মাধব ঘোষ – ছিলেন চৈতন্য সমসাময়িক পদকর্তা এবং চৈতন্যদেবের অনুচর ও ভক্ত এবং বড় পদকর্তা বাসুদেব ঘোষের ভাই। তিনি ছিলেন সুগায়ক।
তাঁর আর এক ভাই গোবিন্দ ঘোষ ছিলেন সুনর্তক এবং তাঁরা সবাই বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করে গিয়েছেন।
জগবন্ধু ভদ্রর ৬ জন মাধব - ১৯০২ সালে প্রকাশিত পদাবলী সংকলন গৌরপদ-তরঙ্গিণীর প্রথম সংকলনে, জগবন্ধু ভদ্র ছয়জন মাধবের উল্লেখ করেছেন, যাঁদের মধ্যে তিনজনেরই নাম মাধব মিশ্র! এই ছয়জন হলেন . . . ১। মাধব মিশ্র - ইনি গদধর পণ্ডিতের পিতা। তিনি চট্টগ্রামের বেলেটি গ্রাম থেকে এসে নবদ্বীপে বসবাস শুরু করেন। এনার পদ-রচনা সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ নেই। ২। দুই ভাই জগন্নাথ ও মাধব - তাঁরা নবদ্বীপের বিখ্যাত জগাই-মাধাই, যাঁদের নিত্যানন্দ প্রভু উদ্ধার করেছিলেন। এনারা পদকর্তা ছিলেন না বলেই আমরা জানি। ৩। মাধবাচার্য্য - ইনি নিত্যানন্দ প্রভুর শিষ্য এবং জামাতা। পিতা বিশ্বেশ্বর ও মাতা মহালক্ষ্মী। জন্মকালে মাতার মৃত্যু ও তারপরে পিতা, সন্ন্যাসী হয়ে কাশীযাত্রা করলে, মাধবকে পরম যত্নে মানুষ করেন পিতা- মাতার পরমবন্ধু দম্পতি, ভগীরথ ও জয়দুর্গা। মাধব নানা শাস্ত্রপাঠ করে মাধব আচার্য্য উপাধি লাভ করেন এবং নিত্যানন্দ প্রভুর ভক্ত হয়ে তাঁরই আজ্ঞায় কন্যা গঙ্গা দেবী কে বিবাহ করেন। ইনি নিত্যানন্দ দাস রচিত শ্রীপ্রেমবিলাস গ্রন্থের উনবিংশ বিলাসের ১৮৫-পৃষ্ঠায় উল্লেখিত, দ্বিতীয় মাধবাচার্য্য। এনার রচনাবলি সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু ইনি নিত্যানন্দ দাসকে বাদ্য শিক্ষা দিয়েছিলেন বলে সেখানে উল্লেখিত রয়েছে। ৪। মাধব ঘোষ - ইনি বাসুঘোষ ও গোবিন্দ ঘোষের আপন ভাই। এঁরা সবাই কবি ও গায়ক ছিলেন। বাসু ও মাধব ছিলেন নিত্যানন্দ প্রভুর ভক্ত। তাঁরা চৈতন্য সমকালীন কবি। তাঁর পদে “মাধব ঘোষ” ভণিতা রয়েছে। কিছু “মাধব” ভণিতার পদও তাঁর রচনা হতে পারে। ৫। মাধব মিশ্র - পিতার নাম পরাশর, পিতামহের নাম ধরণীধর ও পুত্রের নাম জয়রাম মিশ্র। তাঁর বাসস্থান ছিল ত্রিবেণীর ধারে সপ্তগ্রামে। সেখান থেকে তাঁরা ময়মনসিংহ জেলায়, মেঘনার পারে নবীনপুর বা ন্যায়পুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৫০১ শকে সারদাচরিত নামে একটি চণ্ডীগ্রন্থ রচনা করেন। “ইন্দুবিন্দুবাণধাতা শক নিয়োজিত। দ্বিজ মাধবে গায় সারদাচরিত॥” ইনিও একটি কৃষ্ণমঙ্গল রচনা করেন। ৬। মাধব মিশ্র - ইনি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দ্বিতীয় স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর কাকা