কবি মাধব ঘোষ এর বৈষ্ণব পদাবলী
গিরিষ সময় গৃহ মাহ
কবি মাধব ঘোষ
আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত “শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩২৫ বঙ্গাব্দের (১৯১৮ সাল) ২য় খণ্ড, ৩য় শাখা, ২৮শ
পল্লব, স্নান-যাত্রা, পদসংখ্যা ১৫৩৯।

॥ ধানশী॥

গিরিষ-সময় গৃহ মাহ।
যশোমতী হরিষ বাড়াহ॥
কহি সব গোকুল-লোকে।
নিজ সুতে করু অভিষেকে॥
গিরিষ-তপন ভয় লাগি।
বাসই কুসুম-পরাগি॥
সুশিতল বারি মধুর।
কলস কলস ভরি পূর॥
মলয়জ কপূর মিশাই।
হিমকর-শীকর লাই॥
রতন বেদি নিরমাণ।
তহিঁ আনাওল কান॥
বাসিত তৈল লাগাই।
দাস দাসীগণে আই॥
শির পর ঢালত বারি।
মাধব ঘোষ বলিহারি॥

ই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী
সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী”, ১৫০-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ তথারাগ॥ (পাহিড়া)

গিরিষ সময় গৃহ মাহ।
যশোবতী হরিষ বঢ়াহ॥
কহি সব গোকুল লোকে।
নিজ সুতে করে অভিষেকে॥
গিরিষ তপন ভয় লাগি।
বাসিত কুশুম পরাগি॥
সুশিতল বারি মধুর।
কলস কলস ভরি পূর॥
মলয়জ কপূর মিশাই।
হিমকর শীকর লাই॥
রতন বেদী নিরমাণ।
তাহি বসাওল কান॥
বাসিত তৈল লাগাই।
দাস দাসীগণে আই॥
শির পর ঢারত বারি।
মাধব ঘোষ বলিহারি॥

ই পদটি ১৯৯১ সালে প্রকাশিত, সুকুমার সেন সম্পাদিত “বাংলা কবিতা সমুচ্চয়”
সংকলন, (প্রথম খণ্ড), ১৭-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

শিশু-স্নান

গিরিষ সময় গৃহ মাহ।
যশোমতী হরিষ পঢ়াহ॥
কহি সব গোকুল-লোকে।
নিজ সুতে করু অভিষেকে॥
গিরিষ তপন ভয় লাগি।
বাসই কুসুম পরাগি॥
সুশীতল বারি মধুর।
কলস কলস ভরি পূর॥
মলয়জ কপূর মিশাই।
হিমকর শীকর লাই॥
রতনবেদী নিরমান।
তহিঁ আনাওল কান॥
বাসিত তৈল লাগাই।
দাসদাসীগণে আই॥
শির পর ঢালত বারি।
মাধব ঘোষ বলিহারি॥

ই পদটি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত, দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন
“বৈষ্ণব-পদলহরী”, ৫৪৩-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ ধানশী॥

গীরিষ সময় গৃহমাঝে।
যশোমতী হরিষ বাড়াই॥
কহি সব গোকুল লোকে।
নিজ-সুতে করু অভিষেকে॥
গিরীষ্ম তপন-ভয় লাগি।
বাসঙ কুসুম পরাগি॥
সুশীতল বারি মধুর।
কলস কলস ভরি পূর॥
মলয়জ কর্পূর মিশাই।
হেম কলসী কর লাই॥
রতন বেদী নিরমাণ।
তঁহি আনওল কান॥
বাসিত তৈল লাগাই।
দাস দাসীগণে আই॥
শির পর ঢালঙ বারি।
মাধব ঘোষ বলিহারি॥

ই পদটি ১৮৭০ সাল নাগাদ চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহীত এবং ১৯২২ সালে
রাজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা প্রকাশিত “শ্রীশ্রীপদামৃতসিন্ধু”, ৯৯-পৃষ্ঠায়, এইরূপে দেওয়া
রয়েছে।

॥ ধানশী॥

গীরিষ সময় গৃহ মাহ।
যশোমতী হরিষ বাড়াহ॥
কহি সব গোকুল লোক।
নিজ-সুতে করু অভিষেক॥
গিরিষ তপন-ভয় লাগি।
বাসঙ কুসুম পরাগি॥
সুশীতল বারি সুমধুর।
কলসী কলসী ভরি পুর॥
মলয়জ কপূর মিশাই।
হিমকর শীকর লাই॥
রতন বেদী নিরমান।
তাই আনায়ল কাণ॥
বাসিত তৈল লাগাই।
দাস দাসীগণ আই॥
শির পর ঢালত বারি।
মাধব ঘোষ বলিহারি॥

.      ************************          
.                                                                                
সূচিতে . . .   



মিলনসাগর
নিজ নিজ মন্দির যাইতে পুন পুন
কবি মাধব ঘোষ
আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত
“শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩২৫ বঙ্গাব্দের (১৯১৮ সাল) ২য় খণ্ড, ৩য় শাখা, ৫ম পল্লব, রসালস, পদসংখ্যা
৬৬০।

॥ তথা রাগ॥ (বিভাষ)

নিজ নিজ মন্দির                                   যাইতে পুন পুন
দুহুঁ দোহাঁ বদন নেহারি।
অন্তরে উয়ল                                        প্রেম-পয়োনিধি
নয়নে গলয়ে ঘন বারি॥
মাধব হামারি বিদায় পায় তোয়।
তোহারি প্রেম সঞে                                 পুন চলি আয়ব
অব দরশন নাহি মোয়॥ ধ্রু॥
কাতর নয়নে                                    নেহারিতে দুহুঁ দুহাঁ
উথলল প্রেম-তরঙ্গ।
মুরুছল রাই                                       মুরুছি পড়ু মাধব
কবে হবে তাকর সঙ্গ॥
ললিতা সুমুখি                                    সুমুখি করি ফুকরত
রাইক কোরে আগোর।
সহচরি কানু                                      কানু করি ফুকরত
ঢরকত লোচন লোর॥
কতি গেও অরুণ                                 কিরণ ভয় দারুণ
কতি গেও লোকক ভীত।
মাধব ঘোষ                                      অবহু নাহি সমুঝল
উদভট মুগধ চরিত॥

