বুদ্ধদেব বসুর কবিতা
প্রথম পার্থ
*
মিলনসাগরে কবি বুদ্ধদেব বসুর "প্রথম পার্থ" কাব্যনাট্যের প্রথম পাতার পর . . .

কর্ণ
( আবেগের সঙ্গে )

মা !  আমার মা !
আমার ঘুমের মধ্যে লুকানো এক স্বপ্ন,
আমার স্বপ্নের মধ্যে গোপন সঞ্চার --
আজ মূর্ত আমার চোখের সামনে !


কুন্তী

ডাক, আর-একবার মা ব’লে ডাক আমাকে,
আগে কখনো শুনিনি তোর মুখে, এখন অবিরাম শুনতে চাই |



  

  
      
          
          
      
           
              
            
       
       
          
        
          
         
         
          
           
            
            
          
         

            

              
        


              

                       
            
                
   
                  
কর্ণ
( চাপা গলায় )
.         আমাকে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলে  |



কুন্তী

কালস্রোতে, কর্ণ, আমি তোমাকে কালস্রোতে ভাসিয়েছিলাম,
যাতে সেই স্রোতে বাহিত হয় তোমার খ্যাতি
যুগ থেকে যুগান্তরে, দূর থেকে দূরান্তর পর্যন্ত  |
যার জন্ম সূর্যের বীজে, আমি জানতাম সে নির্ধারিত বীর,
অকালে সে বিনষ্ট হ’তে পারে না !


কর্ণ

সূর্যের বীজে --- অনূঢ়ার গর্ভে--
লজ্জিতা মাতার পরিত্যক্ত সন্তান !


কুন্তী

মাতার দেহ পরিত্যাগ করে পুত্রকে---
সেটা ব্রহ্মারই বিধান |
কিন্তু মাতার হৃদয়ের মধ্যে অভ্যর্থনা
ধ্বনিত হয় নিরন্তর -- নিঃশব্দে |


কর্ণ

সেই নিঃশব্দতা কেন ঘুচিয়ে দিলে, পান্ডুপত্নী ?
কেন রাখলে না চিরকাল অন্তরালে  ?
তুমি লজ্জা পেলে না, নতুন ক’রে লজ্জা পেলে না
আজ আমার সামনে এসে দাঁড়াতে, আমাকে পুত্র ব’লে ডাকতে ?


কুন্তী

কর্ণ, আরো বলো !
আমাকে আঘাত করো, ধিক্কার দাও !
শুনতে-শুনতে নির্বাপিত হোক আমার মনস্তাপ,
আমার চোখ ফেটে নেমে আসুক কান্না,
আমার চোখের জলে হোক তোমার অভিষেক |

[  
কুন্তী কর্ণের দিকে এগিয়ে গেলেন | ]

কর্ণ, আমার কাছে আয় |  আমাকে তোর স্পর্শ দে |


কর্ণ
( সরে গিয়ে )

অর্জুনমাতা পৃথা, আপনি আমার শ্রদ্ধার পাত্রী |
যদি দুর্বাক্য ব’লে থাকি, মার্জনা করবেন |


কুন্তী
( তীব্র স্বরে )

প্রত্যাখ্যান !----
আমি অপরাধিনী,  তাই ?
অপরাধের কি ক্ষমা নেই ?
পাপের কি প্রায়শ্চিত্ত নেই ?
নেই মিনতির কোনো উত্তর, বেদনার কোনো শুদ্ধি ?
আর তারা কি তবে ভ্রান্ত. যারা বলে
কেউ নেই কর্ণের মতো মহাপ্রাণ ?


কর্ণ

বে      
          
         
          

           

          
         
           
            
              
          
               
          
           
           
                       

কর্ণ

তাহ’লে --- এই আপনার অভীষ্ট ? পান্ডবের শ্রীবৃদ্ধি ?
.    অর্জুনের আয়ু ?
সেইজন্যই এই পরিত্যক্ত পুত্রকে আজ
মাতৃস্নেহে অভিষিক্ত করলেন  ?


