গান গাইলেন, সেই প্রেমকে জীবনে দিব্য সত্যরূপে ফুটিয়ে তোলবার জন্যই
এসেছিলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য |

জয়দেব ও তাঁর স্ত্রী পদ্মাবতীকে নিয়েও অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে | অষ্টাদশ শতাব্দীতে বনমালী দাস
রচিত জয়দেব চরিত্র-এ, কৃষ্ণদাসের ভক্তমাল-এ এবং আধুনিক কালে অধরচাঁদ চক্রবর্তীর লীলা ও নিত্যভাবে
শ্রী জয়দেব উপাখ্যান (১৯১৪)-এ এই সব কিংবদন্তি পাওয়া যায় |

গীতগোবিন্দের  বাংলা  অনুবাদ  পাওয়া  যাবে  নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের বই চিত্রে জয়দেব ও
গীতগোবিন্দ-এ | বইটির প্রকাশক দেব সাহিত্য কুটির, ২১ ঝামাপুকুর লেন, কলকাতা ৭০০০০৯ |

বলা হয় যে গীতগোবিন্দের দশম সর্গের নবম পদটির রচনা কালে "
স্মর-গরল-খণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনম্"
লিখে কবি আর পরবর্তী রচনা লিখতে পারছিলেন না, যেখানে তিনি বলবেন যে শ্রীকৃষ্ণ রাধার চরণ ধরতে
চাইছেন! সারা বিশ্ব যাঁর চরণে প্রণত, তিনি চাইছেন অন্য কারও চরণ ধরতে! এই কথা তিনি কিছুতেই
লিখতে পারছিলেন না | দ্বিপ্রহর হয়ে এলে স্ত্রী পদ্মাবতীর অনুরোধে কবি গেলেন অজয় নদ এ স্নান সেরে
আসতে | পদ্মাবতী আহারের আয়োজন করতে লাগলেন | অল্পক্ষণ পরেই তিনি দেখলেন যে তাঁর স্বামী স্নান
সেরে এসেছেন | তাড়াতাড়ি তাঁকে খেতে দিলেন | খাওয়া শেষ করে কবি পদ্মাবতীকে পুঁথি নিয়ে আসতে
বললেন যাতে তিনি অসমাপ্ত পদটি সমাপ্ত করতে পারেন |  পদ্মাবতী পুঁথি  নিয়ে  এলে  তিনি   লিখলেন
"
দেহি পদপল্লবমুদারং" | তারপর বিশ্রাম করার জন্য ঘরে চলে গেলেন | পদ্মাবতী তখন স্বামীর ভুক্তাবশিষ্ট
নিয়ে নিজে খেতে বসলেন | এমন সময় পদ্মাবতী দেখলেন যে জয়দেব সদ্য স্নান সেরে ফিরছেন | ঘটনায়
দুজনেই অবাক হলেন | অথচ তাঁর অসমাপ্ত পদটি সমাপ্ত করে লেখা হয়ে গেছে | তাঁরা তখন বুঝতে
পারলেন যে ভক্তবত্সল শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের মর্মব্যথা বুঝতে পেরে নিজের হাতেই লিখে গিয়েছেন সেই কথা যে
কথা লিখতে ভক্তের অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠেছিল |   

এই পাতাটি আমরা প্রথম প্রকাশিত করি ২০০৯ সালে। ১১.৯.২০১৫ তারিখে এই পাতাটি পুনঃপ্রকাশিত করা
হয়
কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের (১৭.১০.১৮৬১ - ৩০.১২.১৯৪১) বঙ্গানুবাদ সহ। অনুবাদ প্রকাশের সময়ে
আমরা এই কাব্যের পদের ক্রমিক সংখ্যা, অনুবাদক কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের দেওয়া পদের ক্রমিক
সংখ্যা অনুযায়ী রেখেছি। কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের প্রতিটি টীকাও যথাস্থানে দেওয়া হয়েছে




উত্স:
ডঃ শিশির কুমার দাশ, সংসদ সাহিত্য সঙ্গী ২০০৩,
.       সুকুমার সেন, বৈষ্ণব পদাবলী, সাহিত্য অকাদেমি,
.       নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ,
.       বিজয়চন্দ্র মজুমদার, গীতগোবিন্দ (মূল ও তাহার পদ্য অনুবাদ), আশ্বিন ১৩৩২ (অক্টোবর ১৯২৫),




এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২০০৯, কেবল জয়দেবের গীতগোবিন্দ
পরিবর্ধিত সংস্করণ - ১১.৯.২০১৫, কবি বিজয়চন্দ্র মজুমদারের বঙ্গানুবাদ সহ
...