ই পদটি ১৯৬১ সালে প্রকাশিত, বিমান বিহারী মজুমদার সম্পাদিত “পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” (১৭৭-
পৃষ্ঠা) এবং “ষোড়শ শতাব্দীর পদাবলী-সাহিত্য” (৪৯৩-পৃষ্ঠা), সংকলন দুটিতেই, দেওয়া রয়েছে, “রাইক
কোরে . . . . করি ফুকরত” ইত্যাদি, এই দুটি পংক্তি বাদ দিয়ে।

নিজ নিজ মন্দির                                  যাইতে পুন পুন
দুহুঁ দোহাঁ বদন নেহারি।
অন্তরে উয়ল                                        প্রেম-পয়োনিধি
নয়নে গলয়ে ঘন বারি॥
মাধব হামারি বিদায় পায় তোয়।
তোহারি প্রেম সঞে                                পুন চলি আয়ব
অব দরশন নাহি মোয়॥ ধ্রু॥
কাতর নয়নে                                    নেহারিতে দুহুঁ দুহাঁ
উথলল প্রেম-তরঙ্গ।
মুরুছল রাই                                       মুরুছি পড়ু মাধব
কবে হবে তাকর সঙ্গ॥
ললিতা সুমুখি                                  সুমুখি করি ফুকরত
ঢরকত লোচন লোর॥
কতি গেও অরুণ                                 কিরণ ভয় দারুণ
কতি গেও লোকক ভীত।
মাধব ঘোষ                                     অবহু নাহি সমুঝল
উদভট মুগধ চরিত॥

ই পদটি ১৯১৬ সালে প্রকাশিত, হরিলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “শ্রীশ্রীপদরত্ন-
মালা”, ২৪৬-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ বিভাস॥

নিজ নিজ মন্দিরে                                যাইতে পুনঃ পুনঃ
দোঁহে দোঁহা বদন নেহারি।
অন্তর উয়ল                                        প্রেম পয়োনিধি
নয়ানে গলয়ে ঘন বারি॥
মাধব হামারি বিদায় পায়ে তোর।
তোহারি প্রেম সঞে                               পুনঃ চলি আওব
অব দরশন নাহি মোর॥ ধ্রু॥
কাতর নয়ানে                              নেহারিতে দোঁহে দোঁহা
উথলল প্রেম তরঙ্গ।
মুরছল রাই                                      মুরুছি পড়ু মাধব
কব হব তাকর সঙ্গ॥
ললিতা সুমুখি                                      সুমুখি ফুকরত
রাইক কোরে আগোর।
সহচরী কানু                                  কানু করি ফুকরত
ঢরকত লোচন নোর॥
কতি গেও অরুণ                                কিরণ ভয় দারুণ
কতি গেও লোকক ভীত।
মাধব ঘোষ                                   এতহু নাহি সমুঝল
উদভট মুগধি চরিত॥

ই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব
পদাবলী”, ১৫০-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

রসালস
॥ তথা রাগ॥ (পাহিড়া)

নিজ নিজ মন্দির                                   যাইতে পুন পুন
দুহুঁ দোহাঁ বদন নিহারি।
অন্তরে উয়ল                                        প্রেম পয়োনিধি
নয়নে গলয়ে ঘন বারি॥
মাধব হামারি বিদায় পায় তোয়।
তোহারি প্রেম সঞে                               পুন চলি আওব
অব দরশন নাহি মোয়॥
কাতর নয়ান                                 নেহারিতে দুহুঁ দোহাঁ
উথলল প্রেম তরঙ্গ।
মুরুছল রাই                                       মুরুছি পড়ু মাধব
কবে হবে তাকর সঙ্গ॥
ললিতা সুমুখী                                  সুমুখী করি ফুকরত
রাইক কোরে আগোর।
সহচরী কানু                                    কানু করি ফুকরত
ঢরকত লোচন-লোর॥
কতি গেও অরুণ-                                 কিরণ-ভয় দারুণ
কতি গেও লোকক ভীত।
মাধব ঘোষ                                     অবহু নাহি সমুঝল
উদভট মুগধ চরীত॥

ই পদটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত দুর্গাচরণ বিশ্বাস সংগৃহীত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “কীর্ত্তন-পদাবলী”,
১২০-পৃষ্ঠায়, এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

নিজ নিজ মন্দিরে, যাইতে পুনঃ পুনঃ দুহুঁ দুহাঁ বদন নেহারি।
অন্তরে উয়ল, প্রেম-পয়োনিধি, নয়নে গলয়ে ঘন বারি॥
মাধব হামারি বিদায় পায়ে তোয়।
তোহারি প্রেমসঞে, পুনঃ চলি আয়ব, অবদরশন নাহি মোয়॥ ধ্রু॥
কাতর নয়নে, নেহারিতে দুহুঁ দুহাঁ, উথলল প্রেমতরঙ্গ।
মূরুছল রাই, মুরুছি পড়ু মাধব, কবে হবে তাকর সঙ্গ॥
ললিতা সুমুখি, সুমুখি ফুকরত, রাইক কোরে আগোর।
সহচরী কানু, কানু করি ফুকরত, ঢরকত লোচনে লোর॥
কতিগেও অরুণ কিরণ ভয় দারুণ, কতি গেও লোকক ভীত।
মাধব ঘোষ, অবহু নাহি সমুঝল, উদভট মুগধ চরিত॥