কুন্তী

আমি কিছু গোপন করবো না, আমার গোপনীয় কোনো
কথা নেই |
কোনো দ্বিধা নেই বলতে --- দুর্যোধন দূরাত্মা,
আর পান্ডুরা সাধু ও উৎপীড়িত |
কেননা সেটাই সত্য--- আমি জানি | অনেকেই জানে |
আমার বিশ্বাস পান্ডবের হিতের জন্য যে সচেষ্ট
তারই কাম্য এই রাস্ট্রের উন্নতি, কুরুবংশের মঙ্গল |
আমার মনে হয় যখন যুদ্ধের শঙ্খনাদ
যে-কোনো মুহূর্তে বেজে উঠতে পারে
কেরল থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারতবর্যে ,
তখন আমারও কিছু কর্তব্য আছে,
আমি, ব্যাসের পুত্রবধূ, কৃষ্ণের পিতৃস্বসা |
কিন্তু তোমার কাছে আমি কর্তব্যবোধে আসিনি, কর্ণ,
এসেছি রক্তের টানে, হৃদয়ের আজ্ঞায়  |


কর্ণ

রক্তের টানে, হৃদয়ের আজ্ঞায় !
তাহলে শুনুন আমার ক্ষুদ্র একটি কাহিনী  :
সেদিন রাজপুত্রদের অস্ত্রশিক্ষার প্রদর্শনীতে
উপস্থিত ছিলেন নানা দেশের অমাত্য, হস্তিনাপুরের
.  আবালবৃদ্দবনিতা |
আমি ছিলাম অন্যতম প্রতিযোগী  | কৃপাচার্য আমার বংশপরিচয়
.  জিজ্ঞাসা করলেন,
আমার উত্তর শুনে হেসে উঠলেন অভিজাতবর্গ |
আমি বেরিয়ে এলাম লক্ষ চোখের তলা দিয়ে,
বিনা পরীক্ষায় পরাস্ত---- অবমানিত ---
আমি, কুন্তীর প্রথম সন্তান !
হয়তো ভীষ্ম তা ভুলে গেছেন, যিনি আপনাদের পূজ্য,
হয়তো দ্রোণ তা ভুলে গেছেন, যিনি কুরুপান্ডবের গুরু,
কিন্তু --- আমি ভুলিনি |


কু       

       
               
              
                           
         
                   
              
             
              
              
             
                  
               
                     
            
             
                       


       

                
কিন্তু আপনি নীরব ছিলেন |


কুন্তী

তখনও সময় আসেনি, কর্ণ |
আমার দুই পুত্রে দ্বন্দ্বযুদ্ধ ব্যাহত হ’লো --
সেটুকুই তখন ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছিলাম |


কর্ণ

ব্যাহত --- বাধাপ্রাপ্ত---- তবু কি নির্দিষ্ট নয়, অনিবার্য নয়
আপনার দুই পুত্রে দ্বন্দ্বযুদ্ধ ?


কুন্তী

সম্ভব নিশ্চয়ই, কিন্তু অনিবার্য নয় |
আমি ক্ষত্রনারী, তবু কী ক’রে সহ্য করি এই চিন্তা --
আমার দুই পুত্র আজ পরস্পরের শত্রু
অকারণে -- অজ্ঞাতাবশত ---দুই অভিশপ্ত দুর্ভাগার মতো ?
আমারই ত্রুটি | তাই সংশোধন আমি চাই এখন |
তুমি আমার সহায় হও, কর্ণ |
আমাকে ভাবতে দাও, বলতে দাও, বুঝতে দাও
যে অর্জুন, ভীম, যুধিষ্ঠিরের মতোই--
কর্ণ, তুমি আমার, তুমি আমার |

[ কুন্তী আবার এগিয়ে এলেন কর্ণের দিকে | কর্ণ পিছনে স’রে গেলেন | ]


কর্ণ
( নিস্তাপ স্বরে )

ক্ষমা করবেন | আমি কারোরই নই | কাউকে আমি আমার ব’লে
.   ভাবি না |
আমি বিশুদ্ধভাবে আমি |  তাছাড়া আর-কিছু নয় |

[
 দুই বৃদ্ধ অন্তরাল থেকে বেরিয়ে এলেন | ]