কালিদাস মিশ্রের পুত্র মাধব। নিত্যানন্দ দাসের প্রেমবিলাসে রয়েছে যে এই কালিদাসের নামও পরাশর ছিল। “জ্যেষ্ঠ সনাতন কনিষ্ঠ পরাশর কালিদাস। পরম পণ্ডিত সর্ব্ব গুণের আবাস॥” শ্রীকৃষ্ণমঙ্গলের এই পংক্তির টীকায় দেওয়া আছে - পরাশর কালী ভক্ত ছিলেন বলে তাঁর নাম কালিদাস হয়। মাধব নানা শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য লাভ করে মাধব আচার্য্য উপাধি লাভ করেন। ইনি কেবল শ্রীচাতন্যের শ্যালকই নন, ইনি কিছুকাল নিমাইপণ্ডিতের (শ্রীচৈতন্যের পূর্বাশ্রমের ডাক নাম) টোলের ছাত্র ছিলেন! ইনি শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের সুন্দর সরল অনুবাদ করে “শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল” নামে প্রকাশ করে শ্রীচৈতন্যের পাদপদ্মে অর্পণ করেন। ইনি পরবর্তিতে কবিবল্লভ-আচার্য ও কলি-ব্যাস নামেও খ্যাত হন। ইনি নিত্যানন্দ দাস রচিত শ্রীপ্রেমবিলাস গ্রন্থের উনবিংশ বিলাসের ১৮৩-পৃষ্ঠায় উল্লেখিত, প্রথম মাধবাচার্য্য।
মাধব ভণিতা প্রসঙ্গে মৃণালকান্তি ঘোষ - গৌরপদতরঙ্গিণীর দ্বিতীয় সংকলনে ভণিতা প্রসঙ্গে, সম্পাদক মৃণালকান্তি ঘোষ লিখেছেন . . . “গৌরপদতরঙ্গিণীতে মাধব ঘোষ -ভণিতার পাঁচটী, মাধবদাস ভণিতার দুইটী, মাধব -ভণিতাযুক্ত পাঁচটী এবং দ্বিজ মাধব -ভণিতার একটী মাত্র পদ সংগৃহীত হইয়াছে। এই মাধ ঘোষ যে বাসু ও গোবিন্দ ঘোষের সহোদর, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। তত্ত্বনিধি মহাশয়ের মতে কালিদাস-তনয় মাধবই, দ্বিজমাধব-ভণিতাযুক্ত পদটীর রচয়িতা। সতীশবাবু (পদকল্পতরুর সম্পাদক) বলেন, ‘পরাশরাত্মজ মাধব অপেক্ষা কালিদাসাত্মজ মাধবের পদাবলী পদকল্পতরুতে সংগৃহীত হইবার বেশী সম্ভাবনা।’ আমরা ইহা বলিতে পারিনা। মাধব ও মাধবদাস ভণিতাযুক্ত সাতটী পদ যে একজনার রচিত নহে. তাহা পাঠ করিলেই বেশ বুঝা যায়। তবে কোন্ পদটী কাহার রচিত, তাহা বলা সুকঠিন।”
বিভিন্ন রূপে "মাধব" ভণিতা ও তার অপভ্রংশ -পাতার উপরে . . . আমরা মিনলসাগরে যে বিভিন্ন রূপে “মাধব” ও তার অপভ্রংশ রূপের ভণিতাযুক্ত পদ সংগ্রহ করতে পেয়েছি তা হলো "মাধব", "মাধব দাস", "দ্বিজ মাধব", "মাধব আচার্য্য", "শ্রীমাধব", "মাধাই", "মাধো", "মাধব ঘোষ", "মাধবেন্দ্র পুরী", "মাধবী" এবং "মাধবী দাসী"।
এই পাতার প্রথম প্রকাশ - ২৮.৬.২০১৪ ১ম পরিবর্ধিত সংস্করণ - ৩.৮.২০১৭
মাধব ঘোষ শ্রীচৈতন্য দেবের সমকালীন ষোড়ষ শতক
কবির একটি ছবি ও তাঁর জীবন সম্বন্ধে আরও তথ্য যদি কেউ আমাদের পাঠান তাহলে আমরা, আমাদের কৃতজ্ঞতাস্পরূপ প্রেরকের নাম এই পাতায় উল্লেখ করবো। আমাদের ঠিকানা - srimilansengupta@yahoo.co.in