.      ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
শকতি খীণ অতি উঠই না পারই
কবি মাধব ঘোষ
রাধামোহন ঠাকুর (রাধামোহন দাস) দ্বারা আনুমানিক ১৭২৫ সালে সংকলিত ও বিরচিত এবং ১৮৭৮
সালে, রামনারায়ণ বিদ্যারত্ন দ্বারা সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “পদামৃত সমুদ্র”, ৩৫৭-পৃষ্ঠা।

॥ শ্রীরাগ শেখর তালৌ॥

শকতি ক্ষীণ অতি উঠই না পারই কাতরে সখি মুখ চাই।
পরশি ললাট করহিঁ মুখ ঝাপল পদুমিনি হিমকর ধাই॥
মাধব করুণা লব তোহে নাই।
একবেরি বিরহ বেয়াধি সমাপহ এ দুহুঁ পদ দরশাই॥
রাই উপেখি ধরণি পর লোঠত কত কত সারঙ্গ নয়নী।
মধুপুরি পথিক চরণে পড়ি জিবইতে সংশয় জানি॥
এত দিনে নবমী দশা পরি পূরল শাস বহে আধ মন্দ।
মাধব ঘোষ কালিদহে পৈঠব বুঝি ও ব্যাধিক অন্ত॥

রাধামোহন ঠাকুরের সংস্কৃত টীকা -
তথান্যা কাপি শকতি খীন অতি ইত্যাদিনা প্রৌঢ় তদ্দশামাবেদয়ন্তী গমনং প্রার্থয়তে। পদুমিনি হিমকর ধাই
ইতি যথা পদ্মিনী চন্দ্রং ধাবতীত্যনুভূতোপময়া মোহ দশায়ামপি সৌন্দর্য্য মস্তীতি সূচিতং। সারঙ্গ নয়নী
মৃগ নয়নী চাতকে হরিণে পুংসি শারঙ্গ ইতি নানার্থাৎ। অত্র করুণা লব তোহে নাই ইত্যাদিনের্ষ্যা। এক
বৈরি ইত্যাদিনা বৈক্লব্যং এত দিনে ইত্যাদিনা প্রৌঢ় দশাচ ব্যক্তা॥

“পাঁচশত বত্সরের পদাবলী” ও“ষোড়শ শতাব্দীর পদাবলী-সাহিত্য” গ্রন্থ দুটিতে, বিমানবিহারী মজুমদারের
টিকা ও অনুবাদ -
পদুমিনি হিমকর ধাই ইতি যথা পদ্মিনী চন্দ্রং ধাবতীত্যনুভূতোপময়া মোহ দশায়ামপি সৌন্দর্য্য মস্তীতি
সূচিতং---রাধামোহন ঠাকুর। সূর্য অস্ত গেলে ও চন্দ্র উঠিলে পদ্মফুলের সৌন্দর্য ম্লান হইয়া যায়, তেমনি
তাঁহার সৌন্দর্য ম্লান হইলেও অন্তর্হিত হয় নাই।
রাই উপেখি ধরণি ইত্যাদি---রাধা চাহেন না যে, কৃষ্ণের কাছে তাঁহার মরণাপন্ন দশার খবর পাঠানো হউক,
কিন্তু তাঁহার নিষেধ উপেক্ষা করিয়া তাঁহার হরিণনয়না বহু সখী---মথুরায় যাইবে এমন পখিকের চরণে
পড়িয়া অনুরোধ করিতেছেন যে, তাঁহারা যেন কৃষ্ণকে রাধার জীবন-সংশয় হইয়াছে, এই কথা জানান।
শ্বাস বহই উধ মন্দ---অল্প ঊর্ধ্বশ্বাস বহিতেছে।  

ই পদটি আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত “শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ১১শ পল্লব, দশ দশা,
পদসংখ্যা ১৯২৮-তে এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ শ্রীগান্ধার॥

শকতি খীণ অতি উঠই না পারই
কাতরে সখি-মুখ চাই।
পরশি ললাট করহিঁ মুখ ঝাঁপল
তুয়া মুখ হৃদি অবগাই॥
মাধব-করুণাকি লব তোহে নাই।
এক বেরি বিরহ-বেয়াধি নিবারহ
এ দুহুঁ পদ দরশাই॥
রাই উপেখি ধরণি পর লুঠই
কত কত সারঙ্গ-নয়নী।
মধুপুর-পথিক-চরণ ধরি রোয়ত
জিবইতে সংশয় জানি॥
এত দিনে নবমি দশা পরিপূরল
শ্বাস বহই উধ মন্দ।
মাধব ঘোষ কালিদহে পৈঠব
বুঝি ও ব্যাধিক অন্ত॥

ই পদটি দ্বিজ মাধব দ্বারা সংকলিত, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে অনুলিখিত, বিশ্বভারতীর গ্রন্থশালায়
সংরক্ষিত, ১৯৮২ সালে বিশ্বভারতী বাংলা বিভাগ থেকে ভূদেব চৌধুরী, সুখময় মুখোপাধ্যায়, পঞ্চানন
মণ্ডল ও সুমঙ্গল রাণা দ্বারা সম্পাদিত ও প্রকাশিত, ১৩৮১টি পদবিশিষ্ট “শ্রীপদমেরুগ্রন্থ”, ৪৩০-পৃষ্ঠায় এই
রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ রাগিণী শ্রীগান্ধার - তালোচিত॥