প্রথম বৃদ্ধ

আমরা একটা কথা বলতে পারি কি ?
কুন্তী এক আশ্চর্য বার্তা শোনালেন -- কিন্তু আশ্চর্য নয় ;
মহাবল কর্ণের পক্ষে যোগ্য এই জন্ম কথা |
কর্ণ, শুনুন |
কুন্তী দেবী সত্য বলেছেন, ধর্মত পান্ডু আপনার পিতা,
আপনি কুন্তীর কানীন পুত্র, তাই পান্ডুর আত্মজ ব’লে গণ্য--
শাস্ত্রে তা-ই বলে |
আপনি তো জানেন যাঁরা পঞ্চপান্ডব নামে বিশ্রুত
তাঁরাও পান্ডুর ঔরসজাত নন |
আপনি তাঁদের পরমআত্মীয়, তাঁরা আপনার স্বভাববন্ধু,
আমার মনে হয় দেবগণের তা-ই অভিপ্রায় |


কর্ণ

আমি শাস্ত্র মানি না :  আমার ধর্মের নাম মনুষত্ব |
যদি পান্ডবেরা আমার ভ্রাতা হন, তবে কৌরবেরাও তা-ই |
যদি মনু হন আদিপিতা, আমার ভাই তবে সর্বমানব |


কুন্তী

জ্ঞানীর মতো কথা বলছো , কর্ণ, কিন্তু মনুবংশের এই ভ্রাতৃত্ব
কেউ-কেউ সশ্রদ্ধভাবে মেনে নেয়, অনেকে লঙ্ঘন করে সদর্পে |
কর্ণ, তোমার নিয়তি আজ দুই পথে বিভক্ত :
একদিকে পঞ্চপান্ডব, তাঁদের পুত্রেরা ও সুহৃদবর্গ,
সকলেই সচ্চরিত্র, নিষ্কলুষ |
অন্য দিকে শকুনির শাঠ্য, দুঃশাসনের হিংস্রতা,
আর পরস্বাপহারী পাপিষ্ঠ দুর্যোধন |
আজ তোমাকে বেছে নিতে হবে :
ধর্ম, অথবা অধর্ম -- সত্য, অথবা ব্যভিচার |


কর্ণ

দুর্যোধন আতিথ্য দিয়েছেন আমাকে-- আমার ঘোষিত হীন
.   জন্ম সত্ত্বেও ,
আমারও আছে তার প্রতি কর্তব্য -- তিনি যেমনই হোন |
আর, আমার জন্মকথা যত না হোক বিস্ময়কর,
রাধা আমার মাতা ব’লে স্বীকার্য, পিতা অধিরথ--
জগতের কাছে --- আমার নিজের কাছেও |
--দেবী, আপনার দর্শন পেয়ে আমি ধন্য | আপনি ফিরে যান |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

কর্ণ, আপনি অঙ্গদেশের রাজা, কিন্তু আপনাকে কেউ
.   রাজা কর্ণ বলে না,
লোকের মুখে আপনার নাম দাতা কর্ণ |
কোনো প্রার্থীকে আপনি ফিরিয়ে দেন না কখনো,
আপনার উদারতায় তস্করও প্রশ্রয় পেয়েছে |
আর সেই আপনি
আজ কুন্তীর মনোবাঞ্ছা কি অপূর্ণ রাখবেন,
যাঁর আবেদন যুক্তিযুক্ত -- ও মর্মস্পর্শী ?
তিনি আপনার মাতা ব’লে আমরা পক্ষপাতী নই,
তাঁর বাক্য মঙ্গলজনক ব’লেই মান্য |


কর্ণ

অবজ্ঞায় বেঁচে থাকা দুঃখের | সম্মান সর্বদাই কাম্য |
আমি ক্ষত্রিয়ের সংস্কার পাইনি  | কিন্তু অর্জন করেছি
দুর্যোধনের কাছে ক্ষত্রিয়ের অধিকার |


কু      

          
              
         
             
            
                
              
             
            
                 
            
                         


              

                
             
           
           
            
            
             
কুন্তী

পুত্র, আমি বুঝি তোমার বেদনা  |
আমি জানি, স্বয়ংবরসভায় ভ্রষ্ট হ’তো না তোমার বাণ,
জানি, তুমি দ্রৌপদীর যোগ্য ছিলে, হয়ত যোগ্যতম |
তাই বলি, চলো আমার সঙ্গে, গ্রহণ করো তোমার
.  কাঙ্ক্ষিতা নারীকে ;
পঞ্চপান্ডবের পত্নী পাঞ্চালী --- ধর্মত তোমারও ভার্যা |