সকতি খীণ অতি উঠই না পারিয়ে কাতরে সখীমুখ চাই।
পরসি ললাট করহি মুখ ঝাপল তুয়া মুখ হৃদি অবগাই॥
মাধব করুণা কি লব তোহে নাই।
একবার বিরহবেয়াধি নিবারহ এ তুয়া পদ পরশাই॥
রাই উপেখি ধরণী পর লুটই কতকত শারঙ্গনয়নী।
মধুপুরপথিক চরণে ধরি রোয়ত জীবইতে না জীবই জানি॥
এতদিনে নবমী দশা পরিপূরল শ্বাস বহই আধ মন্দ।
মাধবঘোষ কালীহ্রদে পৈঠব বুঝিও ব্যাধিক অন্ত॥

ই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব
পদাবলী”, ১৫১-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

মাথুর
॥ তথারাগ॥ (পাহিড়া)

শকতি ক্ষীণ অতি                                উঠই না পারই
কাতরে সখী মুখে চাই।
পরশি ললাট                                   করহি মুখ ঝাঁপল
তুয়া মুখ হৃদি অবগাই॥
মাধব করুণা কি লব তোহে নাই।
এক বেরি বিরহ                                 বেয়াধি নিবারহ
এ দুহুঁ পদ দরশাই॥
রাইক পেখি                                      ধরণি পর লুঠই
কত কত সারঙ্গ নয়নি।
মধুপুর পথিক                                চরণ ধরি রোয়ত
জীবইতে সংশয় জানি॥
এতদিনে নবমি                                   দশা পরিপূরল
শ্বাস বহই উধমন্দ।
মাধব ঘোষ                                    কালিদহে পৈঠব
বুঝি ও বেয়াধিক অন্ত॥

.      ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
তছু দুখে দুখী এক প্রিয়-সখী
কবি মাধব ঘোষ
আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত
“শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ২১শ পল্লব, শ্রীগৌরাঙ্গের
সন্ন্যাস ইত্যাদি, পদসংখ্যা ২২৭৬।

॥ তথারাগ॥ (ধানশী)

তছু দুখে দুখী                                এক প্রিয়-সখী
গৌর-বিরহে ভোরা।
সহিতে নারিয়া                                 চলিল ধাইয়া
যেমত বাউরী পারা॥
নদীয়া নগরে                                   সুরধুনী-তীরে
যেখানে বসিতা পহু।
তাহাই যাইয়া                                   গদগদ হৈয়া
কি কহয়ে লহু লহু॥
সে সব প্রলাপ-                                বচন শুনিতে
পাষাণ মিলাঞা যায়।
নীলাচল-পুরে                                   ঐছন গৌরে
যাইয়া দেখিতে পায়॥
আঁখি ঝরঝর                                   হিয়া গরগর
কহয়ে কান্দিয়া কথা।
মাধব ঘোষের                               হিয়া বেয়াকুল
শুনিতে মরমে বেথা॥

ই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব
পদাবলী”, ১৫০-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

নীলাচলে শ্রীগৌরাঙ্গ
॥ ধানশী ॥

তছু দুখে দুখী                                 এক প্রিয়সখী
গৌরবিরহে ভোরা।
সহিতে নারিয়া                                 চলিল ধাইয়া
যেমত বাউরী পারা॥
নদীয়া নগরে                                   সুরধুনীতীরে
যেখানে বসিতা পহুঁ।
তথায় যাইয়া                                   গদগদ হৈয়া
কি কহয়ে লহু লহু॥
সে সব প্রলাপ                                 বচন শুনিতে
পাষাণ মিলাঞা যায়।
গৌর হইতে                                   নীলাচল পুরে
যাইয়া দেখিতে পায়॥
আঁখি ঝর ঝর                                হিয়া গর গর
কহয়ে কাঁদিয়া কথা।
মাধব ঘোষের                                হিয়া বেয়াকুল
শুনিতে মরমে বেথা॥

ই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী
সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, ২৬১-পৃষ্ঠায় এই রুপে দেওয়া রয়েছে।

॥ ধানশী ॥

তছু দুখে দুখী                                এক প্রিয়সখী
গৌর-বিরহে ভোরা।
সহিতে নারিয়া                                চলিল ধাইয়া
যেমত বাউরী পারা॥
নদীয়ানগরে                                   সুরধুনীতীরে
যেখানে বসিতা পহুঁ।
তথায় যাইয়া                                গদ গদ হৈয়া
কি কহয়ে লহু লহু॥
সে সব প্রলাপ                                বচন শুনিতে
পাষাণ মিলাঞা যায়।
নীলাচল পুরে                                যৈছন গৌড়ে
যাইয়া দেখিতে পায়॥
আঁখি ঝর ঝর                                হিয়া গর গর
কহয়ে কাঁদিয়া কথা।
মাধব ঘোষের                                হিয়া বেয়াকুল
শুনিতে মরমে বেথা॥

ব্যাখ্যা -
পদকর্ত্তা মাধব ঘোষ এই তিনটী পদে (“তছু দুখে দুখী”, “অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া”, “গৌরাঙ্গ ঝাট করি চলহ
নদীয়া”) সুন্দর বিরহোন্মাদ বর্ণন করিয়াছেন। কল্পনাটী এই যে, শ্রীমতী যখন দশম দশার উপনীতা, তখন
যেমন বৃন্দাবতী মধুপুরে যাইয়া শ্রীরাধার চরম দশা এবং ব্রজবাসীর চূড়ান্ত দুর্দ্দশা বর্ণন করিয়াছিলেন,
প্রিয়াজীর জনৈক সখী তদ্রূপ সুরধুনীতীরে মহাপ্রভুর নিত্য উপবেশনস্থলে যাইয়া, তিনি যেন তথায় আছেন,
এই বিশ্বাস করিয়া তাঁহার কাছে প্রিয়াজীর ও নবদ্বীপবাসীগণের অবস্থা বর্ণন করিতেছেন। সখী যেন
“পাগলিনী” (বাউরি পারা) হইয়াছেন এবং পাগলিনীর ন্যায় “প্রলাপ” বকিতেছেন। কল্পনাটী যার পর নাই
স্বাভাবিক ও মধুর।
---জগবন্ধু ভদ্র, গৌরপদ-তরঙ্গিণী॥

.      ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া তুয়া গুণ সোঙারিয়া
কবি মাধব ঘোষ
আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত
“শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ২১শ পল্লব, শ্রীগৌরাঙ্গের
সন্ন্যাস ইত্যাদি, পদসংখ্যা ২২৭৭।

॥ পাহিড়া॥

অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া                                তুয়া গুণ সোঙরিয়া
মূরছি পড়িল খিতি-তলে।
চৌদিগে সখীগণ                                       হেরি করে রোদন
তুলা ধরি নাসার উপরে॥
তুয়া বিরহানলে                                           অন্তর জরজর
দেহ ছাড়া হইল পরাণি।
নদীয়া-নিবাসী যত                                   তারা ভেল মূরছিত
না দেখিয়া তুয়া মুখখানি॥
শচী বৃদ্ধ আধ-মরা                                দেহে প্রাণ নাহি তারা
তার প্রতি নাহি তোর দয়া।
যত সহচর তোর                                    সভাই বিরহে ভোর
শ্বাস রহে দরশন আশে।
হেগে হে রসিকবর                                      চলহ নদীয়া-পুর
কহে দীন মাধব ঘোষে॥

ই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব
পদাবলী”, ১৫০-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

॥ পাহিড়া॥

অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া                                তুয়া গুণ সোঙরিয়া
মূরছি পড়িল ক্ষিতি-তলে।
চৌদিকে সখীগণ                                       ঘিরি করে রোদন
তুলা ধরি নাসার উপরে॥
তুয়া বিরহানলে                                        অন্তর জর জর
দেহ ছাড়া হইল পরাণি।
নদীয়ানিবাসী যত                                    তারা ভেল মূরছিত
না দেখিয়া তুয়া মুখখানি॥
শচী বৃদ্ধা আধমরা                                   দেহ তার প্রাণছাড়া
তার প্রতি নাহি তোর দয়া।
যত সহচর তোর                                   সভাই বিরহে ভোর
শ্বাস বহে দরশন আশে।
হে দেহে রসিকবর                                      চলহ নদীয়াপুর
কহে দীন মাধব ঘোষে॥

ই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী
সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, ২৬১-পৃষ্ঠায় এই রুপে দেওয়া রয়েছে।

॥ পাহিড়া॥

অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া                                তুয়া গুণ সোঙরিয়া
মূরছি পড়ল ক্ষিতিতলে।
চৌদিকে সখীগণ                                       ঘিরি করে রোদন
তূল ধরি নাসার উপরে॥
তুয়া বিরহানলে                                         অন্তর জর জর
দেহ ছাড়া হইল পরাণি।
নদীয়ানিবাসী যত                                   তারা ভেল মূরছিত
না দেখিয়া তুয়া মুখখানি॥
শচী বৃদ্ধা আধমরা                                   দেহ তার প্রাণছাড়া
তার প্রতি নাহি তোর দয়া।
যত সহচর তোর                                    সবাই বিরহে ভোর
শ্বাস বহে দরশন আশে।
এ দেহে রসিকবর                                      চল হে নদীয়াপুর
কহে দীন মাধব ঘোষে॥

ব্যাখ্যা -
পদকর্ত্তা মাধব ঘোষ এই তিনটী পদে (“তছু দুখে দুখী”, “অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া”, “গৌরাঙ্গ ঝাট করি চলহ
নদীয়া”) সুন্দর বিরহোন্মাদ বর্ণন করিয়াছেন। কল্পনাটী এই যে, শ্রীমতী যখন দশম দশার উপনীতা, তখন
যেমন বৃন্দাবতী মধুপুরে যাইয়া শ্রীরাধার চরম দশা এবং ব্রজবাসীর চূড়ান্ত দুর্দ্দশা বর্ণন করিয়াছিলেন,
প্রিয়াজীর জনৈক সখী তদ্রূপ সুরধুনীতীরে মহাপ্রভুর নিত্য উপবেশনস্থলে যাইয়া, তিনি যেন তথায় আছেন,
এই বিশ্বাস করিয়া তাঁহার কাছে প্রিয়াজীর ও নবদ্বীপবাসীগণের অবস্থা বর্ণন করিতেছেন। সখী যেন
“পাগলিনী” (বাউরি পারা) হইয়াছেন এবং পাগলিনীর ন্যায় “প্রলাপ” বকিতেছেন। কল্পনাটী যার পর নাই
স্বাভাবিক ও মধুর।
---জগবন্ধু ভদ্র, গৌরপদ-তরঙ্গিণী॥

.         ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
গৌরাঙ্গ ঝাট করি চলহ নদীয়া
কবি মাধব ঘোষ
আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত “শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা,
২১শ পল্লব, শ্রীগৌরাঙ্গের সন্ন্যাস ইত্যাদি, পদসংখ্যা ২২৭৮।

.        ॥ শ্রীরাগ॥

গৌরাঙ্গ ঝাট করি চলহ নদীয়া।
প্রাণ-হীন হইল অবলা বিষ্ণুপ্রিয়া॥
তোমার চরিত যত পূরব-পিরীত।
সোঙরি সোঙরি এবে ভেল মূরছিত॥
সে হেন নদীয়াপুর সে সব সঙ্গিয়া।
ধূলায় পড়িয়া কান্দে তোমা না দেখিয়া॥
কহয়ে মাধব ঘোষ শুন গৌরহরি।
তিলেক বিলম্বে আমি আগে যাব মরি॥