কর্ণ

‘ধর্মত’ ! ‘ধর্মত’ !  আর শুনতে চাই না ‘ধর্মত’ |
আমি চেয়েছিলাম জয় করতে দ্রৌপদীকে --- নিজের জন্য---
.  একান্তভাবে ---
কিন্তু পারিনি-- আমার শক্তির অভাবে নয়, আপনার ধর্ম
.  সুপ্ত ছিলো ব’লে |
আর আজ আমাকে যষ্ঠাংশে তার পতি হ’তে বলছেন ?
.   ---- না !
আমার কাম্য নয় কোনো নারী--- কোনো রাজত্ব---
যা বিনা চেষ্টায় জন্মসূত্রে প্রাপণীয়,
আমার গ্রাহ্য নয় অনর্জিত কোনো উত্তরাধিকার |
পাঞ্চালী সুখে থাকুন | আপনার মঙ্গল হোক | আপনি ফিরে যান |


প্রথম বৃদ্ধ


রাজত্বে আপনি লুব্ধ নন, কর্ণ, ভোগে আপনি নিস্পৃহ,
আমরা আপনাকে সাধুবাদ জানাই |
কিন্তু সেই সঙ্গে মিনতি ক’রে বলি --
কুন্তীকে আপনি বিমুখ করবেন না |
যদি সত্য হয় আপনার ‘দাতা কর্ণ’ পদবি,
সত্য হয় দরিদ্রের প্রতি আপনার দয়া,
অন্তত যোগ দিন ভীষ্ম, বিদুর, কৃষ্ণের সঙ্গে মন্ত্রণাসভায়,
এমন উপায় করুন যাতে যুদ্ধ না হয়,
এমন উপায় করুন যাতে নষ্ট না হয় শান্তি |


কুন্তী

( ঈষৎ তীব্র স্বরে )

আপনি ব্রাহ্মণোচিত বাক্য বলেছেন, কিন্তু পারবেন কি
দুর্যোধনের ঈর্ষানল নিবিয়ে দিতে
যোগবলে বা মন্ত্রবলে ?
দুর্মদ সে, বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র ভূমি দেবে না |
তবে কি শান্তিরক্ষার জন্য পঞ্চপান্ডবকে
ভিক্ষান্ন খেয়ে বাঁচতে হবে চিরকাল ?
যুদ্ধ ভালো নয়, যুদ্ধ ভালো ;  দুটোই সমান তো,
স্থান, কাল পাত্র অনুসারে |
অহিংসা উত্তম ধর্ম, যদি সকলেই তা মেনে চলে ---- নচেৎ নয় |


কিন্তু আমার ভয়,  আমার ভয়
যদি যুদ্ধ হয়
ফলাফল তার যা-ই হোক,
যদি রাজলক্ষ্মীকে পান্ডবেরাই জয় করেন---
তবু হয়তো হত্যা
ভ্রাতার হাতে ভ্রাতার---
দুই সহোদর , আমার দুই পুত্র
মুখোমুখি, অস্ত্র হাতে নিয়ে
দূরন্ত সংগ্রাম, বীভত্স হত্যা,
আমার পক্ষে ভীষণ --- আর্তিময় -- মর্মান্তিক |



কর্ণ        

(  কয়েক মুহূর্ত নীরব থেকে  )                 

‘ভীষণ’---- ‘আর্তিময়’---  ‘মর্মান্তিক’ ?
--- দেবী কুন্তী, আপনি কি শুনতে পান না আপনার ধমনীর মধ্যে
ক্ষত্রশোণিতের প্রতিবাদ ?
আপনার জয়ধ্বজ পূর্বপুরুষের প্রতিবাদ ?
আপনি কি নন তেমনি এক অসামান্যা
যিনি পুত্রকে দেখতে চান রণক্ষেত্রে রক্তাক্ত,
যিনি চান বীর পুত্রের যথাযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ---
যথাযোগ্য, সমকক্ষ ---- যেমন কর্ণ আর অর্জুন  ?
আপনি শান্ত হোন, কুন্তী | আপনাকে ভীত দেখলে
.  যোদ্ধারা লজ্জা পাবেন |


দ্বিতীয় বৃদ্ধ

হায়, ক্ষত্রনারীর ভাগ্য
চিরকাল---
প্রেমে জন্ম দিয়ে
প্রেমে স্তন্য দিয়ে
প্রেমে যত্নে পরিচর্যায় উত্সর্গিত হ’য়ে ---
তারপর সেই পুত্রকেই
স্বেচ্ছায়, সগৌরবে
হত্যাকান্ডে অর্পণ, হিংসার যূপে বলিদান !
কত সুখী সেই দরিদ্র শূদ্রাণী
যে লোলচর্ম ন্যুব্জ দেহে দেখতে পায়
তার ধবলকেশ পুত্রকে, কোনো শান্ত পরিশ্রমে নিযুক্ত !