ই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, ২৬১-পৃষ্ঠায় এই রুপে দেওয়া রয়েছে।

.        ॥ শ্রীরাগ॥

গৌরাঙ্গ ঝাট করি চলহ নদীয়া।
প্রাণহীন হইল অবলা বিষ্ণুপ্রিয়া॥
তোমার পূরব যত চরিত পীরিত।
সোঙরি সোঙরি এবে ফেল মূরছিত॥
হেন নদীয়াপুর সে সব সঙ্গিয়া।
ধূলায় পড়িয়া কান্দে তোমা না দেখিয়া॥
কহয়ে মাধব ঘোষ শুন গৌরহরি।
তিলেক বিলম্ব, আমি আগে যাই মরি॥

ব্যাখ্যা -
পদকর্ত্তা মাধব ঘোষ এই তিনটী পদে (“তছু দুখে দুখী”, “অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া”, “গৌরাঙ্গ
ঝাট করি চলহ নদীয়া”) সুন্দর বিরহোন্মাদ বর্ণন করিয়াছেন। কল্পনাটী এই যে, শ্রীমতী
যখন দশম দশার উপনীতা, তখন যেমন বৃন্দাবতী মধুপুরে যাইয়া শ্রীরাধার চরম দশা
এবং ব্রজবাসীর চূড়ান্ত দুর্দ্দশা বর্ণন করিয়াছিলেন, প্রিয়াজীর জনৈক সখী তদ্রূপ
সুরধুনীতীরে মহাপ্রভুর নিত্য উপবেশনস্থলে যাইয়া, তিনি যেন তথায় আছেন, এই বিশ্বাস
করিয়া তাঁহার কাছে প্রিয়াজীর ও নবদ্বীপবাসীগণের অবস্থা বর্ণন করিতেছেন। সখী যেন
“পাগলিনী” (বাউরি পারা) হইয়াছেন এবং পাগলিনীর ন্যায় “প্রলাপ” বকিতেছেন। কল্পনাটী
যার পর নাই স্বাভাবিক ও মধুর।
---জগবন্ধু ভদ্র, গৌরপদ-তরঙ্গিণী॥

.         ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
নাচে পহু কলধৌত-গোরা
কবি মাধব ঘোষ
আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায় সম্পাদিত
“শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ২১শ পল্লব,
শ্রীগৌরাঙ্গের সন্ন্যাস ইত্যাদি, পদসংখ্যা ২২৮৯।

প্রকারান্তরং যথা।
॥ মায়ূর॥

নাচে পহু কলধৌত-গোরা।
অবিরত পূর্ণ-কল                                        মুখ-বিধু মণ্ডল
নিরবধি প্রেম-রসে ভোরা॥ ধ্রু॥
অরুণ কমল পাখী                                জিনি রাঙ্গা দুটি আঁখি
ভ্রমরযুগল দুটি তারা।
সোণার ভূধরে যৈছে                                সুর-নদী বহে ঐছে
বুক বাহি বহে প্রেম-ধারা॥
কেশরীর কটি জিনি                             তাহাতে কৌপীন খিণি
অরুণ বরণ বহির্ব্বাস।
গলায় দোনার মালা                                 ভূষণ করিল আলা
নাসা তিল-কুসুম বিকাশ॥
কনক-মৃণাল-যুগ                                     সুবলিত দুটি ভুজ
কর-যুগ কঞ্জের বিলাস।
রাতা-উতপল-ফুল                                      পদ নহে সমতুল
পরশনে মহীর উল্লাস॥
আপাদ মস্তক গায়                                  পুলকে পূরিত তায়
যৈছে নীপ-ফুল অতি শোভা।
প্রভাতে কদলী জনু                                সঘনে কম্পিত তনু
মাধব ঘোষের মনলোভা॥

ই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব
পদাবলী”, ১৪৯-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

শ্রীগৌরাঙ্গের সন্ন্যাস।
॥ সুহই॥

নাচে পহুঁ কলধৌত গোরা।
অবিরত পূর্ণকল                                        মুখ বিধুমণ্ডল
নিরবধি প্রেমরসে ভোরা॥ ধ্রু॥
অরুণ কমল না কি                             জিনি রাঙ্গা দুটি আঁখি
ভ্রমরযুগল দুটী তারা।
সোণার ভূধরে যৈছে                              সুরনদী বহে তৈছে
বুক বাহি বহে প্রেমধারা॥
কেশরীর কটি জিনি                            তাহাতে কৌপীনখাণি
অরুণ বসণ বহির্ব্বাস।
গলায় দোনার মালা                                ভূবণ করিল আলা
নাসা তিলকুসুম বিকাশ॥
কনক মৃণালযুগ                                     সুবলিত দুটী ভুজ
করযুগ কুঞ্জর বিলাস।
রাতা উতপল ফুল                                    পদ নহে সমতুল
পরশনে মহীর উল্লাস॥
আপাদ মস্তক গায়                                পুলকে পূরিত তায়
যৈছে নীপফুল অতি শোভা।
প্রভাতে কদলী জনু                                সঘনে কম্পিত তনু
মাধব ঘোষের মনোলোভা॥

ই পদটি ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত,
পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-তরঙ্গিণী”, ১০৩-পৃষ্ঠায় এই রুপে দেওয়া রয়েছে। এত ভিন্নতা রয়েছে এই
পদটির প্রথম ছত্রে ও পদের অন্যত্র যে, আমরা এই পদটিকে "নাচে পহুঁ অবধূত গোরা" শিরোনামে, একটি
স্বতন্ত্র পদ হিসেবেও রাখছি, পাঠকের সুবিধের জন্য।

॥ মায়ূর॥

নাচে পহুঁ অবধূত গোরা।
তছু মুখ অবিকল                                        পূর্ণ বিধুমণ্ডল
নিরবধি মন্ত্ররসে ভোরা॥ ধ্রু॥
অরুণ কমল পাখী                                জিনি রাঙ্গা দুটী আঁখি
ভ্রমরযুগল দুটী তারা।
সোণার ভূধরে যৈছে                                সুরনদী বহে তৈছে
বুক বাহি বহে প্রেমধারা॥
কেশরীর কটি জিনি                              তাহাতে কৌপীনখাণি
অরুণ বসণ বহির্বাস।
গলায় দোনার মালা                                ভূষণ করিয়া আলা
নাসা তিলপ্রসূন বিকাশ॥
কনক মৃণালযুগ                                      সুবলিত দুটী ভুজ
করযুগ কুঞ্জর বিলাস।
রাতা উত্পল ফুল                                     পদ্ম নহে সমতুল
পরশনে মহীর উল্লাস॥
আপাদ মস্তক গায়                                 পুলকে পূরিত তায়
যৈছে নীল ফুল অতি শোভা।
প্রভাতে কদলি জনু                                সঘনে কম্পিত তনু
মাধব ঘোষের মনোলোভা॥

.         ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
পিঅ সখী প্রীত বচনামৃত সুনইতে
কবি মাধব ঘোষ
রামগোপাল দাস (গোপাল দাস) দ্বারা ১৬৪৩-১৬৭৬ সময়কালে, সংকলিত ও বিরচিত এবং পীতাম্বর দাস
দ্বারা সপ্তদশ শতকে সংকলিত ও বিরচিত এবং ১৯৪৬ সালে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সুকুমার সেন ও
প্রফুল্ল পাল দ্বারা সম্পাদিত, বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন "রসকল্পবল্লী ও অষ্টরস-ব্যাখ্যা ও রসমঞ্জরী”, ৩৩২-
পৃষ্ঠা।

পিঅ সখী প্রীত                                বচনামৃত সুনইতে
ভঙ্গল মনোপথ ভঙ্গ।
বিদগ মাধব                                       মন্দিরে আঅব
নাথ বিপদ ভেল ভঙ্গ॥
সজনি সব দুরদিন দূরে গেল।
জাকর দরসনে                                   সব দুখ নিরসই
সো পিঅ অনুকূল ভোল॥
সখি মহা পুন পুন                                 পুছইতে সুন্দরি
না কহ মধুরিম বাণী।
কিএ আঅব হরি                               কিএ তুআ চাতুরী
মাথ পরসি কহ বাণী॥
উলকিত মঝু হিআ                           আজু আঅব পিআ
দৈব কহল শুভ বাণী।
শুভ সূচক জত                                নিজ অঙ্গে বেকত
অতএ নিশ্চয় করি মানি॥
সজনি, সবহু বিপদ দূরে গেল।
সুখ সম্পদ জত                              সভে ভেল অনুগত
সো পিআ অনুকূল ভেল॥
সব তনু পুলকিত                               পুছইতে সুন্দরি
রাইক অমিঞা সিনান।
মাধব ঘোষ কহ                                 হৃদয় জুড়াঅব
তনু ভেল গদ গদ মান॥

.         ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
নিধুবনে খেলত মাধব রঙ্গে
কবি মাধব ঘোষ
১৮৪৯ সালে প্রকাশিত, গৌরমোহন দাস সংকলিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন
“পদকল্পলতিকা”, ৭৬-পৃষ্ঠা।

.                        ॥ বসন্ত॥

নিধুবনে খেলত মাধব রঙ্গে। ব্রজবনিতা ফাগু দেই শ্যাম অঙ্গে॥
কানু ফাগু দেওলি সুন্দরী অঙ্গে। মুখ মুড়ত ধনী করি কত ভঙ্গে॥
ফাগু রঙ্গে গোপী চৌদিগে বেঢ়িয়া। শ্যাম অঙ্গে দেই ফাগু অঞ্জলি পূরিয়া॥
ফাগু খেলিতে ফাগু উড়িল গগণে। বৃন্দাবনে তরুলতা রকত বরণে॥
রাঙ্গা ময়ূর নাচে গাছে রাঙ্গা কোকিল গায়। রাঙ্গা ফুলে রাঙ্গা ভ্রমর রাঙ্গা মধু খায়॥
রাঙ্গা বায়ে রাঙ্গা হৈল যমুনার পানী। গগণে উঠিল ফাগু দিগ বিদিগ না জানি॥
রাধা জয় জয় দ্বিজ কূলে গায়। হেরিয়া মাধব ঘোষের নয়ন যুড়ায়॥

ই পদটি ১৯১৬ সালে প্রকাশিত, হরিলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী
সংকলন “শ্রীশ্রীপদরত্ন-মালা”, ৪২১-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

.        ॥ বসন্ত॥

নিধুবনে খেলত মাধব রঙ্গে।
ব্রজ-বনিতা ফাগু দেই শ্যাম অঙ্গে॥
কানু ফাগু দেয়ল সুন্দরী অঙ্গে।
মুখ মোড়ই ধনী করি কত ভঙ্গে॥
ফাগু রঙ্গে গোপী চৌদিকে বেঢ়িয়া।
শ্যাম অঙ্গে দেয় ফাগু অঞ্জলী পূরিয়া॥
ফাগু খেলিতে ফাগু উড়িল গগনে।
বৃন্দাবনে তরুলতা রাতুল বরণে॥
রাঙ্গা ময়ূর নাচে গাছে রাঙ্গা কোকিল গায়।
রাঙ্গা ফুলে রাঙ্গা ভ্রমর রাঙ্গা মধু খায়॥
রাঙ্গা বায়ে রাঙ্গা হৈল যমুনার পানী।
গগনে উঠিল দিগ বিদিগ না জানি॥
রাধে জয় রাধে জয় দ্বিজকুল গায়।
হেরিয়া মাধব ঘোষের নয়ন জুড়ায়॥