( কুন্তীর দিকে দৃষ্টিপাত ক’রে )

কিন্তু আমি এক অক্ষম বৃদ্ধ দীন ব্রাহ্মণ,
শুধু শাস্ত্রপাঠে অভ্যস্ত,  ক্ষাত্রধর্ম  বুঝি না  |
রাজমাতা, যদি ভুল ব’লে থাকি মার্জনা করবেন  ||


কুন্তী

আমি ক্ষত্রনারী, আমি মাতা  | এই দুই সত্তা আজ তর্কপরায়ণ |
আপনারাও, অধ্যয়ণরত ব্রাহ্মণ,
আপনারাও মানতে বাধ্য
যে এই মুহূর্তে আমাদের এই রাজ্যে
সত্যের সফলতার জন্য
শান্তির প্রতিষ্ঠার জন্য
এমনকি ন্যূনতম সুবিচারের জন্য
হয়তো---
একমাত্র ব্যবহার্য উপায় --- যুদ্ধ |
কিন্তু তবু
আমি পারি না-- মানতে পারি না, ভাবতে পারি না---
কর্ণ আর অর্জুনের দিব্যাস্ত্র
যে- কোনো মুহূর্তে ধাবিত হ’তে পারে
পরস্পরের বিরূদ্ধে ---- আত্মঘাতী অন্ধতায়  !

( কর্ণের দিকে ফিরে )

তুমি জ্যেষ্ঠ, তুমি চিন্তাশীল, তাই তোমারই কাছে আবার
.  আমার প্রার্থনা ---
পুত্র তুমি সন্মত হও |


কর্ণ

দেবী        
         
        
      
        
         
        
        
            
                   
           
            
            


              

               
               
               
              
               
               
              
              
                   
          
কর্ণ

( ক্ষণকাল পরে, সস্নেহ সুরে )

মা, আর কথা বোলো না  |  আমাকে অম্লান মনে বিদায় দাও |
জেনো, তুমি অপরাধী নও আমার কাছে,
জেনো, আমার কোনো দুঃখ নেই |
আমার সুন্দর স্বপ্ন হ’য়ে থাকবে তুমি,
যতদিন এই দেহে আছে নিশ্বাস |


কুন্তী

স্বপ্ন, কর্ণ ? শুধু স্বপ্ন ?
           

কর্ণ

আর কয়েকটা দিন, বত্সর---
তারপর আমরা,
কুন্তী, কর্ণ, অর্জুন ---
আমরা হ’য়ে যাবো
মেঘাচ্ছন্ন ঊষার মতো ধূসর
এক স্বপ্ন,
তন্দ্রার ঘোরে অর্ধশ্রুত কোনো ধ্বনির মতো
এক মর্মর---
সেই সব অন্য লোকেদের মনের মধ্যে,
যারা এখনো জন্ম নেয়নি |

( এগিয়ে এসে, কুন্তীকে আলিঙ্গন ক’রে )

মা, এসো আমরা সেই স্বপ্নকে সম্পূর্ণ করি,
তুমি তোমার স্বস্থানে, পঞ্চপান্ডবের সঙ্গে,
আর আমি, আমার নির্জনতায় |


কুন্তী       
( দীর্ঘশ্বাস ফেলে )

জানি না তোকে আবার দেখবো কিনা | জানি না আমাদের
.    ভবিতব্য কী |

[
কুন্তী ধীর চরণে বেরিয়ে গেলেন | কর্ণ আবার ছায়াছন্ন | ]


*************                
.                                                          
.                                                              
পরবর্তী অংশ পড়তে. . .   
.                                                                
প্রখম পার্থর সূচিতে . . .   
.                                               
বুদ্ধদেব বসুর কবিতার মূল সূচিতে . . .   
.                                                          
এই পাতার উপরে ফেরত . . .    



মিলনসাগর