.         ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর
নাচে পহুঁ অবধূত গোরা
কবি মাধব ঘোষ
১৯৩৪ সালে প্রকাশিত, জগবন্ধু ভদ্র সংকলিত ও মৃণালকান্তি ঘোষ সম্পাদিত, পদাবলী সংকলন “শ্রীগৌরপদ-
তরঙ্গিণী”, ১০৩-পৃষ্ঠায় এই রুপে দেওয়া রয়েছে। এত ভিন্নতা রয়েছে এই পদটির প্রথম ছত্রে ও পদের
অন্যত্র যে, আমরা এই পদটিকে "নাচে পহুঁ অবধূত গোরা" শিরোনামে, একটি স্বতন্ত্র পদ হিসেবেও রাখছি,
পাঠকের সুবিধের জন্য।

॥ মায়ূর॥

নাচে পহুঁ অবধূত গোরা।
তছু মুখ অবিকল                                        পূর্ণ বিধুমণ্ডল
নিরবধি মন্ত্ররসে ভোরা॥ ধ্রু॥
অরুণ কমল পাখী                                জিনি রাঙ্গা দুটী আঁখি
ভ্রমরযুগল দুটী তারা।
সোণার ভূধরে যৈছে                                সুরনদী বহে তৈছে
বুক বাহি বহে প্রেমধারা॥
কেশরীর কটি জিনি                              তাহাতে কৌপীনখাণি
অরুণ বসণ বহির্বাস।
গলায় দোনার মালা                                ভূষণ করিয়া আলা
নাসা তিলপ্রসূন বিকাশ॥
কনক মৃণালযুগ                                      সুবলিত দুটী ভুজ
করযুগ কুঞ্জর বিলাস।
রাতা উত্পল ফুল                                     পদ্ম নহে সমতুল
পরশনে মহীর উল্লাস॥
আপাদ মস্তক গায়                                 পুলকে পূরিত তায়
যৈছে নীল ফুল অতি শোভা।
প্রভাতে কদলি জনু                                সঘনে কম্পিত তনু
মাধব ঘোষের মনোলোভা॥

ই পদটি আনুমানিক ১৭৫০ সালে, বৈষ্ণবদাস (গোকুলানন্দ সেন) সংকলিত এবং সতীশচন্দ্র রায়
সম্পাদিত “শ্রীশ্রীপদকল্পতরু” গ্রন্থের ১৩৩০ বঙ্গাব্দের (১৯২৩ সাল) ৩য় খণ্ড, ৪র্থ শাখা, ২১শ পল্লব,
শ্রীগৌরাঙ্গের সন্ন্যাস ইত্যাদি, পদসংখ্যা ২২৮৯ হিসেবে এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

প্রকারান্তরং যথা।
॥ মায়ূর॥

নাচে পহু কলধৌত-গোরা।
অবিরত পূর্ণ-কল                                        মুখ-বিধু মণ্ডল
নিরবধি প্রেম-রসে ভোরা॥ ধ্রু॥
অরুণ কমল পাখী                                জিনি রাঙ্গা দুটি আঁখি
ভ্রমরযুগল দুটি তারা।
সোণার ভূধরে যৈছে                                সুর-নদী বহে ঐছে
বুক বাহি বহে প্রেম-ধারা॥
কেশরীর কটি জিনি                             তাহাতে কৌপীন খিণি
অরুণ বরণ বহির্ব্বাস।
গলায় দোনার মালা                                 ভূষণ করিল আলা
নাসা তিল-কুসুম বিকাশ॥
কনক-মৃণাল-যুগ                                     সুবলিত দুটি ভুজ
কর-যুগ কঞ্জের বিলাস।
রাতা-উতপল-ফুল                                      পদ নহে সমতুল
পরশনে মহীর উল্লাস॥
আপাদ মস্তক গায়                                  পুলকে পূরিত তায়
যৈছে নীপ-ফুল অতি শোভা।
প্রভাতে কদলী জনু                                সঘনে কম্পিত তনু
মাধব ঘোষের মনলোভা॥

ই পদটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত বৈষ্ণব পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব
পদাবলী”, ১৪৯-পৃষ্ঠায় এই রূপে দেওয়া রয়েছে।

শ্রীগৌরাঙ্গের সন্ন্যাস।
॥ সুহই॥

নাচে পহুঁ কলধৌত গোরা।
অবিরত পূর্ণকল                                        মুখ বিধুমণ্ডল
নিরবধি প্রেমরসে ভোরা॥ ধ্রু॥
অরুণ কমল না কি                             জিনি রাঙ্গা দুটি আঁখি
ভ্রমরযুগল দুটী তারা।
সোণার ভূধরে যৈছে                              সুরনদী বহে তৈছে
বুক বাহি বহে প্রেমধারা॥
কেশরীর কটি জিনি                            তাহাতে কৌপীনখাণি
অরুণ বসণ বহির্ব্বাস।
গলায় দোনার মালা                                ভূবণ করিল আলা
নাসা তিলকুসুম বিকাশ॥
কনক মৃণালযুগ                                     সুবলিত দুটী ভুজ
করযুগ কুঞ্জর বিলাস।
রাতা উতপল ফুল                                    পদ নহে সমতুল
পরশনে মহীর উল্লাস॥
আপাদ মস্তক গায়                                পুলকে পূরিত তায়
যৈছে নীপফুল অতি শোভা।
প্রভাতে কদলী জনু                                সঘনে কম্পিত তনু
মাধব ঘোষের মনোলোভা॥

.         ************************          
.                                                                                
সূচীতে . . .   



মিলনসাগর